বিএনপির জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের পোস্টার সাঁটানোর ‘প্রতিবাদে’ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী।
বুধবার রাত ১০টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা। এরপর বিভিন্ন হল ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন তারা। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান নেওয়ার পর রাত ১২টার দিকে তারা হলে ফেরত যান।
মিছিলে ‘টু জিরো টু ফোর, ছাত্ররাজনীতি নো মোর’, ‘দেয়ালে পোস্টার লাগালে, দুঃখ আছে কপালে’, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এ ক্যাম্পাসে হবে না’ এমন নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
মিছিল চলাকালে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক স ম আলী রেজা।
এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “তোমাদের সবার কথা বুঝতে পেরেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তোমরা স্মারকলিপি দাও। আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব।”
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নাইম বলেন, “আমরা ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলের প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটর থেকে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে সই নিয়েছি।
“কিন্তু এখন সে ধরনের কার্যক্রম দেখছি, পোস্টার দেখছি। আমরা ছাত্র সমাজ কখনো তা মেনে নেব না।”
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, “গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে যেকোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমের আলোচনা-সমালোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের পোস্টার সাঁটানোকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটলো তাকে ঠিক গণতান্ত্রিক সমালোচনা বলতে পারছি না।
“বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই দিনে সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন, তাই এই দিবসটির তাৎপর্য সম্বলিত পোস্টার সাঁটানো আমাদের দীর্ঘদিনের রুটিন কার্যক্রম।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সপরিবারের নিহত হওয়ার পর সেনাপ্রধানের দায়িত্বে আসেন জিয়াউর রহমান। এরপর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান হয়, জিয়া হন গৃহবন্দি।
৭ নভেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে যুক্ত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়া। এর মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন, পরে দেশের প্রথম সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন।
বিএনপি এই দিনকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ এবং জাসদ ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করে। অন্যদিকে গত ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ দিনটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করত।
আওয়ামী লীগের আমলেও দিবসটি পালন করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হওয়ার অভিযোগ তুলে ছাত্রদল নেতা সাহস বলেন, “বিগত ফ্যাসিবাদের আমলেও এভাবে এই দিবসটির বিরোধিতা ও পোস্টার ছিঁড়ে শোডাউন দেওয়ার ব্যাপারটা আমরা দেখে এসেছি৷ পোস্টার লাগানোর ব্যাপারটি নিয়ে অনলাইনে-অফলাইনে আলোচনা হতে পারতো, তার প্রেক্ষিতে আমরা কী প্রক্রিয়ায় রুটিন এ কার্যক্রমটিকে আরো আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারি তা নিয়ে চিন্তা করতাম।
“কিন্তু এই ইস্যুকে ব্যবহার করে হলে হলে আমাদের নেতাকর্মীদের নানাবিধ হুমকি-ধামকি দেওয়া, নারী কর্মীদেরকে অনলাইনে হ্যারেজমেন্ট করা, পেশি শক্তির আস্ফালন দেখানো- এসব গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশের ভাষা হতে পারে না। বিরাজনীতিকরণের লক্ষ্যে এসব অপরাজনৈতিক কার্যক্রম ফ্যাসিবাদী আমলের ট্রমাকে ট্রিগার করে আমাদের।”
এক হলে নিষেধাজ্ঞা
এদিকে রাতেই শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের দেয়ালে বা আশপাশে যেকোনো ধরনের পোস্টার সাঁটানোর প্রশ্নে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হল প্রশাসন।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “হলের সার্বিক সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য হলের অভ্যন্তরে বা হল চত্বরের দেয়ালে হল প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত কোনো প্রকার ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার লাগানো ও দেয়াললিখন করা যাবে না। কেউ এই আদেশ অমান্য করলে হল কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।”
বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪
বিএনপির জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের পোস্টার সাঁটানোর ‘প্রতিবাদে’ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী।
বুধবার রাত ১০টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা। এরপর বিভিন্ন হল ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন তারা। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান নেওয়ার পর রাত ১২টার দিকে তারা হলে ফেরত যান।
মিছিলে ‘টু জিরো টু ফোর, ছাত্ররাজনীতি নো মোর’, ‘দেয়ালে পোস্টার লাগালে, দুঃখ আছে কপালে’, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এ ক্যাম্পাসে হবে না’ এমন নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
মিছিল চলাকালে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক স ম আলী রেজা।
এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “তোমাদের সবার কথা বুঝতে পেরেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তোমরা স্মারকলিপি দাও। আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব।”
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নাইম বলেন, “আমরা ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলের প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটর থেকে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে সই নিয়েছি।
“কিন্তু এখন সে ধরনের কার্যক্রম দেখছি, পোস্টার দেখছি। আমরা ছাত্র সমাজ কখনো তা মেনে নেব না।”
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, “গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে যেকোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমের আলোচনা-সমালোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের পোস্টার সাঁটানোকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটলো তাকে ঠিক গণতান্ত্রিক সমালোচনা বলতে পারছি না।
“বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই দিনে সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন, তাই এই দিবসটির তাৎপর্য সম্বলিত পোস্টার সাঁটানো আমাদের দীর্ঘদিনের রুটিন কার্যক্রম।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সপরিবারের নিহত হওয়ার পর সেনাপ্রধানের দায়িত্বে আসেন জিয়াউর রহমান। এরপর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান হয়, জিয়া হন গৃহবন্দি।
৭ নভেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে যুক্ত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়া। এর মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন, পরে দেশের প্রথম সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন।
বিএনপি এই দিনকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ এবং জাসদ ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করে। অন্যদিকে গত ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ দিনটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করত।
আওয়ামী লীগের আমলেও দিবসটি পালন করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হওয়ার অভিযোগ তুলে ছাত্রদল নেতা সাহস বলেন, “বিগত ফ্যাসিবাদের আমলেও এভাবে এই দিবসটির বিরোধিতা ও পোস্টার ছিঁড়ে শোডাউন দেওয়ার ব্যাপারটা আমরা দেখে এসেছি৷ পোস্টার লাগানোর ব্যাপারটি নিয়ে অনলাইনে-অফলাইনে আলোচনা হতে পারতো, তার প্রেক্ষিতে আমরা কী প্রক্রিয়ায় রুটিন এ কার্যক্রমটিকে আরো আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারি তা নিয়ে চিন্তা করতাম।
“কিন্তু এই ইস্যুকে ব্যবহার করে হলে হলে আমাদের নেতাকর্মীদের নানাবিধ হুমকি-ধামকি দেওয়া, নারী কর্মীদেরকে অনলাইনে হ্যারেজমেন্ট করা, পেশি শক্তির আস্ফালন দেখানো- এসব গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশের ভাষা হতে পারে না। বিরাজনীতিকরণের লক্ষ্যে এসব অপরাজনৈতিক কার্যক্রম ফ্যাসিবাদী আমলের ট্রমাকে ট্রিগার করে আমাদের।”
এক হলে নিষেধাজ্ঞা
এদিকে রাতেই শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের দেয়ালে বা আশপাশে যেকোনো ধরনের পোস্টার সাঁটানোর প্রশ্নে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হল প্রশাসন।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “হলের সার্বিক সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য হলের অভ্যন্তরে বা হল চত্বরের দেয়ালে হল প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত কোনো প্রকার ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার লাগানো ও দেয়াললিখন করা যাবে না। কেউ এই আদেশ অমান্য করলে হল কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।”