alt

রাজনীতি

ছাত্র-তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে : খালেদা জিয়া

মহসীন ইসলাম টুটুল : বৃহস্পতিবার, ০৮ আগস্ট ২০২৪

বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন বেগম খালেদা জিয়া-সংবাদ

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য তরুণদের হাত শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমরা ধ্বংস চাই না, শান্তি চাই। ছাত্র-তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।’ দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর বিএনপির সমাবেশে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর এই প্রথম নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। বক্তব্যে প্রতিশোধ বন্ধ করে ভালোবাসার বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান তিনি।

বুধবার (৭ আগস্ট) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে দলটি। সমাবেশে যোগ দেন দেশের হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী। লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সমাবেশের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতদের আত্মর মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

সমাবেশে খালেদা জিয়ার একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়। তারেক রহমানের বক্তব্যের পর হাসপাতালে থাকা খালেদা জিয়ার ছবি মঞ্চের জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠলে উল্লাসে ফেটে পড়েন নেতাকর্মীরা। দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে খালেদা জিয়া সংগ্রামে শত শত শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ‘ধ্বংস-প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নয়, আসুন ভালোবাসা-শান্তি-জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি।’

এ সময় দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর নেতাকর্মীদের সামনে কথা বলতে পারায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের বীর সন্তানদের, যারা মরণপণ সংগ্রাম করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি কারাবন্দী থাকাবস্থায় আপনারা আমার কারামুক্তি ও রোগমুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, দোয়া করেছেন সে জন্য আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকারের তরফ থেকে মুক্তি পেয়েছি।’

নেতাকর্মী ও ছাত্র-জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তারা যে স্বপ্ন নিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে মেধা-যোগ্যতা-জ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। সব ধর্ম ও বর্ণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’

দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আটক হওয়ার পর দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন। খালেদা জিয়ার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। সাময়িক মুক্তি মিললেও সরকারের শর্তের কারণে তাকে গুলশানের বাড়িতে একপ্রকার বন্দিজীবনে থাকতে হয়েছে। এই সময়ে দলের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফের সিদ্ধান্ত জানালে মঙ্গলবার পুরোপুরি মুক্তি পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। মুক্তি পাওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে এই বক্তব্য দেন তিনি। অসুস্থতার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই হাসপাতালে আছেন তিনি। তাই হাসপাতাল থেকেই ভিডিওর মাধ্যমে নেতাকর্মী ও জনতার উদ্দেশে এই বক্তব্য দেন তিনি।

বিএনপির বুধবারের সমাবেশ কাকরাইল থেকে শুরু করে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রের রূপ নেয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে কয়েকশ কেন্দ্রীয় নেতা যোগ দেন।

সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যের পর ভিডিও কলে বক্তব্য দেন সমাবেশের প্রধান অতিথি তারেক রহমান। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক বছর তারেক রহমানের বক্তব্য দেশের কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়নি। সর্বশেষ গতবছরের ১৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির বিশাল সমাবেশে লন্ডন থেকে তারেক রহমান বক্তব্য দেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা দেন। তার এই বক্তব্য ওই সময়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়নি।

সমাবেশে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বৈরাচারের কবল থেকে স্বাধীন হয়েছে, ছাত্রসমাজ বিজয়ের অমর একটি ইতিহাস রচনা করেছেন। এর জন্য অনেক প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। গণতন্ত্রের বিজয়ের ইতিহাসে এ মানুষগুলো অমর হয়ে থাকবেন।’ তিনি বলেন, ‘ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে নতুন বিজয়। এ জন্য গণতন্ত্রকামী সব দলমত নির্বিশেষে দেশের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’

দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট করতে একটি চক্র কাজ করছে দাবি করে তারেক রহমান বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের কারণে আমরা আমাদের এত বড় অর্জন বিনষ্ট হতে দিতে পারি না। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান আইনশৃংখলা পরিস্থিতি শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করুণ। কারও প্রতি যেন অবিচার না হয়।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ দেশের গণতন্ত্রকামী সব দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান, ষড়যন্ত্রকারীদের নৈরাজ্যের কাছে আমরা হার মানতে পারি না। গির্জা, মন্দির, প্যাগোডার নিরাপত্তা দিন। সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকে।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার পাড়া প্রতিবেশীকে বন্ধু হিসেবে তার নিরাপত্তায় আপনি ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বসবাসকারী সবার একটাই পরিচয় আমরা বাংলাদেশি।’

শেখ হাসিনার পালানোর পর একটি চক্র দেশের পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, ‘পুলিশ জনগণের শত্রু নয়। শেখ হাসিনা বিনাভোটে থাকার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই মুহূর্ত থেকে পুলিশ কিংবা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধ করুন।’

তারেক রহমান বলেন, ‘দেশবাসীর প্রতি আহ্বান কেউ আইন নিজ হাতে তুলে নেবেন না। বিচারের ভার নিজের হাতে তুলে নেবেন না। মনে রাখবের নৈরাজ্যের বদলে নৈরাজ্য কোনো সমাধান নয়।’ মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারেক রহমান।

সরকারবিহীন দেশে হামলা, ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যারা এসব করছে, তারা দলের কেউ নয়, দুর্বৃত্ত এবং শেখ হাসিনার দোসর। তারা বিজয় ছিনিয়ে নিতে চায়।’

সেনাবাহিনী ও ছাত্রদের ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি ছাত্রদের সঙ্গে একমত। আমরা নতুন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশের জনগণ মালিকানা ফিরে পেয়েছে, দ্বিতীয় বারের মত মুক্ত হয়েছে। এতো হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে আর কখনো হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘যে পরিবর্তন আনার জন্য আন্দোলন, সেটা পূরণ করতে হবে। যেই নতুন বাংলাদেশের চিত্র মানুষ দেখতে চায়, তাই করতে হবে। এজন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

ছবি

একজন উপদেষ্টা মুরাদনগরে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন: মির্জা ফখরুল

ছবি

“নারীর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার” — জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রশ্ন

ছবি

মুরাদনগরে হিন্দু নারী নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানাল বিএনপি

ছবি

নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাবে এখনো একমত নয় সব রাজনৈতিক দল

ছবি

নির্বাচনের সময় বিলম্বে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে: মির্জা আব্বাস

ছবি

আনুপাতিক নির্বাচন দেশের উপযোগী নয়: সালাহউদ্দিন

ছবি

‘রাষ্ট্র সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, চিরস্থায়ী নয়’— বললেন বিএনপি নেতা

ছবি

সংসদের পিআর পদ্ধতি ও আল্লাহর ওপর আস্থার দাবি তুলে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

ছবি

আলোচনা, দোয়া, গণমিছিলসহ ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে জামায়াত

ছবি

সংস্কার ও পিআর পদ্ধতির দাবিতে সোহরাওয়ার্দীতে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন উমামা ফাতেমা

ছবি

ছাত্র-জনতার গণপ্রতিরোধকে ‘মব’ বলা ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্র: হেফাজত

ছবি

হাসনাতের ভিডিও পোস্ট ঘিরে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত, দুদকের পাল্টা সতর্কতা

ছবি

বটবাহিনীর সহযোগিতায় মুনাফেকি রাজনীতি করছে জামায়াত-শিবির: ছাত্রদল সভাপতি

ছবি

হাসনাতের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তদন্তে দুদক

ছবি

স্বৈরাচার ঠেকাতে দরকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন: বিএনপি নেতা

ছবি

অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও কর্মী সভায় মারধর: এনসিপির মাদারীপুর জেলা ও সদর কমিটি স্থগিত

ছবি

‘চা-নাস্তার জন্য এক লাখ টাকা’ দাবি: মাহমুদা মিতুর অভিযোগে দুদকের প্রতিবাদ

ছবি

কে এম নূরুল হুদা হেনস্তা মামলায় জামিন পেলেন মোজাম্মেল, হানিফ ও কাইয়ুম

ছবি

“রাষ্ট্রপতি-প্রধান বিচারপতি বাদ, নিয়োগ কমিটিতে থাকছেন স্পিকার ও রাজনৈতিক নেতারা”

ছবি

ইশরাকের সমর্থকদের বিরুদ্ধে মারধর, হুমকি ও সাংবাদিক হয়রানির অভিযোগ

ছবি

দুদকের আবেদনে আদালতের আদেশ, হাছান মাহমুদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

দলের নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদনের ‘হিড়িক’

১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়: একমত জামায়াত-এনসিপি, বিএনপিসহ ৩ দলের ভিন্নমত

নিবন্ধন ও প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশনে এনসিপির আবেদন

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ: ঐকমত্যে অধিকাংশ দল, ভিন্নমত বিএনপি-এনডিএম-বিএলডিপির

ছবি

‘নিবন্ধনের শর্ত কঠিন, তবু প্রত্যাশা করছি অনুমোদন’: আবেদন জমায় ব্যস্ত দলগুলো

ছবি

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে বিএনপির আলোচনায় শুল্ক, বাণিজ্য, নির্বাচন

ছবি

সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে নতুন দল ‘বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি’

ছবি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিদায়ী জার্মান রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

ছবি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি বদলাবে— তবে কিভাবে, তাতে এখনো মতানৈক্য

ছবি

আচরণবিধি লঙ্ঘনে দেড় লাখ টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিলের বিধান যুক্ত

ছবি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নি‌য়ে আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন

ছবি

মোহাম্মদপুর থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম গ্রেপ্তার

ছবি

‘মৌলিক সংস্কার’ বিষয়ে মতানৈক্য হলে গণভোটে যেতে হবে: ইসলামী আন্দোলন

ছবি

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া

tab

রাজনীতি

ছাত্র-তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে : খালেদা জিয়া

মহসীন ইসলাম টুটুল

বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন বেগম খালেদা জিয়া-সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ০৮ আগস্ট ২০২৪

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য তরুণদের হাত শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমরা ধ্বংস চাই না, শান্তি চাই। ছাত্র-তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।’ দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর বিএনপির সমাবেশে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর এই প্রথম নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। বক্তব্যে প্রতিশোধ বন্ধ করে ভালোবাসার বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান তিনি।

বুধবার (৭ আগস্ট) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে দলটি। সমাবেশে যোগ দেন দেশের হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী। লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সমাবেশের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতদের আত্মর মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

সমাবেশে খালেদা জিয়ার একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়। তারেক রহমানের বক্তব্যের পর হাসপাতালে থাকা খালেদা জিয়ার ছবি মঞ্চের জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠলে উল্লাসে ফেটে পড়েন নেতাকর্মীরা। দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে খালেদা জিয়া সংগ্রামে শত শত শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ‘ধ্বংস-প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নয়, আসুন ভালোবাসা-শান্তি-জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি।’

এ সময় দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর নেতাকর্মীদের সামনে কথা বলতে পারায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের বীর সন্তানদের, যারা মরণপণ সংগ্রাম করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি কারাবন্দী থাকাবস্থায় আপনারা আমার কারামুক্তি ও রোগমুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, দোয়া করেছেন সে জন্য আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকারের তরফ থেকে মুক্তি পেয়েছি।’

নেতাকর্মী ও ছাত্র-জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তারা যে স্বপ্ন নিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে মেধা-যোগ্যতা-জ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। সব ধর্ম ও বর্ণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’

দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আটক হওয়ার পর দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন। খালেদা জিয়ার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। সাময়িক মুক্তি মিললেও সরকারের শর্তের কারণে তাকে গুলশানের বাড়িতে একপ্রকার বন্দিজীবনে থাকতে হয়েছে। এই সময়ে দলের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফের সিদ্ধান্ত জানালে মঙ্গলবার পুরোপুরি মুক্তি পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। মুক্তি পাওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে এই বক্তব্য দেন তিনি। অসুস্থতার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই হাসপাতালে আছেন তিনি। তাই হাসপাতাল থেকেই ভিডিওর মাধ্যমে নেতাকর্মী ও জনতার উদ্দেশে এই বক্তব্য দেন তিনি।

বিএনপির বুধবারের সমাবেশ কাকরাইল থেকে শুরু করে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রের রূপ নেয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে কয়েকশ কেন্দ্রীয় নেতা যোগ দেন।

সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যের পর ভিডিও কলে বক্তব্য দেন সমাবেশের প্রধান অতিথি তারেক রহমান। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক বছর তারেক রহমানের বক্তব্য দেশের কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়নি। সর্বশেষ গতবছরের ১৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির বিশাল সমাবেশে লন্ডন থেকে তারেক রহমান বক্তব্য দেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা দেন। তার এই বক্তব্য ওই সময়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়নি।

সমাবেশে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বৈরাচারের কবল থেকে স্বাধীন হয়েছে, ছাত্রসমাজ বিজয়ের অমর একটি ইতিহাস রচনা করেছেন। এর জন্য অনেক প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। গণতন্ত্রের বিজয়ের ইতিহাসে এ মানুষগুলো অমর হয়ে থাকবেন।’ তিনি বলেন, ‘ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে নতুন বিজয়। এ জন্য গণতন্ত্রকামী সব দলমত নির্বিশেষে দেশের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’

দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট করতে একটি চক্র কাজ করছে দাবি করে তারেক রহমান বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের কারণে আমরা আমাদের এত বড় অর্জন বিনষ্ট হতে দিতে পারি না। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান আইনশৃংখলা পরিস্থিতি শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করুণ। কারও প্রতি যেন অবিচার না হয়।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ দেশের গণতন্ত্রকামী সব দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান, ষড়যন্ত্রকারীদের নৈরাজ্যের কাছে আমরা হার মানতে পারি না। গির্জা, মন্দির, প্যাগোডার নিরাপত্তা দিন। সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকে।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার পাড়া প্রতিবেশীকে বন্ধু হিসেবে তার নিরাপত্তায় আপনি ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বসবাসকারী সবার একটাই পরিচয় আমরা বাংলাদেশি।’

শেখ হাসিনার পালানোর পর একটি চক্র দেশের পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, ‘পুলিশ জনগণের শত্রু নয়। শেখ হাসিনা বিনাভোটে থাকার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই মুহূর্ত থেকে পুলিশ কিংবা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধ করুন।’

তারেক রহমান বলেন, ‘দেশবাসীর প্রতি আহ্বান কেউ আইন নিজ হাতে তুলে নেবেন না। বিচারের ভার নিজের হাতে তুলে নেবেন না। মনে রাখবের নৈরাজ্যের বদলে নৈরাজ্য কোনো সমাধান নয়।’ মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারেক রহমান।

সরকারবিহীন দেশে হামলা, ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যারা এসব করছে, তারা দলের কেউ নয়, দুর্বৃত্ত এবং শেখ হাসিনার দোসর। তারা বিজয় ছিনিয়ে নিতে চায়।’

সেনাবাহিনী ও ছাত্রদের ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি ছাত্রদের সঙ্গে একমত। আমরা নতুন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশের জনগণ মালিকানা ফিরে পেয়েছে, দ্বিতীয় বারের মত মুক্ত হয়েছে। এতো হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে আর কখনো হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘যে পরিবর্তন আনার জন্য আন্দোলন, সেটা পূরণ করতে হবে। যেই নতুন বাংলাদেশের চিত্র মানুষ দেখতে চায়, তাই করতে হবে। এজন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

back to top