alt

জনসভা হলেই জনদুর্ভোগ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ছিল শুক্রবার। ছুটির দিন। এ দিন ছাত্রলীগের সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেমেছিল নেতাকর্মীদের ঢল। পাশপাশি ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। শুক্রবার সকাল ১১টার পর থেকে শাহবাগ থেকে মতিঝিল হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। একদিক থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী অন্যদিকে বিএনপির। দুই বড়ো দলের সমাবেশের কারণে দুপুরের পর থেকে রাজধানী ঢাকা একরকম অচল হয়ে পড়ে।

বিশেষ কারণ ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হননি। এমনি একজন মো. রবিউল ইসলাম, থাকেন মগ বাজার। তার মা থাকেন মোহাম্মদপুরে। তিনি বলেন, আজ (শুক্রবার) মাকে দেখতে যাওয়ার দিন। কিন্তু দুই দল সমাবেশ ডাকায় বাতিল করছি যাওয়া। বের হলে কখন পৌছাবো আর কখন ফিরবো ঠিক নাই।

মিরপুর, মোহাম্মদপুর থেকে আসা গণপরিবহণ যেগুলো মতিঝিল যায়, সেসব গাড়ি কারওয়ান বাজার থেকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। শাহবাগ দিয়ে না গিয়ে বাসগুলো কারওয়ান বাজার, মগ বাজার হয়ে ঘুরে গন্তব্যে দিকে যায়। এতে করে পুরো ঢাকা রূপ নেয় চরম যানজটে। এছাড়া মিরপুর থেকে আসা বেশ কিছু বাস সমাবেশস্থলে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীরা রিজার্ভ করে নেয়। এ জন্য সাধারণ মানুষ বেশ বিপাকে পড়ে।

কাঁকরাইল থেকে হেঁটে গুলিস্তানের বাসায় ফিরছেন মধ্যবয়সী এক নারী রুবিনা বেগম। পা টেনে টেনে হাঁটছেন। বললেন, তার খুব কষ্ট হচ্ছে। রিক্সাও যাচ্ছে না। বেশি টাকা দিতে চাইলেও যাচ্ছে না। বাসে বসে ছিলেন। কিন্তু কতক্ষণ বসে থাকবেন। তাই হেঁটে রওয়ানা দিয়েছেন। যদি একটা রিকশা পাওয়া যায়।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্র লীগের জনসভা উপলক্ষে ঢাকা মহানগর পুলিশের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সমাবেশ সফল করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের ১১টি রাস্তা বন্ধ রাখার কথা আগেই জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ সময় ওই রাস্তাগুলো এড়িয়ে চলতেও অনুরোধ করা হয়েছিল।

শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছিল ডিএমপি, এ সময় বিকল্প পথ ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণে শুক্রবার বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয় ছাত্রলীগের এ সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন।

রাজধানীর কিছু সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। গণপরিবহনের সংকটে গন্তব্যে পৌঁছাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয় মানুষকে।

সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করে বেলা ১১টার পর থেকেই। সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে ঠিকঠাক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেও ফেরার পথে কষ্ট পেতে হয়েছে মানুষকে।

অন্যদিকে যান চলাচল বন্ধ এমন সড়কগুলোয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দুপুর ১২টা থেকেই ছোট ছোট মিছিল বের করেন, মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেছেন। জায়গায় জায়গায় ছিল আড্ডা, গানবাজনা ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা।

এদিকে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডগুলোর সামনে গাড়ির অপেক্ষায় মানুষ গরমে আর বৃষ্টিতে দূর্ভোগে পড়েন বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা। গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছে না কারওয়ান বাজারে আবদুর রহমান স্ত্রী ও শিশুকন্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তাও প্রায় আধাঘণ্টার ওপর। যাবেন আজিমপুর। বাসে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও পড়ে সিএনজি খোঁজ করেন। কিন্তু কোন সিএনজি যেতে চায় না। কি করবেন বুঝেতে পারছেন না। অসহায়ের মতো বাচ্চাকে কোলে নিয়ে এ গাড়ি ও গাড়ির জন্য ছোটাছুটি করছিলেন।

আগারগাঁও থাকেন মো. সেলিম। ব্যবসার বিশেষ কাজে মতিঝিল যাবেন বলে বিআরটিসি’র দোতলা বাসে উঠে বসেন। তিনি বলেন, ভিআইপি রোড দিয়ে যাবে, একটু সময় লাগলেও চলে যেতে পারবো। কাকরাইলে এসে গাড়ি স্টার্ট বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যায়। নেমে যে হাঁটবেন তারও উপায় নাই। গা ঘেঁষে অন্য গাড়ি এমনভাবে দাঁড়িয়ে গেছে নামতে পারছেন না। একই জায়গায় ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে আছে। রাগে একা একা গালাগাল দিচ্ছেন সমাবেশের কথা জেনেও কেন বাসা থেকে বেরিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের জনসভা করার অধিকার আছে। কিন্তু যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, তাদের অধিকার খর্ব করার অধিকার নেই। তারা কেন এই কষ্ট ভোগ করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনদুর্ভোগের কারণে অনেকের ইচ্ছা থাকলেও রাজনীতিবিমুখ হবেন। তারা মনে করবেন, রাজনীতি মানেই মানুষকে কষ্ট দেয়া’।

ইসলামপুর, বায়তুল মোকাররম থেকে ব্যবসার জন্য কাপড় কিনে পল্টনে একটা হোটেলের রুম ভাড়া করে আছেন ২ দিন ধরে আলী মামুন। তিনি বলেন, ‘আজই ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যাব কীভাবে? না আছে বাস, না সিএনজি। টিকেট করে রাখছি ৩টার (কুড়িগ্রাম)। মনে হয় না বাস ধরতে পারবো’। কথা বলতেও তিনি যেন বিরক্ত। কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ না দিয়ে হনহন করে চলে গেলেন।

বাস চলাচল একরকম বন্ধ থাকায় মানুষকে অটোরিকশা ও রিকশার বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে। চালকদের দাবি, রাস্তা বন্ধ তাই অনেকটা ঘুরে যেতে হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েন হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা ও ছুটি নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হওয়া রোগীরা। বেলা ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে প্রায় অর্ধশত লোককে অটোরিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

জনসভা হলেই জনদুর্ভোগ, এটা কতটা কাক্সিক্ষত এমন প্রশ্নের জবাবে কারওয়ান বাজার সংলগ্ন এলাকার এক ডাব বিক্রেতা বলেন, সংবাদপত্রে আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, সে অনুযায়ী মানুষ না বেরোলেই পারত। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গাড়ি চালান এমন এক ব্যক্তি বলেছেন, মানুষ যেন ঝামেলা ছাড়া গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে এই দায়িত্ব সরকারের। প্রশাসন সেই দায়িত্ব পালন করেনি।

ছবি

রাজনৈতিক দলগুলোর মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ছবি

নাশকতার অভিযোগে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ৪৩ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

ছবি

নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে: আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেলে মত দেবে ইসি

ছবি

জামায়াতের প্রতিক্রিয়া: একই দিনে গণভোট ও নির্বাচনে ‘জনআকাঙ্খা পূরণ হয়নি’

ছবি

নদীর মাঝখানে ইসি, নড়লেই নৌকা ডুববে: সংলাপে ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা, নারী কোটা কমানোর দাবি

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জুলাই সনদ ‘লঙ্ঘিত’ হয়েছে: সালাহউদ্দিন

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর নিজের সই করা সনদ ভঙ্গ করেছেন:সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি

একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’: ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আগুন ও অবরোধ

ছবি

সিলেট-৪: ‘স্বঘোষিত’ প্রার্থী আরিফুলকে নিয়ে বিএনপিতে ‘বহিরাগত’ বিতর্ক, বিক্ষোভ

ছবি

গণভোট নয়, জনগণের সমস্যা সমাধানে নজর দিন: তারেক রহমান

ছবি

আওয়ামী লীগের কেউ যেন স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে না পারে: সিইসিকে গণঅধিকার পরিষদ

ছবি

বিএনপি নেতা আমীর খসরু: বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা যে কেউ করতে পারে

ছবি

চোরা রাস্তা দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশে আসার স্বপ্ন দেখছে: রিজভী

সুনামগঞ্জ-১ আসন: ‘প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী’ বলায় মাইক্রোফোন কেড়ে নিলেন বিএনপির প্রার্থী আনিসুল

ছবি

জুলাই সনদের বাইরে যে কোনো সিদ্ধান্তের দায় সরকারের ওপরই বর্তাবে: বিএনপি

এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল নিক্ষেপ, দুইজন কারাগারে

ছবি

গণভোটের আগে কোনো নির্বাচন নয়, জামায়াত ও সঙ্গী-সাথীদের হুঁশিয়ারি

ছবি

অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে: হাসনাত

ছবি

ভোটকে এতো ভয় কেন... কারন অস্তিত্বই থাকবে না : মির্জা ফখরুল

ছবি

জামায়াত আমিরের হুঁশিয়ারি: জুলাই সনদ ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না

ছবি

‘সিটের বিনিময়ে স্বপ্ন বিক্রি’: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ফেইসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে আলোচনা

ছবি

এনসিপি কার্যালয়ের   ককটেল হামলার দুই আসামি কারাগারে

নির্বাচন নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি হয়েছে: হাওলাদার

ছবি

একাত্তরের ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চায় একটি চক্র: মির্জা ফখরুল

ছবি

সংবিধানে গণভোট নেই বললে ২০২৬ সালেও নির্বাচন নেই : জামায়াতের নেতা হামিদুর রহমান

ছবি

"পোস্টাল ভোট বিডি" অ্যাপ উদ্বোধন ১৮ নভেম্বর :  নির্বাচন কমিশন

ছবি

বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা, সাবেক দুই এমপিসহ আসামি ৮ শতাধিক

অর্থনীতি ও সংস্কার নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

ছবি

খালেদা জিয়ার আসনে এনসিপির চূড়ান্ত মনোনয়ন চান জোবায়ের

ছবি

বহিষ্কৃত ৪০ নেতার পদ ফিরিয়ে দিলো বিএনপি

নির্বাচনের অপেক্ষায় স্থবির দেশ, বিনিয়োগ ও পারিবারিক সিদ্ধান্তও থমকে গেছে: আমীর খসরু

ছবি

অর্থনীতি ও সংস্কার নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

ছবি

নির্বাচনের অপেক্ষায় স্থবির দেশ: আমীর খসরু

ছবি

ঢাকা থেকে নির্বাচনের ঘোষণা আসিফ মাহমুদের, বললেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তে পদত্যাগ’

‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে থাকবে গণতন্ত্র মানবাধিকার ও ভোটাধিকার’

tab

জনসভা হলেই জনদুর্ভোগ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ছিল শুক্রবার। ছুটির দিন। এ দিন ছাত্রলীগের সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেমেছিল নেতাকর্মীদের ঢল। পাশপাশি ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। শুক্রবার সকাল ১১টার পর থেকে শাহবাগ থেকে মতিঝিল হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। একদিক থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী অন্যদিকে বিএনপির। দুই বড়ো দলের সমাবেশের কারণে দুপুরের পর থেকে রাজধানী ঢাকা একরকম অচল হয়ে পড়ে।

বিশেষ কারণ ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হননি। এমনি একজন মো. রবিউল ইসলাম, থাকেন মগ বাজার। তার মা থাকেন মোহাম্মদপুরে। তিনি বলেন, আজ (শুক্রবার) মাকে দেখতে যাওয়ার দিন। কিন্তু দুই দল সমাবেশ ডাকায় বাতিল করছি যাওয়া। বের হলে কখন পৌছাবো আর কখন ফিরবো ঠিক নাই।

মিরপুর, মোহাম্মদপুর থেকে আসা গণপরিবহণ যেগুলো মতিঝিল যায়, সেসব গাড়ি কারওয়ান বাজার থেকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। শাহবাগ দিয়ে না গিয়ে বাসগুলো কারওয়ান বাজার, মগ বাজার হয়ে ঘুরে গন্তব্যে দিকে যায়। এতে করে পুরো ঢাকা রূপ নেয় চরম যানজটে। এছাড়া মিরপুর থেকে আসা বেশ কিছু বাস সমাবেশস্থলে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীরা রিজার্ভ করে নেয়। এ জন্য সাধারণ মানুষ বেশ বিপাকে পড়ে।

কাঁকরাইল থেকে হেঁটে গুলিস্তানের বাসায় ফিরছেন মধ্যবয়সী এক নারী রুবিনা বেগম। পা টেনে টেনে হাঁটছেন। বললেন, তার খুব কষ্ট হচ্ছে। রিক্সাও যাচ্ছে না। বেশি টাকা দিতে চাইলেও যাচ্ছে না। বাসে বসে ছিলেন। কিন্তু কতক্ষণ বসে থাকবেন। তাই হেঁটে রওয়ানা দিয়েছেন। যদি একটা রিকশা পাওয়া যায়।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্র লীগের জনসভা উপলক্ষে ঢাকা মহানগর পুলিশের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সমাবেশ সফল করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের ১১টি রাস্তা বন্ধ রাখার কথা আগেই জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ সময় ওই রাস্তাগুলো এড়িয়ে চলতেও অনুরোধ করা হয়েছিল।

শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছিল ডিএমপি, এ সময় বিকল্প পথ ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণে শুক্রবার বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয় ছাত্রলীগের এ সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন।

রাজধানীর কিছু সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। গণপরিবহনের সংকটে গন্তব্যে পৌঁছাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয় মানুষকে।

সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করে বেলা ১১টার পর থেকেই। সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে ঠিকঠাক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেও ফেরার পথে কষ্ট পেতে হয়েছে মানুষকে।

অন্যদিকে যান চলাচল বন্ধ এমন সড়কগুলোয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দুপুর ১২টা থেকেই ছোট ছোট মিছিল বের করেন, মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেছেন। জায়গায় জায়গায় ছিল আড্ডা, গানবাজনা ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা।

এদিকে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডগুলোর সামনে গাড়ির অপেক্ষায় মানুষ গরমে আর বৃষ্টিতে দূর্ভোগে পড়েন বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা। গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছে না কারওয়ান বাজারে আবদুর রহমান স্ত্রী ও শিশুকন্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তাও প্রায় আধাঘণ্টার ওপর। যাবেন আজিমপুর। বাসে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও পড়ে সিএনজি খোঁজ করেন। কিন্তু কোন সিএনজি যেতে চায় না। কি করবেন বুঝেতে পারছেন না। অসহায়ের মতো বাচ্চাকে কোলে নিয়ে এ গাড়ি ও গাড়ির জন্য ছোটাছুটি করছিলেন।

আগারগাঁও থাকেন মো. সেলিম। ব্যবসার বিশেষ কাজে মতিঝিল যাবেন বলে বিআরটিসি’র দোতলা বাসে উঠে বসেন। তিনি বলেন, ভিআইপি রোড দিয়ে যাবে, একটু সময় লাগলেও চলে যেতে পারবো। কাকরাইলে এসে গাড়ি স্টার্ট বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যায়। নেমে যে হাঁটবেন তারও উপায় নাই। গা ঘেঁষে অন্য গাড়ি এমনভাবে দাঁড়িয়ে গেছে নামতে পারছেন না। একই জায়গায় ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে আছে। রাগে একা একা গালাগাল দিচ্ছেন সমাবেশের কথা জেনেও কেন বাসা থেকে বেরিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের জনসভা করার অধিকার আছে। কিন্তু যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, তাদের অধিকার খর্ব করার অধিকার নেই। তারা কেন এই কষ্ট ভোগ করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনদুর্ভোগের কারণে অনেকের ইচ্ছা থাকলেও রাজনীতিবিমুখ হবেন। তারা মনে করবেন, রাজনীতি মানেই মানুষকে কষ্ট দেয়া’।

ইসলামপুর, বায়তুল মোকাররম থেকে ব্যবসার জন্য কাপড় কিনে পল্টনে একটা হোটেলের রুম ভাড়া করে আছেন ২ দিন ধরে আলী মামুন। তিনি বলেন, ‘আজই ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যাব কীভাবে? না আছে বাস, না সিএনজি। টিকেট করে রাখছি ৩টার (কুড়িগ্রাম)। মনে হয় না বাস ধরতে পারবো’। কথা বলতেও তিনি যেন বিরক্ত। কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ না দিয়ে হনহন করে চলে গেলেন।

বাস চলাচল একরকম বন্ধ থাকায় মানুষকে অটোরিকশা ও রিকশার বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে। চালকদের দাবি, রাস্তা বন্ধ তাই অনেকটা ঘুরে যেতে হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েন হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা ও ছুটি নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হওয়া রোগীরা। বেলা ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে প্রায় অর্ধশত লোককে অটোরিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

জনসভা হলেই জনদুর্ভোগ, এটা কতটা কাক্সিক্ষত এমন প্রশ্নের জবাবে কারওয়ান বাজার সংলগ্ন এলাকার এক ডাব বিক্রেতা বলেন, সংবাদপত্রে আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, সে অনুযায়ী মানুষ না বেরোলেই পারত। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গাড়ি চালান এমন এক ব্যক্তি বলেছেন, মানুষ যেন ঝামেলা ছাড়া গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে এই দায়িত্ব সরকারের। প্রশাসন সেই দায়িত্ব পালন করেনি।

back to top