‘নূর হোসেন দিবস’ পালনে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেইসবুকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও রোববার (১০ নভেম্বর) তা পালনে ঢাকার জিপিও কিংবা দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মীদের দেখা যায়নি। তবে বেলা এগারোটার দিকে তিন চারজন ব্যক্তি গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে আওয়ামী বিরোধী লোকদের হাতে বেধড়ক মার খেয়েছেন।
স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় যুবলীগ কর্মী নূর হোসেনকে হত্যার দিনটিতে ঢাকার জিপিও এলাকার ‘নূর হোসেন চত্বরে’ বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় আওয়ামী লীগ; যেটি সরকার পতনের পর রাজপথে দলটির প্রথম কর্মসূচি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশব্যাপী একই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি পালন করতে না দেয়ার ঘোষণা দেন ক্রীড়া ও শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি প্রতিহত করতে ৯ নভেম্বর শনিবার মধ্যরাতেই ‘ছাত্র-জনতা’ ও ‘গণঅধিকার পরিষদ’ ব্যানারে রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন একদল মানুষ। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদেরও সেখানে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বিএনপি
রোববার সকাল ৯টার পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা সেখানে অবস্থান নেন এবং এক পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘গুম-খুনের অপরাধে খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দেন তারা।
**জয়বাংলা বলতেই মারধর**
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে কার্যালয়ের সামনে কয়েকজনকে মারধরের পর পুলিশে দেন ‘বিএনপি’ নেতা-কর্মীরা। যাদের ধরা হয়েছে, তারা কেউ কেউ ‘জয় বাংলা’, আবার কেউ ‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন’ বলে স্লোগান দেন। দুপুরের দিকে বয়স্ক একজন ব্যক্তি এসে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিতেই তাকেও মারধর করে পুলিশে দেয়া হয়।
**পুলিশ-বিজিবি**
আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে রোববার সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল দেখা গেছে। জিরো পয়েন্ট, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং আশপাশের এলাকায় কারও গতিবিধি ‘সন্দেহজনক’ মনে হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শাহরিয়ার আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল থেকে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নূর হোসেন চত্বর এলাকা থেকে অন্তত ১২ জনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সন্দেহ হলেই ছাত্র-জনতা কাউকে আটক করে আমাদের কাছে দিচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত ১০-১২ জনকে হেফাজতে নিয়েছি।’
**জিরো পয়েন্ট**
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুর ১২টার দিকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন। ‘আমার সোনার বাংলায়, ফ্যাসিবাদের ঠাঁই নাই; ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর; ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’ ‘উই ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিস’- এমন সব স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
**গণজমায়েতে শিবির-হেফাজত**
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের মূল সড়কে শুরু হয় গণজমায়েত কর্মসূচি। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে এ আয়োজন করে ‘ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চ’।
**নাৎসি বাহিনী**
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নাৎসি বাহিনীর চেয়েও নৃশংস। গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জনসমক্ষে আসার অধিকার নেই।’
আওয়ামী লীগকে প্রতিহতের ডাক দিয়ে করা ওই গণজমায়েতে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ফিরবে বিচারের জন্য, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানোর জন্য। তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই।’ আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, তাদেরও প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
বিকেল সোয়া চারটা পর্যন্ত ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চের ওই গণজমায়েত চলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ছাড়াও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত ব্যক্তি, নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও ছাত্রনেতারা সেখানে বক্তব্য দেন।
**টেলিভিশনে প্রচার**
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগ দুই হাজারের মতো মানুষকে হত্যা করেছে। অর্ধলাখ মানুষকে আহত করেছে। হাসিনা প্রতিটি হত্যার হুকুমদাতা।’ শেখ হাসিনার বিচার হওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। পৃথিবীর কাছে ‘খুনি হাসিনার নির্মম হত্যাকা-ের তথ্য’ পৌঁছে দিতে চান উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ‘যারা হাসপাতালে এখনও আহত অবস্থায় আছেন, যাদের কাছে রক্তাক্ত স্মৃতি রয়েছে, সেই ঘটনাগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে। রক্তাক্ত এই দাগগুলো পুরো পৃথিবীর সামনে নিয়ে আসতে হবে।’
**দিল্লির সিদ্ধান্ত**
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘ঢাকায় দিল্লির সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার দিন শেষ। আগামীর বাংলাদেশ বিভাজিত হতে দেব না। সবাই এক টেবিলে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফ্যাসিবাদকে আর কখনও পুনরুদ্ধার হতে দেয়া হবে না।’
**শাপলা চত্বরে গণহত্যা**
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘শাপলা চত্বরে গণহত্যার বিচার হয়নি। পিলখানা হত্যাকা-ের বিচার হয়নি। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ফ্যাসিস্ট তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ। সীমান্তে যে পরিমাণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, ফিলিস্তিনেও এতো মানুষ মারা যায়নি। ছাত্রলীগ যদি নিষিদ্ধ হতে পারে, তাহলে তাদের মদদদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’
বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক মাহীন সরকার।
আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ফজলুল করিম কাসেমী বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে ভারতীয় রাজাকারদের পদচারণে সহ্য করা হবে না। আওয়ামী লীগের ইতিহাস আলেম-ওলামা হত্যার ইতিহাস। আওয়ামী লীগের ছায়া স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা দেখতে চাই না। তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেব না।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সভাপতি সাদিক কাইয়ুম বলেন, ‘হাসিনা ও তার দোসররা ষড়যন্ত্র করছে। ফ্যাসিস্টদের ধরিয়ে দিন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিন, আমরা সহযোগিতা করব।’
শ্রদ্ধা নিবেদন
নূর হোসেন চত্বরে যেসব সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের মধ্যে ছিল- সিপিবি, বাসদ, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, গণতন্ত্র মঞ্চ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, ছাত্র ফোরাম, বাসদ (মার্ক্সবাদী), জাতীয় গণফ্রন্ট, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, জাতীয় গণফ্রন্টসহ আরও কিছু সংগঠন।
**আত্মগোপনে**
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই দেশ ছেড়েছেন। অনেকে আত্মগোপনে। বেকায়দায় আছেন তৃণমূল কর্মীরা। তারা দেশে থাকলেও জনসম্মুখে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেই।
এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নূর হোসনে দিবস পালনে কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও তাতে সাড়া দেননি কর্মীরা।
এদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে রাজধানীর গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকায় শনিবার সন্ধ্যা থেকেই তৎপরতা বাড়ায় পুলিশ।
সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪
‘নূর হোসেন দিবস’ পালনে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেইসবুকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও রোববার (১০ নভেম্বর) তা পালনে ঢাকার জিপিও কিংবা দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মীদের দেখা যায়নি। তবে বেলা এগারোটার দিকে তিন চারজন ব্যক্তি গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে আওয়ামী বিরোধী লোকদের হাতে বেধড়ক মার খেয়েছেন।
স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় যুবলীগ কর্মী নূর হোসেনকে হত্যার দিনটিতে ঢাকার জিপিও এলাকার ‘নূর হোসেন চত্বরে’ বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় আওয়ামী লীগ; যেটি সরকার পতনের পর রাজপথে দলটির প্রথম কর্মসূচি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশব্যাপী একই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি পালন করতে না দেয়ার ঘোষণা দেন ক্রীড়া ও শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি প্রতিহত করতে ৯ নভেম্বর শনিবার মধ্যরাতেই ‘ছাত্র-জনতা’ ও ‘গণঅধিকার পরিষদ’ ব্যানারে রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন একদল মানুষ। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদেরও সেখানে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বিএনপি
রোববার সকাল ৯টার পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা সেখানে অবস্থান নেন এবং এক পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘গুম-খুনের অপরাধে খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দেন তারা।
**জয়বাংলা বলতেই মারধর**
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে কার্যালয়ের সামনে কয়েকজনকে মারধরের পর পুলিশে দেন ‘বিএনপি’ নেতা-কর্মীরা। যাদের ধরা হয়েছে, তারা কেউ কেউ ‘জয় বাংলা’, আবার কেউ ‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন’ বলে স্লোগান দেন। দুপুরের দিকে বয়স্ক একজন ব্যক্তি এসে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিতেই তাকেও মারধর করে পুলিশে দেয়া হয়।
**পুলিশ-বিজিবি**
আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে রোববার সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল দেখা গেছে। জিরো পয়েন্ট, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং আশপাশের এলাকায় কারও গতিবিধি ‘সন্দেহজনক’ মনে হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শাহরিয়ার আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল থেকে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নূর হোসেন চত্বর এলাকা থেকে অন্তত ১২ জনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সন্দেহ হলেই ছাত্র-জনতা কাউকে আটক করে আমাদের কাছে দিচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত ১০-১২ জনকে হেফাজতে নিয়েছি।’
**জিরো পয়েন্ট**
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুর ১২টার দিকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন। ‘আমার সোনার বাংলায়, ফ্যাসিবাদের ঠাঁই নাই; ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর; ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’ ‘উই ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিস’- এমন সব স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
**গণজমায়েতে শিবির-হেফাজত**
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের মূল সড়কে শুরু হয় গণজমায়েত কর্মসূচি। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে এ আয়োজন করে ‘ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চ’।
**নাৎসি বাহিনী**
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নাৎসি বাহিনীর চেয়েও নৃশংস। গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জনসমক্ষে আসার অধিকার নেই।’
আওয়ামী লীগকে প্রতিহতের ডাক দিয়ে করা ওই গণজমায়েতে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ফিরবে বিচারের জন্য, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানোর জন্য। তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই।’ আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, তাদেরও প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
বিকেল সোয়া চারটা পর্যন্ত ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চের ওই গণজমায়েত চলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ছাড়াও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত ব্যক্তি, নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও ছাত্রনেতারা সেখানে বক্তব্য দেন।
**টেলিভিশনে প্রচার**
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগ দুই হাজারের মতো মানুষকে হত্যা করেছে। অর্ধলাখ মানুষকে আহত করেছে। হাসিনা প্রতিটি হত্যার হুকুমদাতা।’ শেখ হাসিনার বিচার হওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। পৃথিবীর কাছে ‘খুনি হাসিনার নির্মম হত্যাকা-ের তথ্য’ পৌঁছে দিতে চান উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ‘যারা হাসপাতালে এখনও আহত অবস্থায় আছেন, যাদের কাছে রক্তাক্ত স্মৃতি রয়েছে, সেই ঘটনাগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে। রক্তাক্ত এই দাগগুলো পুরো পৃথিবীর সামনে নিয়ে আসতে হবে।’
**দিল্লির সিদ্ধান্ত**
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘ঢাকায় দিল্লির সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার দিন শেষ। আগামীর বাংলাদেশ বিভাজিত হতে দেব না। সবাই এক টেবিলে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফ্যাসিবাদকে আর কখনও পুনরুদ্ধার হতে দেয়া হবে না।’
**শাপলা চত্বরে গণহত্যা**
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘শাপলা চত্বরে গণহত্যার বিচার হয়নি। পিলখানা হত্যাকা-ের বিচার হয়নি। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ফ্যাসিস্ট তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ। সীমান্তে যে পরিমাণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, ফিলিস্তিনেও এতো মানুষ মারা যায়নি। ছাত্রলীগ যদি নিষিদ্ধ হতে পারে, তাহলে তাদের মদদদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’
বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক মাহীন সরকার।
আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ফজলুল করিম কাসেমী বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে ভারতীয় রাজাকারদের পদচারণে সহ্য করা হবে না। আওয়ামী লীগের ইতিহাস আলেম-ওলামা হত্যার ইতিহাস। আওয়ামী লীগের ছায়া স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা দেখতে চাই না। তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেব না।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সভাপতি সাদিক কাইয়ুম বলেন, ‘হাসিনা ও তার দোসররা ষড়যন্ত্র করছে। ফ্যাসিস্টদের ধরিয়ে দিন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিন, আমরা সহযোগিতা করব।’
শ্রদ্ধা নিবেদন
নূর হোসেন চত্বরে যেসব সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের মধ্যে ছিল- সিপিবি, বাসদ, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, গণতন্ত্র মঞ্চ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, ছাত্র ফোরাম, বাসদ (মার্ক্সবাদী), জাতীয় গণফ্রন্ট, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, জাতীয় গণফ্রন্টসহ আরও কিছু সংগঠন।
**আত্মগোপনে**
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই দেশ ছেড়েছেন। অনেকে আত্মগোপনে। বেকায়দায় আছেন তৃণমূল কর্মীরা। তারা দেশে থাকলেও জনসম্মুখে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেই।
এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নূর হোসনে দিবস পালনে কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও তাতে সাড়া দেননি কর্মীরা।
এদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে রাজধানীর গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকায় শনিবার সন্ধ্যা থেকেই তৎপরতা বাড়ায় পুলিশ।