ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ভারত তার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। এজন্য মোদির সরকারের প্রতি তিনি চিরকৃতজ্ঞ। ভারতের সংবাদ মাধ্যম এএনআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি এনডিটিভিও প্রকাশ করেছে।
জয় বলেন, ‘ভারত সব সময়ই আমাদের ভালো বন্ধু। সংকটের সময় ভারত মূলত আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে।’
গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল দাবি করে জয় আরও বলেন, ‘তাই আমার মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকারের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।’
গত বছরের জুলাইয়ে তীব্র গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে ক্ষমতাচ্যুত হন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। এরপর অন্তর্বর্তী ক্ষমতা নিয়ে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের করা হয়। মামলার শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণের পর গত ১৭ নভেম্বর প্রথম একটি মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-াদেশ দিয়েছে। সরকার মামলার রায় কার্যকর করার জন্য শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে আহবান জানিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাস্ট্রে বসবাসকারী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এমন বক্তব্য দিলেন।
এএনআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জয় দাবি করেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার হাসিনাকে মৃত্যুদ- দেয়ার সময় বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। যদিও হাসিনা পলাতক থাকায় তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেয় রাষ্ট্র। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনই বিচার প্রক্রিয়া ‘স্বচ্ছ’ ছিল এবং তিনি ‘চাপহীন দায়িত্ব পালন করেছেন’ বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।
সম্প্রতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নেয়া আইনি পদক্ষেপের বিষয়টি খারিজ করে দিয়েছেন জয়। একই সঙ্গে সীমান্তের ওপার থেকে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদের হুমকি সম্পর্কে নয়াদিল্লিকে সতর্ক করেছেন।
শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জয় বলেন, জঙ্গিরা তাকে (শেখ হাসিনা) হত্যার পরিকল্পনা করছে। এ সময় হাসিনাকে বাংলাদেশের প্রত্যর্পণের অনুরোধের বৈধতা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন জয়। একই সঙ্গে তার মায়ের বিরুদ্ধে মামলায় বিচারিক রীতিনীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে জয় বলেছেন, ‘তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) বিচারের আগেই ১৭ জন বিচারককে বরখাস্ত করেছে, সংসদীয় অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে আইন সংশোধন করেছে এবং তার (শেখ হাসিনা) আইনজীবীদের আদালতের কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করেছে। যখন কোনো যথাযথ প্রক্রিয়া থাকে না, তখন কোনো দেশই প্রত্যর্পণ করবে না।’
জয় বলেন, তার বিশ্বাস যে, বাংলাদেশে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার অভাবের বিষয়টির উল্লেখ করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করবে।
শেখ হাসিনার নাটকীয় পলায়নের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জয় তার মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য ভারতকে কৃতিত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘ভারত মূলত আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। যদি তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে না যেতেন, তাহলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের।’ জয়ের দাবি- শেখ হাসিনার আমলে দোষী সাব্যস্ত ‘হাজার হাজার সন্ত্রাসী’কে মুক্তি দিয়েছে অন্তর্বর্তী ইউনূস সরকার। এছাড়া লস্কর-ই-তৈয়বা এখন বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে কাজ করছে, যাদের স্থানীয় শাখার সঙ্গে দিল্লিতে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার যোগসূত্র রয়েছে। জয় বলেন, ‘আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী মোদি সম্ভাবত বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে খুব, খুব উদ্বিগ্ন।’ এছাড়া গত বছরের বিক্ষোভে অনুপ্রবেশকারী জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহের জন্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে দোষারোপ করেন জয়। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সশস্ত্র ব্যক্তিদের ভিডিওর উদ্ধৃতি দিয়ে জয় বলেন, ‘নিঃসন্দেহে, এই অস্ত্রগুলো উপমহাদেশের কোথাও থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল এবং একমাত্র সম্ভাব্য উৎস হলো আইএসআই।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেন, বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন করতে বাইডেন প্রশাসন ইউএসএইডের মাধ্যমে লাখ লাখ ডলার ব্যয় করে। ওই মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে জয় অভিযোগ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন তার পূর্বসূরির তুলনায় ‘সন্ত্রাসবাদের হুমকি এবং বাংলাদেশে ইসলামবাদের উত্থান সম্পর্কে বেশি উদ্বিগ্ন’ বলে মনে হয়েছিল। যদিও বর্তমান মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানান জয়। তিনি বলেন, ‘এ বছরের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন যে আগের প্রশাসন ইউএসএআইডির মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ভারত তার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। এজন্য মোদির সরকারের প্রতি তিনি চিরকৃতজ্ঞ। ভারতের সংবাদ মাধ্যম এএনআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি এনডিটিভিও প্রকাশ করেছে।
জয় বলেন, ‘ভারত সব সময়ই আমাদের ভালো বন্ধু। সংকটের সময় ভারত মূলত আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে।’
গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল দাবি করে জয় আরও বলেন, ‘তাই আমার মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকারের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।’
গত বছরের জুলাইয়ে তীব্র গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে ক্ষমতাচ্যুত হন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। এরপর অন্তর্বর্তী ক্ষমতা নিয়ে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের করা হয়। মামলার শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণের পর গত ১৭ নভেম্বর প্রথম একটি মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-াদেশ দিয়েছে। সরকার মামলার রায় কার্যকর করার জন্য শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে আহবান জানিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাস্ট্রে বসবাসকারী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এমন বক্তব্য দিলেন।
এএনআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জয় দাবি করেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার হাসিনাকে মৃত্যুদ- দেয়ার সময় বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। যদিও হাসিনা পলাতক থাকায় তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেয় রাষ্ট্র। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনই বিচার প্রক্রিয়া ‘স্বচ্ছ’ ছিল এবং তিনি ‘চাপহীন দায়িত্ব পালন করেছেন’ বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।
সম্প্রতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নেয়া আইনি পদক্ষেপের বিষয়টি খারিজ করে দিয়েছেন জয়। একই সঙ্গে সীমান্তের ওপার থেকে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদের হুমকি সম্পর্কে নয়াদিল্লিকে সতর্ক করেছেন।
শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জয় বলেন, জঙ্গিরা তাকে (শেখ হাসিনা) হত্যার পরিকল্পনা করছে। এ সময় হাসিনাকে বাংলাদেশের প্রত্যর্পণের অনুরোধের বৈধতা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন জয়। একই সঙ্গে তার মায়ের বিরুদ্ধে মামলায় বিচারিক রীতিনীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে জয় বলেছেন, ‘তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) বিচারের আগেই ১৭ জন বিচারককে বরখাস্ত করেছে, সংসদীয় অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে আইন সংশোধন করেছে এবং তার (শেখ হাসিনা) আইনজীবীদের আদালতের কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করেছে। যখন কোনো যথাযথ প্রক্রিয়া থাকে না, তখন কোনো দেশই প্রত্যর্পণ করবে না।’
জয় বলেন, তার বিশ্বাস যে, বাংলাদেশে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার অভাবের বিষয়টির উল্লেখ করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করবে।
শেখ হাসিনার নাটকীয় পলায়নের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জয় তার মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য ভারতকে কৃতিত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘ভারত মূলত আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। যদি তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে না যেতেন, তাহলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের।’ জয়ের দাবি- শেখ হাসিনার আমলে দোষী সাব্যস্ত ‘হাজার হাজার সন্ত্রাসী’কে মুক্তি দিয়েছে অন্তর্বর্তী ইউনূস সরকার। এছাড়া লস্কর-ই-তৈয়বা এখন বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে কাজ করছে, যাদের স্থানীয় শাখার সঙ্গে দিল্লিতে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার যোগসূত্র রয়েছে। জয় বলেন, ‘আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী মোদি সম্ভাবত বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে খুব, খুব উদ্বিগ্ন।’ এছাড়া গত বছরের বিক্ষোভে অনুপ্রবেশকারী জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহের জন্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে দোষারোপ করেন জয়। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সশস্ত্র ব্যক্তিদের ভিডিওর উদ্ধৃতি দিয়ে জয় বলেন, ‘নিঃসন্দেহে, এই অস্ত্রগুলো উপমহাদেশের কোথাও থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল এবং একমাত্র সম্ভাব্য উৎস হলো আইএসআই।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেন, বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন করতে বাইডেন প্রশাসন ইউএসএইডের মাধ্যমে লাখ লাখ ডলার ব্যয় করে। ওই মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে জয় অভিযোগ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন তার পূর্বসূরির তুলনায় ‘সন্ত্রাসবাদের হুমকি এবং বাংলাদেশে ইসলামবাদের উত্থান সম্পর্কে বেশি উদ্বিগ্ন’ বলে মনে হয়েছিল। যদিও বর্তমান মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানান জয়। তিনি বলেন, ‘এ বছরের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন যে আগের প্রশাসন ইউএসএআইডির মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল।’