alt

ফরিদা পারভীন: অচিনের পথে শ্রদ্ধাস্নাত প্রস্থান

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বরেণ্য লালনশিল্পী ফরিদা পারভীনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন -সংবাদ

বেলা ১১টা ৫০ মিনিট, ঢাকায় মুষলধারে বৃষ্টি। এর মধ্যে শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয় লালন সংগীতের সবচেয়ে বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীনের মরদেহ। শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন তার ভক্ত, অনুরাগী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফরিদা পারভীনকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ।

ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার রাত সোয়া ১০টায় মারা গেছেন জনপ্রিয় এই লালন সংগীতশিল্পী। ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীসহ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের ব্যক্তিরা। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়েছে। এরপর কুষ্টিয়ার পৌর কবরস্থানে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

মৃত্যুকালে ফরিদা পারভীনের বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন ফরিদা পারভীন। এর আগেও সংকটাপন্ন অবস্থায় বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল তাকে। গত বুধবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অবশেষে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে লালনকন্যা খ্যাত এই শিল্পী চলে যান না ফেরার দেশে।

১৯৫৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্ম নেয়া ফরিদা পারভীন গানে গানে কাটিয়েছেন ৫৫ বছর। ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে ফরিদা পারভীনের পেশাদার সংগীত জীবন শুরু হয়। এরপর পার হতে হয় অনেক চড়াই-উতরাই। পারিবারিক সূত্রেই গানের ভুবনে আসা। গানের প্রতি বাবার টান ছিল বেশি। দাদিও গান করতেন। বাবার চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়েছে তাকে।

শৈশবে যখন মাগুরায় ছিলেন, তখন ওস্তাদ কমল চক্রবর্তীর কাছে সংগীতের হাতেখড়ি হয়। এরপর নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তালিম থেকে দূরে থাকেননি। নানা ধরনের গান করলেও শিল্পীজীবনে পরিচিতি, জনপ্রিয়তা, অগণিত মানুষের ভালোবাসা মূলত লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে। যখন থেকে লালনের গান গাওয়া শুরু হয়েছিল, তারপর আর থেমে থাকেননি।

শুরুতে নজরুলসংগীত, পরে আধুনিক গান দিয়ে ফরিদা পারভীনের যাত্রা শুরু হলেও জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে। ফরিদা পারভীনের গানের হাতেখড়ি মাগুরা জেলায়। সেটা ১৯৫৭-৫৮ সালের কথা, তখন তিনি মাত্র চার-পাঁচ বছরের মেয়ে। সে সময় মাগুরায় তাকে গানে হাতেখড়ি দিয়েছিলেন ওস্তাদ কমল চক্রবর্তী। এরপর যেখানেই তিনি থেকেছেন, সেখানেই বিভিন্ন জনের কাছে গানের তালিম নিয়েছেন। স্বরলিপি দিয়ে নজরুলের গান হারমোনিয়ামে ও কণ্ঠে তোলার কাজটি তিনি ওস্তাদ মীর মোজাফফর আলীর কাছেই প্রথম শেখেন। ১৯৬৮ সালে তিনি রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত নজরুলসংগীতশিল্পী নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর লালন সাঁইজির গানের সঙ্গে ফরিদা পারভীনের যোগাযোগ, তখন তিনি কুষ্টিয়াতে থাকতেন। সেখানে তাদের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন মোকছেদ আলী সাঁই। ১৯৭৩ সালে ফরিদা পারভীন তার কাছেই ‘সত্য বল সুপথে চল’ গান শেখার মাধ্যমে লালন সাঁইজির গানের তালিম নেন। মোকছেদ আলী সাঁইয়ের মৃত্যুর পর খোদা বক্স সাঁই, ব্রজেন দাস, বেহাল সাঁই, ইয়াছিন সাঁই ও করিম সাঁইয়ের কাছে লালনসংগীতের তালিম নেন।

স্বাধীনতার পর ফরিদা পারভীন ঢাকায় চলে আসেন। তার গাওয়া গান দিয়ে ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস শুরু হলো। মোকছেদ আলী সাঁই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ছিলেন। তিনি ফরিদা পারভীনকে ঢাকায় কিছু লালনের গান গাইতে বলেন। তার অনুরোধে তিনি তখন ‘খাঁচার ভিতর’, ‘বাড়ির কাছে আরশি নগর’ গানগুলো গাইলেন। তখন তিনি কুষ্টিয়া থেকে এসে মোকছেদ আলী সাঁইয়ের কাছে লালনের গান শিখে ট্রান্সক্রিপশনে রেকর্ডিং করতে থাকেন। ফরিদা পারভীনের প্রথম স্বামী প্রখ্যাত গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পী আবু জাফর। তার সেই সংসারে রয়েছে তিন ছেলে ও এক মেয়ে।

লালন সাঁইজির গানের বাণী ও সুরকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে ফরিদা পারভীনের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বদরবারেও তিনি লালন সাঁইয়ের বাণী ও সুরকে প্রচারের কাজে নিয়েজিত ছিলেন। জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আরও অনেক দেশে লালনসংগীত পরিবেশন করেছেন। লালনসংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক পান ফরিদা পারভীন। এর বাইরে ১৯৯৩ সালে ‘অন্ধ প্রেম’ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ‘নিন্দার কাঁটা’ গানটির জন্য শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পী (নারী) হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ২০০৮ সালে জাপানের ফুকুওয়াকা পুরস্কার লাভ করেন। লালনশিল্পী হিসেবেই সুপরিচিত হন, তার কণ্ঠে বেশকটি আধুনিক ও দেশের গান জনপ্রিয় হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘তোমরা ভুলে গেছ মল্লিকাদির নাম’, ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ ইত্যাদি।

হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফরিদা পারভীনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার তেজকুনীপাড়ার বাসায়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে বেলা একটায় ফরিদা পারভীনের মরদেহ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা রওনা হয়েছেন কুষ্টিয়ায়। বাদ মাগরিব তাকে সেখানে সমাহিত করা হবে।

ছবি

লেখনিতে মাটি মানুষ আর শেকড়ের কথা তুলে আনতেন রুকুনউদ্দৌলাহ্

ছবি

সাংবাদিক কাজী খলিলুর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা

ছবি

শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধায় বদরুদ্দীন উমরের শেষ বিদায়

বদরুদ্দীন উমরকে শেষ বিদায় ফুলেল শ্রদ্ধা ও স্মৃতিচারণে

ছবি

লেখক, গবেষক ও মার্কসবাদী তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমর মারা গেছেন

গণতন্ত্রী পার্টির নেতা মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বাবুর চেহলাম অনুষ্ঠিত

ছবি

মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী নিতাই চন্দ্র ঘোষের পরলোকগমন

ছবি

চান্দিনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. মনিরুল ইসলামের মৃত্যু, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

ছবি

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: দগ্ধ শিক্ষক মাহফুজার মৃত্যু

ছবি

সাংবাদিক নিরুপম দাশগুপ্তের মা ছবি দাশগুপ্তা পরলোকে

ছবি

শনিবার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী

ছবি

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চিরকুমার মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদুর রহমান বাবুর বিদায়

ছবি

মধুমিতা গ্রুপের সাবেক এমডি সালাহউদ্দিন ফারুকের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

ছবি

আজ মধুমিতা গ্রুপের সাবেক এমডি সালাহউদ্দিন ফারুকের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী

ছবি

প্রবীণ রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা শেখ ওহিদুর রহমান আর নেই

ছবি

দৈনিক সংবাদের অফিস সহকারী অজয় পালের দাহ্যকার্য সম্পন্ন

ছবি

দৈনিক সংবাদের অফিস সহকারি অজয় পাল মারা গেছেন

ছবি

কর্নেল আকবর হোসেনের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৫ জুন

ছবি

চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও প্রবীণ রাজনীতিক মন্টু

ছবি

মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই

ছবি

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক মারা গেছেন

ছবি

নির্বাসিত জীবনের চিরমুক্তি: কবি দাউদ হায়দার আর নেই

ছবি

প্রবীণ সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন আর নেই

ছবি

অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ আর নেই

ছবি

কবি আবদুল হাই মাশরেকীর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি

ছবি

সংস্কৃতি অঙ্গনের কিংবদন্তি সন্‌জীদা খাতুনের মৃত্যুতে শোক

ছবি

সংস্কৃতি অঙ্গনের পথিকৃৎ সন্‌জীদা খাতুন আর নেই

ছবি

আছিয়ার মৃত্যুতে শাবিতে গায়েবানা জানাজা

ছবি

শরীয়তপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির

ছবি

গাইনি বিশেষজ্ঞ টি এ চৌধুরী আর নেই

ছবি

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শওকত আলী আর নেই

ছবি

সেক্টর কমান্ডার সফিউল্লাহর শেষ বিদায়

ছবি

সাবেক এমপি আব্দুল কাদের খান মারা গেছেন

ছবি

কাজী নজরুল ইসলামের নাতি বাবুল কাজী আর নেই

ছবি

অর্থনীতিবিদ ও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী আনিসুর রহমান আর নেই

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের মেঝ ছেলে ড. জামাল আনোয়ারের মৃত্যু

tab

news » obitrary

ফরিদা পারভীন: অচিনের পথে শ্রদ্ধাস্নাত প্রস্থান

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বরেণ্য লালনশিল্পী ফরিদা পারভীনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন -সংবাদ

রোববার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বেলা ১১টা ৫০ মিনিট, ঢাকায় মুষলধারে বৃষ্টি। এর মধ্যে শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয় লালন সংগীতের সবচেয়ে বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীনের মরদেহ। শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন তার ভক্ত, অনুরাগী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফরিদা পারভীনকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ।

ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার রাত সোয়া ১০টায় মারা গেছেন জনপ্রিয় এই লালন সংগীতশিল্পী। ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীসহ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের ব্যক্তিরা। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়েছে। এরপর কুষ্টিয়ার পৌর কবরস্থানে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

মৃত্যুকালে ফরিদা পারভীনের বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন ফরিদা পারভীন। এর আগেও সংকটাপন্ন অবস্থায় বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল তাকে। গত বুধবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অবশেষে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে লালনকন্যা খ্যাত এই শিল্পী চলে যান না ফেরার দেশে।

১৯৫৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্ম নেয়া ফরিদা পারভীন গানে গানে কাটিয়েছেন ৫৫ বছর। ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে ফরিদা পারভীনের পেশাদার সংগীত জীবন শুরু হয়। এরপর পার হতে হয় অনেক চড়াই-উতরাই। পারিবারিক সূত্রেই গানের ভুবনে আসা। গানের প্রতি বাবার টান ছিল বেশি। দাদিও গান করতেন। বাবার চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়েছে তাকে।

শৈশবে যখন মাগুরায় ছিলেন, তখন ওস্তাদ কমল চক্রবর্তীর কাছে সংগীতের হাতেখড়ি হয়। এরপর নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তালিম থেকে দূরে থাকেননি। নানা ধরনের গান করলেও শিল্পীজীবনে পরিচিতি, জনপ্রিয়তা, অগণিত মানুষের ভালোবাসা মূলত লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে। যখন থেকে লালনের গান গাওয়া শুরু হয়েছিল, তারপর আর থেমে থাকেননি।

শুরুতে নজরুলসংগীত, পরে আধুনিক গান দিয়ে ফরিদা পারভীনের যাত্রা শুরু হলেও জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে। ফরিদা পারভীনের গানের হাতেখড়ি মাগুরা জেলায়। সেটা ১৯৫৭-৫৮ সালের কথা, তখন তিনি মাত্র চার-পাঁচ বছরের মেয়ে। সে সময় মাগুরায় তাকে গানে হাতেখড়ি দিয়েছিলেন ওস্তাদ কমল চক্রবর্তী। এরপর যেখানেই তিনি থেকেছেন, সেখানেই বিভিন্ন জনের কাছে গানের তালিম নিয়েছেন। স্বরলিপি দিয়ে নজরুলের গান হারমোনিয়ামে ও কণ্ঠে তোলার কাজটি তিনি ওস্তাদ মীর মোজাফফর আলীর কাছেই প্রথম শেখেন। ১৯৬৮ সালে তিনি রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত নজরুলসংগীতশিল্পী নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর লালন সাঁইজির গানের সঙ্গে ফরিদা পারভীনের যোগাযোগ, তখন তিনি কুষ্টিয়াতে থাকতেন। সেখানে তাদের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন মোকছেদ আলী সাঁই। ১৯৭৩ সালে ফরিদা পারভীন তার কাছেই ‘সত্য বল সুপথে চল’ গান শেখার মাধ্যমে লালন সাঁইজির গানের তালিম নেন। মোকছেদ আলী সাঁইয়ের মৃত্যুর পর খোদা বক্স সাঁই, ব্রজেন দাস, বেহাল সাঁই, ইয়াছিন সাঁই ও করিম সাঁইয়ের কাছে লালনসংগীতের তালিম নেন।

স্বাধীনতার পর ফরিদা পারভীন ঢাকায় চলে আসেন। তার গাওয়া গান দিয়ে ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস শুরু হলো। মোকছেদ আলী সাঁই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ছিলেন। তিনি ফরিদা পারভীনকে ঢাকায় কিছু লালনের গান গাইতে বলেন। তার অনুরোধে তিনি তখন ‘খাঁচার ভিতর’, ‘বাড়ির কাছে আরশি নগর’ গানগুলো গাইলেন। তখন তিনি কুষ্টিয়া থেকে এসে মোকছেদ আলী সাঁইয়ের কাছে লালনের গান শিখে ট্রান্সক্রিপশনে রেকর্ডিং করতে থাকেন। ফরিদা পারভীনের প্রথম স্বামী প্রখ্যাত গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পী আবু জাফর। তার সেই সংসারে রয়েছে তিন ছেলে ও এক মেয়ে।

লালন সাঁইজির গানের বাণী ও সুরকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে ফরিদা পারভীনের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বদরবারেও তিনি লালন সাঁইয়ের বাণী ও সুরকে প্রচারের কাজে নিয়েজিত ছিলেন। জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আরও অনেক দেশে লালনসংগীত পরিবেশন করেছেন। লালনসংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক পান ফরিদা পারভীন। এর বাইরে ১৯৯৩ সালে ‘অন্ধ প্রেম’ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ‘নিন্দার কাঁটা’ গানটির জন্য শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পী (নারী) হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ২০০৮ সালে জাপানের ফুকুওয়াকা পুরস্কার লাভ করেন। লালনশিল্পী হিসেবেই সুপরিচিত হন, তার কণ্ঠে বেশকটি আধুনিক ও দেশের গান জনপ্রিয় হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘তোমরা ভুলে গেছ মল্লিকাদির নাম’, ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ ইত্যাদি।

হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফরিদা পারভীনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার তেজকুনীপাড়ার বাসায়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে বেলা একটায় ফরিদা পারভীনের মরদেহ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা রওনা হয়েছেন কুষ্টিয়ায়। বাদ মাগরিব তাকে সেখানে সমাহিত করা হবে।

back to top