ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেছেন, শুক্রবার,(২১ নভেম্বর ২০২৫) বাংলাদেশে যে ভূমিকম্প হয়েছে তার চেয়ে বড় ভূমিকম্প আগামীতে হতে পারে, শুক্রবার ভূমিকম্প তারই সতর্কবাণী।
শুক্রবার ঢাকায় ভূমিকম্প হওয়ার পর এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ে ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার এমন সতর্কবার্তা দেন।
শুক্রবার সকাল ১০:৩৮ মিনিটের ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৫.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এটা দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। এ সম্পর্কে হুমায়ুন আখতার বলেন, এই ভূমিকম্প এত বড় ঝাঁকুনি ও শক্তিশালী হওয়ার কারণ হলো- দেশের পূর্ব প্রান্তটা হচ্ছে বার্মা প্লেট, পশ্চিমটা হচ্ছে ইন্ডিয়া প্লেট, এই সংযোগস্থলে ভূমিকম্প হয়েছে। এই সংযোগটা এতদিন আটকে ছিল। এই সংযোগটা শুক্রবারের ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে আটকানোটা বা লকটা খুলে গেছে। ৮.২-৯ মাত্রার শক্তির ভূমিকম্প এখানে জমা হয়ে আছে। সেই শক্তির সামান্য অংশ শুক্রবার বের হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে যে মাত্রার ভূমিকম্পের কথা আশঙ্কা করছি সেটা হলে ঢাকা মৃত্যুপুরীতে রূপ নিবে, সরকার পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হবে ঢাকাকে।
অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, প্রযুক্তিগতভাবে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা দেয়ার এখনও সে রকম কিছু আবিষ্কৃত হয়নি। আমাদের দেশ তো ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। এখন সামনে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে। আজকের এই ভূমিকম্প সেই সতর্কবাণী দিচ্ছে। প্লেট যেটা আটকেছিল, সেটা আটকানো অবস্থা থেকে খুলে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে আরও বড় ভূমিকম্প হবে। আমরা ২০১৬ সাল থেকে পূর্বাভাস দিয়েছিলাম ৮ মাত্রা শক্তির ভূমিকম্প এখানে জমা হয়ে আছে। সেই শক্তি সামান্য অংশ আজকে বের হলো।
তিনি আরও বলেন, এর আগে ২০০৩ সালে রাঙ্গামাটিতে ভারত সীমান্তের কাছাকাছি বরকল ইউনিয়নে ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। মাটির ওপর কম্পনের যে তীব্রতা, এটা স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি। তবে ১৯১৮ সালে দেশের অভ্যন্তরে সর্বোচ্চ ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। আমরা সরকারকে বারবার বলে আসছি ভূমিকম্পে মহরার বিকল্প নাই। কিন্ত সরকার ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকার্যের জন্য কোটি কোটি টাকার বাজেট রাখে, সেখান থেকে দুর্নীতি করতে পারে। কিন্তু যথাযথ কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির বলেছেন, বিগত কয়েক দশকে সংঘটিত হওয়া ভূমিকম্পের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প। এই সময়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ৪-৫ ডিগ্রির সামান্য বেশি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে এগুলোর উৎপত্তিস্থল দেশের বাহিরে। যে কোনো সময় বাংলাদেশে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে। ঠিক কবে হবে সেটা আমরা বলতে পারিনা।২৩ মাসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সর্বশেষ ১৯ ভূমিকম্প
শুক্রবার সকাল ১০:৩৮ মিনিটের ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৫.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এটির উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে। এটি মাঝারি ধরনের। এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৩ জন মারা গেছে। এর আগে চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর দেশের অভ্যন্তরে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। সেদিন দুপুর ১২:১৯ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এটির উৎপত্তিস্থল ছিল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসের আজ ২১ তারিখ পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে ১৯টি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। এর মধ্যে শুধু গত ১৪ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত) সংঘটিত হয়েছে ১১টি ভূমিকম্প। এছাড়া ২০২৪ সালে ১২টি ভূমিকম্প হয়। আর চলতি ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত দেশে ৭টি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে সিলেটেই ঘটেছে সর্বাধিক ৮টি। এছাড়া দিনাজপুরে ২টি, রংপুরে ২টি, পাবনায় ১টি, কুমিল্লায় ১টি, শরিয়তপুরে ১টি এবং টাঙ্গাইলে ১টি, রাঙ্গামাটিতে ১টি, চুয়াডাঙ্গায় ১টি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল শরিয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলায়, ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর ঢাকা থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪.১। তবে ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবরের পর শুক্রবার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেছেন, শুক্রবার,(২১ নভেম্বর ২০২৫) বাংলাদেশে যে ভূমিকম্প হয়েছে তার চেয়ে বড় ভূমিকম্প আগামীতে হতে পারে, শুক্রবার ভূমিকম্প তারই সতর্কবাণী।
শুক্রবার ঢাকায় ভূমিকম্প হওয়ার পর এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ে ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার এমন সতর্কবার্তা দেন।
শুক্রবার সকাল ১০:৩৮ মিনিটের ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৫.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এটা দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। এ সম্পর্কে হুমায়ুন আখতার বলেন, এই ভূমিকম্প এত বড় ঝাঁকুনি ও শক্তিশালী হওয়ার কারণ হলো- দেশের পূর্ব প্রান্তটা হচ্ছে বার্মা প্লেট, পশ্চিমটা হচ্ছে ইন্ডিয়া প্লেট, এই সংযোগস্থলে ভূমিকম্প হয়েছে। এই সংযোগটা এতদিন আটকে ছিল। এই সংযোগটা শুক্রবারের ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে আটকানোটা বা লকটা খুলে গেছে। ৮.২-৯ মাত্রার শক্তির ভূমিকম্প এখানে জমা হয়ে আছে। সেই শক্তির সামান্য অংশ শুক্রবার বের হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে যে মাত্রার ভূমিকম্পের কথা আশঙ্কা করছি সেটা হলে ঢাকা মৃত্যুপুরীতে রূপ নিবে, সরকার পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হবে ঢাকাকে।
অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, প্রযুক্তিগতভাবে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা দেয়ার এখনও সে রকম কিছু আবিষ্কৃত হয়নি। আমাদের দেশ তো ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। এখন সামনে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে। আজকের এই ভূমিকম্প সেই সতর্কবাণী দিচ্ছে। প্লেট যেটা আটকেছিল, সেটা আটকানো অবস্থা থেকে খুলে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে আরও বড় ভূমিকম্প হবে। আমরা ২০১৬ সাল থেকে পূর্বাভাস দিয়েছিলাম ৮ মাত্রা শক্তির ভূমিকম্প এখানে জমা হয়ে আছে। সেই শক্তি সামান্য অংশ আজকে বের হলো।
তিনি আরও বলেন, এর আগে ২০০৩ সালে রাঙ্গামাটিতে ভারত সীমান্তের কাছাকাছি বরকল ইউনিয়নে ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। মাটির ওপর কম্পনের যে তীব্রতা, এটা স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি। তবে ১৯১৮ সালে দেশের অভ্যন্তরে সর্বোচ্চ ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। আমরা সরকারকে বারবার বলে আসছি ভূমিকম্পে মহরার বিকল্প নাই। কিন্ত সরকার ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকার্যের জন্য কোটি কোটি টাকার বাজেট রাখে, সেখান থেকে দুর্নীতি করতে পারে। কিন্তু যথাযথ কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির বলেছেন, বিগত কয়েক দশকে সংঘটিত হওয়া ভূমিকম্পের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প। এই সময়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ৪-৫ ডিগ্রির সামান্য বেশি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে এগুলোর উৎপত্তিস্থল দেশের বাহিরে। যে কোনো সময় বাংলাদেশে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে। ঠিক কবে হবে সেটা আমরা বলতে পারিনা।২৩ মাসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সর্বশেষ ১৯ ভূমিকম্প
শুক্রবার সকাল ১০:৩৮ মিনিটের ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৫.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এটির উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে। এটি মাঝারি ধরনের। এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৩ জন মারা গেছে। এর আগে চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর দেশের অভ্যন্তরে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। সেদিন দুপুর ১২:১৯ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এটির উৎপত্তিস্থল ছিল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসের আজ ২১ তারিখ পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে ১৯টি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। এর মধ্যে শুধু গত ১৪ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত) সংঘটিত হয়েছে ১১টি ভূমিকম্প। এছাড়া ২০২৪ সালে ১২টি ভূমিকম্প হয়। আর চলতি ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত দেশে ৭টি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে সিলেটেই ঘটেছে সর্বাধিক ৮টি। এছাড়া দিনাজপুরে ২টি, রংপুরে ২টি, পাবনায় ১টি, কুমিল্লায় ১টি, শরিয়তপুরে ১টি এবং টাঙ্গাইলে ১টি, রাঙ্গামাটিতে ১টি, চুয়াডাঙ্গায় ১টি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল শরিয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলায়, ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর ঢাকা থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪.১। তবে ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবরের পর শুক্রবার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।