জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ৭ বছর করে মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
আরও ১৯ জনের সাজা
বিস্মিত বিচারক, ‘এত লোভ’!
আদালত এলাকায় ছিল বাড়তি নিরাপত্তা
পাশাপাশি তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে একটি মামলায় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে আরেক মামলায় ৫ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও ‘সেই তথ্য গোপন করে তারা আইন ভেঙে দুর্নীতির মাধ্যমে’ পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা আকারের তিনটি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বৃহস্পতিবার, (২৭ নভেম্বর ২০২৫)ওই তিন মামলার রায় ঘোষণা করেন।
হাসিনা পরিবারের তিনজন ছাড়াও এই তিন মামলায় আরও ২০ জন আসামি ছিলেন। তাদের মধ্যে কেবল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার খালাস পেয়েছেন। বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। আসামিদের মধ্যে কেবল রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আত্মসমর্পণ করে কারাগারে ছিলেন। রায় ঘোষণার সময় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতকে সম্মান দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করায় তাকে এক বছর করে তিন মামলায় ৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা, তার ছেলে, মেয়েসহ বাকি আসামিদের পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলে। ফলে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তারা পাননি। তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানিতে অংশ নিতে পারেননি। কারাদণ্ডের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে এক লাখ টাকা করে তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৬ মাস করে ১৮ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড, পুতুল ও জয়কে দণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
শেখ হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে তিন মামলায় দুদকের পক্ষে শুনানি করেন খান মো. মাইনুল হাসান লিপন। জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এবার তাকে দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ড দেয়া হলো। তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবেক রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান, দুর্নীতির দায়ে যার সাজার রায় হলো।
হাসিনা, জয়, পুতুলের সঙ্গে
অন্যদের যে সাজা হলো
প্লট দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে আরও ১৯ জনকে সাজা দেয়া হয়েছে। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন কেবল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার।
### হাসিনা পরিবারের রায়ে হতাশ দুদক
আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন না হওয়ায় হতাশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রায়ের পর দুদকের কৌঁসুলি খান মো. মাইনুল হাসান লিপন বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করেছিলাম, তা হয়নি। কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি খুরশীদ আলমের আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম।
### সম্পদের প্রতি শেখ হাসিনার ‘এত লোভ’ বিস্মিত বিচারক
‘শেখ হাসিনা একজন পলিটিক্যাল লিডার, চারবারের প্রধানমন্ত্রী। তার কেন এতো টাকা লাগবে, এতো সম্পদ লাগবে?’ প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় বৃহস্পতিবার, রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। বিস্মিত হয়ে তিনি এও বলেন, ‘তার সম্পদের প্রতি এত লোভ!’ গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য খুরশীদ আলমকে এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। রায় ঘোষণার আগে ১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে এজলাসে তোলা হয়। ১১টা ২৩ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠেন। প্রথমে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের মামলার রায় পড়া শুরু হয়।
পর্যবেক্ষণে বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোডে ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
‘এরপর দুদক টিম গঠন করে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানের রিপোর্টের ভিত্তিতে গত ১২ জানুয়ারি মামলা দায়েরের অনুমতি দেয় দুদক। এরপর অভিযোগপত্র দেয়া হয়।’ বিচারক বলেন, ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিধি অনুসারে, প্লট বরাদ্দ প্রার্থীর আবেদন ব্যতীত কর্তৃপক্ষ কোনো বরাদ্দ প্রদান করবে না। বিধি ৫ অনুসারে প্রেসক্রাইবড ফরম ব্যতীত আবেদন করা যাবে না। শেখ হাসিনার কোনো আবেদন না থাকা সত্ত্বেও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের নির্দেশে ১৩অ(২)(রর) বিধি লঙ্ঘন করে ২০২২ সালের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার অনুকূলে রাজউকের প্লট বরাদ্দের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ে নোট ইনিশিয়েট করা হয়।
‘ওই নোটে স্বাক্ষর করেন পূরবী গোলদার, সাইফুল ইসলাম সরকার, কাজী ওয়াছি উদ্দিন, শহীদ উল্লা খন্দকার এবং শরীফ আহমেদ। পরদিন ১৯ জুলাই শেখ হাসিনার জন্য প্লট বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়ে পূরবী গোলদার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়। ‘২৭ জুলাই রাজউকের বোর্ড সভায় আনিছুর রহমান, শফিউল হক, খুরশীদ আলম, নাসির উদ্দীন এবং সামসুদ্দীন রেজ্যুলেশন গ্রহণ করে শেখ হাসিনাকে প্লট বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ করেন। প্রেসক্রাইবড ফরমে শেখ হাসিনার কোনো আবেদন না থাকা সত্ত্বেও বিধি ৫ ও বিধি ১৩অ(২)(রর) লঙ্ঘন করে শেখ হাসিনাকে প্লট দেয়ার সুপারিশ করা হয়।’
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘২৭ জুলাই রাজউকের উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ স্বাক্ষরিত পত্রে শেখ হাসিনাকে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্পে বিধি ১৩(অ)(১)(ধ) অনুসারে ১০ কাঠার প্লট পাওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন মর্মে শেখ হাসিনাকে জানানো হয়। ওই পত্রে নোটারী পাবলিক কর্তৃক প্রত্যয়ন করা হলফনামাসহ অন্যান্য কাগজপত্রে ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রেরণ করার অনুরোধ করা হয়। ‘৩০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে সম্পাদিত নোটারী পাবলিক কর্তৃক প্রত্যায়িত হলফনামায় উল্লেখ করতে হবে যে, রাজউকের অধিক্ষেত্রে আবেদনকারীর নিজ নামে বা তার স্বামী/স্ত্রী/পরিবার/পোষ্যদের নামে ইতোপূর্বে রাজউক থেকে বা অন্য কোনো সরকারি/আধা সরকারি সংস্থা থেকে ইতোপূর্বে প্লট বরাদ্দ করা হয়নি।’
বিচারক বলেন, ‘শেখ হাসিনা রাজউকে হলফনামা দাখিল করেন। কিন্তু হলফনামাটি নোটারী পাবলিক বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে শপথ করা ছিল না। এতে তিনি কেবল নিজ নামে কোনো প্লট বরাদ্দ না পাওয়ার কথা উল্লেখ করলেও তার স্বামী এম ওয়াজেদ আলীর নামে লিজ ডিড মূলে ১৯৭৩ সালে সরকারি জমি বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করেননি। ‘নোটারী পাবলিক কর্তৃক প্রত্যায়িত না হওয়ায় হলফনামাটি আইনগতভাবে অকার্যকর ছিল, রাজউকের তা বিবেচনা করার কোনো সুযোগ ছিল না। তবুও অবৈধ ও অকার্যকর সেই হলফনামাকে ভিত্তি করে আসামিদের যোগসাজশে প্লটের অস্থায়ী বরাদ্দপত্র ৩১ জুলাই জারি করা হয়।’
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, অস্থায়ী বরাদ্দপত্র অনুযায়ী প্লটের মূল্য নির্ধারিত হয় কাঠা প্রতি তিন লাখ টাকা। ১০ কাঠা জমির মূল্য ৩০ লাখ টাকা। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রথম কিস্তি ১২ লাখ টাকা জমা দিতে বলা হয়। শেখ হাসিনার নামে ওই বছরের ৩ আগস্ট সোনালী ব্যাংকের গণভবন শাখা থেকে রাজউকের অনুকূলে ১২ লাখ টাকার পে-অর্ডার জমা দেয়া হয়। ওই দিনই রাজউকের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর প্লট শেখ হাসিনার অনুকূলে চূড়ান্ত বরাদ্দপত্র জারি করা হয়। প্লটের নির্ধারিত মূল্য পরিশোধের পর প্লট হস্তান্তরের জন্য সুপারিশ করা হলে শেখ হাসিনা নিজ স্বাক্ষরে ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর প্লট হস্তান্তরের আবেদন করেন, যা অপরাধের অভিপ্রায় হিসেবে আদালতের কাছে বিবেচিত হয়।
বিচারক বলেন, ‘শেখ হাসিনা নিজ স্বাক্ষরে ১২ সেপ্টেম্বর লিজ দলিল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন এবং ৩০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে আরেকটি শপথছাড়া হলফনামা দেন, যেখানে নিজ নামে কোনো প্লট না থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও স্বামী বা পরিবারের নামে বরাদ্দকৃত জমির তথ্য গোপন রাখা হয়। ‘এ হলফনামাটিও আইনগতভাবে অকার্যকর ছিল। তথাপি রাজউক লিজ দলিল সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নেয়। ওইদিন রাজউক এবং শেখ হাসিনার মধ্যে প্লটের চুক্তি কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধিত হয়।’
বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ফাইনালি প্লট বুঝিয়ে দিতে দরখাস্ত দিলেন শেখ হাসিনা। সম্পদের প্রতি তার লোভ আছে। না হলে আবেদনটি ছুঁড়ে ফেলতে পারতেন। বলতেন, ‘প্লট দরকার নাই, তা না করে (প্লট) বুঝে নিতে আবেদন করেন। ‘পরে ০০৯ প্লটটি চূড়ান্তভাবে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এখানে রাজউক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অন্যায় করেছে। শেখ হাসিনা অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত, প্রতারণা করেছেন। তিনি এটা না পেলে কোনো সৎ লোক হয়তো পেতেন।’
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) ৩ আগস্ট প্লট পান। দুঃখজনকভাবে ৩১ আগস্ট তিনি ছেলে জয়ের জন্য প্লটের রেকমেন্ড করলেন। তিনি একজন পলিটিক্যাল লিডার, চারবারের প্রধানমন্ত্রী। তার কেন এতো টাকা, এতো সম্পদ লাগবে? তারা এসব সম্পদ না পেলে তো অন্য কেউ পেতেন। ‘এরপর ১১ সেপ্টেম্বর তিনি তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্য প্লটের রিকমেন্ড করে চিঠি দিলেন। তিনিও (পুতুল) পেলেন। ছেলে-মেয়ের পর তিনি বোন, বোনের ছেলে-মেয়ের প্লটের জন্য রিকমেন্ড করলেন। গোষ্ঠী, এরিয়া, ডিস্ট্রিক্ট সবার জন্য রিকমেন্ড করা হয়েছে। মামলার বিষয়বস্তু না হওয়ায় এগুলো আর বললাম না।’ পরে আদালতে একে একে তিন মামলার রায় দেন বিচারক। ১১টা ৫৬ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাস থেকে নেমে যান। তদন্ত কর্মকর্তারা গত মার্চে শেখ হাসিনার প্লট মামলায় ১২ জন, জয়ের প্লট মামলায় ১৭ জন ও পুতুলের প্লট মামলায় ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আসামিদের বেশিরভাগই একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় প্রকৃতপক্ষে তাদের সংখ্যা ২৩। গত ৩১ জুলাই তিন মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। চার মাসের মাথায় গত ২৩ নভেম্বর এসব মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বৃহস্পতিবার, রায় ঘোষণা করা হলো।
### মামলার রায় ঘিরে আদালত এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা
প্লট দুর্নীতির মামলার রায় ঘিরে ঢাকার আদালত এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বৃহস্পতিবার, সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশে বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক বিজিবি সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। আদালতের প্রধান ফটকগুলোসহ পুরো প্রাঙ্গণে তারা বাড়তি সতর্কতায় অবস্থান করছেন, প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাঁজোয়া যান ও প্রিজনভ্যান। প্রধান ফটক হয়ে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে ‘সন্দেহজনক’ মনে হলে তাকে তল্লাশির আওতায় আনা হচ্ছে। আদালত এলাকায় পুলিশের ‘প্রচুর সদস্য’ মোতায়েন থাকার কথা জানিয়েছেন লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মল্লিক আহসান সামী। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে, যাতে রায় ঘিরে কেউ নাশকতা না করতে পারে। আদালত প্রাঙ্গণসহ চারপাশে আমাদের প্রচুর লোকজন আছে।’ পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা সামী।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ৭ বছর করে মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
আরও ১৯ জনের সাজা
বিস্মিত বিচারক, ‘এত লোভ’!
আদালত এলাকায় ছিল বাড়তি নিরাপত্তা
পাশাপাশি তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে একটি মামলায় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে আরেক মামলায় ৫ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও ‘সেই তথ্য গোপন করে তারা আইন ভেঙে দুর্নীতির মাধ্যমে’ পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা আকারের তিনটি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বৃহস্পতিবার, (২৭ নভেম্বর ২০২৫)ওই তিন মামলার রায় ঘোষণা করেন।
হাসিনা পরিবারের তিনজন ছাড়াও এই তিন মামলায় আরও ২০ জন আসামি ছিলেন। তাদের মধ্যে কেবল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার খালাস পেয়েছেন। বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। আসামিদের মধ্যে কেবল রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আত্মসমর্পণ করে কারাগারে ছিলেন। রায় ঘোষণার সময় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতকে সম্মান দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করায় তাকে এক বছর করে তিন মামলায় ৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা, তার ছেলে, মেয়েসহ বাকি আসামিদের পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলে। ফলে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তারা পাননি। তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানিতে অংশ নিতে পারেননি। কারাদণ্ডের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে এক লাখ টাকা করে তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৬ মাস করে ১৮ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড, পুতুল ও জয়কে দণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
শেখ হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে তিন মামলায় দুদকের পক্ষে শুনানি করেন খান মো. মাইনুল হাসান লিপন। জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এবার তাকে দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ড দেয়া হলো। তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবেক রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান, দুর্নীতির দায়ে যার সাজার রায় হলো।
হাসিনা, জয়, পুতুলের সঙ্গে
অন্যদের যে সাজা হলো
প্লট দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে আরও ১৯ জনকে সাজা দেয়া হয়েছে। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন কেবল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার।
### হাসিনা পরিবারের রায়ে হতাশ দুদক
আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন না হওয়ায় হতাশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রায়ের পর দুদকের কৌঁসুলি খান মো. মাইনুল হাসান লিপন বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করেছিলাম, তা হয়নি। কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি খুরশীদ আলমের আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম।
### সম্পদের প্রতি শেখ হাসিনার ‘এত লোভ’ বিস্মিত বিচারক
‘শেখ হাসিনা একজন পলিটিক্যাল লিডার, চারবারের প্রধানমন্ত্রী। তার কেন এতো টাকা লাগবে, এতো সম্পদ লাগবে?’ প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় বৃহস্পতিবার, রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। বিস্মিত হয়ে তিনি এও বলেন, ‘তার সম্পদের প্রতি এত লোভ!’ গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য খুরশীদ আলমকে এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। রায় ঘোষণার আগে ১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে এজলাসে তোলা হয়। ১১টা ২৩ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠেন। প্রথমে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের মামলার রায় পড়া শুরু হয়।
পর্যবেক্ষণে বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোডে ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
‘এরপর দুদক টিম গঠন করে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানের রিপোর্টের ভিত্তিতে গত ১২ জানুয়ারি মামলা দায়েরের অনুমতি দেয় দুদক। এরপর অভিযোগপত্র দেয়া হয়।’ বিচারক বলেন, ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিধি অনুসারে, প্লট বরাদ্দ প্রার্থীর আবেদন ব্যতীত কর্তৃপক্ষ কোনো বরাদ্দ প্রদান করবে না। বিধি ৫ অনুসারে প্রেসক্রাইবড ফরম ব্যতীত আবেদন করা যাবে না। শেখ হাসিনার কোনো আবেদন না থাকা সত্ত্বেও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের নির্দেশে ১৩অ(২)(রর) বিধি লঙ্ঘন করে ২০২২ সালের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার অনুকূলে রাজউকের প্লট বরাদ্দের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ে নোট ইনিশিয়েট করা হয়।
‘ওই নোটে স্বাক্ষর করেন পূরবী গোলদার, সাইফুল ইসলাম সরকার, কাজী ওয়াছি উদ্দিন, শহীদ উল্লা খন্দকার এবং শরীফ আহমেদ। পরদিন ১৯ জুলাই শেখ হাসিনার জন্য প্লট বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়ে পূরবী গোলদার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়। ‘২৭ জুলাই রাজউকের বোর্ড সভায় আনিছুর রহমান, শফিউল হক, খুরশীদ আলম, নাসির উদ্দীন এবং সামসুদ্দীন রেজ্যুলেশন গ্রহণ করে শেখ হাসিনাকে প্লট বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ করেন। প্রেসক্রাইবড ফরমে শেখ হাসিনার কোনো আবেদন না থাকা সত্ত্বেও বিধি ৫ ও বিধি ১৩অ(২)(রর) লঙ্ঘন করে শেখ হাসিনাকে প্লট দেয়ার সুপারিশ করা হয়।’
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘২৭ জুলাই রাজউকের উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ স্বাক্ষরিত পত্রে শেখ হাসিনাকে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্পে বিধি ১৩(অ)(১)(ধ) অনুসারে ১০ কাঠার প্লট পাওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন মর্মে শেখ হাসিনাকে জানানো হয়। ওই পত্রে নোটারী পাবলিক কর্তৃক প্রত্যয়ন করা হলফনামাসহ অন্যান্য কাগজপত্রে ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রেরণ করার অনুরোধ করা হয়। ‘৩০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে সম্পাদিত নোটারী পাবলিক কর্তৃক প্রত্যায়িত হলফনামায় উল্লেখ করতে হবে যে, রাজউকের অধিক্ষেত্রে আবেদনকারীর নিজ নামে বা তার স্বামী/স্ত্রী/পরিবার/পোষ্যদের নামে ইতোপূর্বে রাজউক থেকে বা অন্য কোনো সরকারি/আধা সরকারি সংস্থা থেকে ইতোপূর্বে প্লট বরাদ্দ করা হয়নি।’
বিচারক বলেন, ‘শেখ হাসিনা রাজউকে হলফনামা দাখিল করেন। কিন্তু হলফনামাটি নোটারী পাবলিক বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে শপথ করা ছিল না। এতে তিনি কেবল নিজ নামে কোনো প্লট বরাদ্দ না পাওয়ার কথা উল্লেখ করলেও তার স্বামী এম ওয়াজেদ আলীর নামে লিজ ডিড মূলে ১৯৭৩ সালে সরকারি জমি বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করেননি। ‘নোটারী পাবলিক কর্তৃক প্রত্যায়িত না হওয়ায় হলফনামাটি আইনগতভাবে অকার্যকর ছিল, রাজউকের তা বিবেচনা করার কোনো সুযোগ ছিল না। তবুও অবৈধ ও অকার্যকর সেই হলফনামাকে ভিত্তি করে আসামিদের যোগসাজশে প্লটের অস্থায়ী বরাদ্দপত্র ৩১ জুলাই জারি করা হয়।’
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, অস্থায়ী বরাদ্দপত্র অনুযায়ী প্লটের মূল্য নির্ধারিত হয় কাঠা প্রতি তিন লাখ টাকা। ১০ কাঠা জমির মূল্য ৩০ লাখ টাকা। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রথম কিস্তি ১২ লাখ টাকা জমা দিতে বলা হয়। শেখ হাসিনার নামে ওই বছরের ৩ আগস্ট সোনালী ব্যাংকের গণভবন শাখা থেকে রাজউকের অনুকূলে ১২ লাখ টাকার পে-অর্ডার জমা দেয়া হয়। ওই দিনই রাজউকের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর প্লট শেখ হাসিনার অনুকূলে চূড়ান্ত বরাদ্দপত্র জারি করা হয়। প্লটের নির্ধারিত মূল্য পরিশোধের পর প্লট হস্তান্তরের জন্য সুপারিশ করা হলে শেখ হাসিনা নিজ স্বাক্ষরে ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর প্লট হস্তান্তরের আবেদন করেন, যা অপরাধের অভিপ্রায় হিসেবে আদালতের কাছে বিবেচিত হয়।
বিচারক বলেন, ‘শেখ হাসিনা নিজ স্বাক্ষরে ১২ সেপ্টেম্বর লিজ দলিল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন এবং ৩০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে আরেকটি শপথছাড়া হলফনামা দেন, যেখানে নিজ নামে কোনো প্লট না থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও স্বামী বা পরিবারের নামে বরাদ্দকৃত জমির তথ্য গোপন রাখা হয়। ‘এ হলফনামাটিও আইনগতভাবে অকার্যকর ছিল। তথাপি রাজউক লিজ দলিল সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নেয়। ওইদিন রাজউক এবং শেখ হাসিনার মধ্যে প্লটের চুক্তি কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধিত হয়।’
বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ফাইনালি প্লট বুঝিয়ে দিতে দরখাস্ত দিলেন শেখ হাসিনা। সম্পদের প্রতি তার লোভ আছে। না হলে আবেদনটি ছুঁড়ে ফেলতে পারতেন। বলতেন, ‘প্লট দরকার নাই, তা না করে (প্লট) বুঝে নিতে আবেদন করেন। ‘পরে ০০৯ প্লটটি চূড়ান্তভাবে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এখানে রাজউক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অন্যায় করেছে। শেখ হাসিনা অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত, প্রতারণা করেছেন। তিনি এটা না পেলে কোনো সৎ লোক হয়তো পেতেন।’
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) ৩ আগস্ট প্লট পান। দুঃখজনকভাবে ৩১ আগস্ট তিনি ছেলে জয়ের জন্য প্লটের রেকমেন্ড করলেন। তিনি একজন পলিটিক্যাল লিডার, চারবারের প্রধানমন্ত্রী। তার কেন এতো টাকা, এতো সম্পদ লাগবে? তারা এসব সম্পদ না পেলে তো অন্য কেউ পেতেন। ‘এরপর ১১ সেপ্টেম্বর তিনি তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্য প্লটের রিকমেন্ড করে চিঠি দিলেন। তিনিও (পুতুল) পেলেন। ছেলে-মেয়ের পর তিনি বোন, বোনের ছেলে-মেয়ের প্লটের জন্য রিকমেন্ড করলেন। গোষ্ঠী, এরিয়া, ডিস্ট্রিক্ট সবার জন্য রিকমেন্ড করা হয়েছে। মামলার বিষয়বস্তু না হওয়ায় এগুলো আর বললাম না।’ পরে আদালতে একে একে তিন মামলার রায় দেন বিচারক। ১১টা ৫৬ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাস থেকে নেমে যান। তদন্ত কর্মকর্তারা গত মার্চে শেখ হাসিনার প্লট মামলায় ১২ জন, জয়ের প্লট মামলায় ১৭ জন ও পুতুলের প্লট মামলায় ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আসামিদের বেশিরভাগই একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় প্রকৃতপক্ষে তাদের সংখ্যা ২৩। গত ৩১ জুলাই তিন মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। চার মাসের মাথায় গত ২৩ নভেম্বর এসব মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বৃহস্পতিবার, রায় ঘোষণা করা হলো।
### মামলার রায় ঘিরে আদালত এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা
প্লট দুর্নীতির মামলার রায় ঘিরে ঢাকার আদালত এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বৃহস্পতিবার, সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশে বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক বিজিবি সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। আদালতের প্রধান ফটকগুলোসহ পুরো প্রাঙ্গণে তারা বাড়তি সতর্কতায় অবস্থান করছেন, প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাঁজোয়া যান ও প্রিজনভ্যান। প্রধান ফটক হয়ে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে ‘সন্দেহজনক’ মনে হলে তাকে তল্লাশির আওতায় আনা হচ্ছে। আদালত এলাকায় পুলিশের ‘প্রচুর সদস্য’ মোতায়েন থাকার কথা জানিয়েছেন লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মল্লিক আহসান সামী। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে, যাতে রায় ঘিরে কেউ নাশকতা না করতে পারে। আদালত প্রাঙ্গণসহ চারপাশে আমাদের প্রচুর লোকজন আছে।’ পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা সামী।