লেখক, গবেষক ও মার্কসবাদী তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমর মারা গেছেন। রোববার,(০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। শ্বাসকষ্ট ও রক্তচাপের সমস্যার কারণে গত ২২ জুলাই হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল বদরুদ্দীন উমরকে। পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসাতেও ফিরেছিলেন। আবার রোববার সকালে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল।
বদরুদ্দীন উমর ১৯৩১ সালে ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা আবুল হাশিম ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ। ১৯৫০ সালে উমররা ঢাকায় চলে আসেন। এর আগে তিনি বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। ঢাকায় এসে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক শেষ করে ১৯৫৫ সালে দর্শন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর করেন। এরপর পড়তে যান যুক্তরাজ্যে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স করেন ফিলোসফি, পলিটিক্স ও ইকোনমিক্সে (পিপিই)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স শেষ করার আগেই দর্শন বিভাগে খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন বদরুদ্দীন উমর। ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ এবং ১৯৫৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে তিনি যোগ দেন। তার হাত দিয়েই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয়।
ষাটের দশকে প্রকাশিত তার তিনটি বই সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬), সংস্কৃতির সংকট (১৯৬৭) ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৯) বাঙালি জাতীয়তাবাদের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তখন থেকেই পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে তার বিরোধ বৃদ্ধি পেতে থাকে।১৯৬৮ সালে শিক্ষকতার কাজে ইস্তফা দিয়ে সরাসরি রাজনীতি ও সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন বদরুদ্দীন উমর।
তিনি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী। এক সময় পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন বদরুদ্দীন উমর। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন গড়ে সভাপতির দায়িত্ব নেন। অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য বদরুদ্দীন উমরকে মনোনীত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা
লেখক, গবেষক ও মার্কসবাদী তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যআজ ১০টা থেকে শহীদ মিনারে রাখা হবে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বদরুদ্দীন উমরের জানাজা হবে। এরপর তাকে জুরাইন কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টাসহ রাজনীতিকদের শোক
লেখক, গবেষক ও মার্কসবাদী তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।
বদরুদ্দীন উমরকে “মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের অন্যতম অগ্রনায়ক, রাজনীতিবিদ,
প্রগতিশীল চিন্তাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী” হিসেবে বর্ণনা করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস তার শোকবাণীতে বলেন, তার মৃত্যু “জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।” তিনি বলেন, “বদরুদ্দীন উমর ছিলেন আমাদের মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতির সংগ্রামের এক উজ্জ্বল বাতিঘর। ভাষা আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা, গবেষণা, ঔপনিবেশিক মানসিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ এবং সমাজতান্ত্রিক দর্শনের প্রতি তার অবিচল নিষ্ঠা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক শোক বার্তায় বলেন, “বদরুদ্দীন উমর ছিলেন এদেশের স্বাধীন বিবেকের এক প্রতীক। বারবার রাজরোষে পড়া সত্ত্বেও আদর্শ বাস্তবায়নে ছিলেন আপসহীনভাবে স্থির।”
শোক বার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “রাজনীতির দূর্নীতিকরণের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন এক জলন্ত প্রতিবাদ। বিদ্যমান রাজনৈতিক সামাজিক প্রেক্ষাপটে তার মত নির্ভিক মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবীর বেঁচে থাকা খুব জরুরি ছিল।”
রোববার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
লেখক, গবেষক ও মার্কসবাদী তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমর মারা গেছেন। রোববার,(০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। শ্বাসকষ্ট ও রক্তচাপের সমস্যার কারণে গত ২২ জুলাই হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল বদরুদ্দীন উমরকে। পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসাতেও ফিরেছিলেন। আবার রোববার সকালে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল।
বদরুদ্দীন উমর ১৯৩১ সালে ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা আবুল হাশিম ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ। ১৯৫০ সালে উমররা ঢাকায় চলে আসেন। এর আগে তিনি বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। ঢাকায় এসে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক শেষ করে ১৯৫৫ সালে দর্শন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর করেন। এরপর পড়তে যান যুক্তরাজ্যে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স করেন ফিলোসফি, পলিটিক্স ও ইকোনমিক্সে (পিপিই)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স শেষ করার আগেই দর্শন বিভাগে খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন বদরুদ্দীন উমর। ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ এবং ১৯৫৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে তিনি যোগ দেন। তার হাত দিয়েই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয়।
ষাটের দশকে প্রকাশিত তার তিনটি বই সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬), সংস্কৃতির সংকট (১৯৬৭) ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৯) বাঙালি জাতীয়তাবাদের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তখন থেকেই পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে তার বিরোধ বৃদ্ধি পেতে থাকে।১৯৬৮ সালে শিক্ষকতার কাজে ইস্তফা দিয়ে সরাসরি রাজনীতি ও সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন বদরুদ্দীন উমর।
তিনি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী। এক সময় পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন বদরুদ্দীন উমর। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন গড়ে সভাপতির দায়িত্ব নেন। অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য বদরুদ্দীন উমরকে মনোনীত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা
লেখক, গবেষক ও মার্কসবাদী তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যআজ ১০টা থেকে শহীদ মিনারে রাখা হবে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বদরুদ্দীন উমরের জানাজা হবে। এরপর তাকে জুরাইন কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টাসহ রাজনীতিকদের শোক
লেখক, গবেষক ও মার্কসবাদী তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।
বদরুদ্দীন উমরকে “মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের অন্যতম অগ্রনায়ক, রাজনীতিবিদ,
প্রগতিশীল চিন্তাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী” হিসেবে বর্ণনা করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস তার শোকবাণীতে বলেন, তার মৃত্যু “জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।” তিনি বলেন, “বদরুদ্দীন উমর ছিলেন আমাদের মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতির সংগ্রামের এক উজ্জ্বল বাতিঘর। ভাষা আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা, গবেষণা, ঔপনিবেশিক মানসিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ এবং সমাজতান্ত্রিক দর্শনের প্রতি তার অবিচল নিষ্ঠা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক শোক বার্তায় বলেন, “বদরুদ্দীন উমর ছিলেন এদেশের স্বাধীন বিবেকের এক প্রতীক। বারবার রাজরোষে পড়া সত্ত্বেও আদর্শ বাস্তবায়নে ছিলেন আপসহীনভাবে স্থির।”
শোক বার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “রাজনীতির দূর্নীতিকরণের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন এক জলন্ত প্রতিবাদ। বিদ্যমান রাজনৈতিক সামাজিক প্রেক্ষাপটে তার মত নির্ভিক মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবীর বেঁচে থাকা খুব জরুরি ছিল।”