মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী অঞ্চলের সুপরিচিত ‘ওহিদুর বাহিনীর’ প্রধান, নওগাঁ-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বামপন্থী রাজনীতিবিদ শেখ ওহিদুর রহমান আর নেই।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
তার ছেলে ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন জানিয়েছেন, ওইদিন বাদ এশা নওগাঁ শহরের নওজোয়ান মাঠে ওহিদুর রহমানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন রোববার সকাল ১০টায় আত্রাই উপজেলার রসুলপুর গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব
১৯৪৩ সালে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় জন্মগ্রহণ করা শেখ ওহিদুর রহমান ছিলেন একজন সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে নওগাঁ, রাজশাহী ও নাটোর অঞ্চলে দুই হাজারেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন এক সুসংগঠিত বাহিনী—যা পরবর্তীতে ‘ওহিদুর বাহিনী’ নামে পরিচিতি পায়। এই বাহিনী এলাকার মুক্তিযুদ্ধে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে।
বাম রাজনীতির অগ্রণী মুখ
পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শেখ ওহিদুর রহমান। তিনি অবিভক্ত রাজশাহী জেলার কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় কৃষক সমিতির সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশ আখ চাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জানান, আত্রাইয়ে তিনি ছিলেন ‘লাল সূর্য’ নামে পরিচিত এক অকুতোভয় জননেতা।
শিক্ষা ও রাজনৈতিক পথচলা
১৯৬৫ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজশাহী জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরে ১৯৮৩ সালে তিনি শাহাগোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদে নওগাঁ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি সিপিবিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৯ সালে নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে কো-অপ্টও হন।
১৯৯০ সালে তিনি আত্রাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ১৯৯১ সালের ২১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
লেখক ও ইতিহাস সচেতন
শেখ ওহিদুর রহমান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক লেখালেখিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার লেখা *‘মুক্তি সংগ্রামে আত্রাই’* বইটিতে তিনি আত্রাই অঞ্চলের মানুষের সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা ও আত্মত্যাগের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন। বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত।
তিনি মৃত্যুকালে দুই সন্তান রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে আত্রাই অঞ্চলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা বলছেন, তিনি শুধু একজন রাজনীতিকই নন, ছিলেন জনগণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ একজন সংগ্রামী নেতা।
শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী অঞ্চলের সুপরিচিত ‘ওহিদুর বাহিনীর’ প্রধান, নওগাঁ-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বামপন্থী রাজনীতিবিদ শেখ ওহিদুর রহমান আর নেই।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
তার ছেলে ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন জানিয়েছেন, ওইদিন বাদ এশা নওগাঁ শহরের নওজোয়ান মাঠে ওহিদুর রহমানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন রোববার সকাল ১০টায় আত্রাই উপজেলার রসুলপুর গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব
১৯৪৩ সালে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় জন্মগ্রহণ করা শেখ ওহিদুর রহমান ছিলেন একজন সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে নওগাঁ, রাজশাহী ও নাটোর অঞ্চলে দুই হাজারেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন এক সুসংগঠিত বাহিনী—যা পরবর্তীতে ‘ওহিদুর বাহিনী’ নামে পরিচিতি পায়। এই বাহিনী এলাকার মুক্তিযুদ্ধে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে।
বাম রাজনীতির অগ্রণী মুখ
পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শেখ ওহিদুর রহমান। তিনি অবিভক্ত রাজশাহী জেলার কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় কৃষক সমিতির সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশ আখ চাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জানান, আত্রাইয়ে তিনি ছিলেন ‘লাল সূর্য’ নামে পরিচিত এক অকুতোভয় জননেতা।
শিক্ষা ও রাজনৈতিক পথচলা
১৯৬৫ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজশাহী জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরে ১৯৮৩ সালে তিনি শাহাগোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদে নওগাঁ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি সিপিবিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৯ সালে নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে কো-অপ্টও হন।
১৯৯০ সালে তিনি আত্রাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ১৯৯১ সালের ২১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
লেখক ও ইতিহাস সচেতন
শেখ ওহিদুর রহমান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক লেখালেখিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার লেখা *‘মুক্তি সংগ্রামে আত্রাই’* বইটিতে তিনি আত্রাই অঞ্চলের মানুষের সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা ও আত্মত্যাগের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন। বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত।
তিনি মৃত্যুকালে দুই সন্তান রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে আত্রাই অঞ্চলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা বলছেন, তিনি শুধু একজন রাজনীতিকই নন, ছিলেন জনগণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ একজন সংগ্রামী নেতা।