নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীতে বন্যাকবলিত মানুষের জরুরি পরিবহন ও উদ্ধারকাজে ব্যবহারের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা আধুনিক দুইটি রেসকিউ বোট দীর্ঘদিন ধরেই অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে বোট দুটির বেশিরভাগ অংশ নষ্ট হয়ে এখন সম্পূর্ণ ব্যবহারের অনুপযোগী। বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) দপ্তর সূত্র জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘নৌযান উদ্ধার, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প’ থেকে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ‘নীলসাগর-১’ ও ‘নীলসাগর-২’ নামের দুটি বড় আকারের রেসকিউ বোট বরাদ্দ পাওয়া যায়। প্রতি বোটের জন্য ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬৬ লাখ টাকা ছাড়িয়ে। ৫৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১২.৫ ফুট প্রস্থের বোট দুটি ৮০ জনের বেশি যাত্রী পরিবহনে সক্ষম এবং ঘণ্টায় ৭ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলার উপযোগী।
একটি বোট খগাখরিবাড়ি ইউনিয়নের পাগলপাড়া এলাকায় এবং অন্যটি ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ছাতুনামা এলাকার তিস্তা নদীর ধারে রাখা ছিল। বরাদ্দ পাওয়ার পর নতুন অবস্থায় কয়েক দফা ব্যবহৃত হলেও পরে আর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, রং বা মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এবছর বর্ষাকালে দীর্ঘ সময় নদীর পানিতে ডুবে থাকার ফলে বোট দুটির কেবিন, জানালা, আসবাবপত্র, ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও কাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ‘নীলসাগর-২’ পুরোপুরি বালির নিচে চাপা পড়ে প্রায় ৫৭ ফুট গভীরে আটকে আছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, গত তিন মাস ধরে বালির নিচে চাপা থাকা অবস্থায় বোটটির শক্তিশালী ইঞ্জিন, পাটাতন, রেলিং, সিলিং, বৈদ্যুতিক সার্কিটসহ যান্ত্রিক অংশ প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো নৌযান লম্বা সময় পানির নিচে ডুবে থাকলে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত যান্ত্রিক ও কাঠামোগত ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এতে ইঞ্জিনের মরিচা ধরা, সার্কিট নষ্ট হওয়া, কাঠ ও ধাতব অংশ ক্ষয় হওয়া, রাবার সিলিং ভেঙে যাওয়া এবং পাটাতন দুর্বল হওয়া খুব স্বাভাবিক।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, বহুদিন ধরে বোট অচল অবস্থায় পড়ে থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও রং বা ছোটখাটো মেরামত না করার অভিযোগও রয়েছে। ছাতুনামা এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল, কিন্তু এক টাকাও কাজের পেছনে ব্যয় হয়নি; বরং তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
রেসকিউ বোটচালক মো. রবিউল ইসলাম জানান, ‘২০২১ সাল থেকে বোটটি এখানে পড়ে আছে। কখনও রং দেয়া হয়নি, মেরামত করা হয়নি, এমনকি এক লিটার মবিলও প্রদান করা হয়নি। প্রায় ২০ মাস ধরে বেতনও বন্ধ।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘মেরামতের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে মেরামত করে বোটগুলো সচল করা হবে।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মনোয়ারুল হোসেন জানান, প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমার যোগদানের আগে কী হয়েছে তা জানা নেই।’
তিস্তা নদীপাড়ের মানুষদের দাবি, বন্যাকালে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে ও জরুরি সময়ে মানুষ উদ্ধার করতে রেসকিউ বোট দুটির বিকল্প নেই। কিন্তু অচল অবস্থায় থাকার কারণে যেকোনো দুর্যোগে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে। তাই জনস্বার্থে বোট দুটি দ্রুত মেরামত করে সচল রাখা এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে জরুরি উদ্যোগ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর আবেদন জানিয়েছেন তারা।
ডিমলা (নীলফামারী): ডিমলার তিস্তাপাড় বাসীর দুর্যোগে জরুরি কাজে ব্যবহারের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ক্রয়কৃত রেসকিউ বোটটির অধিকাংশ কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অযতেœ দীর্ঘদিন যাবত বালির নীচে চাপা পড়ে নষ্ট হতে চলেছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীতে বন্যাকবলিত মানুষের জরুরি পরিবহন ও উদ্ধারকাজে ব্যবহারের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা আধুনিক দুইটি রেসকিউ বোট দীর্ঘদিন ধরেই অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে বোট দুটির বেশিরভাগ অংশ নষ্ট হয়ে এখন সম্পূর্ণ ব্যবহারের অনুপযোগী। বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) দপ্তর সূত্র জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘নৌযান উদ্ধার, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প’ থেকে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ‘নীলসাগর-১’ ও ‘নীলসাগর-২’ নামের দুটি বড় আকারের রেসকিউ বোট বরাদ্দ পাওয়া যায়। প্রতি বোটের জন্য ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬৬ লাখ টাকা ছাড়িয়ে। ৫৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১২.৫ ফুট প্রস্থের বোট দুটি ৮০ জনের বেশি যাত্রী পরিবহনে সক্ষম এবং ঘণ্টায় ৭ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলার উপযোগী।
একটি বোট খগাখরিবাড়ি ইউনিয়নের পাগলপাড়া এলাকায় এবং অন্যটি ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ছাতুনামা এলাকার তিস্তা নদীর ধারে রাখা ছিল। বরাদ্দ পাওয়ার পর নতুন অবস্থায় কয়েক দফা ব্যবহৃত হলেও পরে আর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, রং বা মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এবছর বর্ষাকালে দীর্ঘ সময় নদীর পানিতে ডুবে থাকার ফলে বোট দুটির কেবিন, জানালা, আসবাবপত্র, ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও কাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ‘নীলসাগর-২’ পুরোপুরি বালির নিচে চাপা পড়ে প্রায় ৫৭ ফুট গভীরে আটকে আছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, গত তিন মাস ধরে বালির নিচে চাপা থাকা অবস্থায় বোটটির শক্তিশালী ইঞ্জিন, পাটাতন, রেলিং, সিলিং, বৈদ্যুতিক সার্কিটসহ যান্ত্রিক অংশ প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো নৌযান লম্বা সময় পানির নিচে ডুবে থাকলে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত যান্ত্রিক ও কাঠামোগত ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এতে ইঞ্জিনের মরিচা ধরা, সার্কিট নষ্ট হওয়া, কাঠ ও ধাতব অংশ ক্ষয় হওয়া, রাবার সিলিং ভেঙে যাওয়া এবং পাটাতন দুর্বল হওয়া খুব স্বাভাবিক।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, বহুদিন ধরে বোট অচল অবস্থায় পড়ে থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও রং বা ছোটখাটো মেরামত না করার অভিযোগও রয়েছে। ছাতুনামা এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল, কিন্তু এক টাকাও কাজের পেছনে ব্যয় হয়নি; বরং তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
রেসকিউ বোটচালক মো. রবিউল ইসলাম জানান, ‘২০২১ সাল থেকে বোটটি এখানে পড়ে আছে। কখনও রং দেয়া হয়নি, মেরামত করা হয়নি, এমনকি এক লিটার মবিলও প্রদান করা হয়নি। প্রায় ২০ মাস ধরে বেতনও বন্ধ।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘মেরামতের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে মেরামত করে বোটগুলো সচল করা হবে।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মনোয়ারুল হোসেন জানান, প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমার যোগদানের আগে কী হয়েছে তা জানা নেই।’
তিস্তা নদীপাড়ের মানুষদের দাবি, বন্যাকালে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে ও জরুরি সময়ে মানুষ উদ্ধার করতে রেসকিউ বোট দুটির বিকল্প নেই। কিন্তু অচল অবস্থায় থাকার কারণে যেকোনো দুর্যোগে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে। তাই জনস্বার্থে বোট দুটি দ্রুত মেরামত করে সচল রাখা এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে জরুরি উদ্যোগ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর আবেদন জানিয়েছেন তারা।
ডিমলা (নীলফামারী): ডিমলার তিস্তাপাড় বাসীর দুর্যোগে জরুরি কাজে ব্যবহারের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ক্রয়কৃত রেসকিউ বোটটির অধিকাংশ কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অযতেœ দীর্ঘদিন যাবত বালির নীচে চাপা পড়ে নষ্ট হতে চলেছে।