বাংলাদেশের, বিশেষ করে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর, গণমানুষের সংবাদ মাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রকে ভিন্ন মাত্রা দিতে যে কয়েকজন ক্ষণজন্মা সাংবাদিক পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন তাদের অন্যতম পুরোধা ছিলেন সংবাদের সম্পাদক ও প্রকাশক আহমদুল কবির। অভিজাত জমিদার পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি সংবাদকে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ আদর্শনিষ্ঠ সংবাদপত্র হিসেবে মুক্তমনের মানুষের অবশ্যপাঠ্য সংবাদমাধ্যমে পরিণত করে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি সংবাদপত্র শিল্পে কর্মনিষ্ঠা ও আদর্শের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতের একজন দিকপাল হিসেবে সবার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
একই সঙ্গে তিনি সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়নের ব্রত নিয়ে আজীবন সাম্যবাদী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন।
সোমবার, (২৪ নভেম্বর ২০২৫) এই ভূখন্ডের সংবাদপত্রের সাংবাদিক, পাঠক ও লেখকদের কাছে স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিত্ব আহমদুল কবিরের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৩ সালের এইদিনে কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জীবদ্দশায় আহমদুল কবির ছিলেন সংবাদের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক।
আহমদুল কবিরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার, তার পরিবার ও আহমদুল কবির স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ঘোড়াশাল মিয়াবাড়ি মসজিদে পবিত্র কোরআন খতম, মরহুমের কবর জিয়ারত ও পুস্পস্তবক অর্পন, আলোচনা সভা, কাঙালি ভোজ, এতিমখানায় উন্নত খাবার পরিবেশন এবং এলাকার সব মসজিদে দোয়া মাহফিল।
আহমদুল কবিরের জন্ম ১৯২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর ঘোড়াশালে। সেখানে তিনি মনু মিয়া নামে বেশি পরিচিত। তার বাবা মরহুম আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির ছিলেন ঘোড়াশালের জমিদার। মায়ের নাম মরহুমা সুফিয়া খাতুন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৪৫-৪৬ সালে ডাকসুর প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৯৪২-৪৩ সালে তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। অর্থনীতিতে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করার পর তিনি রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ায় যোগদান করেন। আহমদুল কবির ১৯৫৪ সালে সংবাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালে প্রধান সম্পাদক হন এবং আমৃত্যু এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
তিনি ১৯৬৫ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৯ এবং ১৯৮৬ সালে নরসিংদী-২ (পলাশ-শিবপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। আশির দশকে তার নেতৃত্বে গণতন্ত্রী পার্টি গঠিত হয় এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ছিলেন।
আহমদুল কবির সংবাদ প্রকাশনার দায়িত্ব নেয়ার আগে সংবাদ ছিল তখনকার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের দলীয় সংবাদপত্র। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর মুসলিম লীগ সংবাদ বিক্রি করে দেয়। এ সময় সংবাদ কিনে নেন আহমদুল কবির। তারপরই পাল্টে যায় সংবাদ-এর নীতি আদর্শ। শুরুতে সংবাদ ছিল সাম্প্রদায়িক আদর্শের সংবাদপত্র। আহমদুল কবিরের হাতে আসার পরই সংবাদ তখনকার পাকিস্তানে এবং পরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং অসাম্প্রদায়িক আদর্শের একটি সংবাদপত্র হিসেবে পাঠকের মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়। আর এটা সম্ভব হয়েছিল আহমদুল কবিরের বস্তুনিষ্ঠ এবং সৃজনশীল প্রয়াসের কারণে। যে আদর্শ তিনি তার মধ্যে জীবনের শুরু থেকেই ধারণ করেছিলেন।
প্রয়াত আহমদুল কবিরের স্ত্রী লায়লা রহমান কবির দেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তার বড় ছেলে আলতামাশ কবির ‘সংবাদ’-এর প্রকাশক ও সম্পাদক, দ্বিতীয় ছেলে আরদাশির কবির দেশের বিশিষ্ট চা ব্যবসায়ী এবং একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টার নিহাদ কবির সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের, বিশেষ করে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর, গণমানুষের সংবাদ মাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রকে ভিন্ন মাত্রা দিতে যে কয়েকজন ক্ষণজন্মা সাংবাদিক পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন তাদের অন্যতম পুরোধা ছিলেন সংবাদের সম্পাদক ও প্রকাশক আহমদুল কবির। অভিজাত জমিদার পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি সংবাদকে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ আদর্শনিষ্ঠ সংবাদপত্র হিসেবে মুক্তমনের মানুষের অবশ্যপাঠ্য সংবাদমাধ্যমে পরিণত করে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি সংবাদপত্র শিল্পে কর্মনিষ্ঠা ও আদর্শের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতের একজন দিকপাল হিসেবে সবার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
একই সঙ্গে তিনি সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়নের ব্রত নিয়ে আজীবন সাম্যবাদী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন।
সোমবার, (২৪ নভেম্বর ২০২৫) এই ভূখন্ডের সংবাদপত্রের সাংবাদিক, পাঠক ও লেখকদের কাছে স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিত্ব আহমদুল কবিরের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৩ সালের এইদিনে কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জীবদ্দশায় আহমদুল কবির ছিলেন সংবাদের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক।
আহমদুল কবিরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার, তার পরিবার ও আহমদুল কবির স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ঘোড়াশাল মিয়াবাড়ি মসজিদে পবিত্র কোরআন খতম, মরহুমের কবর জিয়ারত ও পুস্পস্তবক অর্পন, আলোচনা সভা, কাঙালি ভোজ, এতিমখানায় উন্নত খাবার পরিবেশন এবং এলাকার সব মসজিদে দোয়া মাহফিল।
আহমদুল কবিরের জন্ম ১৯২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর ঘোড়াশালে। সেখানে তিনি মনু মিয়া নামে বেশি পরিচিত। তার বাবা মরহুম আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির ছিলেন ঘোড়াশালের জমিদার। মায়ের নাম মরহুমা সুফিয়া খাতুন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৪৫-৪৬ সালে ডাকসুর প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৯৪২-৪৩ সালে তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। অর্থনীতিতে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করার পর তিনি রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ায় যোগদান করেন। আহমদুল কবির ১৯৫৪ সালে সংবাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালে প্রধান সম্পাদক হন এবং আমৃত্যু এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
তিনি ১৯৬৫ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৯ এবং ১৯৮৬ সালে নরসিংদী-২ (পলাশ-শিবপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। আশির দশকে তার নেতৃত্বে গণতন্ত্রী পার্টি গঠিত হয় এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ছিলেন।
আহমদুল কবির সংবাদ প্রকাশনার দায়িত্ব নেয়ার আগে সংবাদ ছিল তখনকার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের দলীয় সংবাদপত্র। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর মুসলিম লীগ সংবাদ বিক্রি করে দেয়। এ সময় সংবাদ কিনে নেন আহমদুল কবির। তারপরই পাল্টে যায় সংবাদ-এর নীতি আদর্শ। শুরুতে সংবাদ ছিল সাম্প্রদায়িক আদর্শের সংবাদপত্র। আহমদুল কবিরের হাতে আসার পরই সংবাদ তখনকার পাকিস্তানে এবং পরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং অসাম্প্রদায়িক আদর্শের একটি সংবাদপত্র হিসেবে পাঠকের মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়। আর এটা সম্ভব হয়েছিল আহমদুল কবিরের বস্তুনিষ্ঠ এবং সৃজনশীল প্রয়াসের কারণে। যে আদর্শ তিনি তার মধ্যে জীবনের শুরু থেকেই ধারণ করেছিলেন।
প্রয়াত আহমদুল কবিরের স্ত্রী লায়লা রহমান কবির দেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তার বড় ছেলে আলতামাশ কবির ‘সংবাদ’-এর প্রকাশক ও সম্পাদক, দ্বিতীয় ছেলে আরদাশির কবির দেশের বিশিষ্ট চা ব্যবসায়ী এবং একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টার নিহাদ কবির সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত।