সাড়ে সাত ঘণ্টার মধ্যে আবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল বাংলাদেশ। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন স্থানে ঝাঁকুনি অনুভূত হয়।
মৃদু মাত্রার এই ভূমিকম্পে এক ঘণ্টা পরও কোথাও হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পায়নি ঢাকার ফায়ার সার্ভিস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডা, যা ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার পূর্বে বলে জানান কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাঈয়্যাৎ কবীর।
এর আগে শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে আরেকটি মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে সেটির মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩। প্রথমে এর উৎপত্তিস্থল সাভারের বাইপাইল বলা হলেও পরে জানানো হয়, উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর পলাশ।
দিনের দ্বিতীয় ভূমিকম্প সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, সন্ধ্যার এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৩। তাদের তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্র ছিল নরসিংদী থেকে ১১ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানায়, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭ এবং উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে আট কিলোমিটার উত্তর-উত্তর-পূর্বে।
সন্ধ্যাবেলার ভূমিকম্পের প্রায় এক ঘণ্টা পর রাজধানীর ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, “কোথাও থেকে কোনো ফোন আসেনি।”
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দুবার ভূমিকম্প অনুভব করার আগের দিনই, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে কয়েক দশকের মধ্যে দেশের অন্যতম প্রাণঘাতী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে তিন জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয় এবং আহত হন ছয় শতাধিক মানুষ। ঢাকার বহু ভবনে ফাটল দেখা দেয়, কোথাও কোথাও ভবন হেলে পড়ে।
রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার সেই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে; ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে এটির কেন্দ্র ছিল। স্থায়ীত্ব ছিল ২৬ সেকেন্ড।
তীব্র ঝাঁকুনির সেই ঘটনার পর করণীয় নির্ধারণে সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, “আজকের ভূমিকম্পটা বলা যেতে পারে ‘ফোরশক’। বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট যে ভূমিকম্পগুলো হয়, এটি সেগুলোর একটি।”
এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা দীর্ঘদিন ধরেই উল্লেখ করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ২ থেকে ৩ লাখ মানুষ হতাহত হতে পারে। পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে এবং ঢাকা শহরের প্রায় ৩৫ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে।
তাদের মতে, বড় ধরনের বিপর্যয় পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব না হলেও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে ভবনের মান পরীক্ষা, ঝুঁকির ভিত্তিতে ভবন আলাদা করা, নাগরিকদের সতর্ক করা এবং নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া আয়োজনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, “বাংলাদেশ কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও ঝুঁকির দিক দিয়ে খুব উপরে রয়েছে। ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেটের সংযোগ স্থলে যে পরিমাণ শক্তি জমা হয়েছে, সেটা বের হলে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে।
“এটা আগামীকালও হতে পারে, বা ৫০ বছর পরেও হতে পারে—সময় বলা সম্ভব নয়। তবে যখন হবে, সেটা হবে মারাত্মক। সাবডাকশন জোনের ভূমিকম্প ভয়ঙ্কর হয়।”
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
সাড়ে সাত ঘণ্টার মধ্যে আবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল বাংলাদেশ। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন স্থানে ঝাঁকুনি অনুভূত হয়।
মৃদু মাত্রার এই ভূমিকম্পে এক ঘণ্টা পরও কোথাও হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পায়নি ঢাকার ফায়ার সার্ভিস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডা, যা ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার পূর্বে বলে জানান কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাঈয়্যাৎ কবীর।
এর আগে শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে আরেকটি মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে সেটির মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩। প্রথমে এর উৎপত্তিস্থল সাভারের বাইপাইল বলা হলেও পরে জানানো হয়, উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর পলাশ।
দিনের দ্বিতীয় ভূমিকম্প সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, সন্ধ্যার এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৩। তাদের তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্র ছিল নরসিংদী থেকে ১১ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানায়, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭ এবং উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে আট কিলোমিটার উত্তর-উত্তর-পূর্বে।
সন্ধ্যাবেলার ভূমিকম্পের প্রায় এক ঘণ্টা পর রাজধানীর ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, “কোথাও থেকে কোনো ফোন আসেনি।”
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দুবার ভূমিকম্প অনুভব করার আগের দিনই, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে কয়েক দশকের মধ্যে দেশের অন্যতম প্রাণঘাতী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে তিন জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয় এবং আহত হন ছয় শতাধিক মানুষ। ঢাকার বহু ভবনে ফাটল দেখা দেয়, কোথাও কোথাও ভবন হেলে পড়ে।
রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার সেই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে; ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে এটির কেন্দ্র ছিল। স্থায়ীত্ব ছিল ২৬ সেকেন্ড।
তীব্র ঝাঁকুনির সেই ঘটনার পর করণীয় নির্ধারণে সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, “আজকের ভূমিকম্পটা বলা যেতে পারে ‘ফোরশক’। বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট যে ভূমিকম্পগুলো হয়, এটি সেগুলোর একটি।”
এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা দীর্ঘদিন ধরেই উল্লেখ করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ২ থেকে ৩ লাখ মানুষ হতাহত হতে পারে। পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে এবং ঢাকা শহরের প্রায় ৩৫ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে।
তাদের মতে, বড় ধরনের বিপর্যয় পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব না হলেও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে ভবনের মান পরীক্ষা, ঝুঁকির ভিত্তিতে ভবন আলাদা করা, নাগরিকদের সতর্ক করা এবং নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া আয়োজনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, “বাংলাদেশ কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও ঝুঁকির দিক দিয়ে খুব উপরে রয়েছে। ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেটের সংযোগ স্থলে যে পরিমাণ শক্তি জমা হয়েছে, সেটা বের হলে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে।
“এটা আগামীকালও হতে পারে, বা ৫০ বছর পরেও হতে পারে—সময় বলা সম্ভব নয়। তবে যখন হবে, সেটা হবে মারাত্মক। সাবডাকশন জোনের ভূমিকম্প ভয়ঙ্কর হয়।”