alt

রাজনীতি

সন্দেহভাজন বিদেশিদের আগমন ঘটছে দেশে’ — মির্জা আব্বাসের অভিযোগ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ১২ মে ২০২৫

দেশে ‘সন্দেহভাজন’ বিদেশি নাগরিকদের আগমন ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি, এ দেশে অনেক বিদেশির আগমন ঘটেছে, সন্দেহভাজন বিদেশিদের আগমন ঘটেছে। বিভিন্ন সময় তারা বিভিন্ন মিশন নিয়ে আসতেছে। আজ ফেইসবুকে আপনারা সার্চ দিলে পাবেন, এক ভদ্রলোক বলছিলেন, এখন বলতে পারছি না। তবে আমার ধারণা, এ সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এসব অপকর্ম করছে।”

সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু স্মৃতি পরিষদ’ এ সভা আয়োজন করে।

সেখানে ‘মানবিক করিডোরের’ বিষয়টি তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, “এ মুহূর্তে আমি এ সরকারকে, অন্তত আমি আমার কথা বলছি, নিরপেক্ষ ভাবতে পারছি না। তারা কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কারো হয়ে কাজ করছে। এ সরকার কোনো অবস্থাতেই গণবান্ধব কিংবা দেশপ্রেমিক সরকার নয়, আমি পরিষ্কার ভাষায় এটা বলতে চাই। আমার দেশ, দেশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কেন?”

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমার প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়ে এ সরকারকে প্রমাণ করতে হবে তারা দেশপ্রেমিক সরকার। সঠিক জবাব দেওয়ার পর আমাকে যে শাস্তি দেওয়া হোক, আমি মাথা পেতে নেব। আমি আমার কথা বললাম। আমি জানি, এটা যথাযথ ফোরাম নয়, হয়ত আরও বড় কোনো জায়গায় বলা উচিত ছিল। কিন্তু আমি আমার মনের ক্ষোভ ধরে রাখতে পারিনি, আপনাদের সামনে প্রকাশ করলাম। আমার কথাটা একটু আপনারা মনে ধারণ করবেন এবং দেশবাসীর কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এখন কিন্তু আমরা খুব ভালো অবস্থানে নাই।”

পিন্টুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, “বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে কথাটা বলা ঠিক হবে কিনা, তারপরও বলব, পিন্টুকে যেভাবে স্মরণ করা হচ্ছে, এটা আমার জন্য, আমার দলের জন্য, সবার জন্য একটা লজ্জাজনক ব্যাপার। এই পিন্টু এবং এই পিন্টুদের কার্যক্রমের জন্যই আজ বিএনপি এ অবস্থানে এসেছে। বিএনপি একদিনে আকাশ থেকে নামেনি কিংবা এক দিনেই বড় হয়ে যায়নি। তিলে তিলে এই বিএনপি বড় হয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘‘আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি রাজনৈতিক অবস্থানে, আমরা কয়েক দিন যাবত দেখতে পারছি, বাংলাদেশে একটা সার্কাস জাতীয় কিছু একটা হচ্ছে, নাটক জাতীয় কিছু একটা হচ্ছে, আমার কাছে মনে হচ্ছে আরকি। আমি আবার কথাগুলো আটকিয়ে রাখতে পারি না, আমার একটা বাজে অভ্যাস। আগে আমরা দেখতাম যে, শেখ হাসিনা কিছু করার আগে কোথাও একটা অপকর্ম ঘটাত, আমরা বুঝতাম সে কিছু একটা ঘটাবে। একদিকে আমাদের দৃষ্টি নিয়ে যেত, আরেক দিক দিয়ে কাজ করত।”

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘দেখেন হামিদ সাহেব (আবদুল হামিদ) চলে গেলেন কি সুন্দর। হামিদ সাহেব কোন দিক দিয়ে চলে গেলেন? ভিআইপি দিয়ে। পত্রপত্রিকায় দেখলাম উনি নাকি গেঞ্জি পরে, লুঙ্গি পরে, মাস্ক লাগিয়ে গিয়েছে। লুঙ্গি পরে, গেঞ্জি পরে ভিআইপিতে ঢুকলেন কীভাবে? ভিআইপি সুবিধা নিয়ে এয়ারপোর্ট দিয়ে উনি পার হয়ে গেলেন, আর আমার সরকার বলে কিছু জানি না। ৬২২ জন আওয়ামী লীগের লোক পার হয়ে গেল, এ সরকার বলে আমরা কিছু জানি না, জানেনটা কী?”

‘শাহবাগে নাটক কেন?’

মির্জা আব্বাস বলেন, “আরও জানি কী কী ঘটাচ্ছে। নইলে শাহবাগের এ নাটক কেন হঠাৎ করে। যে শাহবাগ আপনারা বন্ধ করেছেন, যে শাহবাগের এই সমস্ত এলাকায় মিছিল-মিটিং করা যাবে না, সেখানে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়, সরকারের দল এনসিপির লোকেরা ওখানে মিছিল-মিটিং করে কীভাবে? আর কোন দাবিতে মিছিল-মিটিং করল, কী দাবি? আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে। তো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে না করছে কে ভাই? কে না করছে? বিএনপি না করছে? খুব চেষ্টা করছে চালানোর জন্য বিএনপি নাকি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করতে চায়। আমাদের ঠেকা পড়ে গেছে, বড় ঠেকা পড়ে গেছে।”

‘প্রশাসনে কী হচ্ছে’

মির্জা আব্বাস বলেন, “প্রশাসনে বিভিন্ন এলাকায় পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে। বিএনপি কর্মকর্তাদের বাতিল করে সেখানে কমপক্ষে জামায়াতের লোকজনকে দিতে হবে, জামায়াত না হলে আওয়ামী লীগ দিতে হবে। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, থানা-পুলিশ-কোর্ট-কাচারি, সচিবালয়ের ভেতরে এসব কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে গেছে—বিএনপিকে রাখা যাবে না।”

তিনি বলেন, “এই সরকারের অনেক উপদেষ্টা বাংলাদেশের নাগরিকই নন, তারা এই দেশ পরিচালনা করতেছেন। এসব থেকে নজর ফিরিয়ে নিতে সরকার নানা কিছু ইস্যু করছে।”

‘সেন্ট মার্টিন-সাজেক-বাঘাইছড়ি কেন যেতে পারবে না’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা ঔপনিবেশিক শাসনে আছি? আমার মনে হয় যে, আমরা দেশের মানুষের শাসনে নাই। সেন্ট মার্টিন, সাজেক, বাঘাইছড়ি—এসব এলাকা আমাদের যাওয়াটা দুরূহ হয়ে গেছে। আমি কেন ইচ্ছা করলে সেন্ট মার্টিন যেতে পারি না, আমি কেন ইচ্ছা করলে সাজেক যেতে পারব না, আমি কেন ইচ্ছা করলে বাঘাইছড়ি যেতে পারব না, আমি এটা সরকার থেকে জানতে চাই। আমরা কি কোনো পরাধীন রাষ্ট্রে বসবাস করি? সেন্ট মার্টিন, সাজেক, বাঘাইছড়ি যেতে পাসপোর্ট ভিসা লাগবে? আমি এ সরকারের কাছে স্পষ্ট উত্তর জানতে চাই।”

“আমি এটাও বুঝি না, আমার এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) ভাইয়েরা যারা বলতে চান, দ্বিতীয় স্বাধীনতা, তারা এ নিয়ে কথা বলছেন না কেন? যদি প্রশ্ন করেন, আপনি কেন বলছেন। আমি বলছি এ কারণে যে, এ দেশটাকে আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি। এ দেশটা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছেন কারো কাছে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য নয়।”

‘মানবিক করিডোর’ প্রসঙ্গে

মির্জা আব্বাস বলেন, “তিনটা এলাকার নাম বলছি, সেন্ট মার্টিন, সাজেক, বাঘাইছড়ি—এসব এলাকা আমাদের যাওয়াটা দুরুহ হয়ে গেছে। আবার শুনি একটা জায়গায় নাকি করিডোর দেওয়া হবে। কীসের করিডোর? মানবিক করিডোর। আরে ভাই, বিশ্বের কোন ডিকশনারিতে মানবিক করিডোর নামে শব্দ আছে, কোথা থেকে এসব আবষ্কার করেন? আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো করিডোর কিংবা প্যাসেজ দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই জনগণের মতামত ছাড়া। জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নেবে তারা কী করবে?”

মির্জা আব্বাস বলেন, “করিডোর নিয়ে অন্য দলগুলো কথা বলছে না কেন; কী কারণে? জামায়াতে ইসলামী কথা বলে না কেন? বিভিন্ন পীর সাহেব আছেন, ওনারা কথা বলেন না কেন? আবার বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলার সময় সবাই এক হয়ে যান, এটা কেমন কথা হলো? অর্থাৎ বিএনপিকে শেষ করতে পারলেই বাংলাদেশটাকে আবারও লুটেপুটে খাওয়া যাবে আওয়ামী লীগের মত।”

সংগঠনের সভাপতি সাইদ হাসান মিন্টুর সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, যুব দলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা শাহ মো. নেসারুল হক বক্তব্য রাখেন।

ছবি

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, বিএনপির সমর্থন, বাসদের প্রশ্ন

ছবি

আন্দোলনকালীন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আইভী, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

ছবি

নিবন্ধন বাতিল নিয়ে সিদ্ধান্তে বসেছে ইসি, অপেক্ষায় গেজেট

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন নিষিদ্ধ

ছবি

‘গোলাম আজমের বাংলায়’ স্লোগান নিয়ে বিতর্কে এনসিপি: দায় নিতে হবে সংশ্লিষ্ট পক্ষকেই

ছবি

দ্বাদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতির অসীম ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেওয়া হয়েছিল: আলী রীয়াজ

ছবি

সংবিধান সংস্কারে কমিশন গঠনের দাবি নাগরিক কোয়ালিশনের অনুষ্ঠানে

ছবি

আওয়ামী লীগের বিচার চেয়ে আগেই প্রস্তাব দিয়েছিল বিএনপি—সালাহউদ্দিন

ছবি

নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার স্পষ্ট করার আহ্বান নাহিদ ইসলামের

ছবি

‘গুম-খুন-নিপীড়নের বিচার প্রক্রিয়া সঠিক পথে’—মির্জা ফখরুল

ছবি

গণতন্ত্রের মা’কে গভীর শ্রদ্ধা জানালেন লন্ডনপ্রবাসী তারেক

ছবি

আহতদের সুচিকিৎসা ও জুলাই সনদ প্রকাশের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

ছবি

এক যুগ পর ভাইয়ের বাসায় খালেদা জিয়া, সঙ্গে ছিলেন পুত্রবধূরা

ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধিত, রাজনৈতিক দলকেও বিচারের আওতায় আনার পথ সুগম

ছবি

নিশ্চিত আদেশের অপেক্ষায় ইসি, নিষিদ্ধ হলে বাতিল হবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন

ছবি

শাহবাগে মধ্যরাতের পর জমায়েতে হাসনাত, সোমবার প্রজ্ঞাপন জারির পর আনন্দমিছিল

ছবি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান, বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা

ছবি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে এক ঘণ্টার আলটিমেটাম, শাহবাগে এনসিপির অবরোধ

ছবি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে রোডম্যাপ না পেয়ে ‘মার্চ টু যমুনা’ ঘোষণা

ছবি

নতুন দল ‘আপ বাংলাদেশ’-এর আত্মপ্রকাশ, আহ্বায়ক শিবিরের সাবেক নেতা জুনায়েদ

ছবি

শাহবাগে এনসিপির গণজমায়েত, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি হাসনাত আবদুল্লাহর

ছবি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ অব্যাহত, বিকেলে গণজমায়েতের প্রস্তুতি

ছবি

শাহবাগ ব্লকেড চলছে, মহাসড়কে ব্লকেড না দেওয়ার আহ্বান এনসিপি নেতার

ছবি

জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলায় আইভী কারাগারে

ছবি

আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবি: যমুনার সামনে বাদ জুমা বড় জমায়েতের ডাক

ছবি

আ. লীগকে নিষিদ্ধের দাবি: রাতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সকালেও চলছে

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায়, দাবি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার

ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সিইসি ও বিচারপতিসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

ছবি

“জাতির বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নয়: মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারকে বিএনপির হুঁশিয়ারি”

ছবি

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত সাবেক এমপি তুহিনের আপিল গ্রহণ, জামিন মঞ্জুর

ছবি

দল গোছাতে দুই মাসে এক কোটি সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য বিএনপির

ছবি

কবিগুরুর গান জাতীয় সংগীত হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত: তারেক রহমান

ছবি

আজহারের রিভিউ শুনানি শেষ, রায় ২৭ মে

ছবি

সংসদের নিম্নকক্ষে আনুপাতিক ভোটে দ্বিমত নাগরিক ঐক্যের, অধিকাংশ প্রস্তাবে একমত

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রণীত সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি গণতন্ত্রী পার্টির

ছবি

রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক মতপার্থক্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে: এনসিপি

tab

রাজনীতি

সন্দেহভাজন বিদেশিদের আগমন ঘটছে দেশে’ — মির্জা আব্বাসের অভিযোগ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ১২ মে ২০২৫

দেশে ‘সন্দেহভাজন’ বিদেশি নাগরিকদের আগমন ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি, এ দেশে অনেক বিদেশির আগমন ঘটেছে, সন্দেহভাজন বিদেশিদের আগমন ঘটেছে। বিভিন্ন সময় তারা বিভিন্ন মিশন নিয়ে আসতেছে। আজ ফেইসবুকে আপনারা সার্চ দিলে পাবেন, এক ভদ্রলোক বলছিলেন, এখন বলতে পারছি না। তবে আমার ধারণা, এ সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এসব অপকর্ম করছে।”

সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু স্মৃতি পরিষদ’ এ সভা আয়োজন করে।

সেখানে ‘মানবিক করিডোরের’ বিষয়টি তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, “এ মুহূর্তে আমি এ সরকারকে, অন্তত আমি আমার কথা বলছি, নিরপেক্ষ ভাবতে পারছি না। তারা কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কারো হয়ে কাজ করছে। এ সরকার কোনো অবস্থাতেই গণবান্ধব কিংবা দেশপ্রেমিক সরকার নয়, আমি পরিষ্কার ভাষায় এটা বলতে চাই। আমার দেশ, দেশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কেন?”

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমার প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়ে এ সরকারকে প্রমাণ করতে হবে তারা দেশপ্রেমিক সরকার। সঠিক জবাব দেওয়ার পর আমাকে যে শাস্তি দেওয়া হোক, আমি মাথা পেতে নেব। আমি আমার কথা বললাম। আমি জানি, এটা যথাযথ ফোরাম নয়, হয়ত আরও বড় কোনো জায়গায় বলা উচিত ছিল। কিন্তু আমি আমার মনের ক্ষোভ ধরে রাখতে পারিনি, আপনাদের সামনে প্রকাশ করলাম। আমার কথাটা একটু আপনারা মনে ধারণ করবেন এবং দেশবাসীর কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এখন কিন্তু আমরা খুব ভালো অবস্থানে নাই।”

পিন্টুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, “বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে কথাটা বলা ঠিক হবে কিনা, তারপরও বলব, পিন্টুকে যেভাবে স্মরণ করা হচ্ছে, এটা আমার জন্য, আমার দলের জন্য, সবার জন্য একটা লজ্জাজনক ব্যাপার। এই পিন্টু এবং এই পিন্টুদের কার্যক্রমের জন্যই আজ বিএনপি এ অবস্থানে এসেছে। বিএনপি একদিনে আকাশ থেকে নামেনি কিংবা এক দিনেই বড় হয়ে যায়নি। তিলে তিলে এই বিএনপি বড় হয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘‘আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি রাজনৈতিক অবস্থানে, আমরা কয়েক দিন যাবত দেখতে পারছি, বাংলাদেশে একটা সার্কাস জাতীয় কিছু একটা হচ্ছে, নাটক জাতীয় কিছু একটা হচ্ছে, আমার কাছে মনে হচ্ছে আরকি। আমি আবার কথাগুলো আটকিয়ে রাখতে পারি না, আমার একটা বাজে অভ্যাস। আগে আমরা দেখতাম যে, শেখ হাসিনা কিছু করার আগে কোথাও একটা অপকর্ম ঘটাত, আমরা বুঝতাম সে কিছু একটা ঘটাবে। একদিকে আমাদের দৃষ্টি নিয়ে যেত, আরেক দিক দিয়ে কাজ করত।”

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘দেখেন হামিদ সাহেব (আবদুল হামিদ) চলে গেলেন কি সুন্দর। হামিদ সাহেব কোন দিক দিয়ে চলে গেলেন? ভিআইপি দিয়ে। পত্রপত্রিকায় দেখলাম উনি নাকি গেঞ্জি পরে, লুঙ্গি পরে, মাস্ক লাগিয়ে গিয়েছে। লুঙ্গি পরে, গেঞ্জি পরে ভিআইপিতে ঢুকলেন কীভাবে? ভিআইপি সুবিধা নিয়ে এয়ারপোর্ট দিয়ে উনি পার হয়ে গেলেন, আর আমার সরকার বলে কিছু জানি না। ৬২২ জন আওয়ামী লীগের লোক পার হয়ে গেল, এ সরকার বলে আমরা কিছু জানি না, জানেনটা কী?”

‘শাহবাগে নাটক কেন?’

মির্জা আব্বাস বলেন, “আরও জানি কী কী ঘটাচ্ছে। নইলে শাহবাগের এ নাটক কেন হঠাৎ করে। যে শাহবাগ আপনারা বন্ধ করেছেন, যে শাহবাগের এই সমস্ত এলাকায় মিছিল-মিটিং করা যাবে না, সেখানে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়, সরকারের দল এনসিপির লোকেরা ওখানে মিছিল-মিটিং করে কীভাবে? আর কোন দাবিতে মিছিল-মিটিং করল, কী দাবি? আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে। তো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে না করছে কে ভাই? কে না করছে? বিএনপি না করছে? খুব চেষ্টা করছে চালানোর জন্য বিএনপি নাকি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করতে চায়। আমাদের ঠেকা পড়ে গেছে, বড় ঠেকা পড়ে গেছে।”

‘প্রশাসনে কী হচ্ছে’

মির্জা আব্বাস বলেন, “প্রশাসনে বিভিন্ন এলাকায় পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে। বিএনপি কর্মকর্তাদের বাতিল করে সেখানে কমপক্ষে জামায়াতের লোকজনকে দিতে হবে, জামায়াত না হলে আওয়ামী লীগ দিতে হবে। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, থানা-পুলিশ-কোর্ট-কাচারি, সচিবালয়ের ভেতরে এসব কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে গেছে—বিএনপিকে রাখা যাবে না।”

তিনি বলেন, “এই সরকারের অনেক উপদেষ্টা বাংলাদেশের নাগরিকই নন, তারা এই দেশ পরিচালনা করতেছেন। এসব থেকে নজর ফিরিয়ে নিতে সরকার নানা কিছু ইস্যু করছে।”

‘সেন্ট মার্টিন-সাজেক-বাঘাইছড়ি কেন যেতে পারবে না’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা ঔপনিবেশিক শাসনে আছি? আমার মনে হয় যে, আমরা দেশের মানুষের শাসনে নাই। সেন্ট মার্টিন, সাজেক, বাঘাইছড়ি—এসব এলাকা আমাদের যাওয়াটা দুরূহ হয়ে গেছে। আমি কেন ইচ্ছা করলে সেন্ট মার্টিন যেতে পারি না, আমি কেন ইচ্ছা করলে সাজেক যেতে পারব না, আমি কেন ইচ্ছা করলে বাঘাইছড়ি যেতে পারব না, আমি এটা সরকার থেকে জানতে চাই। আমরা কি কোনো পরাধীন রাষ্ট্রে বসবাস করি? সেন্ট মার্টিন, সাজেক, বাঘাইছড়ি যেতে পাসপোর্ট ভিসা লাগবে? আমি এ সরকারের কাছে স্পষ্ট উত্তর জানতে চাই।”

“আমি এটাও বুঝি না, আমার এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) ভাইয়েরা যারা বলতে চান, দ্বিতীয় স্বাধীনতা, তারা এ নিয়ে কথা বলছেন না কেন? যদি প্রশ্ন করেন, আপনি কেন বলছেন। আমি বলছি এ কারণে যে, এ দেশটাকে আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি। এ দেশটা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছেন কারো কাছে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য নয়।”

‘মানবিক করিডোর’ প্রসঙ্গে

মির্জা আব্বাস বলেন, “তিনটা এলাকার নাম বলছি, সেন্ট মার্টিন, সাজেক, বাঘাইছড়ি—এসব এলাকা আমাদের যাওয়াটা দুরুহ হয়ে গেছে। আবার শুনি একটা জায়গায় নাকি করিডোর দেওয়া হবে। কীসের করিডোর? মানবিক করিডোর। আরে ভাই, বিশ্বের কোন ডিকশনারিতে মানবিক করিডোর নামে শব্দ আছে, কোথা থেকে এসব আবষ্কার করেন? আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো করিডোর কিংবা প্যাসেজ দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই জনগণের মতামত ছাড়া। জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নেবে তারা কী করবে?”

মির্জা আব্বাস বলেন, “করিডোর নিয়ে অন্য দলগুলো কথা বলছে না কেন; কী কারণে? জামায়াতে ইসলামী কথা বলে না কেন? বিভিন্ন পীর সাহেব আছেন, ওনারা কথা বলেন না কেন? আবার বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলার সময় সবাই এক হয়ে যান, এটা কেমন কথা হলো? অর্থাৎ বিএনপিকে শেষ করতে পারলেই বাংলাদেশটাকে আবারও লুটেপুটে খাওয়া যাবে আওয়ামী লীগের মত।”

সংগঠনের সভাপতি সাইদ হাসান মিন্টুর সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, যুব দলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা শাহ মো. নেসারুল হক বক্তব্য রাখেন।

back to top