রাজধানীর লালবাগ এলাকার ছবি। গায়ে গায়ে লাগানো ভবন। ভূমিকম্প হলে এসব ভবন টিকবে কিনা সেটা যেমন বড় প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংসযজ্ঞের পর এখানে উদ্ধার কাজ কিভাবে করা হবে -সোহরাব আলম
দেশে গত সাড়ে ৩১ ঘণ্টায় চারবার ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার,(২২ নভেম্বর ২০২৫) সকালে একবার ও সন্ধ্যায় পরপর দুবার ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। এর আগে গতকাল শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা। গত শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে কয়েক দশকের মধ্যে দেশের সবচেয়ে তীব্র ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের কবলে পড়ে বাংলাদেশ। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীরই মাধবদীতে।
উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার বাড্ডা ও নরসিংদী
ঢাবিতে হুড়াহুড়িতে আহত ৬
এখনই করণীয় ঠিক করতে তাগিদ বিশেষজ্ঞদের
ভূমিকম্পের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবারও ঝাঁকুনিতে কাঁপলো দেশ। শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে এ ভূমিকম্প হয় বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাঈয়্যাৎ কবীর। তবে সাড়ে ৭ ঘণ্টার মধ্যে আবারও দুইবার ভূমিকম্পে কাঁপলো দেশ। শনিবার সন্ধ্যায় দুবার ভূমিকম্প হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে সেকেন্ডের ব্যবধানে রাজধানীর বাড্ডা ও নরসিংদীর এ দুটি ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাঈয়্যাৎ কবীর বলেন, ৬টা ৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে একটি এবং ৬টা ৬ মিনিট ৫ সেকেন্ডে আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছে। সন্ধ্যার প্রথমটির উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানী ঢাকার বাড্ডা। রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পটিকে ‘মৃদু’ বলেছে আবহাওয়া অফিস। সেকেন্ডর ব্যবধানে দ্বিতীয়টির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীতে। রিখটার স্কেলে ৪.৩ মাত্রার এই ভূমিকম্পটিকে ‘হালকা’ বলা হয়েছে।
রুবাঈয়্যাৎ কবীর জানান, এটি ‘আফটার শক’ ছিল।
তবে মৃদু মাত্রার এ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এক ঘণ্টা পরও পায়নি ঢাকার ফায়ার সার্ভিস। আগের দিনের তীব্র ভূমিকম্পের পর দিনের দ্বিতীয় এ ভূমিকম্পও ছিল মৃদু মাত্রার, রিখটার স্কেলে এটি ছিল ৩ দশমিক ৭ মাত্রার বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরে ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এর আগে শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে আরেকটি ভূমিকম্প হয়, যেটি ছিল মৃদু মাত্রার ভূমিকম্প, রিখটার স্কেলে এটি ছিল ৩ দশমিক ৩ মাত্রার। প্রথমে সেটির উৎপত্তিস্থল বলা হয় সাভারের বাইপাল। পরে তা নরসিংদীর পলাশে বলে জানায় ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ অধিদপ্তর। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, সন্ধ্যার এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৩। বাড্ডা নয়, এটির কেন্দ্র ছিল নরসিংদী থেকে ১১ কিলোমিটার পশ্চিমে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে।
অন্যদিকে ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমসিএস) বলছে, সন্ধ্যার এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৭। উৎপত্তি স্থল ছিল ঢাকা থেকে আট কিলোমিটার উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে। সন্ধ্যায় আবারও রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলাকে কাঁপিয়ে যাওয়া ভূমিকম্পের ঘণ্টাখানেক পর রাজধানীর ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, কোথাও থেকে কোনো ফোন আসেনি।
ঢাবিতে হুড়াহুড়িতে আহত ৬
দেশে ৪র্থ দফায় ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে হুড়াহুড়ি করে নিচে নামতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৬ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ভূকম্পনের সময় তাড়াহুড়া করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে শামসুন্নাহার হলে তিনজন, কুয়েত মৈত্রী হলে একজন, বেগম রোকেয়া হলে একজন ও মাস্টারদা সূর্যসেন হলে একজন আহত হন। এর মধ্যে পাঁচজনই ছাত্রী। শামসুন্নাহার হল ছাত্র সংসদের সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক ইসরাত জাহান সুমনা সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে তার ‘পা ভেঙেছে’।
ইসরাতসহ শামসুন্নাহার হলে আহত বাকি দুইজনকেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ হলের শিক্ষার্থী আনিকা তাসনিম। কুয়েত মৈত্রী হলের একজন ওপর থেকে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন বলে এ হলের আরেক শিক্ষার্থী শাহিদা আকতার প্রভা জানিয়েছেন। বেগম রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুমাইয়া আনজুম শারমীন বলেন, তার হলে একজন আতঙ্কিত হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। আঘাত পেয়েছেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তাকেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অপরদিকে মাস্টারদা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে হাতে ব্যথা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
এখনই করণীয় ঠিক করতে তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা
তীব্র ঝাঁকুনির এ ভূমিকম্পের পর এখনই করণীয় ঠিক করতে তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে এ বিশেষজ্ঞ বলছেন,‘ ভূমিকম্পটা বলা যেতে পারে ‘ফোরশক’। বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট যে ভূমিকম্প, এটা সেগুলোর একটি।’ এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা যে রয়েছে, সেটা স্মরণ করে দিয়ে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পন হলে ২-৩ লাখ মানুষ হতাহত হবে। ৫-৭ লাখ মানুষ অবরুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ভেঙে পড়তে পারে ঢাকা শহরের ৩৫ শতাংশ ভবন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকা এড়ানো হয়ত সম্ভব নয়, তবে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ভবনের মান পরীক্ষা করা, ঝুঁকির ভিত্তিতে সেগুলোকে আলাদা করা এবং নাগরিকদের সতর্ক করাসহ নিয়মিত মহড়া আয়োজনে জোর দেয়ার কথা বলেছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ববিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘বাংলাদেশ কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও ঝুঁকির দিক দিয়ে খুব ওপরে রয়েছে। যে পরিমাণ শক্তি ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেটের সংযোগ স্থলে জমা হয়ে আছে, সেই শক্তিটা যদি বের হয়, তাহলে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। ‘এটা আগামীকালও হতে পারে, ৫০ বছর পরেও হতে পারে। কখন হবে, সেটা আমরা বলতে পারি না। তবে যেটা হবে, সেটা খুব মারাত্মক হবে। ‘সাবডাকশন জোনের’ ভূমিকম্প ভয়ঙ্কর হয়।’
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনবার ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি অনুভব করার আগের দিন গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে কয়েক দশকের মধ্যে দেশের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের কবলে পড়ে বাংলাদেশ। ভূমিকম্পের সময় অনেকেই আতঙ্কে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাতে তিন জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়, আহত হয় ৬ শতাধিক মানুষ। ঢাকার অনেক ভবনে ফাটল, কোথাও কোথাও হেলে পড়ার ঘটনা ঘটে। রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে, কেন্দ্র ছিল ভূ-পৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রাজধানীর লালবাগ এলাকার ছবি। গায়ে গায়ে লাগানো ভবন। ভূমিকম্প হলে এসব ভবন টিকবে কিনা সেটা যেমন বড় প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংসযজ্ঞের পর এখানে উদ্ধার কাজ কিভাবে করা হবে -সোহরাব আলম
শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
দেশে গত সাড়ে ৩১ ঘণ্টায় চারবার ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার,(২২ নভেম্বর ২০২৫) সকালে একবার ও সন্ধ্যায় পরপর দুবার ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। এর আগে গতকাল শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা। গত শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে কয়েক দশকের মধ্যে দেশের সবচেয়ে তীব্র ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের কবলে পড়ে বাংলাদেশ। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীরই মাধবদীতে।
উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার বাড্ডা ও নরসিংদী
ঢাবিতে হুড়াহুড়িতে আহত ৬
এখনই করণীয় ঠিক করতে তাগিদ বিশেষজ্ঞদের
ভূমিকম্পের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবারও ঝাঁকুনিতে কাঁপলো দেশ। শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে এ ভূমিকম্প হয় বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাঈয়্যাৎ কবীর। তবে সাড়ে ৭ ঘণ্টার মধ্যে আবারও দুইবার ভূমিকম্পে কাঁপলো দেশ। শনিবার সন্ধ্যায় দুবার ভূমিকম্প হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে সেকেন্ডের ব্যবধানে রাজধানীর বাড্ডা ও নরসিংদীর এ দুটি ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাঈয়্যাৎ কবীর বলেন, ৬টা ৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে একটি এবং ৬টা ৬ মিনিট ৫ সেকেন্ডে আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছে। সন্ধ্যার প্রথমটির উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানী ঢাকার বাড্ডা। রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পটিকে ‘মৃদু’ বলেছে আবহাওয়া অফিস। সেকেন্ডর ব্যবধানে দ্বিতীয়টির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীতে। রিখটার স্কেলে ৪.৩ মাত্রার এই ভূমিকম্পটিকে ‘হালকা’ বলা হয়েছে।
রুবাঈয়্যাৎ কবীর জানান, এটি ‘আফটার শক’ ছিল।
তবে মৃদু মাত্রার এ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এক ঘণ্টা পরও পায়নি ঢাকার ফায়ার সার্ভিস। আগের দিনের তীব্র ভূমিকম্পের পর দিনের দ্বিতীয় এ ভূমিকম্পও ছিল মৃদু মাত্রার, রিখটার স্কেলে এটি ছিল ৩ দশমিক ৭ মাত্রার বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরে ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এর আগে শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে আরেকটি ভূমিকম্প হয়, যেটি ছিল মৃদু মাত্রার ভূমিকম্প, রিখটার স্কেলে এটি ছিল ৩ দশমিক ৩ মাত্রার। প্রথমে সেটির উৎপত্তিস্থল বলা হয় সাভারের বাইপাল। পরে তা নরসিংদীর পলাশে বলে জানায় ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ অধিদপ্তর। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, সন্ধ্যার এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৩। বাড্ডা নয়, এটির কেন্দ্র ছিল নরসিংদী থেকে ১১ কিলোমিটার পশ্চিমে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে।
অন্যদিকে ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমসিএস) বলছে, সন্ধ্যার এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৭। উৎপত্তি স্থল ছিল ঢাকা থেকে আট কিলোমিটার উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে। সন্ধ্যায় আবারও রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলাকে কাঁপিয়ে যাওয়া ভূমিকম্পের ঘণ্টাখানেক পর রাজধানীর ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, কোথাও থেকে কোনো ফোন আসেনি।
ঢাবিতে হুড়াহুড়িতে আহত ৬
দেশে ৪র্থ দফায় ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে হুড়াহুড়ি করে নিচে নামতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৬ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ভূকম্পনের সময় তাড়াহুড়া করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে শামসুন্নাহার হলে তিনজন, কুয়েত মৈত্রী হলে একজন, বেগম রোকেয়া হলে একজন ও মাস্টারদা সূর্যসেন হলে একজন আহত হন। এর মধ্যে পাঁচজনই ছাত্রী। শামসুন্নাহার হল ছাত্র সংসদের সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক ইসরাত জাহান সুমনা সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে তার ‘পা ভেঙেছে’।
ইসরাতসহ শামসুন্নাহার হলে আহত বাকি দুইজনকেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ হলের শিক্ষার্থী আনিকা তাসনিম। কুয়েত মৈত্রী হলের একজন ওপর থেকে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন বলে এ হলের আরেক শিক্ষার্থী শাহিদা আকতার প্রভা জানিয়েছেন। বেগম রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুমাইয়া আনজুম শারমীন বলেন, তার হলে একজন আতঙ্কিত হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। আঘাত পেয়েছেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তাকেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অপরদিকে মাস্টারদা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে হাতে ব্যথা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
এখনই করণীয় ঠিক করতে তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা
তীব্র ঝাঁকুনির এ ভূমিকম্পের পর এখনই করণীয় ঠিক করতে তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে এ বিশেষজ্ঞ বলছেন,‘ ভূমিকম্পটা বলা যেতে পারে ‘ফোরশক’। বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট যে ভূমিকম্প, এটা সেগুলোর একটি।’ এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা যে রয়েছে, সেটা স্মরণ করে দিয়ে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পন হলে ২-৩ লাখ মানুষ হতাহত হবে। ৫-৭ লাখ মানুষ অবরুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ভেঙে পড়তে পারে ঢাকা শহরের ৩৫ শতাংশ ভবন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকা এড়ানো হয়ত সম্ভব নয়, তবে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ভবনের মান পরীক্ষা করা, ঝুঁকির ভিত্তিতে সেগুলোকে আলাদা করা এবং নাগরিকদের সতর্ক করাসহ নিয়মিত মহড়া আয়োজনে জোর দেয়ার কথা বলেছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ববিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘বাংলাদেশ কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও ঝুঁকির দিক দিয়ে খুব ওপরে রয়েছে। যে পরিমাণ শক্তি ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেটের সংযোগ স্থলে জমা হয়ে আছে, সেই শক্তিটা যদি বের হয়, তাহলে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। ‘এটা আগামীকালও হতে পারে, ৫০ বছর পরেও হতে পারে। কখন হবে, সেটা আমরা বলতে পারি না। তবে যেটা হবে, সেটা খুব মারাত্মক হবে। ‘সাবডাকশন জোনের’ ভূমিকম্প ভয়ঙ্কর হয়।’
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনবার ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি অনুভব করার আগের দিন গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে কয়েক দশকের মধ্যে দেশের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের কবলে পড়ে বাংলাদেশ। ভূমিকম্পের সময় অনেকেই আতঙ্কে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাতে তিন জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়, আহত হয় ৬ শতাধিক মানুষ। ঢাকার অনেক ভবনে ফাটল, কোথাও কোথাও হেলে পড়ার ঘটনা ঘটে। রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে, কেন্দ্র ছিল ভূ-পৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে।