ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
লেখক, গবেষক ও মার্কসবাদী তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমরকে শেষ বিদায় জানানো হলো ফুলেল শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে। তার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, গবেষক সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এ সময় সরকারের একাধিক উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “বদরুদ্দীন উমর অসাধারণ একজন মানুষ; তিনি কখনও আপস করেননি। তার গবেষণা আমাদের পথ দেখিয়েছে। তিনি কখনও হতাশাবাদীও ছিলেন না। সবসময় আশার পথ দেখিয়েছেন। তার কাজের জন্য আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “তিনি আজন্ম মানুষের পক্ষে গবেষণা করেছেন, রাজনীতির তত্ত্বগত বিশ্লেষণ করেছেন। এ কাজটি তিনি আনন্দ চিত্ত্বেই করেছেন। তিনি বলেছেন, এমন জীবনই তিনি যাপন করতে চেয়েছেন। ফলে তিনি নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্টই ছিলেন।”
মহিলা শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের বলেন, “একজন আপোসহীন মানুষ চলে গেলেন। তিনি কখনই আপোস করেননি। তাকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, বিতর্কও হয়েছে। তিনি নিজের আদর্শে ছিলেন অবিচল। আমাদের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে থাকবেন।”
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বলেন, “চব্বিশের অভ্যুত্থানে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন যে বুদ্ধিজীবী, তিনি বদরুদ্দীন উমর। তিনি ইতিহাসের সত্য লিখেছেন। বদরুদ্দীন উমর সব পুরস্কারের ঊর্ধ্বে। আমরা তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কার দিতে চেয়েছি। তিনি আমাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি পুরস্কার নেবেন না।” জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। এ সময় তিনি বলেন, “বদরুদ্দীন উমর বুদ্ধিজীবী হিসেবে সবসময় ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, শোষকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শোসিতের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “দুটি কারণে তাকে আমাদের মনে রাখতে হবে। তিনি যে মতাদর্শিক জায়গা থেকে রাজনীতি করেছেন, শেষ পর্যন্ত তিনি সেই আদর্শে অবিচল থেকেছেন। আর তিনি আজীবন মানুষের পক্ষে থেকেছেন, আপোস করেননি। বাম ধারার সকল পক্ষের সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক ছিল।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তরফে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বদরুদ্দীন উমর হাসিনার শাসনকে ফ্যাসিবাদ হিসেবে চিহ্নিত করে গেছেন। আমাদের জুলাইয়ে যখন আন্দোলন চলছিল, তখনই তিনি এটাকে অভ্যুত্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।”
এছাড়া শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব এসেছিলেন শ্রদ্ধা জানাতে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ নেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। সেখানে জানাজার পর জুরাইন কবরস্থানে বদরুদ্দীন উমরকে তার মা-বাবার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মারা যান বদরুদ্দীন উমর। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। সর্বশেষ তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
লেখক, গবেষক ও মার্কসবাদী তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমরকে শেষ বিদায় জানানো হলো ফুলেল শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে। তার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, গবেষক সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এ সময় সরকারের একাধিক উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “বদরুদ্দীন উমর অসাধারণ একজন মানুষ; তিনি কখনও আপস করেননি। তার গবেষণা আমাদের পথ দেখিয়েছে। তিনি কখনও হতাশাবাদীও ছিলেন না। সবসময় আশার পথ দেখিয়েছেন। তার কাজের জন্য আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “তিনি আজন্ম মানুষের পক্ষে গবেষণা করেছেন, রাজনীতির তত্ত্বগত বিশ্লেষণ করেছেন। এ কাজটি তিনি আনন্দ চিত্ত্বেই করেছেন। তিনি বলেছেন, এমন জীবনই তিনি যাপন করতে চেয়েছেন। ফলে তিনি নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্টই ছিলেন।”
মহিলা শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের বলেন, “একজন আপোসহীন মানুষ চলে গেলেন। তিনি কখনই আপোস করেননি। তাকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, বিতর্কও হয়েছে। তিনি নিজের আদর্শে ছিলেন অবিচল। আমাদের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে থাকবেন।”
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বলেন, “চব্বিশের অভ্যুত্থানে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন যে বুদ্ধিজীবী, তিনি বদরুদ্দীন উমর। তিনি ইতিহাসের সত্য লিখেছেন। বদরুদ্দীন উমর সব পুরস্কারের ঊর্ধ্বে। আমরা তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কার দিতে চেয়েছি। তিনি আমাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি পুরস্কার নেবেন না।” জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। এ সময় তিনি বলেন, “বদরুদ্দীন উমর বুদ্ধিজীবী হিসেবে সবসময় ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, শোষকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শোসিতের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “দুটি কারণে তাকে আমাদের মনে রাখতে হবে। তিনি যে মতাদর্শিক জায়গা থেকে রাজনীতি করেছেন, শেষ পর্যন্ত তিনি সেই আদর্শে অবিচল থেকেছেন। আর তিনি আজীবন মানুষের পক্ষে থেকেছেন, আপোস করেননি। বাম ধারার সকল পক্ষের সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক ছিল।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তরফে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বদরুদ্দীন উমর হাসিনার শাসনকে ফ্যাসিবাদ হিসেবে চিহ্নিত করে গেছেন। আমাদের জুলাইয়ে যখন আন্দোলন চলছিল, তখনই তিনি এটাকে অভ্যুত্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।”
এছাড়া শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব এসেছিলেন শ্রদ্ধা জানাতে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ নেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। সেখানে জানাজার পর জুরাইন কবরস্থানে বদরুদ্দীন উমরকে তার মা-বাবার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মারা যান বদরুদ্দীন উমর। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। সর্বশেষ তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।