alt

৪১ শতাংশ আইসিইউ রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

রোগীর শরীরে কাজ করছে না অ্যান্টিবায়োটিক। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ৪১ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ব্যবহার ক্রমশ এই সংকটকে গভীর করছে বলে সরকারের এক গবেষণা প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

আইইডিসিআরের প্রতিবেদন

অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি ঢাকায়

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা বেশি রোহিঙ্গাদের মধ্যে

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ রাজধানী মহাখালীর আইইডিসিআরের মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। এই পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক জাকির হোসেন।

অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি সবার প্রতি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমিয়ে নিজের জীবন রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।

অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ও অতিরিক্ত ব্যবহার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে (এএমআর) বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, এটি এখন দেশের জন্য বড় জনস্বাস্থ্যঝুঁকি।

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ২০২৪ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত ৯৬ হাজার ৪৭৭ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে আইইডিসিআর। এতে দেশের পাঁচটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের শরীরে ৭১ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়।

আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসায় ৫টি জীবাণুর ক্ষেত্রে ৭১টি অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৫টি অ্যান্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতা ৮০ শতাংশের ওপরে। একটির সংবেদনশীলতা ৬০-৮০ শতাংশের মধ্যে। বাকিগুলোর সংবেদনশীলতা ৬০ শতাংশের নিচে।

রোগীর নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৭ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী অণুজীব প্যনু-ড্রাগ-রেজিট্যান্স (পিডিআর) পাওয়া গেছে। প্যান ড্রাগ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট রোগের জন্য ব্যবহৃত সবধরনের ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক। আইসিইউ রোগীদের ক্ষেত্রে পিডিআর-এর উপস্থিতি ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের ৪১ শতাংশের ক্ষেত্রে কোনো ওষুধ কাজ করছে না।

আইইডিসিআর জানিয়েছে, তারা ২০১৬ সাল থেকে দেশে এই ‘জাতীয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) সার্ভিলেন্স’ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। এর লক্ষ্য হলো, জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচিত অণুজীব বা প্যাথোজেনগুলোর মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

আইইডিসিআর পর্যবেক্ষণে ১২৩টি ‘ড্রাগ-বাগ কম্বিনেশন’ (অণুজীব ও ওষুধের পারস্পরিক সম্পর্ক) বিশ্লেষণ করেছে। কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য পূর্ববর্তী বছরের প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি ক্ষেত্রে কার্যকারিতা বেড়েছে, ৭৯টি ক্ষেত্রে কমেছে এবং ৬টির ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত রয়েছে।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, ২০১৭ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে তারা একটি বড় ডেটাবেস (তথ্য ভান্ডার) তৈরি করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মানুষের কাছে এই আহ্বান পৌঁছাতে চাই, যাতে মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করেন। জনসচেতনতা বৃদ্ধি না পেলে ভবিষ্যতে গুরুতর সংকট তৈরি হবে।’ঢাকায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি:

আইইডিসিআর জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত সারাদেশে মোট যতো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়েছে, তার ৫৭ শতাংশই হয়েছে রাজধানীতে। ঢাকায় রোগীর সংখ্যা বেশি, বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র ও হাসপাতালের সংখ্যা বেশি এবং স্বাস্থ্যসেবা তুলনামূলক সহজলভ্য হওয়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেশি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকার পর রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এছাড়া মূত্রনালি সংক্রমণের (ইউটিআই) রোগীদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রবণতা তুলনামূলক বেশি।

দেশে সর্বাধিক ব্যবহৃত ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক হলো সেফট্রিয়াক্সোন, সেফিক্সিম, মেরোপেনেম, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজল, ক্লক্সাসিলিন, পাইপেরাসিলিন-টাজোব্যাকটাম ও ভ্যানকোমাইসিন। এগুলোর অযথা ব্যবহারের ফলে কার্যকারিতা দ্রুত কমে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখনই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে (এএমআর) মোকাবিলায় কার্যকর নীতিমালা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। দ্রুত সময়ে জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নীতিমালা তৈরির পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মানুষ যেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজেদের ইচ্ছেমতো ফার্মেসি (ওষুধের দোকান) থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে ব্যবহার করতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় আগামী এক দশকেই চিকিৎসা খাতকে বড় সংকটে পড়তে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক যত কম ব্যবহার করবেন, তত বেশি কার্যকর থাকবে।

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা বেশি রোহিঙ্গাদের মধ্যে:

আইইডিসিআরের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের শরণার্থীশিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা তুলনামূলক বেশি রয়েছে। কারণ সেখানে মানুষ তুলনামূলক চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে টেট্রাসাইক্লিনের কার্যকারিতা ১০০ শতাংশ, অর্থাৎ সব রোগী এটা সেবন করে সুফল পাচ্ছেন। আর অ্যাজিথ্রোমাইসিন কাজ করছে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৯৭ জনের শরীরে। সেখানে ডায়রিয়াজনিত রোগ সারাতে অ্যাজিথ্রোমাইসিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।

ছবি

তাজরীন ট্র্যাজেডির ১৩ বছর: ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও বিচারের দাবি স্বজনদের

ছবি

সাংবাদিকবান্ধব নয় দেশের আইন, যারাই ক্ষমতায় যান ‘নিবর্তনের মানসিকতা পোষণ করেন’

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৭০৫ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ২

ছবি

অতিরিক্ত সংস্কার করতে গিয়ে রাষ্ট্রকাঠামো দুর্বল করা যাবে না: আসিফ নজরুল

ছবি

খালেদা জিয়ার হার্ট ও ফুসফুসে ইনফেকশন হয়েছে: মেডিকেল বোর্ড

ছবি

সিনহা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ওসি প্রদীপ

ছবি

ভূমিকম্প: ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

নবীন নাবিকদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত: নাবিকরা চেলেঞ্জ মোকাবিলা ও সমুদ্রসীমা রক্ষা করবে

ছবি

সংবাদমাধ্যম থেকে বিচারকদের ‘অবমাননাকর’ ছবি সরানোর আদেশ

ছবি

জনগণের আস্থা ফেরাতে নির্বাচনী প্রচারণার দিকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান কমনওয়েলথ মহাসচিবের

ছবি

৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

ছবি

ভূমিকম্পের সময় করণীয়, জানালো দমকল বিভাগ

ছবি

পোস্টাল ভোটিং: প্রথম পর্বে নিবন্ধনের সময় বাড়লো

প্লট দুর্নীতি মামলায় হাসিনা পরিবারের রায় আগামী বৃহস্পতিবার

ছবি

হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে আবার চিঠি দেয়া হয়েছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির সম্ভাবনা নেই: উপদেষ্টা

বৈচিত্র্য বাধাগ্রস্ত হলে ফ্যাসিবাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে: তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

ছবি

সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান: সেনাদের ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদনে ট্রাইব্যুনাল

ছবি

ঘুমধুম সীমান্তে মায়ানমার সেনা ও বিজিপির ৫ সদস্য আটক

ছবি

ডেঙ্গু: একদিনে আরও ৮ জনের মৃত্যু

ছবি

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণে আবারও ভারতকে চিঠি পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

টিএফআই ও জেআইসি নির্যাতন মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী জেড আই খান পান্না নিয়োগ

ছবি

প্লট দুর্নীতি মামলায় হাসিনা পরিবারসহ আসামিদের রায় বৃহস্পতিবার

বিমানবাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উদাসীনতা: দেড় কোটি টাকায় কেনা তিস্তার দুই রেসকিউ বোট অচল হয়ে পড়েছে

ছবি

‘পুলিশের ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব পালন দেখতে চায় মানুষ’

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে ‘ঘৃণা, বিভ্রান্তি ও মিথ্যাকে’ অর্থায়ন করা হয়: মাহফুজ আনাম

ক্ষমতা, ধন-দৌলত কোনো কিছুই স্থায়ী নয়: ধর্ম উপদেষ্টা

ছবি

সংসদ নির্বাচনে ‘রেকর্ডসংখ্যক’ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক থাকবে

ছবি

অনিশ্চয়তার সেই মাসগুলোতে বিচার বিভাগ ছিল একমাত্র পূর্ণ কার্যকর সাংবিধানিক অঙ্গ: প্রধান বিচারপতি

ছবি

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একইদিনে, ইসিকে অন্তর্বর্তী সরকারের চিঠি

ছবি

আরও তিন ভূমিকম্প, বিশেষজ্ঞদের সতর্কতার বার্তা

ছবি

নরসিংদীর ঘোড়াশালে ভূমিক্ষয় তদন্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের নমুনা সংগ্রহ

ছবি

সাড়ে ৭ ঘণ্টা পর আবার ভূমিকম্পে কাঁপল বাংলাদেশ

ছবি

গত সাড়ে ৩১ ঘণ্টায় দেশে চারবার ভূমিকম্প, শিশুসহ নিহত ১০

tab

৪১ শতাংশ আইসিইউ রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

রোগীর শরীরে কাজ করছে না অ্যান্টিবায়োটিক। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ৪১ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ব্যবহার ক্রমশ এই সংকটকে গভীর করছে বলে সরকারের এক গবেষণা প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

আইইডিসিআরের প্রতিবেদন

অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি ঢাকায়

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা বেশি রোহিঙ্গাদের মধ্যে

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ রাজধানী মহাখালীর আইইডিসিআরের মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। এই পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক জাকির হোসেন।

অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি সবার প্রতি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমিয়ে নিজের জীবন রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।

অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ও অতিরিক্ত ব্যবহার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে (এএমআর) বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, এটি এখন দেশের জন্য বড় জনস্বাস্থ্যঝুঁকি।

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ২০২৪ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত ৯৬ হাজার ৪৭৭ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে আইইডিসিআর। এতে দেশের পাঁচটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের শরীরে ৭১ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়।

আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসায় ৫টি জীবাণুর ক্ষেত্রে ৭১টি অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৫টি অ্যান্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতা ৮০ শতাংশের ওপরে। একটির সংবেদনশীলতা ৬০-৮০ শতাংশের মধ্যে। বাকিগুলোর সংবেদনশীলতা ৬০ শতাংশের নিচে।

রোগীর নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৭ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী অণুজীব প্যনু-ড্রাগ-রেজিট্যান্স (পিডিআর) পাওয়া গেছে। প্যান ড্রাগ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট রোগের জন্য ব্যবহৃত সবধরনের ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক। আইসিইউ রোগীদের ক্ষেত্রে পিডিআর-এর উপস্থিতি ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের ৪১ শতাংশের ক্ষেত্রে কোনো ওষুধ কাজ করছে না।

আইইডিসিআর জানিয়েছে, তারা ২০১৬ সাল থেকে দেশে এই ‘জাতীয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) সার্ভিলেন্স’ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। এর লক্ষ্য হলো, জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচিত অণুজীব বা প্যাথোজেনগুলোর মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

আইইডিসিআর পর্যবেক্ষণে ১২৩টি ‘ড্রাগ-বাগ কম্বিনেশন’ (অণুজীব ও ওষুধের পারস্পরিক সম্পর্ক) বিশ্লেষণ করেছে। কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য পূর্ববর্তী বছরের প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি ক্ষেত্রে কার্যকারিতা বেড়েছে, ৭৯টি ক্ষেত্রে কমেছে এবং ৬টির ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত রয়েছে।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, ২০১৭ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে তারা একটি বড় ডেটাবেস (তথ্য ভান্ডার) তৈরি করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মানুষের কাছে এই আহ্বান পৌঁছাতে চাই, যাতে মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করেন। জনসচেতনতা বৃদ্ধি না পেলে ভবিষ্যতে গুরুতর সংকট তৈরি হবে।’ঢাকায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি:

আইইডিসিআর জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত সারাদেশে মোট যতো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়েছে, তার ৫৭ শতাংশই হয়েছে রাজধানীতে। ঢাকায় রোগীর সংখ্যা বেশি, বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র ও হাসপাতালের সংখ্যা বেশি এবং স্বাস্থ্যসেবা তুলনামূলক সহজলভ্য হওয়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেশি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকার পর রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এছাড়া মূত্রনালি সংক্রমণের (ইউটিআই) রোগীদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রবণতা তুলনামূলক বেশি।

দেশে সর্বাধিক ব্যবহৃত ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক হলো সেফট্রিয়াক্সোন, সেফিক্সিম, মেরোপেনেম, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজল, ক্লক্সাসিলিন, পাইপেরাসিলিন-টাজোব্যাকটাম ও ভ্যানকোমাইসিন। এগুলোর অযথা ব্যবহারের ফলে কার্যকারিতা দ্রুত কমে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখনই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে (এএমআর) মোকাবিলায় কার্যকর নীতিমালা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। দ্রুত সময়ে জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নীতিমালা তৈরির পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মানুষ যেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজেদের ইচ্ছেমতো ফার্মেসি (ওষুধের দোকান) থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে ব্যবহার করতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় আগামী এক দশকেই চিকিৎসা খাতকে বড় সংকটে পড়তে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক যত কম ব্যবহার করবেন, তত বেশি কার্যকর থাকবে।

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা বেশি রোহিঙ্গাদের মধ্যে:

আইইডিসিআরের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের শরণার্থীশিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা তুলনামূলক বেশি রয়েছে। কারণ সেখানে মানুষ তুলনামূলক চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে টেট্রাসাইক্লিনের কার্যকারিতা ১০০ শতাংশ, অর্থাৎ সব রোগী এটা সেবন করে সুফল পাচ্ছেন। আর অ্যাজিথ্রোমাইসিন কাজ করছে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৯৭ জনের শরীরে। সেখানে ডায়রিয়াজনিত রোগ সারাতে অ্যাজিথ্রোমাইসিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।

back to top