alt

২১ র‌্যাব-পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ

কৃত্রিম পায়ে ভর দিয়ে ট্রাইব্যুনালে শিবিরের ৪ নেতা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪

২০১৫ ও ২০১৬ সালে জয়পুরহাট ও যশোর জেলা ছাত্রশিবিরের গুম হওয়া চার নেতাকে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছিল পুলিশ। গুমে জড়িত ছিল র‌্যাব ও থানা পুলিশ। গুলি করে বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে ফেলে রাখার কারণে পচন ধরায় চার শিবির নেতার পা কেটে ফেলতে হয়। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি তৎকালীন পুলিশ। পৃথকভাবে ডাকাতি, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায় তাদের।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে কৃত্রিম পায়ে ভর দিয়ে সেই জুলুম, নির্যাতন নৃশংসতার বিবরণ তুলে গুম ও নির্যাতনে জড়িত ২১ র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা।

ভুক্তভোগীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমানুল্লাহ আল জিহাদী (আদীব) জানান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপরে গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা রেজিমে ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা চালানো হয়েছে। জয়পুরহাট ও যশোরে ছাত্র শিবিরের পা হারানো চারজন সাবেক নেতা আজ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন। যাদেরকে বিভিন্ন সময়ে গুম করার কয়েকদিন পর গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছিল।

তারা হলেন- ২০১৫ সালের জয়পুরহাট জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি আবু জর গিফারী, একই জেলার সেক্রেটারি ওমর আলী, যশোর জেলা পশ্চিমের চৌগাছা থানার সেক্রেটারি ইসরাফিল হোসাইন ও চৌগাছা থানার সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক রুহুল আমিন। প্রত্যেককে গুলি করার পর বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখায় পায়ে পচন ধরায় পা কেটে ফেলতে হয়েছিল।

ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করার পর ইসলামী ছাত্র শিবিরের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর সাংগঠনিক কাজে জয়পুরহাট জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি আবু জর গিফারী, একই জেলার সেক্রেটারি ওমর আলী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন হানিফ বাসে। আব্দুল্লাহপুর নামার পরই সাদাপোশাকে র‌্যাব পরিচয়ে মাইক্রোবাসে করে তাদের উত্তরা র‌্যাব ক্যাম্পে নেওয়া হয়। তাদের সেখানে এক সপ্তাহ জিজ্ঞাসাবাদের নামে চরম নির্যাতন করা হয়। এরপর ১৫ ডিসেম্বর তাদেরকে নেওয়া হয় রাজশাহী র‌্যাব ক্যাম্পে। সেখানেও তাদের ওপরে জুলুম নির্যাতন চালানো হয়। আবার সেখান থেকে ১৬ ডিসেম্বর রাতে নেওয়া হয় জয়পুরহাট র‌্যাব ক্যাম্পে। সেখানে চলে চরম নির্যাতন। এরপর তাদের স্থানান্তর করা হয় জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানায়। সেখানে নিয়ে তাদেরকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, থানায় নিয়ে মামলা নেওয়া পর্যন্ত ঘটনা শেষ হলেও কষ্টটা একটু কম হতো। কিন্তু সেখানেই শেষ হয়নি। ওই রাতেই গহিন অরণ্যে নিয়ে নীরবে নিবৃতে দুজনের পায়ে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। সেখান থেকে প্রথমে উপজেলা হাসপাতালে তারপর বগুড়া ও ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। পঙ্গু হাসপাতালে অপারেশন এরপর আবার হৃদ্‌রোগ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাদের পায়ে পচন ধরে এবং চিকিৎসকদের পরামর্শে তাদের পা কেটে ফেলা হয় যাদেরকে আপনারা স্বচক্ষে দেখছেন।

অন্যদিকে যশোর জেলা পশ্চিমের চৌগাছা থানার সেক্রেটারি ইসরাফিল হোসাইন ও চৌগাছা থানার সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক রুহুল আমিনকে চৌগাছা থানা পুলিশের একজন এসআই ও দুজন এএসআইয়ের নেতৃত্বে গ্রেপ্তার করা হয়। চৌগাছা থানা থেকে তাদের জেলা ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এরপর একই মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবে গত ৪ আগস্ট তাদের নির্জন স্থানে নিয়ে হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে ও চোখ বেঁধে দুজনের পা গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। এরপর তাদের যশোর সদর হাসপাতাল, ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। দীর্ঘ চিকিৎসায় তাদের দুটো পা কেটে ফেলা হয়।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র ছাত্রশিবির করার কারণে তাদের এমন সহিংসতা-নৃশংসতার শিকার হতে হয়েছে। এমন নজির ছাত্রশিবিরের অনেক নেতা-কর্মীর রয়েছে। ক্রমান্বয়ে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে, তারা অভিযোগ দায়ের করবেন।

অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, কিছু আসামিকে আমরা এজহারভুক্ত করেছি। কোনো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আমরা অন্তর্ভুক্ত করিনি। অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। তবে এটা বলে রাখছি জয়পুরহাট জেলার ১২ জন, যশোরের চৌগাছার ৯ জন অর্থাৎ মোট ২১ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তরা সবাই র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য।

গুমের পর পা হারানো জয়পুরহাট জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি আবু জর গিফারী নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ২০১৫ সালে বার্ষিক রিপোর্ট জমা দিতে ঢাকায় আসি। ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে র‌্যাব পরিচয়ে আমাদের তুলে নেওয়া হয়। ৯ দিন গুম করে রাখার পর আমাদের পাঁচবিবি থানায় ডাকাতি ও অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রাত ৩টার দিকে আমাদের বাইরে নেওয়া হয়। পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে চোখ হাত-পা বেঁধে হাঁটুতে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করা হয়। এরপর বিনা চিকিৎসায় আমাদের জয়পুরহাট সদর হাসপাতালে ফেলে রাখার কারণে একটা সময় মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। পালস পাচ্ছিল না। পুলিশ ভয় পেয়ে আমাদের বগুড়ায় স্থানান্তর করে। সেখানে চিকিৎসা বলতে শুধু ড্রেসিং আর রক্তদান। শিবিরের ভাইরা অনেক চেষ্টা করলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা আমরা পাইনি। পায়ে পচন ধরে। ঢাকায় নেওয়ার পর অপারেশনে আমাদের পা হারাতে হয়।

যশোরের চৌগাছা থানার সেক্রেটারি ইসরাফিল হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট আমরা মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলাম। পথে তিনজন পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার করে চৌগাছা থানায় নেয়। সেখানে সারারাত আমাদের নির্যাতন করা হয়। মারতে মারতে ফ্লোরে ফেলে দেওয়া হয়। তাদের একটাই প্রশ্ন তোমরা কেন শিবির করো?

যশোর এমএম কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স করা ইসরাফিল হোসাইন বলেন, পরে আমাদের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরদিন রাত ১০টার দিকে গাড়িতে করে নির্জন স্থানে নিয়ে পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে আমার বাম পায়ে, সঙ্গে থাকা আরেকজনের ডান পায়ে গুলি করা হয়। এরপর উপজেলা হাসপাতাল সেখান থেকে সদর হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় দুদিন মুমূর্ষু অবস্থায় পড়েছিলাম। পুলিশ হুমকি দিয়েছিল ডাক্তারদের। চিকিৎসা দিলে সমস্যা করবে। একজন সাহসী নার্স আমাদের ড্রেসিং ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এরপর আমাদের পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে পচন ধরা পা কেটে ফেলতে হয়। এরপরও ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করে। ৩৩ দিন আমরা কারাভোগ করি।

তিনি আরও বলেন, অনেক কষ্টের জীবন অতিবাহিত করছি। আসল পা বিনা কারণে হারিয়ে আজকে কৃত্রিম পায়ে ভর করে হাঁটতে হচ্ছে। আমরা এমন শাস্তি চাই যেন পরবর্তী কোনো সরকার বা ব্যক্তি মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন করার দুঃসাহস না পায়। আমরা আজকে ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা নিয়ে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছি।

ছবি

নাশকতার দুই মামলা থেকে ফখরুল ও আব্বাসসহ ১০৬ জনকে অব্যাহতি

ছবি

এখন কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে: মির্জা ফখরুল

ছবি

অভিন্ন দাবিতে তিন ইসলামী দলের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি

যুগপতে পাঁচ দাবিতে জামায়াতের তিন দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫ সনাতন যোগ দিলেন জামায়াতে

ছবি

তারেকের নিরাপত্তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বাবরের আলোচনা

ছবি

যুগপতে কারা থাকছে ঠিক হয়নি, তবে খেলাফতের কর্মসূচি ঘোষণা

জামায়াতের আযাদ: মুক্তিযুদ্ধ না মানলে ‘বাংলাদেশ অস্বীকার করা হবে’

ছবি

জুলাই সনদের গেরো: এবার আদালতের মত নিতে বলল বিএনপি

ছবি

‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরে রাজি বিএনপি, তবে আইনি ভিত্তি নিয়ে মতভেদ

ছবি

ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে ‘মাস্টার প্ল্যান’ প্রশ্ন তুললেন রিজভী

ছবি

মৌলবাদীরা ‘বেহেশতের টিকেট’ বিক্রি করছে: বিএনপির গয়েশ্বর

ছবি

সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবিতে খেলাফত মজলিসের তিন দিনের কর্মসূচি

ছবি

সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এবার তুহিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

ছবি

রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে বাস্তুতন্ত্রও নিরাপদ থাকবে: তারেক রহমান

ছবি

সরকার ও উপদেষ্টারা মাহফুজদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে: নাহিদ ইসলাম

ছবি

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে পশু-পাখি ও বাস্তুতন্ত্রের অধিকার নিশ্চিত হবে: তারেক রহমান

ছবি

বসুন্ধরায় গোপন বৈঠক: ময়মনসিংহ জেলা আ.লীগ নেতার দোষ স্বীকার

ছবি

ঢাকার আগারগাঁওয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল

ছবি

আওয়ামী লীগ লুটপাট করে দেশকে দেউলিয়া করে দিয়েছে: মঈন খান

ছবি

ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তারেকের আহ্বান

ছবি

বাংলাদেশের সংবিধানে শ্রমিক, জনতার অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি: এনসিপি

ছবি

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: মিন্টু

ছবি

জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: বিএনপি

ছবি

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে গাজীপুরে সমাবেশ ও গণমিছিল করেছে ইসলামিক আন্দোলন

ছবি

নির্বাচনের আগে পরিবেশ সৃষ্টি জরুরি: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

ছবি

সংবিধান সংশোধন: মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন পদ্ধতিতে ভিন্নমত রাজনৈতিক দলগুলোর

ছবি

বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন হলে দেশের সংকট আরও বাড়বে: আনিসুল ইসলাম

ছবি

‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নে কোনো কিছু চাপিয়ে দেবে না কমিশন: আলী রীয়াজ

ছবি

ডাকসু জয়ে ছাত্র শিবিরকে অভিনন্দন পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর

ছবি

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ পদত্যাগ ঘোষণা

ছবি

আ.লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ছাত্রলীগের সব ভোট নিয়ে নিয়েছে শিবির : মির্জা আব্বাস

ছবি

ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াতে ইসলামের আমির

ছবি

ডাকসুতে জয়ীদের ব্যক্তিগত অভিনন্দন জানালেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি

ডাকসু নির্বাচন: ফল ঘোষণা ঘিরে কারচুপির অভিযোগ, ফল প্রত্যাখ্যান করলেন আবিদুল

tab

news » politics

২১ র‌্যাব-পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ

কৃত্রিম পায়ে ভর দিয়ে ট্রাইব্যুনালে শিবিরের ৪ নেতা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪

২০১৫ ও ২০১৬ সালে জয়পুরহাট ও যশোর জেলা ছাত্রশিবিরের গুম হওয়া চার নেতাকে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছিল পুলিশ। গুমে জড়িত ছিল র‌্যাব ও থানা পুলিশ। গুলি করে বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে ফেলে রাখার কারণে পচন ধরায় চার শিবির নেতার পা কেটে ফেলতে হয়। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি তৎকালীন পুলিশ। পৃথকভাবে ডাকাতি, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায় তাদের।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে কৃত্রিম পায়ে ভর দিয়ে সেই জুলুম, নির্যাতন নৃশংসতার বিবরণ তুলে গুম ও নির্যাতনে জড়িত ২১ র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা।

ভুক্তভোগীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমানুল্লাহ আল জিহাদী (আদীব) জানান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপরে গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা রেজিমে ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা চালানো হয়েছে। জয়পুরহাট ও যশোরে ছাত্র শিবিরের পা হারানো চারজন সাবেক নেতা আজ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন। যাদেরকে বিভিন্ন সময়ে গুম করার কয়েকদিন পর গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছিল।

তারা হলেন- ২০১৫ সালের জয়পুরহাট জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি আবু জর গিফারী, একই জেলার সেক্রেটারি ওমর আলী, যশোর জেলা পশ্চিমের চৌগাছা থানার সেক্রেটারি ইসরাফিল হোসাইন ও চৌগাছা থানার সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক রুহুল আমিন। প্রত্যেককে গুলি করার পর বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখায় পায়ে পচন ধরায় পা কেটে ফেলতে হয়েছিল।

ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করার পর ইসলামী ছাত্র শিবিরের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর সাংগঠনিক কাজে জয়পুরহাট জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি আবু জর গিফারী, একই জেলার সেক্রেটারি ওমর আলী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন হানিফ বাসে। আব্দুল্লাহপুর নামার পরই সাদাপোশাকে র‌্যাব পরিচয়ে মাইক্রোবাসে করে তাদের উত্তরা র‌্যাব ক্যাম্পে নেওয়া হয়। তাদের সেখানে এক সপ্তাহ জিজ্ঞাসাবাদের নামে চরম নির্যাতন করা হয়। এরপর ১৫ ডিসেম্বর তাদেরকে নেওয়া হয় রাজশাহী র‌্যাব ক্যাম্পে। সেখানেও তাদের ওপরে জুলুম নির্যাতন চালানো হয়। আবার সেখান থেকে ১৬ ডিসেম্বর রাতে নেওয়া হয় জয়পুরহাট র‌্যাব ক্যাম্পে। সেখানে চলে চরম নির্যাতন। এরপর তাদের স্থানান্তর করা হয় জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানায়। সেখানে নিয়ে তাদেরকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, থানায় নিয়ে মামলা নেওয়া পর্যন্ত ঘটনা শেষ হলেও কষ্টটা একটু কম হতো। কিন্তু সেখানেই শেষ হয়নি। ওই রাতেই গহিন অরণ্যে নিয়ে নীরবে নিবৃতে দুজনের পায়ে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। সেখান থেকে প্রথমে উপজেলা হাসপাতালে তারপর বগুড়া ও ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। পঙ্গু হাসপাতালে অপারেশন এরপর আবার হৃদ্‌রোগ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাদের পায়ে পচন ধরে এবং চিকিৎসকদের পরামর্শে তাদের পা কেটে ফেলা হয় যাদেরকে আপনারা স্বচক্ষে দেখছেন।

অন্যদিকে যশোর জেলা পশ্চিমের চৌগাছা থানার সেক্রেটারি ইসরাফিল হোসাইন ও চৌগাছা থানার সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক রুহুল আমিনকে চৌগাছা থানা পুলিশের একজন এসআই ও দুজন এএসআইয়ের নেতৃত্বে গ্রেপ্তার করা হয়। চৌগাছা থানা থেকে তাদের জেলা ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এরপর একই মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবে গত ৪ আগস্ট তাদের নির্জন স্থানে নিয়ে হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে ও চোখ বেঁধে দুজনের পা গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। এরপর তাদের যশোর সদর হাসপাতাল, ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। দীর্ঘ চিকিৎসায় তাদের দুটো পা কেটে ফেলা হয়।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র ছাত্রশিবির করার কারণে তাদের এমন সহিংসতা-নৃশংসতার শিকার হতে হয়েছে। এমন নজির ছাত্রশিবিরের অনেক নেতা-কর্মীর রয়েছে। ক্রমান্বয়ে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে, তারা অভিযোগ দায়ের করবেন।

অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, কিছু আসামিকে আমরা এজহারভুক্ত করেছি। কোনো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আমরা অন্তর্ভুক্ত করিনি। অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। তবে এটা বলে রাখছি জয়পুরহাট জেলার ১২ জন, যশোরের চৌগাছার ৯ জন অর্থাৎ মোট ২১ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তরা সবাই র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য।

গুমের পর পা হারানো জয়পুরহাট জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি আবু জর গিফারী নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ২০১৫ সালে বার্ষিক রিপোর্ট জমা দিতে ঢাকায় আসি। ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে র‌্যাব পরিচয়ে আমাদের তুলে নেওয়া হয়। ৯ দিন গুম করে রাখার পর আমাদের পাঁচবিবি থানায় ডাকাতি ও অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রাত ৩টার দিকে আমাদের বাইরে নেওয়া হয়। পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে চোখ হাত-পা বেঁধে হাঁটুতে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করা হয়। এরপর বিনা চিকিৎসায় আমাদের জয়পুরহাট সদর হাসপাতালে ফেলে রাখার কারণে একটা সময় মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। পালস পাচ্ছিল না। পুলিশ ভয় পেয়ে আমাদের বগুড়ায় স্থানান্তর করে। সেখানে চিকিৎসা বলতে শুধু ড্রেসিং আর রক্তদান। শিবিরের ভাইরা অনেক চেষ্টা করলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা আমরা পাইনি। পায়ে পচন ধরে। ঢাকায় নেওয়ার পর অপারেশনে আমাদের পা হারাতে হয়।

যশোরের চৌগাছা থানার সেক্রেটারি ইসরাফিল হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট আমরা মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলাম। পথে তিনজন পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার করে চৌগাছা থানায় নেয়। সেখানে সারারাত আমাদের নির্যাতন করা হয়। মারতে মারতে ফ্লোরে ফেলে দেওয়া হয়। তাদের একটাই প্রশ্ন তোমরা কেন শিবির করো?

যশোর এমএম কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স করা ইসরাফিল হোসাইন বলেন, পরে আমাদের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরদিন রাত ১০টার দিকে গাড়িতে করে নির্জন স্থানে নিয়ে পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে আমার বাম পায়ে, সঙ্গে থাকা আরেকজনের ডান পায়ে গুলি করা হয়। এরপর উপজেলা হাসপাতাল সেখান থেকে সদর হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় দুদিন মুমূর্ষু অবস্থায় পড়েছিলাম। পুলিশ হুমকি দিয়েছিল ডাক্তারদের। চিকিৎসা দিলে সমস্যা করবে। একজন সাহসী নার্স আমাদের ড্রেসিং ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এরপর আমাদের পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে পচন ধরা পা কেটে ফেলতে হয়। এরপরও ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করে। ৩৩ দিন আমরা কারাভোগ করি।

তিনি আরও বলেন, অনেক কষ্টের জীবন অতিবাহিত করছি। আসল পা বিনা কারণে হারিয়ে আজকে কৃত্রিম পায়ে ভর করে হাঁটতে হচ্ছে। আমরা এমন শাস্তি চাই যেন পরবর্তী কোনো সরকার বা ব্যক্তি মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন করার দুঃসাহস না পায়। আমরা আজকে ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা নিয়ে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছি।

back to top