alt

সরকারের ফাঁদে পা দেয়নি বিএনপি, বলছেন নেতারা

মহসীন ইসলাম টুটুল : শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩

নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো ‘চাপ বা কৌশলের ফাঁদে’ যেন পড়তে না হয় সেজন্য নেতাদের ‘আত্মগোপনে’ থাকার জন্য পরামর্শ দিয়ে দলের পক্ষ থেকে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছিল বিএনপি। তাই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন বিএনপির হরতাল কর্মসূচির মধ্যেও তেমন কোনো নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রার্থী হওয়ার মতো নেতাদের মধ্যে যারা কারাগারের বাইরে আছেন তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে সরকারের পাতা ফাঁদ থেকে বিএনপি নেতাদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে পেরেছে। অর্থাৎ যত চাপ বা চেষ্টাই হোক দলটির নেতারা মনে করছেন বিএনপি নেতারা দল ছেড়ে এসে নির্বাচন করবেন, এমন আশঙ্কা তাদের মধ্যে এখন আর নেই।

দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন মূলত শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দেশজুড়ে দলের প্রার্থী হতে পারেন এমন নেতারা ‘আত্মগোপনে’ চলে যান। আবার কেউ কেউ আগেই ‘চাপ এড়াতে’ মামলায় আত্মসমর্পণ করে কারাগারে চলে যান।

তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল বিএনপি প্রত্যাখ্যান করলেও দলটির সাবেক কয়েকজন সংসদ সদস্যসহ জেলা পর্যায়ের কিছু নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন বলে জানা গেছে। এসব নিয়ে দলের একাংশের ভেতর উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কাজ করছিল।

তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলছেন, বিএনপি থেকে বেরিয়ে যারা এই নির্বাচনের অংশ হচ্ছেন, তারা দলের কোনো পর্যায়েরই গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা নন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি নির্বাচনে যাওয়ার জন্য প্রচন্ড প্রেশার দেয়া হচ্ছিল অনেককে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যায়নি, আর যাবেও না। আর বিএনপির মধ্যে যারা প্রার্থী হওয়ার মতো যোগ্য তাদের বেশিরভাগই বহু বছর ধরে নির্যাতিত এবং অনেকেই কারাগারে। দলের হাইকমান্ড জানে এরা আপোষ করবেন না। এই বার্তা সবাইকে দেয়া সম্ভব হয়েছে যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে কোনো ভাবেই যাওয়া যাবে না। এটি দলের মধ্যে কাজ করেছে।’

এর আগে ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জে দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার নাম উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য চুরি করে বিএনপি নেতাদের নামে মনোনয়নপত্র কেনার চক্রান্ত করছে সরকার’।

এবিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলছেন, ‘আওয়ামী সরকার গত পনের বছর ধরেই বিভিন্ন ভাবে অনেক চেষ্টা করছে বিএনপিকে ভেঙে চুরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকার পনের বছরে পনের জন দূরে থাক, বিএনপির একজনও গুরুত্বপূর্ণ নেতাকেও তাদের দলে ভেড়াতে পারেনি। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে আটক করা ছিল তারই অংশ। দল ভাঙার প্রচেষ্টা আগেও সফল হয়নি, এবারেও হবে না। সরকার হয়তো এবার পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সাজানো সংসদ তৈরি করতে পারে, তবে গণতন্ত্রের স্বপ্ন এ প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়িত হবে না।’

এদিকে বিএনপির বড় মাপের কোনো নেতা নির্বাচনের দিকে না গেলেও দলটির মধ্যে রীতিমত ‘কাঁপন’ ধরিয়েছিল তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) নামের নতুন দল দুটি। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খন্দকারের তৃণমূল বিএনপিতে যাওয়াটা বিস্ময়ের পাশাপাশি উদ্বেগও তৈরি করেছিল দলের বিভিন্ন স্তরে।

অনেকের মধ্যে আশঙ্কা ছিল ‘মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত কিংবা বিরোধী রাজনীতি করতে করতে ক্লান্ত’ হয়ে পড়া নেতাদের কেউ কেউ এ দল দুটির ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজী হয়ে যান কিনা। এ উদ্বেগের বড় কারণ ছিল দল দুটির উদ্যোক্তারা কিছুদিন আগেও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং তাদের দল গঠনের সময়েই বলা হচ্ছিলো যে বিএনপির ‘অনেক নেতা তাদের সঙ্গে যোগ দিবেন’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এমন কিছু না হওয়ায় বিএনপির মধ্যে স্বস্তির বাতাস বইছে বলে ধারণা দিয়েছেন বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা।

তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মূলত বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপি গঠনের পর থেকেই সতর্ক হয়ে ওঠেছিল বিএনপি নেতৃত্ব। এরপর থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ দলের সিনিয়র নেতারা কয়েকজন দলীয় নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছেন।

বিএনপি নেতা কায়সার কামাল বলছেন, নির্বাচনকে ভাঙা বা দল থেকে লোকজনকে ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা হবে এটা বিএনপি নেতৃত্ব আগে থেকেই ধারণা করছিল। এ কারণে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগে থেকেই কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি দলের প্রতিটি স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, আশ্বস্ত করেছেন। নেতারাও তার প্রতি আস্থাশীল। এ জন্যই দল থেকে গুরুত্বপূর্ণ কেউ সরে যায়নি।

ইতোমধ্যে হাই কমান্ডের নির্দেশ না মানা ও দলীয় শৃক্সক্ষলা ভঙের অভিযোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান, ধামরাই পৌরসভা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু, ফরিদপুরের শাহ আবু জাফরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

তবে বিএনপি ভাঙার চেষ্টার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে আওয়ামী লীগ বা সরকারের পক্ষ থেকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমার কাছে তথ্য আছে, তারেক রহমানকে যারা নেতা হিসেবে মানতে পারছেন না, তার লিডারশিপ মানতে যাদের কষ্ট হচ্ছে, তারা অনেকে নির্বাচনে আসবে বলে আমরা জানি। নির্বাচনে আসার জন্য তারা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মও তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, বিএনপির রাজনীতি ও নেতৃত্ব দলের অনেক নেতাদের পছন্দ হচ্ছে না বলেই তারা দল ছেড়ে নতুন দল তৈরি করেছেন। এবং আমরা শুনছি বিএনপির অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবেন।’

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোট প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত রাজনৈতিক দলগুলো

ছবি

রাজশাহীতে এনসিপি নেত্রীর আকস্মিক পদত্যাগ

ছবি

জামায়াতসহ কয়েক দলের যুগপৎ আন্দোলনের জবাব রাজপথেই দেবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন

ছবি

খালেদা জিয়ার ভাগ্নে শাহরিনকে আহ্বায়ক করে এইবির নতুন কমিটি

ছবি

নাশকতার দুই মামলা থেকে ফখরুল ও আব্বাসসহ ১০৬ জনকে অব্যাহতি

ছবি

এখন কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে: মির্জা ফখরুল

ছবি

অভিন্ন দাবিতে তিন ইসলামী দলের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি

যুগপতে পাঁচ দাবিতে জামায়াতের তিন দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫ সনাতন যোগ দিলেন জামায়াতে

ছবি

তারেকের নিরাপত্তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বাবরের আলোচনা

ছবি

যুগপতে কারা থাকছে ঠিক হয়নি, তবে খেলাফতের কর্মসূচি ঘোষণা

জামায়াতের আযাদ: মুক্তিযুদ্ধ না মানলে ‘বাংলাদেশ অস্বীকার করা হবে’

ছবি

জুলাই সনদের গেরো: এবার আদালতের মত নিতে বলল বিএনপি

ছবি

‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরে রাজি বিএনপি, তবে আইনি ভিত্তি নিয়ে মতভেদ

ছবি

ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে ‘মাস্টার প্ল্যান’ প্রশ্ন তুললেন রিজভী

ছবি

মৌলবাদীরা ‘বেহেশতের টিকেট’ বিক্রি করছে: বিএনপির গয়েশ্বর

ছবি

সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবিতে খেলাফত মজলিসের তিন দিনের কর্মসূচি

ছবি

সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এবার তুহিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

ছবি

রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে বাস্তুতন্ত্রও নিরাপদ থাকবে: তারেক রহমান

ছবি

সরকার ও উপদেষ্টারা মাহফুজদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে: নাহিদ ইসলাম

ছবি

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে পশু-পাখি ও বাস্তুতন্ত্রের অধিকার নিশ্চিত হবে: তারেক রহমান

ছবি

বসুন্ধরায় গোপন বৈঠক: ময়মনসিংহ জেলা আ.লীগ নেতার দোষ স্বীকার

ছবি

ঢাকার আগারগাঁওয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল

ছবি

আওয়ামী লীগ লুটপাট করে দেশকে দেউলিয়া করে দিয়েছে: মঈন খান

ছবি

ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তারেকের আহ্বান

ছবি

বাংলাদেশের সংবিধানে শ্রমিক, জনতার অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি: এনসিপি

ছবি

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: মিন্টু

ছবি

জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: বিএনপি

ছবি

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে গাজীপুরে সমাবেশ ও গণমিছিল করেছে ইসলামিক আন্দোলন

ছবি

নির্বাচনের আগে পরিবেশ সৃষ্টি জরুরি: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

ছবি

সংবিধান সংশোধন: মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন পদ্ধতিতে ভিন্নমত রাজনৈতিক দলগুলোর

ছবি

বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন হলে দেশের সংকট আরও বাড়বে: আনিসুল ইসলাম

ছবি

‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নে কোনো কিছু চাপিয়ে দেবে না কমিশন: আলী রীয়াজ

ছবি

ডাকসু জয়ে ছাত্র শিবিরকে অভিনন্দন পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর

ছবি

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ পদত্যাগ ঘোষণা

tab

সরকারের ফাঁদে পা দেয়নি বিএনপি, বলছেন নেতারা

মহসীন ইসলাম টুটুল

শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩

নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো ‘চাপ বা কৌশলের ফাঁদে’ যেন পড়তে না হয় সেজন্য নেতাদের ‘আত্মগোপনে’ থাকার জন্য পরামর্শ দিয়ে দলের পক্ষ থেকে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছিল বিএনপি। তাই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন বিএনপির হরতাল কর্মসূচির মধ্যেও তেমন কোনো নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রার্থী হওয়ার মতো নেতাদের মধ্যে যারা কারাগারের বাইরে আছেন তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে সরকারের পাতা ফাঁদ থেকে বিএনপি নেতাদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে পেরেছে। অর্থাৎ যত চাপ বা চেষ্টাই হোক দলটির নেতারা মনে করছেন বিএনপি নেতারা দল ছেড়ে এসে নির্বাচন করবেন, এমন আশঙ্কা তাদের মধ্যে এখন আর নেই।

দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন মূলত শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দেশজুড়ে দলের প্রার্থী হতে পারেন এমন নেতারা ‘আত্মগোপনে’ চলে যান। আবার কেউ কেউ আগেই ‘চাপ এড়াতে’ মামলায় আত্মসমর্পণ করে কারাগারে চলে যান।

তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল বিএনপি প্রত্যাখ্যান করলেও দলটির সাবেক কয়েকজন সংসদ সদস্যসহ জেলা পর্যায়ের কিছু নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন বলে জানা গেছে। এসব নিয়ে দলের একাংশের ভেতর উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কাজ করছিল।

তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলছেন, বিএনপি থেকে বেরিয়ে যারা এই নির্বাচনের অংশ হচ্ছেন, তারা দলের কোনো পর্যায়েরই গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা নন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি নির্বাচনে যাওয়ার জন্য প্রচন্ড প্রেশার দেয়া হচ্ছিল অনেককে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যায়নি, আর যাবেও না। আর বিএনপির মধ্যে যারা প্রার্থী হওয়ার মতো যোগ্য তাদের বেশিরভাগই বহু বছর ধরে নির্যাতিত এবং অনেকেই কারাগারে। দলের হাইকমান্ড জানে এরা আপোষ করবেন না। এই বার্তা সবাইকে দেয়া সম্ভব হয়েছে যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে কোনো ভাবেই যাওয়া যাবে না। এটি দলের মধ্যে কাজ করেছে।’

এর আগে ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জে দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার নাম উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য চুরি করে বিএনপি নেতাদের নামে মনোনয়নপত্র কেনার চক্রান্ত করছে সরকার’।

এবিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলছেন, ‘আওয়ামী সরকার গত পনের বছর ধরেই বিভিন্ন ভাবে অনেক চেষ্টা করছে বিএনপিকে ভেঙে চুরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকার পনের বছরে পনের জন দূরে থাক, বিএনপির একজনও গুরুত্বপূর্ণ নেতাকেও তাদের দলে ভেড়াতে পারেনি। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে আটক করা ছিল তারই অংশ। দল ভাঙার প্রচেষ্টা আগেও সফল হয়নি, এবারেও হবে না। সরকার হয়তো এবার পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সাজানো সংসদ তৈরি করতে পারে, তবে গণতন্ত্রের স্বপ্ন এ প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়িত হবে না।’

এদিকে বিএনপির বড় মাপের কোনো নেতা নির্বাচনের দিকে না গেলেও দলটির মধ্যে রীতিমত ‘কাঁপন’ ধরিয়েছিল তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) নামের নতুন দল দুটি। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খন্দকারের তৃণমূল বিএনপিতে যাওয়াটা বিস্ময়ের পাশাপাশি উদ্বেগও তৈরি করেছিল দলের বিভিন্ন স্তরে।

অনেকের মধ্যে আশঙ্কা ছিল ‘মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত কিংবা বিরোধী রাজনীতি করতে করতে ক্লান্ত’ হয়ে পড়া নেতাদের কেউ কেউ এ দল দুটির ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজী হয়ে যান কিনা। এ উদ্বেগের বড় কারণ ছিল দল দুটির উদ্যোক্তারা কিছুদিন আগেও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং তাদের দল গঠনের সময়েই বলা হচ্ছিলো যে বিএনপির ‘অনেক নেতা তাদের সঙ্গে যোগ দিবেন’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এমন কিছু না হওয়ায় বিএনপির মধ্যে স্বস্তির বাতাস বইছে বলে ধারণা দিয়েছেন বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা।

তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মূলত বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপি গঠনের পর থেকেই সতর্ক হয়ে ওঠেছিল বিএনপি নেতৃত্ব। এরপর থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ দলের সিনিয়র নেতারা কয়েকজন দলীয় নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছেন।

বিএনপি নেতা কায়সার কামাল বলছেন, নির্বাচনকে ভাঙা বা দল থেকে লোকজনকে ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা হবে এটা বিএনপি নেতৃত্ব আগে থেকেই ধারণা করছিল। এ কারণে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগে থেকেই কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি দলের প্রতিটি স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, আশ্বস্ত করেছেন। নেতারাও তার প্রতি আস্থাশীল। এ জন্যই দল থেকে গুরুত্বপূর্ণ কেউ সরে যায়নি।

ইতোমধ্যে হাই কমান্ডের নির্দেশ না মানা ও দলীয় শৃক্সক্ষলা ভঙের অভিযোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান, ধামরাই পৌরসভা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু, ফরিদপুরের শাহ আবু জাফরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

তবে বিএনপি ভাঙার চেষ্টার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে আওয়ামী লীগ বা সরকারের পক্ষ থেকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমার কাছে তথ্য আছে, তারেক রহমানকে যারা নেতা হিসেবে মানতে পারছেন না, তার লিডারশিপ মানতে যাদের কষ্ট হচ্ছে, তারা অনেকে নির্বাচনে আসবে বলে আমরা জানি। নির্বাচনে আসার জন্য তারা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মও তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, বিএনপির রাজনীতি ও নেতৃত্ব দলের অনেক নেতাদের পছন্দ হচ্ছে না বলেই তারা দল ছেড়ে নতুন দল তৈরি করেছেন। এবং আমরা শুনছি বিএনপির অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবেন।’

back to top