alt

কর্মসূচি দিয়ে নেই আওয়ামী লীগ, মাঠে বিএনপি ও ‘বৈষম্যবিরোধীরা’

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

রোববার নূর হোসেন দিবসে জিরো পয়েন্টে নির্যাতনের শিকার এক আ’লীগ কর্মী-সংবাদ

‘নূর হোসেন দিবস’ পালনে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেইসবুকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও রোববার (১০ নভেম্বর) তা পালনে ঢাকার জিপিও কিংবা দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মীদের দেখা যায়নি। তবে বেলা এগারোটার দিকে তিন চারজন ব্যক্তি গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে আওয়ামী বিরোধী লোকদের হাতে বেধড়ক মার খেয়েছেন।

স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় যুবলীগ কর্মী নূর হোসেনকে হত্যার দিনটিতে ঢাকার জিপিও এলাকার ‘নূর হোসেন চত্বরে’ বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় আওয়ামী লীগ; যেটি সরকার পতনের পর রাজপথে দলটির প্রথম কর্মসূচি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশব্যাপী একই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি পালন করতে না দেয়ার ঘোষণা দেন ক্রীড়া ও শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি প্রতিহত করতে ৯ নভেম্বর শনিবার মধ্যরাতেই ‘ছাত্র-জনতা’ ও ‘গণঅধিকার পরিষদ’ ব্যানারে রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন একদল মানুষ। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদেরও সেখানে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বিএনপি
রোববার সকাল ৯টার পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা সেখানে অবস্থান নেন এবং এক পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘গুম-খুনের অপরাধে খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দেন তারা।

**জয়বাংলা বলতেই মারধর**
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে কার্যালয়ের সামনে কয়েকজনকে মারধরের পর পুলিশে দেন ‘বিএনপি’ নেতা-কর্মীরা। যাদের ধরা হয়েছে, তারা কেউ কেউ ‘জয় বাংলা’, আবার কেউ ‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন’ বলে স্লোগান দেন। দুপুরের দিকে বয়স্ক একজন ব্যক্তি এসে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিতেই তাকেও মারধর করে পুলিশে দেয়া হয়।

**পুলিশ-বিজিবি**
আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে রোববার সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল দেখা গেছে। জিরো পয়েন্ট, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং আশপাশের এলাকায় কারও গতিবিধি ‘সন্দেহজনক’ মনে হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শাহরিয়ার আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল থেকে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নূর হোসেন চত্বর এলাকা থেকে অন্তত ১২ জনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সন্দেহ হলেই ছাত্র-জনতা কাউকে আটক করে আমাদের কাছে দিচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত ১০-১২ জনকে হেফাজতে নিয়েছি।’

**জিরো পয়েন্ট**
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুর ১২টার দিকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন। ‘আমার সোনার বাংলায়, ফ্যাসিবাদের ঠাঁই নাই; ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর; ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’ ‘উই ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিস’- এমন সব স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

**গণজমায়েতে শিবির-হেফাজত**
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের মূল সড়কে শুরু হয় গণজমায়েত কর্মসূচি। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে এ আয়োজন করে ‘ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চ’।

**নাৎসি বাহিনী**
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নাৎসি বাহিনীর চেয়েও নৃশংস। গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জনসমক্ষে আসার অধিকার নেই।’

আওয়ামী লীগকে প্রতিহতের ডাক দিয়ে করা ওই গণজমায়েতে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ফিরবে বিচারের জন্য, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানোর জন্য। তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই।’ আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, তাদেরও প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেন হাসনাত আবদুল্লাহ।

বিকেল সোয়া চারটা পর্যন্ত ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চের ওই গণজমায়েত চলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ছাড়াও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত ব্যক্তি, নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও ছাত্রনেতারা সেখানে বক্তব্য দেন।

**টেলিভিশনে প্রচার**
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগ দুই হাজারের মতো মানুষকে হত্যা করেছে। অর্ধলাখ মানুষকে আহত করেছে। হাসিনা প্রতিটি হত্যার হুকুমদাতা।’ শেখ হাসিনার বিচার হওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। পৃথিবীর কাছে ‘খুনি হাসিনার নির্মম হত্যাকা-ের তথ্য’ পৌঁছে দিতে চান উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ‘যারা হাসপাতালে এখনও আহত অবস্থায় আছেন, যাদের কাছে রক্তাক্ত স্মৃতি রয়েছে, সেই ঘটনাগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে। রক্তাক্ত এই দাগগুলো পুরো পৃথিবীর সামনে নিয়ে আসতে হবে।’

**দিল্লির সিদ্ধান্ত**
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘ঢাকায় দিল্লির সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার দিন শেষ। আগামীর বাংলাদেশ বিভাজিত হতে দেব না। সবাই এক টেবিলে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফ্যাসিবাদকে আর কখনও পুনরুদ্ধার হতে দেয়া হবে না।’

**শাপলা চত্বরে গণহত্যা**
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘শাপলা চত্বরে গণহত্যার বিচার হয়নি। পিলখানা হত্যাকা-ের বিচার হয়নি। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ফ্যাসিস্ট তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ। সীমান্তে যে পরিমাণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, ফিলিস্তিনেও এতো মানুষ মারা যায়নি। ছাত্রলীগ যদি নিষিদ্ধ হতে পারে, তাহলে তাদের মদদদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’

বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক মাহীন সরকার।

আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ফজলুল করিম কাসেমী বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে ভারতীয় রাজাকারদের পদচারণে সহ্য করা হবে না। আওয়ামী লীগের ইতিহাস আলেম-ওলামা হত্যার ইতিহাস। আওয়ামী লীগের ছায়া স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা দেখতে চাই না। তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেব না।’

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সভাপতি সাদিক কাইয়ুম বলেন, ‘হাসিনা ও তার দোসররা ষড়যন্ত্র করছে। ফ্যাসিস্টদের ধরিয়ে দিন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিন, আমরা সহযোগিতা করব।’

শ্রদ্ধা নিবেদন
নূর হোসেন চত্বরে যেসব সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের মধ্যে ছিল- সিপিবি, বাসদ, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, গণতন্ত্র মঞ্চ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, ছাত্র ফোরাম, বাসদ (মার্ক্সবাদী), জাতীয় গণফ্রন্ট, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, জাতীয় গণফ্রন্টসহ আরও কিছু সংগঠন।

**আত্মগোপনে**
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই দেশ ছেড়েছেন। অনেকে আত্মগোপনে। বেকায়দায় আছেন তৃণমূল কর্মীরা। তারা দেশে থাকলেও জনসম্মুখে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেই।

এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নূর হোসনে দিবস পালনে কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও তাতে সাড়া দেননি কর্মীরা।

এদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে রাজধানীর গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকায় শনিবার সন্ধ্যা থেকেই তৎপরতা বাড়ায় পুলিশ।

নোয়াখালীর সদরের নেওয়াজ পুরে -বিএনপি জামাত সংঘর্ষ,আহত অন্তত ৪০ জন

নির্বাচন কমিশন ‘চার ভাগ’ হয়ে গেছে, গ্রহণযোগ্য ভোটার তালিকা ও দুর্নীতিমুক্ত ইসি না হলে ভোটে যাবে না এনসিপি

জুলাই সনদে সইয়ের পরও রাজপথে: ব্যাখ্যা জামায়াতের

জামায়াতের ‘পিআর আন্দোলন’ রাজনৈতিক প্রতারণা: নাহিদ ইসলাম

শাহজালালে অগ্নিকাণ্ড: জনগণ ‘পরিকল্পিত’ বলে বিশ্বাস করছে বললেন ফখরুল

জুলাই সনদে আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হওয়ায় সই করেনি এনসিপি

ছবি

সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ নাহিদ ইসলাম, ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান এনসিপির

ছবি

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া

ছবি

জুলাই সনদ দিয়ে রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের শুরু: ফখরুল

ছবি

জুলাই সনদ: বাস্তবায়নে দেরি হলে রাজনৈতিক সংকটের ঝুঁকি দেখছে জামায়াত

ছবি

কিছু দল ‘ঐকমত্যের’ নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি ‘কাগজে’ সই করছে: নাহিদ ইসলাম

ছবি

জুলাই সনদে সই না করার সিদ্ধান্ত এনসিপির

ছবি

আমলাতন্ত্র চলবে না, প্রয়োজনে ডিসি অফিস ঘেরাও করবেন: মির্জা ফখরুল

জুলাই সনদ সইয়ে অনিশ্চয়তা: সিপিবি, এনসিপি, গণফোরামের আপত্তি

ছবি

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনুস

ছবি

সংশোধিত খসড়া না পেলে জুলাই সনদে সই করবে না বাম ধারার চার দল

ছবি

জাতির কাছে সব কিছু স্পষ্ট করে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আহ্বান এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেনের

ছবি

‘প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভারসাম্য নষ্ট হলে রাষ্ট্র ঝুঁকিতে পড়বে’ — প্রধান উপদেষ্টাকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের সতর্কবার্তা

ছবি

সৈয়দপুরে সিপিবির পথসভা অনুষ্ঠিত

ছবি

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তয়নে তারেক মুন্সীর গণসংযোগ

ছবি

তফসিলের আগেই গণভোটের দাবি ইসলামী আন্দোলনের

ছবি

জামায়াতের নভেম্বরে গণভোট দাবি ‘অন্য কোনো মাস্টারপ্ল্যান কি না’: প্রশ্ন রিজভীর

ছবি

আগামী নির্বাচনেই দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে: মির্জা ফখরুল ইসলাম

ছবি

শাপলায় অনড় এনসিপি, ‘নিজস্ব পদ্ধতির’ কথা জানালো ইসি

‘ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’ উপদেষ্টাদের নাম ও কণ্ঠ রেকর্ড থাকার দাবি, জনসমক্ষে প্রকাশের হুঁশিয়ারি জামায়াত নেতার

ছবি

জাতীয় লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অস্তিত্ব যাচাইয়ে পুনঃতদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

১৯ অক্টোবরের মধ্যে প্রতীক বাছাইয়ের নির্দেশ এনসিপিকে

ছবি

রাজনীতিতে আসছি সেবা করতে, ব্যবসা করতে না: মাসুদুজ্জামান

ছবি

পিআরের বিষয়টি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত: ফখরুল

ছবি

আওয়ামী লীগ নেতা আহসানের ‘মুক্তিতে বাধা নেই’

ছবি

আমরা উচ্চ কক্ষে পিআরের পক্ষে, নিম্ন কক্ষে নই: সারজিস

ছবি

আগামী মাসেই গণভোটের দাবি জামায়াতে ইসলামী, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তিন ঘণ্টার বৈঠক

ছবি

নির্বাচন: ১০০ আসনে এবি পার্টির প্রার্থী চূড়ান্ত

ছবি

ক্ষোভ ঝাড়তে গিয়ে যে উপমা ব্যবহার করেছি, সেটা করা উচিত হয়নি: ফেসবুক পোস্টে সারজিস

ছবি

পিআরের দাবিতে আন্দোলন: নির্বাচন ‘বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্র’ দেখছেন ফখরুল

পঞ্চগড়ে এনসিপির কর্মসূচিতে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট, নেসকোর কর্মকর্তাদের কলিজা ছিঁড়ে ফেলার হুমকি সারজিসের

tab

কর্মসূচি দিয়ে নেই আওয়ামী লীগ, মাঠে বিএনপি ও ‘বৈষম্যবিরোধীরা’

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার নূর হোসেন দিবসে জিরো পয়েন্টে নির্যাতনের শিকার এক আ’লীগ কর্মী-সংবাদ

সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

‘নূর হোসেন দিবস’ পালনে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেইসবুকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও রোববার (১০ নভেম্বর) তা পালনে ঢাকার জিপিও কিংবা দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মীদের দেখা যায়নি। তবে বেলা এগারোটার দিকে তিন চারজন ব্যক্তি গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে আওয়ামী বিরোধী লোকদের হাতে বেধড়ক মার খেয়েছেন।

স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় যুবলীগ কর্মী নূর হোসেনকে হত্যার দিনটিতে ঢাকার জিপিও এলাকার ‘নূর হোসেন চত্বরে’ বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় আওয়ামী লীগ; যেটি সরকার পতনের পর রাজপথে দলটির প্রথম কর্মসূচি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশব্যাপী একই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি পালন করতে না দেয়ার ঘোষণা দেন ক্রীড়া ও শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি প্রতিহত করতে ৯ নভেম্বর শনিবার মধ্যরাতেই ‘ছাত্র-জনতা’ ও ‘গণঅধিকার পরিষদ’ ব্যানারে রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন একদল মানুষ। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদেরও সেখানে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বিএনপি
রোববার সকাল ৯টার পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা সেখানে অবস্থান নেন এবং এক পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘গুম-খুনের অপরাধে খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দেন তারা।

**জয়বাংলা বলতেই মারধর**
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে কার্যালয়ের সামনে কয়েকজনকে মারধরের পর পুলিশে দেন ‘বিএনপি’ নেতা-কর্মীরা। যাদের ধরা হয়েছে, তারা কেউ কেউ ‘জয় বাংলা’, আবার কেউ ‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন’ বলে স্লোগান দেন। দুপুরের দিকে বয়স্ক একজন ব্যক্তি এসে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিতেই তাকেও মারধর করে পুলিশে দেয়া হয়।

**পুলিশ-বিজিবি**
আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে রোববার সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল দেখা গেছে। জিরো পয়েন্ট, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং আশপাশের এলাকায় কারও গতিবিধি ‘সন্দেহজনক’ মনে হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শাহরিয়ার আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল থেকে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নূর হোসেন চত্বর এলাকা থেকে অন্তত ১২ জনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সন্দেহ হলেই ছাত্র-জনতা কাউকে আটক করে আমাদের কাছে দিচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত ১০-১২ জনকে হেফাজতে নিয়েছি।’

**জিরো পয়েন্ট**
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুর ১২টার দিকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন। ‘আমার সোনার বাংলায়, ফ্যাসিবাদের ঠাঁই নাই; ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর; ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’ ‘উই ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিস’- এমন সব স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

**গণজমায়েতে শিবির-হেফাজত**
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের মূল সড়কে শুরু হয় গণজমায়েত কর্মসূচি। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে এ আয়োজন করে ‘ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চ’।

**নাৎসি বাহিনী**
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নাৎসি বাহিনীর চেয়েও নৃশংস। গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জনসমক্ষে আসার অধিকার নেই।’

আওয়ামী লীগকে প্রতিহতের ডাক দিয়ে করা ওই গণজমায়েতে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ফিরবে বিচারের জন্য, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানোর জন্য। তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই।’ আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, তাদেরও প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেন হাসনাত আবদুল্লাহ।

বিকেল সোয়া চারটা পর্যন্ত ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চের ওই গণজমায়েত চলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ছাড়াও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত ব্যক্তি, নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও ছাত্রনেতারা সেখানে বক্তব্য দেন।

**টেলিভিশনে প্রচার**
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগ দুই হাজারের মতো মানুষকে হত্যা করেছে। অর্ধলাখ মানুষকে আহত করেছে। হাসিনা প্রতিটি হত্যার হুকুমদাতা।’ শেখ হাসিনার বিচার হওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। পৃথিবীর কাছে ‘খুনি হাসিনার নির্মম হত্যাকা-ের তথ্য’ পৌঁছে দিতে চান উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ‘যারা হাসপাতালে এখনও আহত অবস্থায় আছেন, যাদের কাছে রক্তাক্ত স্মৃতি রয়েছে, সেই ঘটনাগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে। রক্তাক্ত এই দাগগুলো পুরো পৃথিবীর সামনে নিয়ে আসতে হবে।’

**দিল্লির সিদ্ধান্ত**
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘ঢাকায় দিল্লির সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার দিন শেষ। আগামীর বাংলাদেশ বিভাজিত হতে দেব না। সবাই এক টেবিলে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফ্যাসিবাদকে আর কখনও পুনরুদ্ধার হতে দেয়া হবে না।’

**শাপলা চত্বরে গণহত্যা**
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘শাপলা চত্বরে গণহত্যার বিচার হয়নি। পিলখানা হত্যাকা-ের বিচার হয়নি। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ফ্যাসিস্ট তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ। সীমান্তে যে পরিমাণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, ফিলিস্তিনেও এতো মানুষ মারা যায়নি। ছাত্রলীগ যদি নিষিদ্ধ হতে পারে, তাহলে তাদের মদদদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’

বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক মাহীন সরকার।

আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ফজলুল করিম কাসেমী বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে ভারতীয় রাজাকারদের পদচারণে সহ্য করা হবে না। আওয়ামী লীগের ইতিহাস আলেম-ওলামা হত্যার ইতিহাস। আওয়ামী লীগের ছায়া স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা দেখতে চাই না। তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেব না।’

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সভাপতি সাদিক কাইয়ুম বলেন, ‘হাসিনা ও তার দোসররা ষড়যন্ত্র করছে। ফ্যাসিস্টদের ধরিয়ে দিন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিন, আমরা সহযোগিতা করব।’

শ্রদ্ধা নিবেদন
নূর হোসেন চত্বরে যেসব সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের মধ্যে ছিল- সিপিবি, বাসদ, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, গণতন্ত্র মঞ্চ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, ছাত্র ফোরাম, বাসদ (মার্ক্সবাদী), জাতীয় গণফ্রন্ট, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, জাতীয় গণফ্রন্টসহ আরও কিছু সংগঠন।

**আত্মগোপনে**
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই দেশ ছেড়েছেন। অনেকে আত্মগোপনে। বেকায়দায় আছেন তৃণমূল কর্মীরা। তারা দেশে থাকলেও জনসম্মুখে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেই।

এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নূর হোসনে দিবস পালনে কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও তাতে সাড়া দেননি কর্মীরা।

এদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে রাজধানীর গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকায় শনিবার সন্ধ্যা থেকেই তৎপরতা বাড়ায় পুলিশ।

back to top