বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, যে সচিবালয় থাকবে উচ্চ আদালয়ের অধীনে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ প্রস্তাব নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে আমরা মাসদার হোসেনের মামলার রায় পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠার শেষ ধাপ সম্পন্ন করলাম। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করা হবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের গত ২০-৩০ বছরের আকাঙ্খা পূরণ হবে।’
১৯৯৫ সালে বিসিএস বিচার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাসদার হোসেন ও তার সহকর্মীরা বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব থেকে মুক্ত করার দাবিতে এ মামলা করেন। ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত রায় দেয়। সেই রায়ের ২৬ বছর পর বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় করার পদক্ষেপে সরকারের অনুমোদন মিলল।
বিফ্রিংয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আগামী সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ- ২০২৫ এর গেজেট জারি করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও ছিল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সব রাজনৈতিক দল এর পক্ষে মত দিয়েছে। বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয়ের নীতিগত অনুমোদন আগেই হয়েছিল। আজ চূড়ান্ত অনুমোদন হল।’
এ অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার পর নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলাজনিত বিষয়, ছুটির পাশাপাশি নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগর সব কিছু সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয় করবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অধ্যাদেশ জারি হলে শুধু বিচার কাজে নিয়োজিত বিচারকরা থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু অন্যত্র প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা বিচারকরা আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত থাকবেন। যেমন- নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জুডিশিয়াল এডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, আইন কমিশন এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা আইন মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত থাকবেন।
কখন থেকে এই সিদ্ধান্তের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখা যাবে? – সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আশা করছি কয়েক মাসের মধ্যে উচ্চ আদালতের সচিবালয় সম্পূর্ণ কার্যকর হয়ে যাবে।’
উচ্চ আদালতের সচিবালয়ের মাধ্যমে নিম্ন আদালতের আর্থিক ব্যবস্থাপনা বা আর্থিক স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা হয়েছে বলে তুলে ধরেন তিনি।
প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের সচিবালয়ের নেতৃত্বে একটা যাচাই বাছাই কমিটি থাকবে। যাচাইবাছাই কমিটি প্রকল্প গ্রহণ করবে। সেই প্রকল্প একটা কমিটির কাছে পাঠানো হবে পরামর্শের জন্য। প্রধান বিচারপতির অনুমোদনক্রমে আপিল বিভাগের একজন বিচারক সেই কমিটির প্রধান থাকবেন। সুপারিশকৃত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় যদি ৫০ কোটি টাকার কম হয় সেক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি এটা অনুমোদন করবেন। আর ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে এটা পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে একনেকের সভায় উপস্থাপন করবেন প্রধান বিচারপতি।’ আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘উচ্চ আদালতের বিচারকদের সঙ্গে সচিবালয়ের সব ব্যয় সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায়যুক্ত থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকে যখন উচ্চ আদালতের বাজেট অনুমোদন করা হবে। এই বাজেট ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা উচ্চ আদালতের থাকবে।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, যে সচিবালয় থাকবে উচ্চ আদালয়ের অধীনে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ প্রস্তাব নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে আমরা মাসদার হোসেনের মামলার রায় পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠার শেষ ধাপ সম্পন্ন করলাম। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করা হবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের গত ২০-৩০ বছরের আকাঙ্খা পূরণ হবে।’
১৯৯৫ সালে বিসিএস বিচার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাসদার হোসেন ও তার সহকর্মীরা বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব থেকে মুক্ত করার দাবিতে এ মামলা করেন। ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত রায় দেয়। সেই রায়ের ২৬ বছর পর বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় করার পদক্ষেপে সরকারের অনুমোদন মিলল।
বিফ্রিংয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আগামী সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ- ২০২৫ এর গেজেট জারি করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও ছিল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সব রাজনৈতিক দল এর পক্ষে মত দিয়েছে। বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয়ের নীতিগত অনুমোদন আগেই হয়েছিল। আজ চূড়ান্ত অনুমোদন হল।’
এ অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার পর নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলাজনিত বিষয়, ছুটির পাশাপাশি নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগর সব কিছু সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয় করবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অধ্যাদেশ জারি হলে শুধু বিচার কাজে নিয়োজিত বিচারকরা থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু অন্যত্র প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা বিচারকরা আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত থাকবেন। যেমন- নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জুডিশিয়াল এডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, আইন কমিশন এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা আইন মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত থাকবেন।
কখন থেকে এই সিদ্ধান্তের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখা যাবে? – সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আশা করছি কয়েক মাসের মধ্যে উচ্চ আদালতের সচিবালয় সম্পূর্ণ কার্যকর হয়ে যাবে।’
উচ্চ আদালতের সচিবালয়ের মাধ্যমে নিম্ন আদালতের আর্থিক ব্যবস্থাপনা বা আর্থিক স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা হয়েছে বলে তুলে ধরেন তিনি।
প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের সচিবালয়ের নেতৃত্বে একটা যাচাই বাছাই কমিটি থাকবে। যাচাইবাছাই কমিটি প্রকল্প গ্রহণ করবে। সেই প্রকল্প একটা কমিটির কাছে পাঠানো হবে পরামর্শের জন্য। প্রধান বিচারপতির অনুমোদনক্রমে আপিল বিভাগের একজন বিচারক সেই কমিটির প্রধান থাকবেন। সুপারিশকৃত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় যদি ৫০ কোটি টাকার কম হয় সেক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি এটা অনুমোদন করবেন। আর ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে এটা পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে একনেকের সভায় উপস্থাপন করবেন প্রধান বিচারপতি।’ আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘উচ্চ আদালতের বিচারকদের সঙ্গে সচিবালয়ের সব ব্যয় সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায়যুক্ত থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকে যখন উচ্চ আদালতের বাজেট অনুমোদন করা হবে। এই বাজেট ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা উচ্চ আদালতের থাকবে।’