ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়নের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনী এলাকা ও ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তিন স্তরে মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব আখতার আহমেদ।
বৃহস্পতিবার, (২৭ নভেম্বর ২০২৫) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তি ও প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘ইসির স্পষ্ট বার্তা হচ্ছে একটা সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন বাস্তবায়ন করার জন্য সবাইকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে এবং নিজ দায়িত্ব নিজ আওতায় পালন করতে হবে। দায়িত্ব পালনে কোনো ব্যত্যয় হলে কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’
ইসি সচিব নির্বাচনী নিরাপত্তা পরিকল্পনা বিষয়ে জানান, নির্বাচনী এলাকা ও ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোতায়েন পরিকল্পনায় তিনটি ভাগ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে স্থির ইউনিট: কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন। এর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট (স্থায়ী বা মোবাইল) থাকবে।
ভ্রাম্যমাণ ইউনিট: এ ইউনিটগুলো ঘুরে ঘুরে নজরদারি করবে। একটি ইউনিট কতগুলো কেন্দ্র দেখবে, তা কেন্দ্রের ভৌগোলিক অবস্থান ও সড়ক সংযোগ বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট বাহিনী ঠিক করবে।
কেন্দ্রীয় রিজার্ভ: এটি কেন্দ্রীয় রিজার্ভ বা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত থাকবে, যা প্রয়োজন সাপেক্ষে দ্রুত মোতায়েন করা হবে।
বাহিনী মোতায়েন ও সংখ্যা
নির্বাচনে প্রায় ১৩ কোটি ভোটার এবং প্রায় ৪৩ হাজার ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ৭ লাখের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।
ভোট কেন্দ্রে সদস্য: ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৩-১৮ জন সদস্য মোতায়েন রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাহিনীভিত্তিক: ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের সংখ্যাই হবে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৯০ হাজারের বেশি থাকবে। এছাড়া পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরাও মোতায়েন থাকবেন।
যানবাহন: স্থানীয় পর্যায়ে যানবাহনের স্বল্পতা থাকায় সরকারি দপ্তর বা স্থানীয়ভাবে ভাড়ায় যানবাহন সংগ্রহের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বহাল
ইসি সচিব নিশ্চিত করেছেন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সামরিক বাহিনী থাকছে। সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদুর্ধ্ব সমপদমর্যাদার কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (কোস্টগার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তাসহ) বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আগামী ২০২৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তারা এ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
এছাড়া নির্বাচনী ‘ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি’, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন।
তদারকি, সমন্বয় ও সাইবার নিরাপত্তা
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকির মূল দায়িত্বে ‘লিড মিনিস্ট্রি’ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থাকবে। তারা নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। অন্যদিকে, সামগ্রিক তদারকি ও সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবে নির্বাচন কমিশন।
মনিটরিং সেল: ইসির নেতৃত্বে সব বাহিনী ও সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় ‘মনিটরিং সেল’ গঠন করা হবে।
সাইবার নিরাপত্তা: অপতথ্য, গুজব ও মিথ্যা রোধে সামাজিকমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলো তদারক করতে একটি ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল’ গঠন করা হবে। এ সেলে ইউএনডিপির প্ল্যাটফর্ম এবং তথ্য মন্ত্রণালয়, সিআইডি ও অন্যান্য তথ্য যাচাইকারী এজেন্সিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
অপরাধ দমন: অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, বৈধ অস্ত্র জমা নেয়া, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে তৎপরতা বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।
ইসি সচিব বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিকল্প ব্যবস্থা বা ‘কন্টিনজেন্সি প্ল্যান’ প্রস্তুত রাখা দরকার; যাতে একই সঙ্গে দুই বা তিনটি জায়গায় ঝামেলা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তারা তফসিল ঘোষণার প্রথম দিন থেকেই আচরণবিধির সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে মাঠে কাজ শুরু করবেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়নের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনী এলাকা ও ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তিন স্তরে মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব আখতার আহমেদ।
বৃহস্পতিবার, (২৭ নভেম্বর ২০২৫) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তি ও প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘ইসির স্পষ্ট বার্তা হচ্ছে একটা সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন বাস্তবায়ন করার জন্য সবাইকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে এবং নিজ দায়িত্ব নিজ আওতায় পালন করতে হবে। দায়িত্ব পালনে কোনো ব্যত্যয় হলে কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’
ইসি সচিব নির্বাচনী নিরাপত্তা পরিকল্পনা বিষয়ে জানান, নির্বাচনী এলাকা ও ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোতায়েন পরিকল্পনায় তিনটি ভাগ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে স্থির ইউনিট: কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন। এর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট (স্থায়ী বা মোবাইল) থাকবে।
ভ্রাম্যমাণ ইউনিট: এ ইউনিটগুলো ঘুরে ঘুরে নজরদারি করবে। একটি ইউনিট কতগুলো কেন্দ্র দেখবে, তা কেন্দ্রের ভৌগোলিক অবস্থান ও সড়ক সংযোগ বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট বাহিনী ঠিক করবে।
কেন্দ্রীয় রিজার্ভ: এটি কেন্দ্রীয় রিজার্ভ বা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত থাকবে, যা প্রয়োজন সাপেক্ষে দ্রুত মোতায়েন করা হবে।
বাহিনী মোতায়েন ও সংখ্যা
নির্বাচনে প্রায় ১৩ কোটি ভোটার এবং প্রায় ৪৩ হাজার ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ৭ লাখের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।
ভোট কেন্দ্রে সদস্য: ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৩-১৮ জন সদস্য মোতায়েন রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাহিনীভিত্তিক: ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের সংখ্যাই হবে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৯০ হাজারের বেশি থাকবে। এছাড়া পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরাও মোতায়েন থাকবেন।
যানবাহন: স্থানীয় পর্যায়ে যানবাহনের স্বল্পতা থাকায় সরকারি দপ্তর বা স্থানীয়ভাবে ভাড়ায় যানবাহন সংগ্রহের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বহাল
ইসি সচিব নিশ্চিত করেছেন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সামরিক বাহিনী থাকছে। সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদুর্ধ্ব সমপদমর্যাদার কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (কোস্টগার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তাসহ) বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আগামী ২০২৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তারা এ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
এছাড়া নির্বাচনী ‘ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি’, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন।
তদারকি, সমন্বয় ও সাইবার নিরাপত্তা
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকির মূল দায়িত্বে ‘লিড মিনিস্ট্রি’ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থাকবে। তারা নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। অন্যদিকে, সামগ্রিক তদারকি ও সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবে নির্বাচন কমিশন।
মনিটরিং সেল: ইসির নেতৃত্বে সব বাহিনী ও সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় ‘মনিটরিং সেল’ গঠন করা হবে।
সাইবার নিরাপত্তা: অপতথ্য, গুজব ও মিথ্যা রোধে সামাজিকমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলো তদারক করতে একটি ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল’ গঠন করা হবে। এ সেলে ইউএনডিপির প্ল্যাটফর্ম এবং তথ্য মন্ত্রণালয়, সিআইডি ও অন্যান্য তথ্য যাচাইকারী এজেন্সিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
অপরাধ দমন: অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, বৈধ অস্ত্র জমা নেয়া, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে তৎপরতা বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।
ইসি সচিব বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিকল্প ব্যবস্থা বা ‘কন্টিনজেন্সি প্ল্যান’ প্রস্তুত রাখা দরকার; যাতে একই সঙ্গে দুই বা তিনটি জায়গায় ঝামেলা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তারা তফসিল ঘোষণার প্রথম দিন থেকেই আচরণবিধির সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে মাঠে কাজ শুরু করবেন।