মায়ানমারের রাখাইনে জাতিসংঘের সহায়তা পৌঁছাতে ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার ব্যাপারে সরকার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে—এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসা উচিত জনগণের কাছ থেকে, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সংসদের কাছ থেকে।
সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দাবি করে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী জনগণ’ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা ‘যৌক্তিক’ নয়।
মে দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু জনগণকে জানায়নি। এমনকি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কোনো আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেনি।”
তিনি বলেন, “দেশের জনগণকে না জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না কিংবা নেওয়া উচিত কি না, এই মুহূর্তে সে বিতর্ক আমি তুলতে চাই না। তবে দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ মনে করে, করিডোর দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের কাছ থেকে, সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশে দেশে এটাই নিয়ম, এটাই রীতি।”
বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে দেশের জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে—এই অবস্থান স্পষ্ট করে তারেক রহমান বলেন, “মায়ানমার, ভারত, পাকিস্তান কিংবা অন্য কোনো দেশ নয়, সবার আগে বাংলাদেশ। এটিই হতে হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।”
সমাবেশে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিএনপি মনে করে, সংস্কার ও নির্বাচন উভয়টি প্রয়োজন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান, আপনারা একটু সর্তক থাকবেন। সরকারের একটি অংশ সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিরোধ উসকে দিতে চায়।”
তিনি আরও বলেন, “স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়ন করুন। কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি নেই। তবে পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত করুন। সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মপরিকল্পনার পথনকশা গণতন্ত্রকামী জনগণের সামনে সুস্পষ্ট থাকলে জনগণের সন্দেহ, সংশয় কেটে যাবে।”
তারেক রহমান বলেন, “ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে জনগণের পক্ষে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে। তবে গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয়।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট কিংবা স্বৈরাচার হওয়ার মন্ত্র দেশের সংবিধান কিংবা দেশের আইনে লেখা থাকে না। বরং সংবিধান ও আইন না মানার কারণে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন থেকে নিজেকে কিংবা নিজেদের একমাত্র অনিবার্য, অপরিহার্য মনে করে, জনগণের ওপর একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে শুরু করে তখন থেকেই ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু হয়।
“এই কারণে বলতে চাই, কোনো ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠির বিনাভোটে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার সুপ্ত ভাবনা, আকাঙ্খা যেন রাষ্ট্র ও সরকারকে ফ্যাসিবাদের প্রতি প্রলুব্ধ করতে না পারে সেজন্যই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘গণবিপ্লব’ ও গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ অথবা স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার গঠিত হয় তা ‘অবৈধ’ না হলেও জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নয়। বিকল্প হতে পারে না।
বেলা ২টা ১০ মিনিটে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। তার আগে সকাল ১০টা থেকে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করে। এর মধ্যেই সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন নেতাকর্মী-সমর্থকরা।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের শিল্প এলাকা থেকে হাজারো শ্রমিক মাথায় লাল ফিতা বেঁধে লাল এবং দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে মিছিল সহকারে এ সমাবেশে যোগ দেন। কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়ক রূপ নেয় জনসমুদ্রে।
শ্রমিকদের এ সমাবেশ থেকে যেসব সংস্কারের বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে অবিলম্বে সেগুলো বাস্তবায়ন করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, যে সব সংস্কারে দলগুলো একমত হবে না সেগুলো নিয়ে ‘সনদ’ তৈরি করে পরবর্তী সংসদে পাস করানোর ব্যবস্থা করুন।
‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে তিনি বলেন, “দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবহেলা করে এমন কোনো চুক্তি করবেন না যেই চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে।”
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের সার্বজনীন শ্লোগান ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ স্লোগান ধরে বক্তব্য শেষ করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “এই যে মঞ্চে উপবিষ্ট আছেন আমার নেতৃবৃন্দ, আমার সামনে আছেন আমাদের কর্মীরা কেউ কি বলতে পারবেন ১৭ বছরে আপনারা জেলে যান নাই, কেউ কি বলতে পারবেন, বিএনপির নেতৃবৃন্দ কেউ জেল খাটেন নাই, গ্রেপ্তার হন নাই?
“এখানে মঞ্চটায় যারা আছেন, সবাই জেলে ছিলেন, এমনকি আমাদের নেতা তারেক রহমান পর্যন্ত জেলে ছিলেন। আমি আশ্বর্য হয়ে যাই কিছু কিছু ছেলে-পেলে বলে ১৭ বছর আপনারা কি করেছেন? আরে ১৭ বছর আমরা গাছের গোড়ায় পানি ঢেলে গাছের গোড়া নরম করেছি। সেই গাছের আগায় বসে আপনারা ফল খেয়েছেন।”
তিনি বলেন, “দুইদিনে হাসিনার পতন হয়ে যায়নি। এটা যারা বলেন, তারা মিথ্যার সাথে বসবাস করেন, তারা সত্যি কথা বলেন না, তারা বিএনপিকে কৃতিত্ব দিতে চান না। কিন্তু বিএনপিকে এই দেশের জনগণ ভালোবাসে। আমি বলব, একা একা কৃতিত্ব নিতে গিয়ে দেশটাকে ধ্বংস করবেন না।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলেও এখনো গণতন্ত্র আলোর মুখ দেখেনি। সাম্প্রতিককালের বিবেচনায় বলতে হয়, গণতন্ত্র চোরাবালিতে আটকা পড়েছে। এই চোরাবালি থেকে গণতন্ত্র উদ্ধার করা এই কাজটিও সম্পন্ন হবে।”
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা জানি সম্প্রতি একটা শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা হয়েছে। আমরা এই সমাবেশ থেকে দাবি করব, শ্রম সংস্কার কমিশন থেকে যেসব প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছে তা আগামী মে দিবসের আগেই আইন করে বাস্তবায়ন করতে হবে।”
তিনি মনে করেন, এ সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন হলেই শ্রমিকদের সব সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যাবে।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় সেখানে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির শ্রম বিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খান, ফিরোজ-উজ-জামান মোল্লা মামুন, শ্রমিক দলের সালাহউদ্দিন সরকার, আবুল কালাম আজাদ, মেহেদি আলী খান, আবুল খায়ের খাজা, মোস্তাফিজুল করীম, সুমন ভুঁইয়া, প্রয়াত শ্রমিক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান।
বিএনপির অন্য নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সাংগঠনিক সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আহমেদ আজম খান, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুস সালাম পিন্টু, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, লুৎফুজ্জামান বাবর, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, মীর সরাফত আলী সপু, এবিএম মোশাররফ হোসেন।
বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫
মায়ানমারের রাখাইনে জাতিসংঘের সহায়তা পৌঁছাতে ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার ব্যাপারে সরকার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে—এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসা উচিত জনগণের কাছ থেকে, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সংসদের কাছ থেকে।
সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দাবি করে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী জনগণ’ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা ‘যৌক্তিক’ নয়।
মে দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু জনগণকে জানায়নি। এমনকি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কোনো আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেনি।”
তিনি বলেন, “দেশের জনগণকে না জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না কিংবা নেওয়া উচিত কি না, এই মুহূর্তে সে বিতর্ক আমি তুলতে চাই না। তবে দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ মনে করে, করিডোর দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের কাছ থেকে, সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশে দেশে এটাই নিয়ম, এটাই রীতি।”
বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে দেশের জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে—এই অবস্থান স্পষ্ট করে তারেক রহমান বলেন, “মায়ানমার, ভারত, পাকিস্তান কিংবা অন্য কোনো দেশ নয়, সবার আগে বাংলাদেশ। এটিই হতে হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।”
সমাবেশে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিএনপি মনে করে, সংস্কার ও নির্বাচন উভয়টি প্রয়োজন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান, আপনারা একটু সর্তক থাকবেন। সরকারের একটি অংশ সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিরোধ উসকে দিতে চায়।”
তিনি আরও বলেন, “স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়ন করুন। কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি নেই। তবে পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত করুন। সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মপরিকল্পনার পথনকশা গণতন্ত্রকামী জনগণের সামনে সুস্পষ্ট থাকলে জনগণের সন্দেহ, সংশয় কেটে যাবে।”
তারেক রহমান বলেন, “ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে জনগণের পক্ষে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে। তবে গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয়।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট কিংবা স্বৈরাচার হওয়ার মন্ত্র দেশের সংবিধান কিংবা দেশের আইনে লেখা থাকে না। বরং সংবিধান ও আইন না মানার কারণে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন থেকে নিজেকে কিংবা নিজেদের একমাত্র অনিবার্য, অপরিহার্য মনে করে, জনগণের ওপর একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে শুরু করে তখন থেকেই ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু হয়।
“এই কারণে বলতে চাই, কোনো ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠির বিনাভোটে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার সুপ্ত ভাবনা, আকাঙ্খা যেন রাষ্ট্র ও সরকারকে ফ্যাসিবাদের প্রতি প্রলুব্ধ করতে না পারে সেজন্যই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘গণবিপ্লব’ ও গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ অথবা স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার গঠিত হয় তা ‘অবৈধ’ না হলেও জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নয়। বিকল্প হতে পারে না।
বেলা ২টা ১০ মিনিটে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। তার আগে সকাল ১০টা থেকে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করে। এর মধ্যেই সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন নেতাকর্মী-সমর্থকরা।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের শিল্প এলাকা থেকে হাজারো শ্রমিক মাথায় লাল ফিতা বেঁধে লাল এবং দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে মিছিল সহকারে এ সমাবেশে যোগ দেন। কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়ক রূপ নেয় জনসমুদ্রে।
শ্রমিকদের এ সমাবেশ থেকে যেসব সংস্কারের বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে অবিলম্বে সেগুলো বাস্তবায়ন করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, যে সব সংস্কারে দলগুলো একমত হবে না সেগুলো নিয়ে ‘সনদ’ তৈরি করে পরবর্তী সংসদে পাস করানোর ব্যবস্থা করুন।
‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে তিনি বলেন, “দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবহেলা করে এমন কোনো চুক্তি করবেন না যেই চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে।”
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের সার্বজনীন শ্লোগান ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ স্লোগান ধরে বক্তব্য শেষ করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “এই যে মঞ্চে উপবিষ্ট আছেন আমার নেতৃবৃন্দ, আমার সামনে আছেন আমাদের কর্মীরা কেউ কি বলতে পারবেন ১৭ বছরে আপনারা জেলে যান নাই, কেউ কি বলতে পারবেন, বিএনপির নেতৃবৃন্দ কেউ জেল খাটেন নাই, গ্রেপ্তার হন নাই?
“এখানে মঞ্চটায় যারা আছেন, সবাই জেলে ছিলেন, এমনকি আমাদের নেতা তারেক রহমান পর্যন্ত জেলে ছিলেন। আমি আশ্বর্য হয়ে যাই কিছু কিছু ছেলে-পেলে বলে ১৭ বছর আপনারা কি করেছেন? আরে ১৭ বছর আমরা গাছের গোড়ায় পানি ঢেলে গাছের গোড়া নরম করেছি। সেই গাছের আগায় বসে আপনারা ফল খেয়েছেন।”
তিনি বলেন, “দুইদিনে হাসিনার পতন হয়ে যায়নি। এটা যারা বলেন, তারা মিথ্যার সাথে বসবাস করেন, তারা সত্যি কথা বলেন না, তারা বিএনপিকে কৃতিত্ব দিতে চান না। কিন্তু বিএনপিকে এই দেশের জনগণ ভালোবাসে। আমি বলব, একা একা কৃতিত্ব নিতে গিয়ে দেশটাকে ধ্বংস করবেন না।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলেও এখনো গণতন্ত্র আলোর মুখ দেখেনি। সাম্প্রতিককালের বিবেচনায় বলতে হয়, গণতন্ত্র চোরাবালিতে আটকা পড়েছে। এই চোরাবালি থেকে গণতন্ত্র উদ্ধার করা এই কাজটিও সম্পন্ন হবে।”
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা জানি সম্প্রতি একটা শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা হয়েছে। আমরা এই সমাবেশ থেকে দাবি করব, শ্রম সংস্কার কমিশন থেকে যেসব প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছে তা আগামী মে দিবসের আগেই আইন করে বাস্তবায়ন করতে হবে।”
তিনি মনে করেন, এ সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন হলেই শ্রমিকদের সব সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যাবে।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় সেখানে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির শ্রম বিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খান, ফিরোজ-উজ-জামান মোল্লা মামুন, শ্রমিক দলের সালাহউদ্দিন সরকার, আবুল কালাম আজাদ, মেহেদি আলী খান, আবুল খায়ের খাজা, মোস্তাফিজুল করীম, সুমন ভুঁইয়া, প্রয়াত শ্রমিক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান।
বিএনপির অন্য নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সাংগঠনিক সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আহমেদ আজম খান, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুস সালাম পিন্টু, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, লুৎফুজ্জামান বাবর, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, মীর সরাফত আলী সপু, এবিএম মোশাররফ হোসেন।