অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট দুর্নীতির আরেকটি মামলার রায় ঘোষণা করেছে আদালত। এই মামলায় শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম রায় প্রদান করেন। যার নামে বিতর্কিত প্লট বরাদ্দ হয়েছিল, সেই শেখ রেহানাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার সাজা পাঁচ বছর এবং টিউলিপ সিদ্দিকের দুই বছরের কারাদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
মামলার মোট ১৭ আসামির বাকি ১৪ জনকেও পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থদণ্ড অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। একইসঙ্গে শেখ রেহানার নামে বরাদ্দ পাওয়া পূর্বাচলের প্লটটি বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতির তিনটি অন্য মামলায় শেখ হাসিনাকে মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল পান পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড। এরও আগে ১৭ নভেম্বর অভ্যুত্থান দমনের চেষ্টার মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
একই প্রকল্পের আরও দুটি মামলা এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সেসব মামলায় শেখ হাসিনা ও টিউলিপের সঙ্গে নাম রয়েছে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীরও।
আসামিদের অবস্থা ও আদালত কার্যক্রম
এ মামলার ১৭ আসামির মধ্যে কেবল রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম কারাগারে ছিলেন। তাকে আদালতে হাজির করা হয়। হাসিনা, রেহানা, টিউলিপসহ বাকিরা পলাতক থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ সম্পন্ন হয় এবং তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেননি।
এর আগে পূর্বাচলের প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় আত্মসমর্পণ করায় খুরশীদ আলমকে আদালত লঘু দণ্ড দিয়েছিল। তবে এই মামলায় আদালত কোনো ‘কৃপা’ দেখাননি বলে জানান তার আইনজীবী। তাদের দাবি, মামলার প্রকৃতি আগেরগুলোর মতোই ছিল এবং আগের মতো শাস্তি প্রত্যাশা করেছিলেন; ফলে তারা আপিল করবেন।
দুদকের আইনজীবীর প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়—তারা সর্বোচ্চ শাস্তি, অর্থাৎ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রত্যাশা করলেও তা হয়নি। কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে।
কার দায়ে কী সাজা
আসামি পরিচয় সাজা
শেখ রেহানা শেখ হাসিনার বোন ৭ বছর
শেখ হাসিনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৫ বছর
টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ এমপি ২ বছর
শরীফ আহমেদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী ৫ বছর
কাজী ওয়াছি উদ্দিন সাবেক সচিব ৫ বছর
পূরবী গোলদার সিনিয়র সহকারী সচিব ৫ বছর
অলিউল্লাহ অতিরিক্ত সচিব ৫ বছর
মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন সাবেক একান্ত সচিব ৫ বছর
মোহাম্মদ খুরশীদ আলম রাজউকের সাবেক সদস্য ৫ বছর
আনিছুর রহমান মিঞা সাবেক চেয়ারম্যান ৫ বছর
মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন রাজউকের সাবেক সদস্য ৫ বছর
সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী রাজউকের সাবেক সদস্য ৫ বছর
তন্ময় দাস রাজউকের সাবেক সদস্য ৫ বছর
নুরুল ইসলাম রাজউকের পরিচালক ৫ বছর
মাজহারুল ইসলাম রাজউকের সহকারী পরিচালক ৫ বছর
নায়েব আলী শরীফ রাজউকের উপপরিচালক ৫ বছর
সাইফুল ইসলাম সরকার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ৫ বছর
সবাইকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড।
মামলা বৃত্তান্ত
আগের সরকারের আমলে পূর্বাচলের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনে শেখ হাসিনা, তার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ করা হয়।
প্লট নম্বরগুলো ছিল—রেহানার ১৩, ববির ১১, রূপন্তীর ১৯, হাসিনার ৯, জয়ের ১৫ এবং পুতুলের ১৭ নম্বর।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যান। তার পরিবারের সদস্যরাও দেশ ত্যাগ করেন। পতনের পর বিভিন্ন অভিযোগে একের পর এক মামলা হয়।
পূর্বাচলের প্লট বরাদ্দে অবৈধতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর হাই কোর্ট তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে, যা ২০০৯–২০২৪ পর্যন্ত রাজউকের বরাদ্দ অনিয়ম তদন্তের দায়িত্ব পায়। দুদক পরে পৃথক ছয়টি মামলা করে।
শেখ রেহানার প্লট মামলাটি দায়ের হয় গত ১৩ জানুয়ারি। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় ১৭ জনের বিরুদ্ধে। আসামিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় এবং পরে অনুপস্থিতিতেই অভিযোগ গঠন করা হয়।
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতে থাকা সাক্ষ্যগ্রহণ, আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক শেষে এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ ছিল
শেখ রেহানা
রাজউক এলাকায় আবাসন থাকা সত্ত্বেও তা গোপন করে পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট নেন; রাজউকে কোনো আবেদন ছাড়াই বোন শেখ হাসিনার কাছে প্লটের জন্য অনুরোধ করেন।
টিউলিপ সিদ্দিক
মায়ের প্লট বরাদ্দে সরাসরি সহযোগিতা এবং খালা শেখ হাসিনার ওপর প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনা
ক্ষমতার অপব্যবহার করে বোনকে প্লট পাইয়ে দিয়েছেন; নিজে ও অন্যদের শাস্তি থেকে রক্ষা করতে দপ্তরের একটি নথি গায়েব বা বিনষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে।
মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন
প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে প্লট বরাদ্দের বিষয়ে গৃহায়ন সচিবকে চিঠি দেন; নথি বিনষ্টে যোগসাজশের অভিযোগও রয়েছে।
অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা
গৃহায়ন মন্ত্রণালয় ও রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা অবৈধভাবে নথি অনুমোদন, প্লট বরাদ্দ, হস্তান্তর ও সই-স্বাক্ষরে ভূমিকা রাখেন।
হাসিনার পতনের পর টিউলিপ সিদ্দিকের অবস্থান
সরকার পতনের পর লন্ডনে এক ডেভেলপারের কাছ থেকে পাওয়া সাত লাখ পাউন্ড দামের ফ্ল্যাট নিয়ে সমালোচনায় টিউলিপ জানুয়ারিতে প্রতিমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন।
রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগেও তার নাম আসে।
দুদক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে তার আইনজীবীরা অভিযোগ করেন—দুদক প্রমাণ দেখায়নি এবং টিউলিপের ন্যায়বিচারের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
দুদক পাল্টা প্রশ্ন তোলে—তিনি যদি নির্দোষ হন তবে পদত্যাগ করলেন কেন এবং আইনজীবীকে কেন দুদকের সাথে যোগাযোগে পাঠালেন?
টিউলিপ ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের এমপি; ২০১৭ ও ২০১৯ সালেও পুনর্নির্বাচিত হন। শৈশব কাটে বাংলাদেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে। তিনি লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট দুর্নীতির আরেকটি মামলার রায় ঘোষণা করেছে আদালত। এই মামলায় শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম রায় প্রদান করেন। যার নামে বিতর্কিত প্লট বরাদ্দ হয়েছিল, সেই শেখ রেহানাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার সাজা পাঁচ বছর এবং টিউলিপ সিদ্দিকের দুই বছরের কারাদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
মামলার মোট ১৭ আসামির বাকি ১৪ জনকেও পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থদণ্ড অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। একইসঙ্গে শেখ রেহানার নামে বরাদ্দ পাওয়া পূর্বাচলের প্লটটি বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতির তিনটি অন্য মামলায় শেখ হাসিনাকে মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল পান পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড। এরও আগে ১৭ নভেম্বর অভ্যুত্থান দমনের চেষ্টার মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
একই প্রকল্পের আরও দুটি মামলা এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সেসব মামলায় শেখ হাসিনা ও টিউলিপের সঙ্গে নাম রয়েছে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীরও।
আসামিদের অবস্থা ও আদালত কার্যক্রম
এ মামলার ১৭ আসামির মধ্যে কেবল রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম কারাগারে ছিলেন। তাকে আদালতে হাজির করা হয়। হাসিনা, রেহানা, টিউলিপসহ বাকিরা পলাতক থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ সম্পন্ন হয় এবং তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেননি।
এর আগে পূর্বাচলের প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় আত্মসমর্পণ করায় খুরশীদ আলমকে আদালত লঘু দণ্ড দিয়েছিল। তবে এই মামলায় আদালত কোনো ‘কৃপা’ দেখাননি বলে জানান তার আইনজীবী। তাদের দাবি, মামলার প্রকৃতি আগেরগুলোর মতোই ছিল এবং আগের মতো শাস্তি প্রত্যাশা করেছিলেন; ফলে তারা আপিল করবেন।
দুদকের আইনজীবীর প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়—তারা সর্বোচ্চ শাস্তি, অর্থাৎ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রত্যাশা করলেও তা হয়নি। কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে।
কার দায়ে কী সাজা
আসামি পরিচয় সাজা
শেখ রেহানা শেখ হাসিনার বোন ৭ বছর
শেখ হাসিনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৫ বছর
টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ এমপি ২ বছর
শরীফ আহমেদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী ৫ বছর
কাজী ওয়াছি উদ্দিন সাবেক সচিব ৫ বছর
পূরবী গোলদার সিনিয়র সহকারী সচিব ৫ বছর
অলিউল্লাহ অতিরিক্ত সচিব ৫ বছর
মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন সাবেক একান্ত সচিব ৫ বছর
মোহাম্মদ খুরশীদ আলম রাজউকের সাবেক সদস্য ৫ বছর
আনিছুর রহমান মিঞা সাবেক চেয়ারম্যান ৫ বছর
মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন রাজউকের সাবেক সদস্য ৫ বছর
সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী রাজউকের সাবেক সদস্য ৫ বছর
তন্ময় দাস রাজউকের সাবেক সদস্য ৫ বছর
নুরুল ইসলাম রাজউকের পরিচালক ৫ বছর
মাজহারুল ইসলাম রাজউকের সহকারী পরিচালক ৫ বছর
নায়েব আলী শরীফ রাজউকের উপপরিচালক ৫ বছর
সাইফুল ইসলাম সরকার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ৫ বছর
সবাইকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড।
মামলা বৃত্তান্ত
আগের সরকারের আমলে পূর্বাচলের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনে শেখ হাসিনা, তার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ করা হয়।
প্লট নম্বরগুলো ছিল—রেহানার ১৩, ববির ১১, রূপন্তীর ১৯, হাসিনার ৯, জয়ের ১৫ এবং পুতুলের ১৭ নম্বর।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যান। তার পরিবারের সদস্যরাও দেশ ত্যাগ করেন। পতনের পর বিভিন্ন অভিযোগে একের পর এক মামলা হয়।
পূর্বাচলের প্লট বরাদ্দে অবৈধতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর হাই কোর্ট তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে, যা ২০০৯–২০২৪ পর্যন্ত রাজউকের বরাদ্দ অনিয়ম তদন্তের দায়িত্ব পায়। দুদক পরে পৃথক ছয়টি মামলা করে।
শেখ রেহানার প্লট মামলাটি দায়ের হয় গত ১৩ জানুয়ারি। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় ১৭ জনের বিরুদ্ধে। আসামিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় এবং পরে অনুপস্থিতিতেই অভিযোগ গঠন করা হয়।
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতে থাকা সাক্ষ্যগ্রহণ, আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক শেষে এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ ছিল
শেখ রেহানা
রাজউক এলাকায় আবাসন থাকা সত্ত্বেও তা গোপন করে পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট নেন; রাজউকে কোনো আবেদন ছাড়াই বোন শেখ হাসিনার কাছে প্লটের জন্য অনুরোধ করেন।
টিউলিপ সিদ্দিক
মায়ের প্লট বরাদ্দে সরাসরি সহযোগিতা এবং খালা শেখ হাসিনার ওপর প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনা
ক্ষমতার অপব্যবহার করে বোনকে প্লট পাইয়ে দিয়েছেন; নিজে ও অন্যদের শাস্তি থেকে রক্ষা করতে দপ্তরের একটি নথি গায়েব বা বিনষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে।
মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন
প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে প্লট বরাদ্দের বিষয়ে গৃহায়ন সচিবকে চিঠি দেন; নথি বিনষ্টে যোগসাজশের অভিযোগও রয়েছে।
অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা
গৃহায়ন মন্ত্রণালয় ও রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা অবৈধভাবে নথি অনুমোদন, প্লট বরাদ্দ, হস্তান্তর ও সই-স্বাক্ষরে ভূমিকা রাখেন।
হাসিনার পতনের পর টিউলিপ সিদ্দিকের অবস্থান
সরকার পতনের পর লন্ডনে এক ডেভেলপারের কাছ থেকে পাওয়া সাত লাখ পাউন্ড দামের ফ্ল্যাট নিয়ে সমালোচনায় টিউলিপ জানুয়ারিতে প্রতিমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন।
রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগেও তার নাম আসে।
দুদক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে তার আইনজীবীরা অভিযোগ করেন—দুদক প্রমাণ দেখায়নি এবং টিউলিপের ন্যায়বিচারের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
দুদক পাল্টা প্রশ্ন তোলে—তিনি যদি নির্দোষ হন তবে পদত্যাগ করলেন কেন এবং আইনজীবীকে কেন দুদকের সাথে যোগাযোগে পাঠালেন?
টিউলিপ ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের এমপি; ২০১৭ ও ২০১৯ সালেও পুনর্নির্বাচিত হন। শৈশব কাটে বাংলাদেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে। তিনি লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন।