alt

‘প্রধান উপদেষ্টার পাশে আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট’—মির্জা আব্বাস

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হিসেবে মোহাম্মদ সুফিউর রহমানকে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, এই সাবেক কূটনীতিক ‘আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট’।

আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, সংস্কার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘মুহাম্মদ ইউনূসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, কয়েক দিন আগে যে লোককে নিয়োগ করা হয়েছে, সুফিউর না কী নাম, এ তো আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট। আরও আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট আপনার ডানে–বাঁয়ে আছে। দয়া করে এদের কাছ থেকে সাবধানে থাইকেন। এরা পাঁচজন (কয়েকজন সচিব) এবং আপনার উপদেষ্টা পরিষদের কিছু লোক আপনাকে সঠিক রাস্তায় চলতে দেবে না। আপনার সারা জীবনের অর্জন, আপনি নোবেল লরিয়েট... এরা শেষ করে দেবে।’

নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন দেবেন। ড. ইউনূস বলেছেন ডিসেম্বরে না হোক, জুনে হবে। এ কথাটাই আমাদের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। একবার বললেন ডিসেম্বর, আবার বললেন জুন... আপনি ডিসেম্বরে বলার পরপরই অন্য আরেকজন বলে দিল জুনে। পরে আপনি এটাকে এনডোরস করলেন। এ বিষয়ে সন্দেহ করার মতো যথেষ্ট যুক্তি আছে—নির্বাচনটা যেন না হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করছি না, আশা করছি। সম্ভবত নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা করবেন না। আমি তার কোনো লক্ষণ দেখি না। কয়েকটা দল যা শুরু করেছে, এটা না হলে নির্বাচন হবে না, ওইটা না হলে নির্বাচন হবে না। যদি এগুলো হইতে থাকে, তাহলে নির্বাচন কেমন হবে? কেউ কেউ বলেই ফেলেছেন, নির্বাচনে যাব না। কয়েক দিন আগে হইলেন, নির্বাচনে গেলেই কী আর না গেলেই কী।’

নির্বাচন এবং সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ একটা অবস্থা এসেছে—দেশের নির্বাচন না সংস্কার। নির্বাচন না সংস্কার যদি আলাপ করি, অনেক লম্বা আলাপ হবে। ছোট একটা কথা জানেন? নির্বাচনের বিকল্প শুধু নির্বাচনই হতে পারে। অন্য কিছু হতে পারে না। এখন আমি বুঝি না, আমি কথা বললেই বলবে, মির্জা আব্বাস সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলে। সংস্কার চায় না। আরে ভাই না। আমাদের জন্য, নির্বাচনের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যে সংস্কারটুকু প্রয়োজন, আমরা সেই সংস্কারটুকু চাই।’

‘আমরা সংস্কার চাই, নির্বাচনও চাই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোন সংস্কার চাই? যেটা দেশের মানুষের জন্য প্রয়োজন। অপ্রয়োজনীয় সংস্কার, যেটা আরও বিপদ ডেকে আনবে, এমন সংস্কার আমাদের প্রয়োজন নেই।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিদেশে কিছু সরকারি সাংবাদিক আছে, তাদের সরকারে না নিয়ে এই গভর্নমেন্ট ভুল করে ফেলছে আরকি। উচিত ছিল, তাদের সরকারে নেওয়া। তারা আবার খুব ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আমার বক্তব্যগুলো কাটপিস করে এমনভাবে জনগণের সামনে হাজির করা হয়, যাতে জনগণ আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। এ জন্য এখন বক্তব্য দিতে খুব হিসাব করতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে যখন এখানে বসেছি, কথা বলছি, দেশের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। আমরা ১৭ বছর রাজপথে আন্দোলন করেছি। এই ১৭ বছরে বিএনপির প্রায় ৫ হাজার কর্মী নিহত হয়েছেন, ৫ হাজারের বেশি কর্মী গুম-খুন হয়েছেন, আমাদের জেল খাটতে হয়েছে বছরের পর বছর, মাসের পর মাস।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমি একবার বলেছিলাম, আপনারা যে সংস্কার চাইছেন, সব সংস্কার তো মানা যাবে না। এই কথা টুইস্ট করে আমাদের কয়েকজন বিদেশে অবস্থানরত তথাকথিত সাংবাদিক টুইস্ট করে এমনভাবে বললেন, বিএনপি সংস্কার চায় না, মির্জা আব্বাস সংস্কার চায় না। এমনকি সালমান রহমানের টাকা খেয়ে যাঁর স্বাস্থ্য–চেহারা মোটা হয়েছে, এমন লোকটা প্রায়ই আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে আসেন।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যাঁরা দেশের বাইরে ইউটিউবার আছেন, সম্মান রেখেই বলতে চাই, আমরা রাজনীতি ছেড়ে দেব। আপনারা দেশে আসেন। আপনাদের অনেক জ্ঞান, অনেক বুদ্ধি। আপনাদের জ্ঞান–বুদ্ধি অনেক প্রয়োজন। দয়া করে দেশে আসেন, বুদ্ধি দেন, কথা বলেন, কাজ করেন, মেনে নেব। আমরা রাজনীতি করব না, ছেড়ে দেব। দেশে আসবেন না, আবার টিটকারি মেরে কথা বলবেন, সমালোচনা করবেন, জাত-গুষ্টি উদ্ধার করবেন, এটা কেমন কথা? মিথ্যা কথা বলবেন, অপপ্রচার করবেন, অকথা, কুকথা বলবেন, একটা মানুষের চরিত্র হনন করবেন, এগুলা কী? যাঁরা ফেসবুক চালান, তাঁরা এগুলোর জবাব দিয়ে দেবেন। সোজা হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘খেয়াল করলাম, এনসিপির এক ছেলে বলে ফেলল, এখন নির্বাচন করা সম্ভব নয়। কারণ, প্রশাসনের সব জায়গায় বিএনপির লোক বসা আছে। ১৭ বছর আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করল, বিএনপির লোক কই পাইলেন, আমি তো বুঝলাম না। ১৭ বছরে বিএনপির লোক মইরা ভূত হয়ে গেছে। একটাও নাই। আপনারা বলেন সব বিএনপির লোক প্রশাসনে বসে আছে। এসব কথা নেহাতই বাচ্চাদের মতো করে বলছেন। দেশটাকে আরেকবার মুক্ত করেন না। প্রশাসনে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, সচিবালয়ের ভেতর দেশের যে শত্রুগুলো বসে আছে, আওয়ামী লীগের দালাল বসে আছে, তাদের কেন আপনারা বের করেন না? যদি বলি তাদের কাছ থেকে আপনারা অবৈধ সুবিধা পাচ্ছেন।’

বিচার আগে না নির্বাচন আগে—এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা তো আমাদের চাইতে বেশি অত্যাচারিত না। ৫ আগস্টের কথা যদি বলেন...৪ আগস্ট আমাদের মনে আছে না? আমি তো নিজে রাজপথে ছিলাম। নিজে কাকরাইল মোড়ে ছিলাম, টিয়ারশেলের মুখে। আমাদের ৪৬২ জন ছেলে মারা গেল, ৩০ হাজারের মতো আহত হলো। আমাদের কোনো অবদান নাই? অনেকে বলে, আপনারা সারেন্ডার করে ঘরে ঢুকে গেছিলেন। যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা, ইসলামী ছাত্রশিবির কিংবা বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল না বের হতো, তাহলে কী অবস্থা দাঁড়াত। কৃতিত্বের দাবিদার একা হওয়ার চেষ্টা করবেন না। ক্ষতি হবে দলের ও দেশের। দেশটা খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে। দেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। দেশকে বিভক্ত করা গেলে আবার এ দেশকে ভারতীয় আধিপত্যের হাতে চলে যেতে হবে।’

নির্বাচন নিয়ে কোনো রকম ধোঁয়াশা সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এখন কিন্তু নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হচ্ছে। আমার দিক থেকে বলতে পারি, আমার যে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, এটা আমার কথা, দলের না। যা অবস্থা দেখতে পাচ্ছি, বলেছিলাম, সব কথা তো মানা যাবে না। সবাই কি সব কথা মানছে? যে আলোচনা এত দিন হচ্ছে, কেউ ১০টা মানছে, কেউ ৫টা মানছে, কেউ ১৫টা মানছে এবং কারেকশন হচ্ছে। আমি তো এ কথাটা এক মাস, দুই মাস আগে বলেছি।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ভি পি ইব্রাহিম। বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ। সভা সঞ্চালনা করেন গণতন্ত্র ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান।

ছবি

৫ আগস্টের আগের স্বপ্ন ১৫ মাসেও পূরণ হয়নি: নুরুল হক

ছবি

যতই চালাকি হোক, আগে গণভোট, তারপর সংসদ নির্বাচন: তাহের

নতুন নামে ‘ফ্যাসিবাদ’ কায়েমের পাঁয়তারা চলছে: মুশতাক

ছবি

বিএনপির মনোনয়ন পেলেন আ’লীগের ‘ডোনার খ্যাত’ আনিসুল হক!

ছবি

রংপুরের দুই আসনে এনসিপি ও জামায়াতের মর্যাদার লড়াই

ছবি

জুলাই সনদে নোট অব ডিসেন্ট বলে কিছু থাকবে না: নাহিদ ইসলাম

ছবি

বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জাতিসংঘে মোমেনের চিঠি

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ ও গণভোট ইস্যুতে ফখরুলের কঠোর হুঁশিয়ারি

ছবি

শুক্রবার ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস’

ছবি

জাতীয়তাবাদী চেতনায় ঐক্যের আহ্বান বিএনপি নেতাদের

ছবি

আঙুল বাঁকা করার হুমকি জামায়াতের তাহেরের, কারণ ‘ঘি তাদের লাগবেই’

ছবি

গণতন্ত্রের পথ সরকারকেই সুগম করতে হবে, যশোরে মির্জা ফখরুল

ছবি

সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট হতে হবে: মির্জা ফখরুল

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট দাবিতে প্রয়োজনে ‘আঙ্গুল বাঁকা’ করার হুঁশিয়ারি  : জামায়াত নেতৃত্ব

ছবি

৯ রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা , জাতীয় সনদ ও গণভোটে দূরত্ব ঘোচানোর উদ্যোগ

ছবি

৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতিতে এনসিপি, জোট না হলে সরাসরি লড়াই

ছবি

পদ ছেড়ে ‘ভোট করবেন’ অ্যাটর্নি জেনারেল, বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ‘আশাবাদী’

ছবি

বিএনপিতে যোগ দিলেন শহীদ মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ

মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ

ছবি

জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা ও পৃথক দিনে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী

নীলফামারী ১ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ছবি

বরিশাল বিভাগে একমাত্র নারী প্রার্থী ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো

ছবি

শেষ নির্বাচন ঘোষণা দিয়ে আবেগঘন বার্তা দিলেন বিএনপি মহাসচিব

ছবি

প্রার্থী ঘোষণা: সিলেট বিএনপিতে অস্থিরতা

ছবি

চাঁদপুরে জাতীয় পার্টি ও জাতীয় জাসদ থেকে শতাধিক নেতাকর্মীর এনসিপিতে যোগদান

ছবি

বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর কোথাও আনন্দ, কোথাও বিক্ষোভ

ছবি

জামায়াত ‘যথাসময়ে’ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা দেবে: শফিকুর রহমান

ছবি

জাতিসংঘকে নির্বাচনি সহায়তা স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ

ছবি

মাদারীপুর-১ আসনে কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করেছে বিএনপি

ছবি

দিনাজপুর-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন

ছবি

বরগুনার দু’টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন নজরুল ও মনি

ছবি

কুড়িগ্রামে ৪টি আসনের বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস

ছবি

কুড়িগ্রামে ৪টি আসনের বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস

ছবি

নাসিরনগর বিএনপি প্রার্থী এমএ হান্নান

ছবি

সিরাজগঞ্জে বিএনপি ও জামায়াতের দলীয় মনোনায়ন পেয়ে প্রচারণায় নেমেছে

ছবি

কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী আপন দুই ভাইকে নিয়ে আলোচনার ঝড়

tab

‘প্রধান উপদেষ্টার পাশে আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট’—মির্জা আব্বাস

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হিসেবে মোহাম্মদ সুফিউর রহমানকে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, এই সাবেক কূটনীতিক ‘আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট’।

আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, সংস্কার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘মুহাম্মদ ইউনূসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, কয়েক দিন আগে যে লোককে নিয়োগ করা হয়েছে, সুফিউর না কী নাম, এ তো আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট। আরও আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট আপনার ডানে–বাঁয়ে আছে। দয়া করে এদের কাছ থেকে সাবধানে থাইকেন। এরা পাঁচজন (কয়েকজন সচিব) এবং আপনার উপদেষ্টা পরিষদের কিছু লোক আপনাকে সঠিক রাস্তায় চলতে দেবে না। আপনার সারা জীবনের অর্জন, আপনি নোবেল লরিয়েট... এরা শেষ করে দেবে।’

নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন দেবেন। ড. ইউনূস বলেছেন ডিসেম্বরে না হোক, জুনে হবে। এ কথাটাই আমাদের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। একবার বললেন ডিসেম্বর, আবার বললেন জুন... আপনি ডিসেম্বরে বলার পরপরই অন্য আরেকজন বলে দিল জুনে। পরে আপনি এটাকে এনডোরস করলেন। এ বিষয়ে সন্দেহ করার মতো যথেষ্ট যুক্তি আছে—নির্বাচনটা যেন না হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করছি না, আশা করছি। সম্ভবত নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা করবেন না। আমি তার কোনো লক্ষণ দেখি না। কয়েকটা দল যা শুরু করেছে, এটা না হলে নির্বাচন হবে না, ওইটা না হলে নির্বাচন হবে না। যদি এগুলো হইতে থাকে, তাহলে নির্বাচন কেমন হবে? কেউ কেউ বলেই ফেলেছেন, নির্বাচনে যাব না। কয়েক দিন আগে হইলেন, নির্বাচনে গেলেই কী আর না গেলেই কী।’

নির্বাচন এবং সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ একটা অবস্থা এসেছে—দেশের নির্বাচন না সংস্কার। নির্বাচন না সংস্কার যদি আলাপ করি, অনেক লম্বা আলাপ হবে। ছোট একটা কথা জানেন? নির্বাচনের বিকল্প শুধু নির্বাচনই হতে পারে। অন্য কিছু হতে পারে না। এখন আমি বুঝি না, আমি কথা বললেই বলবে, মির্জা আব্বাস সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলে। সংস্কার চায় না। আরে ভাই না। আমাদের জন্য, নির্বাচনের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যে সংস্কারটুকু প্রয়োজন, আমরা সেই সংস্কারটুকু চাই।’

‘আমরা সংস্কার চাই, নির্বাচনও চাই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোন সংস্কার চাই? যেটা দেশের মানুষের জন্য প্রয়োজন। অপ্রয়োজনীয় সংস্কার, যেটা আরও বিপদ ডেকে আনবে, এমন সংস্কার আমাদের প্রয়োজন নেই।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিদেশে কিছু সরকারি সাংবাদিক আছে, তাদের সরকারে না নিয়ে এই গভর্নমেন্ট ভুল করে ফেলছে আরকি। উচিত ছিল, তাদের সরকারে নেওয়া। তারা আবার খুব ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আমার বক্তব্যগুলো কাটপিস করে এমনভাবে জনগণের সামনে হাজির করা হয়, যাতে জনগণ আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। এ জন্য এখন বক্তব্য দিতে খুব হিসাব করতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে যখন এখানে বসেছি, কথা বলছি, দেশের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। আমরা ১৭ বছর রাজপথে আন্দোলন করেছি। এই ১৭ বছরে বিএনপির প্রায় ৫ হাজার কর্মী নিহত হয়েছেন, ৫ হাজারের বেশি কর্মী গুম-খুন হয়েছেন, আমাদের জেল খাটতে হয়েছে বছরের পর বছর, মাসের পর মাস।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমি একবার বলেছিলাম, আপনারা যে সংস্কার চাইছেন, সব সংস্কার তো মানা যাবে না। এই কথা টুইস্ট করে আমাদের কয়েকজন বিদেশে অবস্থানরত তথাকথিত সাংবাদিক টুইস্ট করে এমনভাবে বললেন, বিএনপি সংস্কার চায় না, মির্জা আব্বাস সংস্কার চায় না। এমনকি সালমান রহমানের টাকা খেয়ে যাঁর স্বাস্থ্য–চেহারা মোটা হয়েছে, এমন লোকটা প্রায়ই আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে আসেন।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যাঁরা দেশের বাইরে ইউটিউবার আছেন, সম্মান রেখেই বলতে চাই, আমরা রাজনীতি ছেড়ে দেব। আপনারা দেশে আসেন। আপনাদের অনেক জ্ঞান, অনেক বুদ্ধি। আপনাদের জ্ঞান–বুদ্ধি অনেক প্রয়োজন। দয়া করে দেশে আসেন, বুদ্ধি দেন, কথা বলেন, কাজ করেন, মেনে নেব। আমরা রাজনীতি করব না, ছেড়ে দেব। দেশে আসবেন না, আবার টিটকারি মেরে কথা বলবেন, সমালোচনা করবেন, জাত-গুষ্টি উদ্ধার করবেন, এটা কেমন কথা? মিথ্যা কথা বলবেন, অপপ্রচার করবেন, অকথা, কুকথা বলবেন, একটা মানুষের চরিত্র হনন করবেন, এগুলা কী? যাঁরা ফেসবুক চালান, তাঁরা এগুলোর জবাব দিয়ে দেবেন। সোজা হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘খেয়াল করলাম, এনসিপির এক ছেলে বলে ফেলল, এখন নির্বাচন করা সম্ভব নয়। কারণ, প্রশাসনের সব জায়গায় বিএনপির লোক বসা আছে। ১৭ বছর আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করল, বিএনপির লোক কই পাইলেন, আমি তো বুঝলাম না। ১৭ বছরে বিএনপির লোক মইরা ভূত হয়ে গেছে। একটাও নাই। আপনারা বলেন সব বিএনপির লোক প্রশাসনে বসে আছে। এসব কথা নেহাতই বাচ্চাদের মতো করে বলছেন। দেশটাকে আরেকবার মুক্ত করেন না। প্রশাসনে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, সচিবালয়ের ভেতর দেশের যে শত্রুগুলো বসে আছে, আওয়ামী লীগের দালাল বসে আছে, তাদের কেন আপনারা বের করেন না? যদি বলি তাদের কাছ থেকে আপনারা অবৈধ সুবিধা পাচ্ছেন।’

বিচার আগে না নির্বাচন আগে—এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা তো আমাদের চাইতে বেশি অত্যাচারিত না। ৫ আগস্টের কথা যদি বলেন...৪ আগস্ট আমাদের মনে আছে না? আমি তো নিজে রাজপথে ছিলাম। নিজে কাকরাইল মোড়ে ছিলাম, টিয়ারশেলের মুখে। আমাদের ৪৬২ জন ছেলে মারা গেল, ৩০ হাজারের মতো আহত হলো। আমাদের কোনো অবদান নাই? অনেকে বলে, আপনারা সারেন্ডার করে ঘরে ঢুকে গেছিলেন। যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা, ইসলামী ছাত্রশিবির কিংবা বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল না বের হতো, তাহলে কী অবস্থা দাঁড়াত। কৃতিত্বের দাবিদার একা হওয়ার চেষ্টা করবেন না। ক্ষতি হবে দলের ও দেশের। দেশটা খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে। দেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। দেশকে বিভক্ত করা গেলে আবার এ দেশকে ভারতীয় আধিপত্যের হাতে চলে যেতে হবে।’

নির্বাচন নিয়ে কোনো রকম ধোঁয়াশা সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এখন কিন্তু নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হচ্ছে। আমার দিক থেকে বলতে পারি, আমার যে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, এটা আমার কথা, দলের না। যা অবস্থা দেখতে পাচ্ছি, বলেছিলাম, সব কথা তো মানা যাবে না। সবাই কি সব কথা মানছে? যে আলোচনা এত দিন হচ্ছে, কেউ ১০টা মানছে, কেউ ৫টা মানছে, কেউ ১৫টা মানছে এবং কারেকশন হচ্ছে। আমি তো এ কথাটা এক মাস, দুই মাস আগে বলেছি।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ভি পি ইব্রাহিম। বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ। সভা সঞ্চালনা করেন গণতন্ত্র ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান।

back to top