বুধবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দুপুরের সংলাপে অংশ নেন বিএনপির নেতারা -সংবাদ
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ধারাবাহিক সংলাপে বুধবার,(১৯ নভেম্বর ২০২৫) অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১২টি রাজনৈতিক দল।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দুপুরের পর্বে সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপি বলেছে, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে জেলা প্রশাসদের (ডিসি) রিটানির্ং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া বাদ দিতে হবে। তাদের বদলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটানিং কর্মকর্তা করতে হবে।
তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার করলে ইসি কি ঠেকাতে পারবে: প্রশ্ন এনসিপির জহিরুল ইসলাম মূসার
প্রশাসন ও পুলিশে সাম্প্রতিক রদবদল ‘কোনো একটা জায়গা থেকে হচ্ছে’: সন্দেহ জামায়াতের মিয়া গোলাম পরওয়ারের
সরকারের কাছে ইসি নতজানু থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না: বিএনপির আবদুল মঈন খান
ডিসিদের নয়, ইসি থেকে রিটানিং কর্মকর্তা করার প্রস্তাব বিএনপির
তফসিলের পর লটারি করে একযোগে ডিসি-এসপি রদবদল চায় জামায়াত
ইসিকে বড় দলের কাছে নতি স্বীকার না করার আহ্বান এনসিপির
এদিন সকালের পর্বে সংলাপে অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী বলেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর একইদিনে একযোগে জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে রদবদল করতে হবে। একযোগে ডিসি-এসপিদের বদলি করা হলে প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে ইসির ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
সকালের পর্বে সংলাপে অংশ নিয়ে নতুন নিবন্ধন পাওয়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, ইসিকে শক্ত থাকতে হবে। বড় দলের চাপে নতি স্বীকার করা যাবে না।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এনসিপি ও জামায়াতসহ সংলাপে অংশ নেয় বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
দুপুর ২টা-৪টা পর্যন্ত বিএনপিসহ সংলাপে অংশ নেয়া দলগুলো হলো- গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) এবং নতুন নিবন্ধন পাওয়অ দল বাসদ মার্কসবাদী।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সংলাপে নির্বাচন কমিশনাররা, ইসির সিনিয়র সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে চার দিনে ৪৮টি দলের সঙ্গে সংলাপ করলো ইসি।
*ইসি থেকে রিটানিং কর্মকর্তা *
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ‘নতজানু’ না হয়ে নির্বাচন কমিশনকে ‘শক্ত’ অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, ‘আমরা আপনাদের সব সহযোগিতা করবো। আমরা চাই আপনারা শক্ত থাকেন, আপনারা সিদ্ধান্তগুলো নেন। ইউ হ্যাভ দ্য পাওয়ার অ্যান্ড দ্য অথোরিটি। সরকার দিয়েছে, সংবিধান আপনাদের সেই অথোরিটি দিয়েছে।’
ওই নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব দেয় বিএনপি। সংলাপে মঈন খান তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারেরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ক্ষেত্রবিশেষে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। এর আগেও বিভিন্ন নির্বাচনের আগে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের এ দায়িত্ব দেয়ার দাবি উঠেছিল।
সংলাপে বিএনপি নেতা মঈন খান বলেন, ‘নির্বাচনে কয়েক লাখ নির্বাচন কর্মকর্তা প্রয়োজন। ইসির এত লোকবল নেই। কিন্তু ইসির যতটুকু জনবল আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। ৩০০ আসনে সরকারের কাছ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহাকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ধার করে আনা হয়। ইসির এটুকু জনবল আছে।’
ইসির উদ্দেশ্যে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘একবার সাহস করে এই সিদ্ধান্তটা নেন যে রিটার্নিং অফিসার আপনাদের নির্বাচন কমিশন থেকে থাকবে। অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার আপনাদের নির্বাচন কমিশনের ডেডিক্যাটেড লোকেরা হবে। এই একটা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে।’
আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চারটি বোতাম আছে। একটি হচ্ছে ডিসি, একটি হচ্ছে এসপি, একটি হচ্ছে ইউএনও আরেকটি হচ্ছে ওসি। এ চারটি বোতাম টিপা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে, এরপর ৩০০ আসনে নির্বাচনের ফলাফল বের হয়ে আসে। এ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’
*লটারিতে একযোগ রদবদল*
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে সাম্প্রতিক রদবদল ‘কোনো জায়গা থেকে করা হচ্ছে’, সেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। তফসিল ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসনের কর্তৃত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে এলে সব ডিসি-এসপিকে একযোগে বদলির দাবি জানিয়েছে দলটি। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে লটারির মাধ্যমে প্রশাসন ও পুলিশে বদলি করার পরামর্শ দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।
সংলাপে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ ও আইনজীবী শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন।
গত কিছু দিনে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদলের প্রসঙ্গ ধরে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘রদবদলের বিষয়টা এক মাসে হয়নি, ২০ দিনও হয়নি, ডিসি সেখানে রদবদল হয়েছে। মনে হয়েছে যেন কোনো ডিজাইন করে একটা উদ্দেশে কোনো জায়গা থেকে এটা হচ্ছে।’
তফসিলের পর লটারির মাধ্যমে বদলির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনে নিরপেক্ষতায় আস্থা রাখার উপায় হলো লটারির মাধ্যমে ট্রান্সফার হওয়া। যার যেখানে তকদিরে আছে। প্রধান উপদেষ্টাকেও বলেছি, এ রকম করলে প্রশ্ন থাকবে না। উনার বক্তব্যে বোঝা গেল- কোনোভাবে কোনো জায়গা থেকে শুরু করেছে। কেউ জানছেন কি, জানছেন না, কিছুটা অস্পষ্ট কথা উনার থেকে বোঝা যায়।’
আচরণবিধি ও প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটিংয়ে গণভোটের প্রসঙ্গ উঠে না আসার বিষয়টি তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতে গণভোটের আয়োজন এবং প্রচারের দায়িত্বও ইসির। সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোটের ব্যালট নিয়ে তাদের পরিকল্পনাও জানাতে হবে।
*সেনা বাড়ানোর প্রস্তাব*
ভোটকেন্দ্রে সেনা মোতায়েনের দাবি জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘একজন সেনা সদস্য নয়, বরং ৪-৫ জন সদস্য নিয়োজিত করা গেলে ভালো হয়।’
বর্তমান ইসির প্রতি ‘আস্থা’ থাকার কথা বললেও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি জানান হামিদুর রহমান আযাদ। তিনি বলেন, ‘ইসি স্বাধীন হতে হলে অবশ্যই সাহসী হতে হবে। আশাবাদী, আপনারা সাহসী হবেন। সাহস দেখালে হবে না শুধু; স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আজকের সংলাপ খুবই গরুত্বপূর্ণ, এটা যেন ট্র্যাডিশনাল ধারাবাহিকতা না হয়, ব্যতিক্রম চাই।’
মাঠ প্রশাসনের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পর্যবেক্ষণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে কিনা ডাউট। রক্ষক যেন ভক্ষক না হয়। আইন প্রতিপালন যেন হয়। সরকার পরিবর্তন হয়েছে, আমলাতন্ত্রের মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন কম এসেছে। এখানে অনেক সমস্যা জটিলতা আছে। দলীয় সরকার না হলেও দলকানা লোক সরকারে আছে।’
অবৈধ অস্ত্র, বৈধ অস্ত্র উদ্ধারে উপকূলীয়, পার্বত্য এলাকায় বিশেষ নজর দেয়ার তাগিদ দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, জনগণের নিরাপত্তা ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে ‘ভালো কাজ নষ্ট হয়ে যাবে’।
*জনপ্রশাসনের নিরপেক্ষতা*
জনপ্রশাসনে রদবদলে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আযাদ বলেন, ‘প্রশাসনে নিয়োগ বদলিতে স্বচ্ছতা না থাকলে হবে না। গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে নিয়োগ বদলি হচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন দেখানো হচ্ছে। একটি দল আছে শুধু...এদের নিয়োগ দেয়া যাবে না। এ রিপোর্টের ভিত্তিতে নিয়োগ হলে কীভাবে নির্বাচন হবে? হৈ চৈ হবে। লটারির ভিত্তিতে ডিসি, এসপি, ওসি, নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ বদলি করতে হবে।’ বডিওর্ন ক্যামেরার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা রাখার পক্ষে মত দেন তিনি।
ব্যালট পেপার ছাপানো নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘ব্যালট পেপার নকল নিয়ে কথা এসেছে, ডাকসু, চাকসু নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। এক্সট্রা ব্যালট পেপার যেন না যায়। এসব নজর দিতে হবে।’
শিশির মনির বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থী, তার পক্ষে একজনকে শাস্তির বিধান কে কার্যকর করবে এবং দলের অর্থদণ্ডের বিধান নিয়ে ‘অস্পষ্টতা’ রয়েছে।
*বড় দলের চাপ*
জোট করলেও প্রার্থীর স্ব-স্ব দলের প্রতীকে ভোট করা নিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বিধান যুক্ত করায় ইসিকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে প্রশংসা করেছে বৈষম্যবিরোধীদের গড়া দল এনসিপি। বড় কোনো দলের চাপ থাকলেও ইসির সিদ্ধান্ত যেন অটুট থাকে সে দাবি জানিয়েছে দলটি। তবে এবার ভোটের প্রচারে পোস্টার বন্ধ করে দিয়ে নানা ধরনের ‘অমূলক’ বিষয় যুক্ত করায় আচরণবিধি বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির নেতারা।
সংলাপে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মূসা ও এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি তাসনিম জারা অংশ নেন।
নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘জোট করলেও নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবেÑ ইসির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। কোনো বড় দলের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। ইসি যেন নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থাকেন সে আহ্বান জানাই।’
আগের বিধান অনুযায়ী জোট মনোনীত প্রার্থীরা অন্য দলের প্রতীকেও ভোট করতে পারতো। এবার আরপিও সংশোধিত হয়েছে, সেক্ষেত্রে জোট করলেও ভোট করতে হবে প্রার্থীর নিজ দলের প্রতীকে। বিএনপির পক্ষ থেকে আরপিও বিধানটি ফের সংশোধনের তাগিদ দিয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ও আইন উপদেষ্টার কাছে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমাদের এই ইলেকশনের বড় একটি বিষয় হচ্ছে গণভোট। গণভোট কী প্রক্রিয়ায় হবে? কীভাবে আপনারা এটা বাস্তবায়ন করবেন? এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আমরা কবে পাব? কবে আমরা প্রচারণা করতে পারবো সে বিষয়ে জানাবেন।’ প্রবাসী ভোটারদের গণভোটে সম্পৃক্ত করা, ব্যাপক প্রচারণা এবং ভোটের আগেও যারা ১৮ বছর হবে তাদের তালিকাভুক্ত করার প্রস্তাব দেন তিনি।
*তারেক রহমানের ছবি*
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মূসা বলেন, ‘নির্বাচনী আমেজ মানে পোস্টারিং, মাইকিং, জনসম্পৃক্ততা ও জনসভাকে বুঝি। এখানে এমন অন্যায্য বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে, এটা বাস্তবায়নের করার কোনো সক্ষমতা ইসির নেই।...এটা নিপীড়নমূলক আইন হবে যদি নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে করে, শক্তিশালী কারওর বিরুদ্ধে একই বিধান ব্যবহারের সক্ষমতাও আপনার নেই।’
সার্বিকভাবে বিদ্যমান আচরণবিধি অবাবস্তবভিত্তিক বলে মনে করেন তিনি। জহিরুল ইসলাম মূসার ভাষ্য, ‘এটা নির্বাচনী ঐতিহ্যকে অস্বীকার করেছে। পরিবেশবান্ধব করেছে বটে, অবকাঠামোগত সুবিধা অস্বীকার করেছেন। পোস্টার নিষিদ্ধ করেছেন।...প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রার্থীরা অল্প সময়ে চটের ব্যাগে কাপড়ের প্রিন্ট দিয়ে প্রচারণা করবেন কীভাবে? এটা অমূলক।’
আচরণবিধিতে (৭-এর চ দফা) বলা হয়েছে, দলীয় প্রার্থী কেবল তার বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি ব্যানার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ও ফেস্টুনে ছাপাতে পারবেন। প্রচারণার ছবি পোট্রেট সাধারণ হতে হবে নির্ধারিত মাপের (আয়তন ৬০ ও ৪৫ সেমি এর মধ্যে)।
জহিরুল ইসলাম মূসা আচরণবিধির ধারা তুলে ধরে বিএনপির নাম নিয়ে বলেন, ‘ইসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন করছি। আপনাদের রিয়েল টেস্ট হবে। বিএনপির প্রধান দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে বিএনপির প্রার্থীরা (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার করলে বা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের তার ওপরে আচরণবিধি প্রয়োগ ব্যবহার করতে হবে।’
*পোস্টার-ফেস্টুনের পক্ষে গণসংহতি*
অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা না করে আইন-বিধি চূড়ান্ত করায় ইসির সমালোচনা করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচন কমিশন নিশ্চিতে সাংবিধানিক পরিবর্তন ও নিয়োগের প্রস্তাবনাও তুলে ধরেন তিনি।
ভোটের আগে নির্বাচনি পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়ে প্রধান সমন্বয়ক বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিই বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য একটা মনিটরিং কমিটি হওয়া দরকার। দলের প্রতিনিধিসহ সরকার, ইসির প্রতিনিধি নিয়ে এ কমিটি হতে পারে। দলের সহযোগিতা যখন করেছে, তখন ভালো নির্বাচন হয়েছে।’
জোট মনোনীত প্রার্থীদের জন্য প্রতীক বাছাই উন্মুক্ত রাখার পক্ষে মত দেন প্রধান সমন্বয়ক। তিনি বলেন, ‘জোটের প্রতীক নিয়ে বাধা রাখা সমীচীন নয়। অনেকে নিজস্ব প্রতীকে ভোট করবেন। জোটগতভাবে নির্বাচন করলে অন্য দলের প্রতীকে ভোট করার সুযোগ রাখা দরকার।’
সংসদ ও গণভোটের জন্য আলাদা বুথ ও গণনা রাখার সুপারিশ করেন জুনায়েদ সাকি।
পোস্টার ও ব্যানার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফেস্টুন কার্যকর হবে না এমন বিধান কার্যকর করতে হবে। হাজার হাজার ফেস্টুন ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় রয়ে গেছে। প্রতি ওয়ার্ডে একটা থাকবে বলা হচ্ছে, কিন্তু অনেকে বেশি রাখছে মনিটরিং করতে হবে। পোস্টারও বন্ধ করে দিয়েছেন। পোস্টার-বিলবোর্ডের বিষয়ে রিথিংক করতে হবে। মানুষজন আসা-যাওয়া পথে যাতে দেখতে পায়, এটা ছাড়া হবে না। নির্বাচই প্রচারণায় বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ নিতে হবে।’
পোস্টার ও ফেস্টুন নিয়ে ভাবা দরকার ও প্রচার প্রার্থীর নিজের দায়িত্বে দিলে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাকি।
*আরও কয়েক দলের প্রতিনিধি*
তফসিল ঘোষণার পর ইসির পরিপূর্ণ ভূমিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে এ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, ‘যে ক্ষমতায় সব কিছু থাকবে সিইসির। তার ডিরেকশন, প্রজ্ঞায়, তার ক্ষমতায় একটা গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’
বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপির সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, ‘ভোটের আগে ৭ দিন ও ভোটের পরে ১০ দিন সেনাবাহিনীসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর ইরান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমরা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে একটা জায়গায় দেখতে চাই। সুন্দর নির্বাচন চাই, একটা ভোট উৎসব চাই।
বিরাজমান অস্থির পরিবেশে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন ইনসানিয়াত বিপ্লবের মহাসচিব শেখ রায়হান রহবার। সেক্ষেত্রে মোবাইল ‘ডিজিটাল থাম্ব’ নামে একটি পদ্ধতি প্রবর্তনের সুপারিশ রাখেন তিনি।
জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী লীগের দোসরদের সঙ্গে যেন ইসি সংলাপ না করে, সেই সঙ্গে তাদের যেন নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া না হয়- এ দাবি জানান গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টা যাতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সে ব্যবস্থা নিতে বলে গণঅধিকার পরিষদ।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দুপুরের সংলাপে অংশ নেন বিএনপির নেতারা -সংবাদ
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ধারাবাহিক সংলাপে বুধবার,(১৯ নভেম্বর ২০২৫) অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১২টি রাজনৈতিক দল।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দুপুরের পর্বে সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপি বলেছে, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে জেলা প্রশাসদের (ডিসি) রিটানির্ং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া বাদ দিতে হবে। তাদের বদলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটানিং কর্মকর্তা করতে হবে।
তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার করলে ইসি কি ঠেকাতে পারবে: প্রশ্ন এনসিপির জহিরুল ইসলাম মূসার
প্রশাসন ও পুলিশে সাম্প্রতিক রদবদল ‘কোনো একটা জায়গা থেকে হচ্ছে’: সন্দেহ জামায়াতের মিয়া গোলাম পরওয়ারের
সরকারের কাছে ইসি নতজানু থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না: বিএনপির আবদুল মঈন খান
ডিসিদের নয়, ইসি থেকে রিটানিং কর্মকর্তা করার প্রস্তাব বিএনপির
তফসিলের পর লটারি করে একযোগে ডিসি-এসপি রদবদল চায় জামায়াত
ইসিকে বড় দলের কাছে নতি স্বীকার না করার আহ্বান এনসিপির
এদিন সকালের পর্বে সংলাপে অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী বলেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর একইদিনে একযোগে জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে রদবদল করতে হবে। একযোগে ডিসি-এসপিদের বদলি করা হলে প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে ইসির ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
সকালের পর্বে সংলাপে অংশ নিয়ে নতুন নিবন্ধন পাওয়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, ইসিকে শক্ত থাকতে হবে। বড় দলের চাপে নতি স্বীকার করা যাবে না।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এনসিপি ও জামায়াতসহ সংলাপে অংশ নেয় বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
দুপুর ২টা-৪টা পর্যন্ত বিএনপিসহ সংলাপে অংশ নেয়া দলগুলো হলো- গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) এবং নতুন নিবন্ধন পাওয়অ দল বাসদ মার্কসবাদী।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সংলাপে নির্বাচন কমিশনাররা, ইসির সিনিয়র সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে চার দিনে ৪৮টি দলের সঙ্গে সংলাপ করলো ইসি।
*ইসি থেকে রিটানিং কর্মকর্তা *
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ‘নতজানু’ না হয়ে নির্বাচন কমিশনকে ‘শক্ত’ অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, ‘আমরা আপনাদের সব সহযোগিতা করবো। আমরা চাই আপনারা শক্ত থাকেন, আপনারা সিদ্ধান্তগুলো নেন। ইউ হ্যাভ দ্য পাওয়ার অ্যান্ড দ্য অথোরিটি। সরকার দিয়েছে, সংবিধান আপনাদের সেই অথোরিটি দিয়েছে।’
ওই নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব দেয় বিএনপি। সংলাপে মঈন খান তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারেরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ক্ষেত্রবিশেষে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। এর আগেও বিভিন্ন নির্বাচনের আগে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের এ দায়িত্ব দেয়ার দাবি উঠেছিল।
সংলাপে বিএনপি নেতা মঈন খান বলেন, ‘নির্বাচনে কয়েক লাখ নির্বাচন কর্মকর্তা প্রয়োজন। ইসির এত লোকবল নেই। কিন্তু ইসির যতটুকু জনবল আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। ৩০০ আসনে সরকারের কাছ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহাকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ধার করে আনা হয়। ইসির এটুকু জনবল আছে।’
ইসির উদ্দেশ্যে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘একবার সাহস করে এই সিদ্ধান্তটা নেন যে রিটার্নিং অফিসার আপনাদের নির্বাচন কমিশন থেকে থাকবে। অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার আপনাদের নির্বাচন কমিশনের ডেডিক্যাটেড লোকেরা হবে। এই একটা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে।’
আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চারটি বোতাম আছে। একটি হচ্ছে ডিসি, একটি হচ্ছে এসপি, একটি হচ্ছে ইউএনও আরেকটি হচ্ছে ওসি। এ চারটি বোতাম টিপা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে, এরপর ৩০০ আসনে নির্বাচনের ফলাফল বের হয়ে আসে। এ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’
*লটারিতে একযোগ রদবদল*
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে সাম্প্রতিক রদবদল ‘কোনো জায়গা থেকে করা হচ্ছে’, সেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। তফসিল ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসনের কর্তৃত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে এলে সব ডিসি-এসপিকে একযোগে বদলির দাবি জানিয়েছে দলটি। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে লটারির মাধ্যমে প্রশাসন ও পুলিশে বদলি করার পরামর্শ দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।
সংলাপে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ ও আইনজীবী শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন।
গত কিছু দিনে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদলের প্রসঙ্গ ধরে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘রদবদলের বিষয়টা এক মাসে হয়নি, ২০ দিনও হয়নি, ডিসি সেখানে রদবদল হয়েছে। মনে হয়েছে যেন কোনো ডিজাইন করে একটা উদ্দেশে কোনো জায়গা থেকে এটা হচ্ছে।’
তফসিলের পর লটারির মাধ্যমে বদলির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনে নিরপেক্ষতায় আস্থা রাখার উপায় হলো লটারির মাধ্যমে ট্রান্সফার হওয়া। যার যেখানে তকদিরে আছে। প্রধান উপদেষ্টাকেও বলেছি, এ রকম করলে প্রশ্ন থাকবে না। উনার বক্তব্যে বোঝা গেল- কোনোভাবে কোনো জায়গা থেকে শুরু করেছে। কেউ জানছেন কি, জানছেন না, কিছুটা অস্পষ্ট কথা উনার থেকে বোঝা যায়।’
আচরণবিধি ও প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটিংয়ে গণভোটের প্রসঙ্গ উঠে না আসার বিষয়টি তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতে গণভোটের আয়োজন এবং প্রচারের দায়িত্বও ইসির। সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোটের ব্যালট নিয়ে তাদের পরিকল্পনাও জানাতে হবে।
*সেনা বাড়ানোর প্রস্তাব*
ভোটকেন্দ্রে সেনা মোতায়েনের দাবি জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘একজন সেনা সদস্য নয়, বরং ৪-৫ জন সদস্য নিয়োজিত করা গেলে ভালো হয়।’
বর্তমান ইসির প্রতি ‘আস্থা’ থাকার কথা বললেও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি জানান হামিদুর রহমান আযাদ। তিনি বলেন, ‘ইসি স্বাধীন হতে হলে অবশ্যই সাহসী হতে হবে। আশাবাদী, আপনারা সাহসী হবেন। সাহস দেখালে হবে না শুধু; স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আজকের সংলাপ খুবই গরুত্বপূর্ণ, এটা যেন ট্র্যাডিশনাল ধারাবাহিকতা না হয়, ব্যতিক্রম চাই।’
মাঠ প্রশাসনের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পর্যবেক্ষণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে কিনা ডাউট। রক্ষক যেন ভক্ষক না হয়। আইন প্রতিপালন যেন হয়। সরকার পরিবর্তন হয়েছে, আমলাতন্ত্রের মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন কম এসেছে। এখানে অনেক সমস্যা জটিলতা আছে। দলীয় সরকার না হলেও দলকানা লোক সরকারে আছে।’
অবৈধ অস্ত্র, বৈধ অস্ত্র উদ্ধারে উপকূলীয়, পার্বত্য এলাকায় বিশেষ নজর দেয়ার তাগিদ দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, জনগণের নিরাপত্তা ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে ‘ভালো কাজ নষ্ট হয়ে যাবে’।
*জনপ্রশাসনের নিরপেক্ষতা*
জনপ্রশাসনে রদবদলে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আযাদ বলেন, ‘প্রশাসনে নিয়োগ বদলিতে স্বচ্ছতা না থাকলে হবে না। গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে নিয়োগ বদলি হচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন দেখানো হচ্ছে। একটি দল আছে শুধু...এদের নিয়োগ দেয়া যাবে না। এ রিপোর্টের ভিত্তিতে নিয়োগ হলে কীভাবে নির্বাচন হবে? হৈ চৈ হবে। লটারির ভিত্তিতে ডিসি, এসপি, ওসি, নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ বদলি করতে হবে।’ বডিওর্ন ক্যামেরার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা রাখার পক্ষে মত দেন তিনি।
ব্যালট পেপার ছাপানো নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘ব্যালট পেপার নকল নিয়ে কথা এসেছে, ডাকসু, চাকসু নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। এক্সট্রা ব্যালট পেপার যেন না যায়। এসব নজর দিতে হবে।’
শিশির মনির বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থী, তার পক্ষে একজনকে শাস্তির বিধান কে কার্যকর করবে এবং দলের অর্থদণ্ডের বিধান নিয়ে ‘অস্পষ্টতা’ রয়েছে।
*বড় দলের চাপ*
জোট করলেও প্রার্থীর স্ব-স্ব দলের প্রতীকে ভোট করা নিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বিধান যুক্ত করায় ইসিকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে প্রশংসা করেছে বৈষম্যবিরোধীদের গড়া দল এনসিপি। বড় কোনো দলের চাপ থাকলেও ইসির সিদ্ধান্ত যেন অটুট থাকে সে দাবি জানিয়েছে দলটি। তবে এবার ভোটের প্রচারে পোস্টার বন্ধ করে দিয়ে নানা ধরনের ‘অমূলক’ বিষয় যুক্ত করায় আচরণবিধি বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির নেতারা।
সংলাপে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মূসা ও এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি তাসনিম জারা অংশ নেন।
নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘জোট করলেও নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবেÑ ইসির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। কোনো বড় দলের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। ইসি যেন নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থাকেন সে আহ্বান জানাই।’
আগের বিধান অনুযায়ী জোট মনোনীত প্রার্থীরা অন্য দলের প্রতীকেও ভোট করতে পারতো। এবার আরপিও সংশোধিত হয়েছে, সেক্ষেত্রে জোট করলেও ভোট করতে হবে প্রার্থীর নিজ দলের প্রতীকে। বিএনপির পক্ষ থেকে আরপিও বিধানটি ফের সংশোধনের তাগিদ দিয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ও আইন উপদেষ্টার কাছে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমাদের এই ইলেকশনের বড় একটি বিষয় হচ্ছে গণভোট। গণভোট কী প্রক্রিয়ায় হবে? কীভাবে আপনারা এটা বাস্তবায়ন করবেন? এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আমরা কবে পাব? কবে আমরা প্রচারণা করতে পারবো সে বিষয়ে জানাবেন।’ প্রবাসী ভোটারদের গণভোটে সম্পৃক্ত করা, ব্যাপক প্রচারণা এবং ভোটের আগেও যারা ১৮ বছর হবে তাদের তালিকাভুক্ত করার প্রস্তাব দেন তিনি।
*তারেক রহমানের ছবি*
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মূসা বলেন, ‘নির্বাচনী আমেজ মানে পোস্টারিং, মাইকিং, জনসম্পৃক্ততা ও জনসভাকে বুঝি। এখানে এমন অন্যায্য বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে, এটা বাস্তবায়নের করার কোনো সক্ষমতা ইসির নেই।...এটা নিপীড়নমূলক আইন হবে যদি নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে করে, শক্তিশালী কারওর বিরুদ্ধে একই বিধান ব্যবহারের সক্ষমতাও আপনার নেই।’
সার্বিকভাবে বিদ্যমান আচরণবিধি অবাবস্তবভিত্তিক বলে মনে করেন তিনি। জহিরুল ইসলাম মূসার ভাষ্য, ‘এটা নির্বাচনী ঐতিহ্যকে অস্বীকার করেছে। পরিবেশবান্ধব করেছে বটে, অবকাঠামোগত সুবিধা অস্বীকার করেছেন। পোস্টার নিষিদ্ধ করেছেন।...প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রার্থীরা অল্প সময়ে চটের ব্যাগে কাপড়ের প্রিন্ট দিয়ে প্রচারণা করবেন কীভাবে? এটা অমূলক।’
আচরণবিধিতে (৭-এর চ দফা) বলা হয়েছে, দলীয় প্রার্থী কেবল তার বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি ব্যানার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ও ফেস্টুনে ছাপাতে পারবেন। প্রচারণার ছবি পোট্রেট সাধারণ হতে হবে নির্ধারিত মাপের (আয়তন ৬০ ও ৪৫ সেমি এর মধ্যে)।
জহিরুল ইসলাম মূসা আচরণবিধির ধারা তুলে ধরে বিএনপির নাম নিয়ে বলেন, ‘ইসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন করছি। আপনাদের রিয়েল টেস্ট হবে। বিএনপির প্রধান দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে বিএনপির প্রার্থীরা (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার করলে বা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের তার ওপরে আচরণবিধি প্রয়োগ ব্যবহার করতে হবে।’
*পোস্টার-ফেস্টুনের পক্ষে গণসংহতি*
অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা না করে আইন-বিধি চূড়ান্ত করায় ইসির সমালোচনা করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচন কমিশন নিশ্চিতে সাংবিধানিক পরিবর্তন ও নিয়োগের প্রস্তাবনাও তুলে ধরেন তিনি।
ভোটের আগে নির্বাচনি পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়ে প্রধান সমন্বয়ক বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিই বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য একটা মনিটরিং কমিটি হওয়া দরকার। দলের প্রতিনিধিসহ সরকার, ইসির প্রতিনিধি নিয়ে এ কমিটি হতে পারে। দলের সহযোগিতা যখন করেছে, তখন ভালো নির্বাচন হয়েছে।’
জোট মনোনীত প্রার্থীদের জন্য প্রতীক বাছাই উন্মুক্ত রাখার পক্ষে মত দেন প্রধান সমন্বয়ক। তিনি বলেন, ‘জোটের প্রতীক নিয়ে বাধা রাখা সমীচীন নয়। অনেকে নিজস্ব প্রতীকে ভোট করবেন। জোটগতভাবে নির্বাচন করলে অন্য দলের প্রতীকে ভোট করার সুযোগ রাখা দরকার।’
সংসদ ও গণভোটের জন্য আলাদা বুথ ও গণনা রাখার সুপারিশ করেন জুনায়েদ সাকি।
পোস্টার ও ব্যানার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফেস্টুন কার্যকর হবে না এমন বিধান কার্যকর করতে হবে। হাজার হাজার ফেস্টুন ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় রয়ে গেছে। প্রতি ওয়ার্ডে একটা থাকবে বলা হচ্ছে, কিন্তু অনেকে বেশি রাখছে মনিটরিং করতে হবে। পোস্টারও বন্ধ করে দিয়েছেন। পোস্টার-বিলবোর্ডের বিষয়ে রিথিংক করতে হবে। মানুষজন আসা-যাওয়া পথে যাতে দেখতে পায়, এটা ছাড়া হবে না। নির্বাচই প্রচারণায় বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ নিতে হবে।’
পোস্টার ও ফেস্টুন নিয়ে ভাবা দরকার ও প্রচার প্রার্থীর নিজের দায়িত্বে দিলে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাকি।
*আরও কয়েক দলের প্রতিনিধি*
তফসিল ঘোষণার পর ইসির পরিপূর্ণ ভূমিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে এ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, ‘যে ক্ষমতায় সব কিছু থাকবে সিইসির। তার ডিরেকশন, প্রজ্ঞায়, তার ক্ষমতায় একটা গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’
বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপির সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, ‘ভোটের আগে ৭ দিন ও ভোটের পরে ১০ দিন সেনাবাহিনীসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর ইরান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমরা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে একটা জায়গায় দেখতে চাই। সুন্দর নির্বাচন চাই, একটা ভোট উৎসব চাই।
বিরাজমান অস্থির পরিবেশে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন ইনসানিয়াত বিপ্লবের মহাসচিব শেখ রায়হান রহবার। সেক্ষেত্রে মোবাইল ‘ডিজিটাল থাম্ব’ নামে একটি পদ্ধতি প্রবর্তনের সুপারিশ রাখেন তিনি।
জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী লীগের দোসরদের সঙ্গে যেন ইসি সংলাপ না করে, সেই সঙ্গে তাদের যেন নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া না হয়- এ দাবি জানান গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টা যাতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সে ব্যবস্থা নিতে বলে গণঅধিকার পরিষদ।