alt

১০ দফা সংস্কার প্রস্তাবে আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় জামায়াত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

# ’৭২-এর সংবিধান ‘ভারতের তৈরি’: জামায়াত আমির

নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা, পররাষ্ট্র, সংসদ, দুর্নীতি, সংবিধান, ধর্ম, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ ১০টি খাতে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এই প্রস্তাবগুলো নির্বাচিত কোনো সরকারের জন্য নয় জানিয়ে দলটি জানায়, তাদের মোট ৪১টি প্রস্তাব আছে। তার মধ্যে আপাতত গুরুত্বপূর্ণ ১০টি প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারকে দেয়া হলো। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে বাকিগুলো দেখবে।

তাদের প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখার বিধান সংযুক্ত করা এবং একই ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারার বিধান রাখার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা (পিআর) চালু করা, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে সন্নিবেশিত করা এবং ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা বাতিল করার কথা বলা হয়েছে।

আজ বুধবার (৯ সেপ্টেম্ব) দুপুরে গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের দলের পক্ষ থেকে ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’ তুলে ধরেন। এ সময় জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানসহ দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সব প্রস্তাব উপস্থাপন না করার প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সবক’টি করে দিলে নির্বাচিত সরকার এসে কী করবে। আমরা নির্বাচিত সরকারকেও পরীক্ষা করতে চাই। বিরোধীদলের আওয়াজ হয় এক রকমের, আর সরকারে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে আমরা ঘুরে যাই। তাই সবাইকে পরীক্ষা করতে চাই, আমরা আগের জায়গাতেই আছি, নাকি একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদের মানসিকতার কিছু পরিবর্তন হয়েছে, সেটা আমরা একটু দেখতে চাই।’

‘সংবিধান সংস্কার নাকি পুনর্লিখন’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ১৯৭২ সালে রচিত বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের ‘জন্ম’ ভারতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। ‘ভারতে বসে রচিত’ বাহাত্তরের সংবিধান পার্লামেন্টে এনে অনুমোদন দেয়া ওই সংবিধান ‘ফরমায়েশি’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দলের ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’ তুলে ধরার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দলটির আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো স্বল্পতম সময়ের মধ্যে মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অর্থবহ করার জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার ব্যতীত নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে না।’

অতীতের মতো কোনো দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হবে, নাকি সব দল নিয়ে নির্বাচন হবে সাংবাদিকরা এই বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের আমির আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তারা ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় এসেছেন, ওটা যেভাবেই আসুক, তারা এসেছেন। এরপর ‘১৪, ’১৮, ’২৪ তিনটা নির্বাচন হয়েছে, আদৌ কি এটা নির্বাচন হয়েছে?’

নির্বাচন নয় তারা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিজেরাই নির্বাচন চায় না, আমরা তাদের ওপর নির্বাচন চাপিয়ে দিলে জুলুম হবে।’ ‘জোর’ করে আওয়ামী লীগের ওপর নির্বাচন চাপিয়ে দিলে তাদের ওপর ‘বৈষম্য’ হয় কিনা, সেটাও ভাববার কথা বলে মনে করেন তিনি।

নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার আগে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দুটি রোডম্যাপ হবে। একটা সংস্কারের, আর একটা নির্বাচনের। তবে সময় যেন অতি দীর্ঘ না হয়, আবার অতি সংক্ষিপ্ত না হয়।’

উল্লেখযোগ্য ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’

জামায়াত তাদের রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ ও সব কালো আইন বাতিল করা এবং সব ফৌজদারি মামলা তদন্তের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি জানান। দেওয়ানি মামলার জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছর এবং ফৌজদারি মামলাসমূহ সর্বোচ্চ ৩ বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান রাখার প্রস্তাব করে।

এছাড়া সংস্কার প্রস্তাবে আরও রয়েছে, সংসদের প্রধান বিরোধীদল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার মনোনীত করতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে সন্নিবেশিত করতে হবে। নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দেশে প্রত্যাখ্যাত ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে।

কোনো সরকারি চাকরিজীবী তাদের চাকরি ছাড়ার কমপক্ষে ৩ বছরের মধ্যে কোনো ধরনের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না প্রস্তাবের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার দাবি রাখা হয়।

জামায়াতের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ২০০৮ সালে প্রবর্তিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা বাতিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠিত হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন একাধিক দিনে অনুষ্ঠিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এনআইডি ব্যবস্থাপনা নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা সংস্কার প্রস্তাবে পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং চাকরিচ্যুতির জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, পুলিশ ট্রেনিং ম্যানুয়ালের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক অনুশাসন অন্তর্ভুক্ত করা বিচার বিভাগীয় সদস্যদের দ্বারা পুলিশ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রাখতে বলা হয়।

র‌্যাব ও অন্যান্য বিশেষায়িত বাহিনীর প্রতি জনসাধারণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও গত সাড়ে ১৫ বছর যারা র‌্যাবে কাজ করেছে তাদেরকে স্ব-স্ব বাহিনীতে ফিরিয়ে নেয়া এবং তাদেরকে পুনরায় র‌্যাবে নিয়োগ না দেয়াসহ বিচারবহির্ভূত সব প্রকার হত্যাকা- বন্ধ করতে বলা হয়।

প্রস্তাবে বলা হয় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আগামী ২ বছরের জন্য ৩৫ বছর ও পরবর্তী বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩৩ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে।

সব শ্রেণীতে নবী করিম সা. এর জীবনীসহ মহামানবদের জীবনী সংবলিত প্রবন্ধ সংযোজন করাসহ শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয় পাঠ্যপুস্তকে ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস গুরুত্বের সাথে তুলে ধরতে হবে। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা এবং ইবতেদায়ী মাদরাসাগুলোকে সরকারিকরণ, সব জেলার কামিল মাদ্রাসাকে সরকারিকরণ করা।

সংস্কৃতি সংস্কার প্রস্তাবে নাটক, সিনেমাসহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলো অশ্লীলতামুক্ত করা। নাটক, সিনেমা ও বিভিন্ন কন্টেন্টে বিভিন্ন ধর্ম, বিশেষ করে ইসলামকে হেয় করা থেকে বিরত থাকার বিধান প্রণয়ন করা।

পররাষ্ট্র বিষয়ক সংস্কারে মধ্যে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় চীন, নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানিবণ্টন চুক্তির উদ্যোগ নেয়া।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, আ না ম শামসুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম মাছুম, রফিকুল ইসলাম খান, সাইফুল আলম খান মিলন, হামিদুর রহমান আযাদ, আবদুল হালিম, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও মোবারক হোসাইন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

ছবি

শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে: ফখরুল

গায়েবি মামলার ঝড়ে বিধ্বস্ত, রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার: ট্রাইব্যুনালে ইনু

ছবি

সিপিবি নেতাকে দ্রুত বিচার আইন ও বিভিন্ন মামলায় বাসদের ২২ নেতাকর্মী কারাগারে

ছবি

বিএনপি সংস্কার ‘ভেস্তে দিচ্ছে’, জামায়াত নির্বাচন পেছানোর ‘দুরভিসন্ধি করছে’: নাহিদ ইসলাম

ছবি

‘হুক্কা’ প্রতীকসহ আবারও নিবন্ধিত হলো জাগপা

ছবি

আরপিও সংশোধন নিয়ে আইন উপদেষ্টার ভূমিকায় এনসিপির উদ্বেগ

ছবি

‘শাপলা কলি’তেই রাজি এনসিপি

ছবি

একাত্তরকে ভুলিয়ে দিতে চব্বিশকে বড় করতে চায় একটি মহল: বিএনপি

বঙ্গভবন থেকে মুজিবের ছবি নামানো ‘অন্যায়’ হয়েছে: সেলিম

ছবি

ভোলায় বিজেপি-বিএনপি সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ ‘অশ্বডিম্ব’: সিপিবি সভাপতি

ছবি

নির্বাচনের আগে একটি দল জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চায়: সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি

গণভোটের আদেশ দিতে হবে মুহাম্মদ ইউনূসকে, অধ্যাদেশ নয়–হাসনাত আব্দুল্লাহ

ছবি

ঐকমত্য কমিশনসহ কয়েকটি দল বিএনপির ওপর মত চাপিয়ে দিতে চায়: আমীর খসরু

ছবি

স্বাধীনতা যুদ্ধ ভুলিয়ে দিতে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বড় করে দেখানো হচ্ছে’: ফখরুল

ছবি

বিএনপি অন্যায়ভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে: জামায়াত নেতা তাহের

ছবি

বিদেশে যেতে দেয়া হলো না কেন, সরকারের ব্যাখ্যা চান মিলন

ছবি

ঝটিকা মিছিল থেকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ৪৬ জন গ্রেপ্তার: ডিএমপি

ছবি

সরকারে তিন দলের প্রভাব, জামায়াতের কর্তৃত্ব সবচেয়ে বেশি: আনু মুহাম্মদ

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐক্যমত্য কমিশন ‘সংকট সৃষ্টি’ করেছে: মির্জা ফখরুল

ছবি

বিএনপি সরকারের ওপর ‘অন্যায়ভাবে চাপ সৃষ্টি’ করছে: জামায়াত নেতা তাহের

ঢাকায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলে পুলিশের অভিযান, আটক ৩০ নেতা-কর্মী

ছবি

বিদেশে যেতে না দেওয়ায় সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চাইলেন বিএনপি নেতা মিলন

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে: মির্জা ফখরুল

ছবি

সনদ বাস্তবায়নে প্রথম প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে হবে: সরকারকে এনসিপি

ছবি

ক্ষমা চাইতে নারাজ, সমর্থকদের ভোট বর্জনের হুঁশিয়ারি হাসিনার

ছবি

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ: হতাশ বিএনপি, বললো ‘প্রতারণা’

ছবি

উখিয়া-টেকনাফে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ হোন

ছবি

জুলাই সনদে সইয়ে যেসব শর্ত দিলো এনসিপি

ছবি

গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবসহ নির্বাচন কমিশনকে জামায়াতের ১৮ দফা সুপারিশ

ছবি

আইসিসিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ‘সহিংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগ

ছবি

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের সুযোগ নেই: আমীর খসরু

ছবি

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে ‘বহির্ভূত বিষয়’ যুক্তের অভিযোগ বিএনপির সালাহউদ্দিনের

ছবি

বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট: নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে

ছবি

এনসিপির শর্তে জুলাই সনদে সইয়ের ঘোষণা

ছবি

গণভোটে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ, সাংবিধানিক আদেশ চায় ঐকমত্য কমিশন

tab

১০ দফা সংস্কার প্রস্তাবে আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় জামায়াত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

# ’৭২-এর সংবিধান ‘ভারতের তৈরি’: জামায়াত আমির

নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা, পররাষ্ট্র, সংসদ, দুর্নীতি, সংবিধান, ধর্ম, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ ১০টি খাতে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এই প্রস্তাবগুলো নির্বাচিত কোনো সরকারের জন্য নয় জানিয়ে দলটি জানায়, তাদের মোট ৪১টি প্রস্তাব আছে। তার মধ্যে আপাতত গুরুত্বপূর্ণ ১০টি প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারকে দেয়া হলো। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে বাকিগুলো দেখবে।

তাদের প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখার বিধান সংযুক্ত করা এবং একই ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারার বিধান রাখার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা (পিআর) চালু করা, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে সন্নিবেশিত করা এবং ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা বাতিল করার কথা বলা হয়েছে।

আজ বুধবার (৯ সেপ্টেম্ব) দুপুরে গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের দলের পক্ষ থেকে ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’ তুলে ধরেন। এ সময় জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানসহ দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সব প্রস্তাব উপস্থাপন না করার প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সবক’টি করে দিলে নির্বাচিত সরকার এসে কী করবে। আমরা নির্বাচিত সরকারকেও পরীক্ষা করতে চাই। বিরোধীদলের আওয়াজ হয় এক রকমের, আর সরকারে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে আমরা ঘুরে যাই। তাই সবাইকে পরীক্ষা করতে চাই, আমরা আগের জায়গাতেই আছি, নাকি একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদের মানসিকতার কিছু পরিবর্তন হয়েছে, সেটা আমরা একটু দেখতে চাই।’

‘সংবিধান সংস্কার নাকি পুনর্লিখন’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ১৯৭২ সালে রচিত বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের ‘জন্ম’ ভারতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। ‘ভারতে বসে রচিত’ বাহাত্তরের সংবিধান পার্লামেন্টে এনে অনুমোদন দেয়া ওই সংবিধান ‘ফরমায়েশি’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দলের ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’ তুলে ধরার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দলটির আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো স্বল্পতম সময়ের মধ্যে মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অর্থবহ করার জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার ব্যতীত নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে না।’

অতীতের মতো কোনো দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হবে, নাকি সব দল নিয়ে নির্বাচন হবে সাংবাদিকরা এই বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের আমির আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তারা ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় এসেছেন, ওটা যেভাবেই আসুক, তারা এসেছেন। এরপর ‘১৪, ’১৮, ’২৪ তিনটা নির্বাচন হয়েছে, আদৌ কি এটা নির্বাচন হয়েছে?’

নির্বাচন নয় তারা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিজেরাই নির্বাচন চায় না, আমরা তাদের ওপর নির্বাচন চাপিয়ে দিলে জুলুম হবে।’ ‘জোর’ করে আওয়ামী লীগের ওপর নির্বাচন চাপিয়ে দিলে তাদের ওপর ‘বৈষম্য’ হয় কিনা, সেটাও ভাববার কথা বলে মনে করেন তিনি।

নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার আগে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দুটি রোডম্যাপ হবে। একটা সংস্কারের, আর একটা নির্বাচনের। তবে সময় যেন অতি দীর্ঘ না হয়, আবার অতি সংক্ষিপ্ত না হয়।’

উল্লেখযোগ্য ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’

জামায়াত তাদের রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ ও সব কালো আইন বাতিল করা এবং সব ফৌজদারি মামলা তদন্তের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি জানান। দেওয়ানি মামলার জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছর এবং ফৌজদারি মামলাসমূহ সর্বোচ্চ ৩ বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান রাখার প্রস্তাব করে।

এছাড়া সংস্কার প্রস্তাবে আরও রয়েছে, সংসদের প্রধান বিরোধীদল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার মনোনীত করতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে সন্নিবেশিত করতে হবে। নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দেশে প্রত্যাখ্যাত ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে।

কোনো সরকারি চাকরিজীবী তাদের চাকরি ছাড়ার কমপক্ষে ৩ বছরের মধ্যে কোনো ধরনের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না প্রস্তাবের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার দাবি রাখা হয়।

জামায়াতের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ২০০৮ সালে প্রবর্তিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা বাতিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠিত হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন একাধিক দিনে অনুষ্ঠিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এনআইডি ব্যবস্থাপনা নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা সংস্কার প্রস্তাবে পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং চাকরিচ্যুতির জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, পুলিশ ট্রেনিং ম্যানুয়ালের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক অনুশাসন অন্তর্ভুক্ত করা বিচার বিভাগীয় সদস্যদের দ্বারা পুলিশ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রাখতে বলা হয়।

র‌্যাব ও অন্যান্য বিশেষায়িত বাহিনীর প্রতি জনসাধারণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও গত সাড়ে ১৫ বছর যারা র‌্যাবে কাজ করেছে তাদেরকে স্ব-স্ব বাহিনীতে ফিরিয়ে নেয়া এবং তাদেরকে পুনরায় র‌্যাবে নিয়োগ না দেয়াসহ বিচারবহির্ভূত সব প্রকার হত্যাকা- বন্ধ করতে বলা হয়।

প্রস্তাবে বলা হয় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আগামী ২ বছরের জন্য ৩৫ বছর ও পরবর্তী বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩৩ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে।

সব শ্রেণীতে নবী করিম সা. এর জীবনীসহ মহামানবদের জীবনী সংবলিত প্রবন্ধ সংযোজন করাসহ শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয় পাঠ্যপুস্তকে ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস গুরুত্বের সাথে তুলে ধরতে হবে। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা এবং ইবতেদায়ী মাদরাসাগুলোকে সরকারিকরণ, সব জেলার কামিল মাদ্রাসাকে সরকারিকরণ করা।

সংস্কৃতি সংস্কার প্রস্তাবে নাটক, সিনেমাসহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলো অশ্লীলতামুক্ত করা। নাটক, সিনেমা ও বিভিন্ন কন্টেন্টে বিভিন্ন ধর্ম, বিশেষ করে ইসলামকে হেয় করা থেকে বিরত থাকার বিধান প্রণয়ন করা।

পররাষ্ট্র বিষয়ক সংস্কারে মধ্যে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় চীন, নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানিবণ্টন চুক্তির উদ্যোগ নেয়া।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, আ না ম শামসুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম মাছুম, রফিকুল ইসলাম খান, সাইফুল আলম খান মিলন, হামিদুর রহমান আযাদ, আবদুল হালিম, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও মোবারক হোসাইন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

back to top