চীনের সহায়তায় ‘তিস্তা নদী সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ (টিআরসিএমআরপি) বাস্তবায়নের আগে এর পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ, পরিবেশগত প্রভাব যাচাই এবং স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদ, গবেষক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
শনিবার সকালে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) ভবনের সেমিনার কক্ষে ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তারা এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন)।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাপা সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা সহসভাপতি ও বেনের বৈশ্বিক সমন্বয়ক, যুক্তরাষ্ট্রের কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জমান।
তিস্তা সংকটের মূল কারণ তুলে ধরে মূল প্রবন্ধে ড. খালেকুজ্জমান বলেন, তিস্তা বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম আন্তঃসীমান্ত নদী, কিন্তু ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং উজানে একতরফাভাবে পানি নিয়ন্ত্রণের কারণে নদীটি আজ গভীর সংকটে।
তিনি বলেন, “উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে ভারতের একতরফা পানি নিয়ন্ত্রণের ফলে বাংলাদেশের ভাটিতে পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব আর বর্ষায় হঠাৎ পানি ছাড়ায় বন্যা, নদীভাঙন ও জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস ঘটছে।”
তিনি আরও জানান, তিস্তা সেচ প্রকল্প ঐতিহাসিক প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে গৃহীত হলেও ১৯৯৬ সালের পর থেকে তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।
“পানি প্রবাহে অনিশ্চয়তা ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে তিস্তাপাড়ের কৃষি, জীবিকা ও অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে,” বলেন তিনি।
ড. খালেকুজ্জমান তার প্রবন্ধে জানান, বাংলাদেশ সরকার চীনের সহযোগিতায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পে তিস্তা ব্যারেজ থেকে চিলমারী পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার নদীপথ পুনঃখনন, নদী সোজা করা এবং দুই পাশে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে তিনি সতর্ক করেন, “তিস্তা একটি প্রাকৃতিক বিনুনিযুক্ত নদী (braided river)। এটিকে জোর করে সোজা নদীতে রূপান্তর করা হলে নদীর বাস্তুতন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”
‘তিস্তা শুধু নদী নয়, কোটি মানুষের জীবনরেখা’
বেন প্রতিষ্ঠাতা ও জাতিসংঘের সাবেক গবেষণা প্রধান ড. নজরুল ইসলাম বলেন, “তিস্তা প্রকল্প নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো খোলামেলা আলোচনা নেই। রাজনৈতিক দলগুলোও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ তিস্তাপাড়ের দুই কোটির বেশি মানুষের জীবন আজ হুমকির মুখে।”
তিনি বলেন, বাপা ও বেন গত দুই দশক ধরে তিস্তা নদী রক্ষায় আন্দোলন করছে।
“ভারতের একতরফা পানি নিয়ন্ত্রণ ও দেশের অভ্যন্তরে ভুল নীতি অনুসরণের ফলে তিস্তা আজ সংকটে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা—সব মিলিয়ে তিস্তাপাড়ের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত,” বলেন ড. নজরুল ইসলাম।
‘নদীকে নদীর মতোই থাকতে দিন’
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলো সংকুচিত করা হয়েছে। এবার তিস্তা যেন সেই পথ না নেয়। নদীকে তার প্রাকৃতিক গতিতে বাঁচতে দিতে হবে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন,
“যে প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে, তা বাস্তবায়নের আগে জনগণের মতামত নেওয়া আবশ্যক।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মতিন উদ্দিন আহমেদ বলেন, “তিস্তা সমস্যার সমাধানে ওয়াটার ডিপ্লোমেসি বা পানিবণ্টন কূটনীতি অত্যন্ত জরুরি। ভারতকে উপেক্ষা করে কোনো প্রকল্প নিলে তা টেকসই হবে না।”
বাপা সহসভাপতি অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলাম বলেন, “রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সময় সরকার পরিবেশবিদদের মতামত উপেক্ষা করেছিল। এখন তিস্তা প্রকল্পেও যেন সেই ভুল না হয়। তথ্য-উপাত্য প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে আলোচনা করতে হবে।”
রাজনৈতিক নেতাদের সতর্কতা ও প্রস্তাব
সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “আমরা সবাই নদী রক্ষার পক্ষে। কিন্তু নদীকে খালে পরিণত করে নয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে দেশীয় বিশেষজ্ঞ ও জনগণের মতামতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনা একতরফাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত অববাহিকা ভিত্তিক পরিকল্পনা নিতে হবে।”
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন,
“ভারত তিস্তা নিয়ে বারবার বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। এখন সময় এসেছে বাংলাদেশকে কূটনৈতিকভাবে আরও দৃঢ় অবস্থান নিতে।”
অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার বলেন,
“তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ভারতকে আলোচনায় আনতে হবে, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ করতে হবে।”
বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা মাসুদ রানা বলেন, “এতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প কেন জনগণের আড়ালে? সরকারের উচিত বিষয়টি উন্মুক্ত করে জনমত নেওয়া।”
ইমরান ইমন বলেন, “তিস্তা প্রকল্প যেন নদীর জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে আদালতের স্বীকৃতির পরিপন্থী না হয়।”
শাকিল আনোয়ার বলেন “রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া এখনই প্রকল্প বাস্তবায়নে তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না।”
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন,
“বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। কিন্তু উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে বাঁচিয়ে রেখে। টেকসই উন্নয়ন মানে প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থান।”
সভা শেষে তিনি একটি খসড়া প্রস্তাব পাঠ করেন, যা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রস্তাবে তিস্তা নদী রক্ষায় স্বচ্ছতা, পরিবেশগত মূল্যায়ন, স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।
সভায় বাপা–বেনের জাতীয় পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও নদী গবেষক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী ও তিস্তাপাড়ের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫
চীনের সহায়তায় ‘তিস্তা নদী সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ (টিআরসিএমআরপি) বাস্তবায়নের আগে এর পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ, পরিবেশগত প্রভাব যাচাই এবং স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদ, গবেষক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
শনিবার সকালে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) ভবনের সেমিনার কক্ষে ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তারা এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন)।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাপা সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা সহসভাপতি ও বেনের বৈশ্বিক সমন্বয়ক, যুক্তরাষ্ট্রের কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জমান।
তিস্তা সংকটের মূল কারণ তুলে ধরে মূল প্রবন্ধে ড. খালেকুজ্জমান বলেন, তিস্তা বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম আন্তঃসীমান্ত নদী, কিন্তু ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং উজানে একতরফাভাবে পানি নিয়ন্ত্রণের কারণে নদীটি আজ গভীর সংকটে।
তিনি বলেন, “উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে ভারতের একতরফা পানি নিয়ন্ত্রণের ফলে বাংলাদেশের ভাটিতে পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব আর বর্ষায় হঠাৎ পানি ছাড়ায় বন্যা, নদীভাঙন ও জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস ঘটছে।”
তিনি আরও জানান, তিস্তা সেচ প্রকল্প ঐতিহাসিক প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে গৃহীত হলেও ১৯৯৬ সালের পর থেকে তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।
“পানি প্রবাহে অনিশ্চয়তা ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে তিস্তাপাড়ের কৃষি, জীবিকা ও অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে,” বলেন তিনি।
ড. খালেকুজ্জমান তার প্রবন্ধে জানান, বাংলাদেশ সরকার চীনের সহযোগিতায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পে তিস্তা ব্যারেজ থেকে চিলমারী পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার নদীপথ পুনঃখনন, নদী সোজা করা এবং দুই পাশে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে তিনি সতর্ক করেন, “তিস্তা একটি প্রাকৃতিক বিনুনিযুক্ত নদী (braided river)। এটিকে জোর করে সোজা নদীতে রূপান্তর করা হলে নদীর বাস্তুতন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”
‘তিস্তা শুধু নদী নয়, কোটি মানুষের জীবনরেখা’
বেন প্রতিষ্ঠাতা ও জাতিসংঘের সাবেক গবেষণা প্রধান ড. নজরুল ইসলাম বলেন, “তিস্তা প্রকল্প নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো খোলামেলা আলোচনা নেই। রাজনৈতিক দলগুলোও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ তিস্তাপাড়ের দুই কোটির বেশি মানুষের জীবন আজ হুমকির মুখে।”
তিনি বলেন, বাপা ও বেন গত দুই দশক ধরে তিস্তা নদী রক্ষায় আন্দোলন করছে।
“ভারতের একতরফা পানি নিয়ন্ত্রণ ও দেশের অভ্যন্তরে ভুল নীতি অনুসরণের ফলে তিস্তা আজ সংকটে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা—সব মিলিয়ে তিস্তাপাড়ের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত,” বলেন ড. নজরুল ইসলাম।
‘নদীকে নদীর মতোই থাকতে দিন’
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলো সংকুচিত করা হয়েছে। এবার তিস্তা যেন সেই পথ না নেয়। নদীকে তার প্রাকৃতিক গতিতে বাঁচতে দিতে হবে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন,
“যে প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে, তা বাস্তবায়নের আগে জনগণের মতামত নেওয়া আবশ্যক।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মতিন উদ্দিন আহমেদ বলেন, “তিস্তা সমস্যার সমাধানে ওয়াটার ডিপ্লোমেসি বা পানিবণ্টন কূটনীতি অত্যন্ত জরুরি। ভারতকে উপেক্ষা করে কোনো প্রকল্প নিলে তা টেকসই হবে না।”
বাপা সহসভাপতি অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলাম বলেন, “রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সময় সরকার পরিবেশবিদদের মতামত উপেক্ষা করেছিল। এখন তিস্তা প্রকল্পেও যেন সেই ভুল না হয়। তথ্য-উপাত্য প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে আলোচনা করতে হবে।”
রাজনৈতিক নেতাদের সতর্কতা ও প্রস্তাব
সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “আমরা সবাই নদী রক্ষার পক্ষে। কিন্তু নদীকে খালে পরিণত করে নয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে দেশীয় বিশেষজ্ঞ ও জনগণের মতামতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনা একতরফাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত অববাহিকা ভিত্তিক পরিকল্পনা নিতে হবে।”
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন,
“ভারত তিস্তা নিয়ে বারবার বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। এখন সময় এসেছে বাংলাদেশকে কূটনৈতিকভাবে আরও দৃঢ় অবস্থান নিতে।”
অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার বলেন,
“তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ভারতকে আলোচনায় আনতে হবে, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ করতে হবে।”
বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা মাসুদ রানা বলেন, “এতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প কেন জনগণের আড়ালে? সরকারের উচিত বিষয়টি উন্মুক্ত করে জনমত নেওয়া।”
ইমরান ইমন বলেন, “তিস্তা প্রকল্প যেন নদীর জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে আদালতের স্বীকৃতির পরিপন্থী না হয়।”
শাকিল আনোয়ার বলেন “রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া এখনই প্রকল্প বাস্তবায়নে তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না।”
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন,
“বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। কিন্তু উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে বাঁচিয়ে রেখে। টেকসই উন্নয়ন মানে প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থান।”
সভা শেষে তিনি একটি খসড়া প্রস্তাব পাঠ করেন, যা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রস্তাবে তিস্তা নদী রক্ষায় স্বচ্ছতা, পরিবেশগত মূল্যায়ন, স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।
সভায় বাপা–বেনের জাতীয় পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও নদী গবেষক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী ও তিস্তাপাড়ের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।