alt

ভূমিকম্প: ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

‘আমরা হাত গুটিয়ে রাখতে চাই না, আবার অবৈজ্ঞানিক কোনো পদক্ষেপও নিতে চাই না’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারের করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের কাছে লিখিত পরামর্শ চেয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গত শুক্রবার ও শনিবার কয়েক দফায় ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার, (২৪ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে দেশের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে দেশের বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকরা জানান, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের কারণে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই; বরং প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সরকারের করণীয় সম্পর্কে লিখিত পরামর্শ দিতে বৈঠকে উপস্থিত বিশেষজ্ঞদের প্রতি আহ্বান জানান অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বৈঠকের বিস্তারিত জানানো হয়।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা হাত গুটিয়ে রাখতে চাই না, আবার অবৈজ্ঞানিক কোনো পদক্ষেপও নিতে চাই না। আপনাদের পরামর্শগুলো দ্রুত লিখিত আকারে আমাদের দিন; সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত।’

তিনি জানান, প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং এক বা একাধিক টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পাওয়া মাত্রই সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

বৈঠকে উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, দুর্যোগ ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রিয়াজ।

বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রফেসর মো. জয়নুল আবেদীন; বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী; বুয়েটের অধ্যাপক তাহমীদ মালিক আল-হুসাইনী; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আখতার; বুয়েটের অধ্যাপক ড. তানভীর মনজুর; বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম; আবহাওয়াবিদ মো. রুবাইয়্যাত কবীর; ভূতত্ত্ববিদ ড. রেশাদ মো. ইকরাম আলী; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. শাখাওয়াত হোসাইন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণতা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান এবং বুয়েটের অধ্যাপক ইসরাত ইসলাম।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কয় দিন আগে ভয়াবহ ভূমিকম্পে যাদের মৃত্যু হলো, যারা আহত হলেন—এটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। এমনটি যেন আর না হয়, তার জন্য আমাদের অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা পত্রপত্রিকায় লিখেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, অভিজ্ঞতা ভাগ করেছেন।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এই আতঙ্ক থেকে জনগণকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কী করা প্রয়োজন, সরকারকে তা জানান। কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, কোন কোন বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে সব জানান। দুর্ঘটনা যেভাবেই আসুক, যেন আমরা সব পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারি।’

সরকারপ্রধান জানান, ভূমিকম্পের প্রস্তুতি হিসেবে কী ধরনের মহড়া প্রয়োজন হবে, সে বিষয়েও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কোন পর্যায়ে আছি, সেটিও মূল্যায়ন করতে হবে।’

বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও ভূমিকম্প-বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও সমন্বয়ের পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্প নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তাদের বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে।’

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘শুভেচ্ছা’ নামে একটি অ্যাপ করেছি। এই অ্যাপের মাধ্যমে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যুক্ত হোন। অ্যাপটিতে আরো কী ধরনের ফিচার আনা যেতে পারে, সে বিষয়েও আমাদের পরামর্শ দিন।’

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূমিকম্পকে ঘিরে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক গুজব তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে- ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে...১০ দিনের মধ্যে...১ মাসের মধ্যে...বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবে, এ ধরনের অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

বৈঠকে অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ভূমিকম্পের উৎস ও উৎপত্তিস্থল নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে বাংলাদেশ ও এর আশপাশে কতগুলো সোর্স আছে এবং সেগুলোর কারণে শেকিং লেভেল কী হতে পারে, তা নিরূপণ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ আমরা স্বল্প ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। তবে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘জনসচেতনতা তৈরিতে তরুণদের কাজে লাগানো জরুরি। ইনডোরে, আউটডোরে, ব্যক্তি পর্যায়ে ও প্রতিষ্ঠানে—চার স্তরে করণীয় পরিকল্পনা তৈরি করে সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। তরুণদের কাজে লাগিয়ে ন্যাচারাল হ্যাজার্ড প্ল্যান ও প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নিলে সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে।’

চুয়েটের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মন্ত্রণালয় তাদের আওতাধীন স্থাপনাগুলোর মূল্যায়ন করতে পারে। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ—এসব খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমিকম্পবিষয়ক প্রোগ্রাম চালু করলে আতঙ্ক নয়, বরং সচেতনতা তৈরি হবে।’

এমআইএসটির অধ্যাপক মো. জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সবাইকে বোঝাতে হবে যে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। আমাদের সম্পদের মধ্যে থেকেই কাজ করতে হবে। করণীয় সম্পর্কে আরো সুনির্দিষ্ট তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।’

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভূমিকম্পের ফলে ফাটল ধরা ভবনের ছবি সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এর মধ্য থেকে দুই শটির বেশি ভবনের মূল্যায়ন করা হয়েছে। বেশির ভাগই পার্টিশন দেয়ালে ফাটল দেখা যাচ্ছে। সফটওয়্যারটির মাধ্যমে দ্রুত ফাটল ধরা ভবনের মূল্যায়ন ও পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞদের পাঠানো লিখিত সুপারিশ নিয়ে সরকার দ্রুত সময়ে আলোচনা করে টাস্কফোর্স গঠন করবে। ভূমিকম্পের বিষয়ে আশু করণীয় নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্সে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা যুক্ত থাকবেন।

ছবি

তাজরীন ট্র্যাজেডির ১৩ বছর: ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও বিচারের দাবি স্বজনদের

ছবি

৪১ শতাংশ আইসিইউ রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না

ছবি

সাংবাদিকবান্ধব নয় দেশের আইন, যারাই ক্ষমতায় যান ‘নিবর্তনের মানসিকতা পোষণ করেন’

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৭০৫ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ২

ছবি

অতিরিক্ত সংস্কার করতে গিয়ে রাষ্ট্রকাঠামো দুর্বল করা যাবে না: আসিফ নজরুল

ছবি

খালেদা জিয়ার হার্ট ও ফুসফুসে ইনফেকশন হয়েছে: মেডিকেল বোর্ড

ছবি

সিনহা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ওসি প্রদীপ

ছবি

নবীন নাবিকদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত: নাবিকরা চেলেঞ্জ মোকাবিলা ও সমুদ্রসীমা রক্ষা করবে

ছবি

সংবাদমাধ্যম থেকে বিচারকদের ‘অবমাননাকর’ ছবি সরানোর আদেশ

ছবি

জনগণের আস্থা ফেরাতে নির্বাচনী প্রচারণার দিকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান কমনওয়েলথ মহাসচিবের

ছবি

৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

ছবি

ভূমিকম্পের সময় করণীয়, জানালো দমকল বিভাগ

ছবি

পোস্টাল ভোটিং: প্রথম পর্বে নিবন্ধনের সময় বাড়লো

প্লট দুর্নীতি মামলায় হাসিনা পরিবারের রায় আগামী বৃহস্পতিবার

ছবি

হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে আবার চিঠি দেয়া হয়েছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির সম্ভাবনা নেই: উপদেষ্টা

বৈচিত্র্য বাধাগ্রস্ত হলে ফ্যাসিবাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে: তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

ছবি

সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান: সেনাদের ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদনে ট্রাইব্যুনাল

ছবি

ঘুমধুম সীমান্তে মায়ানমার সেনা ও বিজিপির ৫ সদস্য আটক

ছবি

ডেঙ্গু: একদিনে আরও ৮ জনের মৃত্যু

ছবি

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণে আবারও ভারতকে চিঠি পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

টিএফআই ও জেআইসি নির্যাতন মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী জেড আই খান পান্না নিয়োগ

ছবি

প্লট দুর্নীতি মামলায় হাসিনা পরিবারসহ আসামিদের রায় বৃহস্পতিবার

বিমানবাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উদাসীনতা: দেড় কোটি টাকায় কেনা তিস্তার দুই রেসকিউ বোট অচল হয়ে পড়েছে

ছবি

‘পুলিশের ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব পালন দেখতে চায় মানুষ’

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে ‘ঘৃণা, বিভ্রান্তি ও মিথ্যাকে’ অর্থায়ন করা হয়: মাহফুজ আনাম

ক্ষমতা, ধন-দৌলত কোনো কিছুই স্থায়ী নয়: ধর্ম উপদেষ্টা

ছবি

সংসদ নির্বাচনে ‘রেকর্ডসংখ্যক’ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক থাকবে

ছবি

অনিশ্চয়তার সেই মাসগুলোতে বিচার বিভাগ ছিল একমাত্র পূর্ণ কার্যকর সাংবিধানিক অঙ্গ: প্রধান বিচারপতি

ছবি

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একইদিনে, ইসিকে অন্তর্বর্তী সরকারের চিঠি

ছবি

আরও তিন ভূমিকম্প, বিশেষজ্ঞদের সতর্কতার বার্তা

ছবি

নরসিংদীর ঘোড়াশালে ভূমিক্ষয় তদন্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের নমুনা সংগ্রহ

ছবি

সাড়ে ৭ ঘণ্টা পর আবার ভূমিকম্পে কাঁপল বাংলাদেশ

ছবি

গত সাড়ে ৩১ ঘণ্টায় দেশে চারবার ভূমিকম্প, শিশুসহ নিহত ১০

tab

ভূমিকম্প: ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

‘আমরা হাত গুটিয়ে রাখতে চাই না, আবার অবৈজ্ঞানিক কোনো পদক্ষেপও নিতে চাই না’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারের করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের কাছে লিখিত পরামর্শ চেয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গত শুক্রবার ও শনিবার কয়েক দফায় ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার, (২৪ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে দেশের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে দেশের বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকরা জানান, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের কারণে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই; বরং প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সরকারের করণীয় সম্পর্কে লিখিত পরামর্শ দিতে বৈঠকে উপস্থিত বিশেষজ্ঞদের প্রতি আহ্বান জানান অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বৈঠকের বিস্তারিত জানানো হয়।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা হাত গুটিয়ে রাখতে চাই না, আবার অবৈজ্ঞানিক কোনো পদক্ষেপও নিতে চাই না। আপনাদের পরামর্শগুলো দ্রুত লিখিত আকারে আমাদের দিন; সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত।’

তিনি জানান, প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং এক বা একাধিক টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পাওয়া মাত্রই সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

বৈঠকে উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, দুর্যোগ ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রিয়াজ।

বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রফেসর মো. জয়নুল আবেদীন; বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী; বুয়েটের অধ্যাপক তাহমীদ মালিক আল-হুসাইনী; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আখতার; বুয়েটের অধ্যাপক ড. তানভীর মনজুর; বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম; আবহাওয়াবিদ মো. রুবাইয়্যাত কবীর; ভূতত্ত্ববিদ ড. রেশাদ মো. ইকরাম আলী; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. শাখাওয়াত হোসাইন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণতা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান এবং বুয়েটের অধ্যাপক ইসরাত ইসলাম।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কয় দিন আগে ভয়াবহ ভূমিকম্পে যাদের মৃত্যু হলো, যারা আহত হলেন—এটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। এমনটি যেন আর না হয়, তার জন্য আমাদের অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা পত্রপত্রিকায় লিখেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, অভিজ্ঞতা ভাগ করেছেন।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এই আতঙ্ক থেকে জনগণকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কী করা প্রয়োজন, সরকারকে তা জানান। কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, কোন কোন বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে সব জানান। দুর্ঘটনা যেভাবেই আসুক, যেন আমরা সব পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারি।’

সরকারপ্রধান জানান, ভূমিকম্পের প্রস্তুতি হিসেবে কী ধরনের মহড়া প্রয়োজন হবে, সে বিষয়েও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কোন পর্যায়ে আছি, সেটিও মূল্যায়ন করতে হবে।’

বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও ভূমিকম্প-বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও সমন্বয়ের পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্প নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তাদের বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে।’

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘শুভেচ্ছা’ নামে একটি অ্যাপ করেছি। এই অ্যাপের মাধ্যমে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যুক্ত হোন। অ্যাপটিতে আরো কী ধরনের ফিচার আনা যেতে পারে, সে বিষয়েও আমাদের পরামর্শ দিন।’

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূমিকম্পকে ঘিরে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক গুজব তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে- ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে...১০ দিনের মধ্যে...১ মাসের মধ্যে...বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবে, এ ধরনের অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

বৈঠকে অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ভূমিকম্পের উৎস ও উৎপত্তিস্থল নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে বাংলাদেশ ও এর আশপাশে কতগুলো সোর্স আছে এবং সেগুলোর কারণে শেকিং লেভেল কী হতে পারে, তা নিরূপণ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ আমরা স্বল্প ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। তবে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘জনসচেতনতা তৈরিতে তরুণদের কাজে লাগানো জরুরি। ইনডোরে, আউটডোরে, ব্যক্তি পর্যায়ে ও প্রতিষ্ঠানে—চার স্তরে করণীয় পরিকল্পনা তৈরি করে সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। তরুণদের কাজে লাগিয়ে ন্যাচারাল হ্যাজার্ড প্ল্যান ও প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নিলে সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে।’

চুয়েটের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মন্ত্রণালয় তাদের আওতাধীন স্থাপনাগুলোর মূল্যায়ন করতে পারে। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ—এসব খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমিকম্পবিষয়ক প্রোগ্রাম চালু করলে আতঙ্ক নয়, বরং সচেতনতা তৈরি হবে।’

এমআইএসটির অধ্যাপক মো. জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সবাইকে বোঝাতে হবে যে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। আমাদের সম্পদের মধ্যে থেকেই কাজ করতে হবে। করণীয় সম্পর্কে আরো সুনির্দিষ্ট তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।’

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভূমিকম্পের ফলে ফাটল ধরা ভবনের ছবি সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এর মধ্য থেকে দুই শটির বেশি ভবনের মূল্যায়ন করা হয়েছে। বেশির ভাগই পার্টিশন দেয়ালে ফাটল দেখা যাচ্ছে। সফটওয়্যারটির মাধ্যমে দ্রুত ফাটল ধরা ভবনের মূল্যায়ন ও পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞদের পাঠানো লিখিত সুপারিশ নিয়ে সরকার দ্রুত সময়ে আলোচনা করে টাস্কফোর্স গঠন করবে। ভূমিকম্পের বিষয়ে আশু করণীয় নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্সে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা যুক্ত থাকবেন।

back to top