alt

রাজনীতি

শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন চলছেই

অচল হয়ে পড়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

খালেদ মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

#অচল দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

#রবিবার ছাত্র ধর্মঘটের ডাক, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টানা আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ত্রিমুখী আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম। বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের সব একাডেমিক ক্লাস ও পরীক্ষা। এমনকি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনে বন্ধ রয়েছে প্রশাসনিক ভবন, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার।

গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ও প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাসও বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় ঘোষিত ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সোমবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে দেশব্যাপী ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকরা তাদের ৩ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার অঙ্গীকার করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের দাবি তিনটি-প্রত্যয় কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে (প্রশাসনে জ্যেষ্ঠ সচিবেরা যে ধাপে বেতন-ভাতা পান) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি শুধু প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান অচলাবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি স্থগিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে সংবাদকে বলেন, "আজকের বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। বৈঠকের পরবর্তী সম্ভাব্য তারিখ শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।"

নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, "আমাদের যৌক্তিক দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা রবিবার থেকে আবারও আন্দোলন শুরু করব। শুক্র ও শনিবার কোনো বিক্ষোভ হবে না।"

একইসাথে নিজেদের যৌক্তিক দাবী না মানা পর্যন্ত সার্বজনীন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা। তিনি বলেন, "এই আন্দোলন এখানে বসে থাকা শিক্ষকদের নয়। ভবিষ্যতের শিক্ষকদের জন্য। এভাবে দিনের পর দিন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ আটকে রাখা যাবে না। আমরা এই সমস্যার সমাধান করব।"

জিনাত হুদা আরও বলেন, "আমরা একটি ইতিবাচক সমাধানের জন্য আশাবাদী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। রাষ্ট্রীয় কিছু কাজ থাকায় তিনি মিটিং ঠিক করতে পারেননি। তিনি আমাদের সাথে বসবেন বলে জানিয়েছেন।"

এদিকে সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

ঢাকা- শাহবাগ মহাসড়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, ঢাকা- আরিচা মহাসড়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, ঢাকা-তাতিবাজার সড়ক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, ঢাকা- বরিশাল সড়ক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, ঢাকা- ময়মনসিংহ রেলপথ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, ঢাকা- রাজশাহী মহাসড়ক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং ঢাকা- রাঙ্গামাটি মহাসড়ক অবরোধ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের বাধা

বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে এসে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।

এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনে যাতে শিক্ষার্থীরা যুক্ত হতে না পারে, সে জন্য সকাল দশটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ফটকে তালা দেয় ছাত্রলীগ। ফলে আন্দোলনে আসতে চাইলেও শিক্ষার্থীদের অনেকে আটকা পড়েন। পরে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে ফটক খুলে দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে হল থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া কবি জসীমউদ্দিন হল, বিজয় একাত্তর হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, এফ রহমান হলের শিক্ষার্থীরা যাতে আন্দোলনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য ছাত্রলীগ নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

রবিবার ছাত্র ধর্মঘটের ডাক, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

৬ ঘন্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা।

নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-আগামীকাল শুক্রবার (৫ জুলাই) সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন-অফলাইনে গণসংযোগ, পরের দিন শনিবার (৬ জুলাই) বেলা ৩টায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ এবং আগামী রবিবার (৭ জুলাই) ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন।

আন্দোলনকারীদের একজন নাহিদ হোসেন বলেন, কোটা পুনর্বহাল শিক্ষার্থীদের সাথে একটি প্রহসন। নির্বাহী বিভাগ একটি আদেশ দিচ্ছে বিচার বিভাগ সেটি বাতিল করে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এই প্রহসন মেনে নিবে না। নির্বাহী বিভাগের এখনও ক্ষমতা আছে কোটা প্রথা বাতিল করার।

তিনি বলেন, নির্বাহী বিভাগকে আমরা প্রশ্ন করতে চাই তারা কী পরিপত্র জারি করলো যেটা পাঁচ বছরের মধ্যে হাইকোর্ট বাতিল করে দিলো? তার মানে এই পরিপত্রের মধ্যে কোনো ঝামেলা আছে। আমরা এই প্রহসন মানি না। আমাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে। সরকার থেকে আমাদের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়নি। আমরা এর নিন্দা জানাই।

আনুপাতিক ভোটের পক্ষে একমত হওয়ার আহ্বান ‘৬০ নাগরিকের

ছবি

‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা ২০২৫’ প্রকাশ, বাদ ডিসি-এসপি, ইভিএম সংশ্লিষ্ট ধারা

ছবি

নির্বাচিত সরকার এলে সম্পর্ক আরও গভীর হবে—চীন সফর শেষে বললেন মির্জা ফখরুল

ছবি

‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রেই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পূরণ সম্ভব’: এনসিপি আহ্বায়ক

ছবি

একজন উপদেষ্টা মুরাদনগরে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন: মির্জা ফখরুল

ছবি

“নারীর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার” — জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রশ্ন

ছবি

মুরাদনগরে হিন্দু নারী নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানাল বিএনপি

ছবি

নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাবে এখনো একমত নয় সব রাজনৈতিক দল

ছবি

নির্বাচনের সময় বিলম্বে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে: মির্জা আব্বাস

ছবি

আনুপাতিক নির্বাচন দেশের উপযোগী নয়: সালাহউদ্দিন

ছবি

‘রাষ্ট্র সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, চিরস্থায়ী নয়’— বললেন বিএনপি নেতা

ছবি

সংসদের পিআর পদ্ধতি ও আল্লাহর ওপর আস্থার দাবি তুলে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

ছবি

আলোচনা, দোয়া, গণমিছিলসহ ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে জামায়াত

ছবি

সংস্কার ও পিআর পদ্ধতির দাবিতে সোহরাওয়ার্দীতে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন উমামা ফাতেমা

ছবি

ছাত্র-জনতার গণপ্রতিরোধকে ‘মব’ বলা ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্র: হেফাজত

ছবি

হাসনাতের ভিডিও পোস্ট ঘিরে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত, দুদকের পাল্টা সতর্কতা

ছবি

বটবাহিনীর সহযোগিতায় মুনাফেকি রাজনীতি করছে জামায়াত-শিবির: ছাত্রদল সভাপতি

ছবি

হাসনাতের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তদন্তে দুদক

ছবি

স্বৈরাচার ঠেকাতে দরকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন: বিএনপি নেতা

ছবি

অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও কর্মী সভায় মারধর: এনসিপির মাদারীপুর জেলা ও সদর কমিটি স্থগিত

ছবি

‘চা-নাস্তার জন্য এক লাখ টাকা’ দাবি: মাহমুদা মিতুর অভিযোগে দুদকের প্রতিবাদ

ছবি

কে এম নূরুল হুদা হেনস্তা মামলায় জামিন পেলেন মোজাম্মেল, হানিফ ও কাইয়ুম

ছবি

“রাষ্ট্রপতি-প্রধান বিচারপতি বাদ, নিয়োগ কমিটিতে থাকছেন স্পিকার ও রাজনৈতিক নেতারা”

ছবি

ইশরাকের সমর্থকদের বিরুদ্ধে মারধর, হুমকি ও সাংবাদিক হয়রানির অভিযোগ

ছবি

দুদকের আবেদনে আদালতের আদেশ, হাছান মাহমুদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

দলের নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদনের ‘হিড়িক’

১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়: একমত জামায়াত-এনসিপি, বিএনপিসহ ৩ দলের ভিন্নমত

নিবন্ধন ও প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশনে এনসিপির আবেদন

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ: ঐকমত্যে অধিকাংশ দল, ভিন্নমত বিএনপি-এনডিএম-বিএলডিপির

ছবি

‘নিবন্ধনের শর্ত কঠিন, তবু প্রত্যাশা করছি অনুমোদন’: আবেদন জমায় ব্যস্ত দলগুলো

ছবি

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে বিএনপির আলোচনায় শুল্ক, বাণিজ্য, নির্বাচন

ছবি

সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে নতুন দল ‘বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি’

ছবি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিদায়ী জার্মান রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

ছবি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি বদলাবে— তবে কিভাবে, তাতে এখনো মতানৈক্য

ছবি

আচরণবিধি লঙ্ঘনে দেড় লাখ টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিলের বিধান যুক্ত

tab

রাজনীতি

শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন চলছেই

অচল হয়ে পড়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

খালেদ মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

#অচল দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

#রবিবার ছাত্র ধর্মঘটের ডাক, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টানা আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ত্রিমুখী আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম। বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের সব একাডেমিক ক্লাস ও পরীক্ষা। এমনকি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনে বন্ধ রয়েছে প্রশাসনিক ভবন, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার।

গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ও প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাসও বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় ঘোষিত ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সোমবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে দেশব্যাপী ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকরা তাদের ৩ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার অঙ্গীকার করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের দাবি তিনটি-প্রত্যয় কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে (প্রশাসনে জ্যেষ্ঠ সচিবেরা যে ধাপে বেতন-ভাতা পান) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি শুধু প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান অচলাবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি স্থগিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে সংবাদকে বলেন, "আজকের বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। বৈঠকের পরবর্তী সম্ভাব্য তারিখ শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।"

নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, "আমাদের যৌক্তিক দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা রবিবার থেকে আবারও আন্দোলন শুরু করব। শুক্র ও শনিবার কোনো বিক্ষোভ হবে না।"

একইসাথে নিজেদের যৌক্তিক দাবী না মানা পর্যন্ত সার্বজনীন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা। তিনি বলেন, "এই আন্দোলন এখানে বসে থাকা শিক্ষকদের নয়। ভবিষ্যতের শিক্ষকদের জন্য। এভাবে দিনের পর দিন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ আটকে রাখা যাবে না। আমরা এই সমস্যার সমাধান করব।"

জিনাত হুদা আরও বলেন, "আমরা একটি ইতিবাচক সমাধানের জন্য আশাবাদী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। রাষ্ট্রীয় কিছু কাজ থাকায় তিনি মিটিং ঠিক করতে পারেননি। তিনি আমাদের সাথে বসবেন বলে জানিয়েছেন।"

এদিকে সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

ঢাকা- শাহবাগ মহাসড়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, ঢাকা- আরিচা মহাসড়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, ঢাকা-তাতিবাজার সড়ক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, ঢাকা- বরিশাল সড়ক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, ঢাকা- ময়মনসিংহ রেলপথ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, ঢাকা- রাজশাহী মহাসড়ক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং ঢাকা- রাঙ্গামাটি মহাসড়ক অবরোধ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের বাধা

বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে এসে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।

এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনে যাতে শিক্ষার্থীরা যুক্ত হতে না পারে, সে জন্য সকাল দশটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ফটকে তালা দেয় ছাত্রলীগ। ফলে আন্দোলনে আসতে চাইলেও শিক্ষার্থীদের অনেকে আটকা পড়েন। পরে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে ফটক খুলে দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে হল থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া কবি জসীমউদ্দিন হল, বিজয় একাত্তর হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, এফ রহমান হলের শিক্ষার্থীরা যাতে আন্দোলনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য ছাত্রলীগ নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

রবিবার ছাত্র ধর্মঘটের ডাক, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

৬ ঘন্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা।

নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-আগামীকাল শুক্রবার (৫ জুলাই) সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন-অফলাইনে গণসংযোগ, পরের দিন শনিবার (৬ জুলাই) বেলা ৩টায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ এবং আগামী রবিবার (৭ জুলাই) ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন।

আন্দোলনকারীদের একজন নাহিদ হোসেন বলেন, কোটা পুনর্বহাল শিক্ষার্থীদের সাথে একটি প্রহসন। নির্বাহী বিভাগ একটি আদেশ দিচ্ছে বিচার বিভাগ সেটি বাতিল করে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এই প্রহসন মেনে নিবে না। নির্বাহী বিভাগের এখনও ক্ষমতা আছে কোটা প্রথা বাতিল করার।

তিনি বলেন, নির্বাহী বিভাগকে আমরা প্রশ্ন করতে চাই তারা কী পরিপত্র জারি করলো যেটা পাঁচ বছরের মধ্যে হাইকোর্ট বাতিল করে দিলো? তার মানে এই পরিপত্রের মধ্যে কোনো ঝামেলা আছে। আমরা এই প্রহসন মানি না। আমাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে। সরকার থেকে আমাদের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়নি। আমরা এর নিন্দা জানাই।

back to top