alt

লেখনিতে মাটি মানুষ আর শেকড়ের কথা তুলে আনতেন রুকুনউদ্দৌলাহ্

যশোরে নাগরিক শোকসভায় বক্তারা

প্রতিনিধি, যশোর : রোববার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রুকুনউদ্দৌলাহ্র কলমে কোন কৃত্রিমতা নয়, কলম ছিলো সোজা সরল। তিনি সমাজের অসঙ্গতি, মাটি মানুষ আর শেকড়ের কথা তুলে আনতেন। সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি জীবনে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু তাঁর কলম কখনো থেমে থাকেনি। কেউ পথ হারালে পথের সন্ধান চাইলে তাকে পথের সন্ধান দিতেন। সাংবাদিকতার পাঠশালা ছিলেন রুকুনউদ্দৌলাহ্। তাই তো তিনি গণমানুষের প্রতিনিধিত্বশীল সাংবাদিকতা পছন্দ করতেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় যশোর টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট ও মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ্ নাগরিক শোকসভায় বক্তরা এসব কথা বলেন।

নাগরিক শোকসভার কমিটির আয়োজনে সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় নেত্রী হাবিবা শেফা। রুকুনউদ্দৌলাহ্’র দীর্ঘ কর্মময় জীবন, সামাজিক অঙ্গনে অসামান্য অবদান এবং ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বিভিন্ন রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক সামাজিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষেরা। এক মিনিট নিরবতার আগে উদীচী যশোর সংসদের শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনে আগুনের পরশমনি গানে এই স্মরণসভা শুরু হয়।

স্মরণসভায় জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘যশোরের সাংবাদিকদের অভিভাবক ছিলেন রুকুনউদ্দৌলাহ্। বহুমাত্রিক কাজের মাধ্যমে বেড়িয়েছেন যশোরসহ এই অঞ্চলে। তিনি ছিলেন যেমন কঠোর, তেমনি কোমল। তার কলমকে কেউ বাঁকাতে পারেনি। দেশে সাংবাদিকতা কাজের পাশাপাশি সাংবাদিক তৈরিতেও প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। সাংবাদিকদের যে সার্বজনীন হওয়ার উদাহরণ রুকুনউদ্দৌলাহ্।’

যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক একরাম-উদ-দ্দৌলা বলেন, ‘রুকুনউদ্দৌলাহ্ আপাদমস্তক সাংবাদিক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন তিনি। টাকার কাছে তিনি বিক্রি হয়নি। অনেক দুর্দিনে চেতনার বাইরে যায়নি। রুকুনউদ্দৌলাহ্ সাংবাদিক তৈরির পাঠশালা ছিলেন। ঢাকা ও যশোরের অনেক প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক তার কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন। বহুমাত্রিক কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় চসে বেড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বাহক ছিলেন। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের রুকুনউদ্দৌলাহ’র লেখা বই পড়লে নিজেকে নানা বিষয়ে সমৃদ্ধ করতে পারবে।’

যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক গ্রামের কাগজ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন, ‘সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধাদের যে সংকট চলছে, সাংবাদিকতার যে সংকট চলছে, রুকুনউদ্দৌলাহ্’র মতো সাহসী সাংবাদিককে এই সময়ে দরকার ছিলো। আমরা যা কিছু শিখেছি, বা নতুন প্রজন্মকে শিখেয়েছে আমরা সবাই তার চেতনাকে ধারণ করি।’ মুক্তিযোদ্ধা অশোক রায় বলেন, ‘যশোরের দুজন নক্ষত্রকে হারিয়েছি। একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুকুমার দাস আর সাংবাদিকতায় নক্ষত্র ছিলেন রুকুনউদ্দৌলাহ। বলিষ্ঠ সৎ জাগরুক সাংবাদিক ছিলেন রুকুনউদ্দৌলাহ। পারিবারিকভাবেও তারা সমৃদ্ধ। এ দেশকে বড্ড ভালোবাসতেন তিনি। সাহসী, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় যশোরের পথপ্রদর্শক ছিলেন তিনি। সর্বজনস্বীকৃত এই গুণী ব্যক্তি হারানোর শূন্যতা কখনই পুরণ হবার নয়।’

প্রেস ক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘রুকুনউদ্দৌলাহ’র হাত ধরে অনেক সাংবাদিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাংবাদিকতায় সত্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন সবসময়। তিনি সংবাদ সৃষ্টি করেছে, সাংবাদিক সৃষ্টি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখেছেন, ধার করা ইতিহাস লিখেনি কখনো। সৃষ্টিশীল মানুষ ছিলেন। তিনি তার আদর্শের জায়গায় অটল ছিলেন। আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ ছিরেন। এই অঞ্চলের সাহসী সাংবাদিকতা পথ প্রদর্শক ছিলেন। তার সাংবাদিকতার মাধ্যমে চোরাচালানের ট্রেন থেমেছিলো। তার আদর্শ ও অসমাপ্ত কর্মকা- বাস্তবায়ন করার মধ্যদিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।’

সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ্ব মেয়ে সুম্মিতা দৌলা মিষ্টি তার বাবার নাগরিক শোকসভা করায় ধন্যবাদ জানান আয়োজনকদের। তিনি বলেন, তার বাবা তার আদর্শের। তিনি হৃদয়ে থাকবেন সবসময়। বক্তারা সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ্ব হাতে গড়া মুক্তিযোদ্ধা পাঠাগার ও পাক্ষিক সংবাদপত্র যশোরের কাগজ চালু রাখার দাবি জানান।

সাংবাদিক মিলন রহমান ও সাংস্কৃতিক কর্মী কাজী শাহেদ নওয়াজের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, জনউদ্যোগের আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমদ, উদীচী যশোর সংসদের সভাপতি আমিনুর রহমান হিরু, যশোর শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলু, জয়তী সোসাইটি নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস, প্রকৌশলী রুহুল আমিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নাগরিক শোকসভা কমিটির সদস্য সচিব সাজেদ রহমান বকুল।

প্রসঙ্গত, গত ২২ আগস্ট যশোরের প্রবীণ সাংবাদিক দৈনিক সংবাদের বিশেষ প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ্ মারা যান। গত কয়েকমাস ধরে তিনি হার্ট ও কিডনিজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ‘গ্রাম-গ্রামান্তরে’র লেখক খ্যাতিমান এই সাংবাদিক পাঁচ দশকের বেশি সময় সাংবাদিকতায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি চ্যানেল আই, রেডিও টুডেতে কাজ করেছেন। যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্ফুলিঙ্গ, দৈনিক ঠিকানা, দৈনিক রানার, দৈনিক কল্যাণ’-এ বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে যশোর থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক যশোরের কাগজের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন। এ পেশায় সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন আইডিই পুরষ্কার, যশোর শিল্পী গোষ্ঠী পদক, জ্ঞানমেলা পদক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করেন বজলুর রহমান স্মৃতিপদক। তার লেখা শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে ‘গ্রাম-গ্রামান্তরে’, নবযুগ প্রকাশনী থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধে যশোর’, নবরাগ প্রকাশনী থেকে ‘আমার কৈশোর আমার মুক্তিযুদ্ধ’, ‘মানুষের ভাবনা মানুষের কথা’ এবং ‘ছোট ছোট কথা অচেনা মানুষ’, ‘পতাকার অক্ষত ভূমি’ নামে বই প্রকাশিত হয়েছে।

ছবি

ফরিদা পারভীন: অচিনের পথে শ্রদ্ধাস্নাত প্রস্থান

ছবি

সাংবাদিক কাজী খলিলুর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা

ছবি

শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধায় বদরুদ্দীন উমরের শেষ বিদায়

বদরুদ্দীন উমরকে শেষ বিদায় ফুলেল শ্রদ্ধা ও স্মৃতিচারণে

ছবি

লেখক, গবেষক ও মার্কসবাদী তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমর মারা গেছেন

গণতন্ত্রী পার্টির নেতা মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বাবুর চেহলাম অনুষ্ঠিত

ছবি

মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী নিতাই চন্দ্র ঘোষের পরলোকগমন

ছবি

চান্দিনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. মনিরুল ইসলামের মৃত্যু, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

ছবি

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: দগ্ধ শিক্ষক মাহফুজার মৃত্যু

ছবি

সাংবাদিক নিরুপম দাশগুপ্তের মা ছবি দাশগুপ্তা পরলোকে

ছবি

শনিবার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী

ছবি

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চিরকুমার মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদুর রহমান বাবুর বিদায়

ছবি

মধুমিতা গ্রুপের সাবেক এমডি সালাহউদ্দিন ফারুকের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

ছবি

আজ মধুমিতা গ্রুপের সাবেক এমডি সালাহউদ্দিন ফারুকের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী

ছবি

প্রবীণ রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা শেখ ওহিদুর রহমান আর নেই

ছবি

দৈনিক সংবাদের অফিস সহকারী অজয় পালের দাহ্যকার্য সম্পন্ন

ছবি

দৈনিক সংবাদের অফিস সহকারি অজয় পাল মারা গেছেন

ছবি

কর্নেল আকবর হোসেনের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৫ জুন

ছবি

চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও প্রবীণ রাজনীতিক মন্টু

ছবি

মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই

ছবি

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক মারা গেছেন

ছবি

নির্বাসিত জীবনের চিরমুক্তি: কবি দাউদ হায়দার আর নেই

ছবি

প্রবীণ সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন আর নেই

ছবি

অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ আর নেই

ছবি

কবি আবদুল হাই মাশরেকীর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি

ছবি

সংস্কৃতি অঙ্গনের কিংবদন্তি সন্‌জীদা খাতুনের মৃত্যুতে শোক

ছবি

সংস্কৃতি অঙ্গনের পথিকৃৎ সন্‌জীদা খাতুন আর নেই

ছবি

আছিয়ার মৃত্যুতে শাবিতে গায়েবানা জানাজা

ছবি

শরীয়তপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির

ছবি

গাইনি বিশেষজ্ঞ টি এ চৌধুরী আর নেই

ছবি

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শওকত আলী আর নেই

ছবি

সেক্টর কমান্ডার সফিউল্লাহর শেষ বিদায়

ছবি

সাবেক এমপি আব্দুল কাদের খান মারা গেছেন

ছবি

কাজী নজরুল ইসলামের নাতি বাবুল কাজী আর নেই

ছবি

অর্থনীতিবিদ ও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী আনিসুর রহমান আর নেই

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের মেঝ ছেলে ড. জামাল আনোয়ারের মৃত্যু

tab

news » obitrary

লেখনিতে মাটি মানুষ আর শেকড়ের কথা তুলে আনতেন রুকুনউদ্দৌলাহ্

যশোরে নাগরিক শোকসভায় বক্তারা

প্রতিনিধি, যশোর

রোববার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রুকুনউদ্দৌলাহ্র কলমে কোন কৃত্রিমতা নয়, কলম ছিলো সোজা সরল। তিনি সমাজের অসঙ্গতি, মাটি মানুষ আর শেকড়ের কথা তুলে আনতেন। সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি জীবনে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু তাঁর কলম কখনো থেমে থাকেনি। কেউ পথ হারালে পথের সন্ধান চাইলে তাকে পথের সন্ধান দিতেন। সাংবাদিকতার পাঠশালা ছিলেন রুকুনউদ্দৌলাহ্। তাই তো তিনি গণমানুষের প্রতিনিধিত্বশীল সাংবাদিকতা পছন্দ করতেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় যশোর টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট ও মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ্ নাগরিক শোকসভায় বক্তরা এসব কথা বলেন।

নাগরিক শোকসভার কমিটির আয়োজনে সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় নেত্রী হাবিবা শেফা। রুকুনউদ্দৌলাহ্’র দীর্ঘ কর্মময় জীবন, সামাজিক অঙ্গনে অসামান্য অবদান এবং ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বিভিন্ন রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক সামাজিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষেরা। এক মিনিট নিরবতার আগে উদীচী যশোর সংসদের শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনে আগুনের পরশমনি গানে এই স্মরণসভা শুরু হয়।

স্মরণসভায় জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘যশোরের সাংবাদিকদের অভিভাবক ছিলেন রুকুনউদ্দৌলাহ্। বহুমাত্রিক কাজের মাধ্যমে বেড়িয়েছেন যশোরসহ এই অঞ্চলে। তিনি ছিলেন যেমন কঠোর, তেমনি কোমল। তার কলমকে কেউ বাঁকাতে পারেনি। দেশে সাংবাদিকতা কাজের পাশাপাশি সাংবাদিক তৈরিতেও প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। সাংবাদিকদের যে সার্বজনীন হওয়ার উদাহরণ রুকুনউদ্দৌলাহ্।’

যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক একরাম-উদ-দ্দৌলা বলেন, ‘রুকুনউদ্দৌলাহ্ আপাদমস্তক সাংবাদিক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন তিনি। টাকার কাছে তিনি বিক্রি হয়নি। অনেক দুর্দিনে চেতনার বাইরে যায়নি। রুকুনউদ্দৌলাহ্ সাংবাদিক তৈরির পাঠশালা ছিলেন। ঢাকা ও যশোরের অনেক প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক তার কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন। বহুমাত্রিক কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় চসে বেড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বাহক ছিলেন। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের রুকুনউদ্দৌলাহ’র লেখা বই পড়লে নিজেকে নানা বিষয়ে সমৃদ্ধ করতে পারবে।’

যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক গ্রামের কাগজ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন, ‘সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধাদের যে সংকট চলছে, সাংবাদিকতার যে সংকট চলছে, রুকুনউদ্দৌলাহ্’র মতো সাহসী সাংবাদিককে এই সময়ে দরকার ছিলো। আমরা যা কিছু শিখেছি, বা নতুন প্রজন্মকে শিখেয়েছে আমরা সবাই তার চেতনাকে ধারণ করি।’ মুক্তিযোদ্ধা অশোক রায় বলেন, ‘যশোরের দুজন নক্ষত্রকে হারিয়েছি। একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুকুমার দাস আর সাংবাদিকতায় নক্ষত্র ছিলেন রুকুনউদ্দৌলাহ। বলিষ্ঠ সৎ জাগরুক সাংবাদিক ছিলেন রুকুনউদ্দৌলাহ। পারিবারিকভাবেও তারা সমৃদ্ধ। এ দেশকে বড্ড ভালোবাসতেন তিনি। সাহসী, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় যশোরের পথপ্রদর্শক ছিলেন তিনি। সর্বজনস্বীকৃত এই গুণী ব্যক্তি হারানোর শূন্যতা কখনই পুরণ হবার নয়।’

প্রেস ক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘রুকুনউদ্দৌলাহ’র হাত ধরে অনেক সাংবাদিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাংবাদিকতায় সত্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন সবসময়। তিনি সংবাদ সৃষ্টি করেছে, সাংবাদিক সৃষ্টি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখেছেন, ধার করা ইতিহাস লিখেনি কখনো। সৃষ্টিশীল মানুষ ছিলেন। তিনি তার আদর্শের জায়গায় অটল ছিলেন। আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ ছিরেন। এই অঞ্চলের সাহসী সাংবাদিকতা পথ প্রদর্শক ছিলেন। তার সাংবাদিকতার মাধ্যমে চোরাচালানের ট্রেন থেমেছিলো। তার আদর্শ ও অসমাপ্ত কর্মকা- বাস্তবায়ন করার মধ্যদিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।’

সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ্ব মেয়ে সুম্মিতা দৌলা মিষ্টি তার বাবার নাগরিক শোকসভা করায় ধন্যবাদ জানান আয়োজনকদের। তিনি বলেন, তার বাবা তার আদর্শের। তিনি হৃদয়ে থাকবেন সবসময়। বক্তারা সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ্ব হাতে গড়া মুক্তিযোদ্ধা পাঠাগার ও পাক্ষিক সংবাদপত্র যশোরের কাগজ চালু রাখার দাবি জানান।

সাংবাদিক মিলন রহমান ও সাংস্কৃতিক কর্মী কাজী শাহেদ নওয়াজের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, জনউদ্যোগের আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমদ, উদীচী যশোর সংসদের সভাপতি আমিনুর রহমান হিরু, যশোর শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলু, জয়তী সোসাইটি নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস, প্রকৌশলী রুহুল আমিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নাগরিক শোকসভা কমিটির সদস্য সচিব সাজেদ রহমান বকুল।

প্রসঙ্গত, গত ২২ আগস্ট যশোরের প্রবীণ সাংবাদিক দৈনিক সংবাদের বিশেষ প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ্ মারা যান। গত কয়েকমাস ধরে তিনি হার্ট ও কিডনিজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ‘গ্রাম-গ্রামান্তরে’র লেখক খ্যাতিমান এই সাংবাদিক পাঁচ দশকের বেশি সময় সাংবাদিকতায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি চ্যানেল আই, রেডিও টুডেতে কাজ করেছেন। যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্ফুলিঙ্গ, দৈনিক ঠিকানা, দৈনিক রানার, দৈনিক কল্যাণ’-এ বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে যশোর থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক যশোরের কাগজের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন। এ পেশায় সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন আইডিই পুরষ্কার, যশোর শিল্পী গোষ্ঠী পদক, জ্ঞানমেলা পদক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করেন বজলুর রহমান স্মৃতিপদক। তার লেখা শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে ‘গ্রাম-গ্রামান্তরে’, নবযুগ প্রকাশনী থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধে যশোর’, নবরাগ প্রকাশনী থেকে ‘আমার কৈশোর আমার মুক্তিযুদ্ধ’, ‘মানুষের ভাবনা মানুষের কথা’ এবং ‘ছোট ছোট কথা অচেনা মানুষ’, ‘পতাকার অক্ষত ভূমি’ নামে বই প্রকাশিত হয়েছে।

back to top