আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘গুম, খুন, পুড়িয়ে হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সব কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার।
সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০৯ সালের ১৮(১) ধারার আওতায় এই নিষেধাজ্ঞার প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এর ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী দলটি আপাতত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি বা প্রচার চালাতে পারবে না। দলটির বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমনে ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। প্রজ্ঞাপন জারির পর নির্বাচন কমিশন এখন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়—
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো বিরোধী দল ও ভিন্নমতের মানুষের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে গুম, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ দেশি-বিদেশি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এইসব অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও দেশের আদালতে বহু মামলা বিচারাধীন।
মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে ও সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখাতে দলটি বিভিন্ন তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে বলে জানানো হয়।
এছাড়া অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার উপর হামলা, রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার ও বিদেশে পলাতক নেতাদের মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যমে অপরাধমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
সরকার মনে করছে, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো জনমনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত এবং রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
যেভাবে নিষিদ্ধ হল আওয়ামী লীগ
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। দলটির নেতা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।
তিন দিন পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকেই শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের হতে থাকে।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই শেখ হাসিনাসহ সহযোগীদের বিচার শুরু হয়।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দল হিসেবে নিষেধাজ্ঞার দাবিতে আন্দোলন জোরদার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সরকারপ্রধানের বাসভবন যমুনার সামনে আন্দোলন শুরু হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামি, এবি পার্টি, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সংহতি জানায়।
শুক্রবার মিন্টো রোডে সমাবেশ করে সন্ধ্যায় শাহবাগ অবরোধ করে তিন দফা দাবি পেশ করা হয়। এক ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় সরকারকে।
রাতেই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়।
পরদিন রোববার গেজেট জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করা হয়।
সংশোধনীতে রাজনৈতিক দল, সহযোগী সংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠী যদি মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকে, তাহলে ট্রাইব্যুনাল তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, নিবন্ধন বাতিল এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা পায়।
২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে ট্রাইব্যুনাল আইনে সংগঠনের বিচার সংযুক্ত হলেও সাজা সংক্রান্ত ধারা ছিল না। এবার সেই ঘাটতি পূরণ করে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করার পথ তৈরি হয়।
একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করলেও আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদের শেষ সময়ে এসে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে।
১ আগস্ট জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সত্তা ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা হয়।
আওয়ামী লীগ পতনের পর ২৮ আগস্ট সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
তবে নয় মাসের মাথায় সেই আইনেই নিষিদ্ধ করা হলো আওয়ামী লীগকে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন গঠিত দলটি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং প্রায় সিকি শতাব্দী শাসনক্ষমতায় ছিল।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর এবং ২০০৭ সালে শেখ হাসিনার গ্রেপ্তারের সময় দলটি সংকটে পড়লেও পরবর্তীতে ক্ষমতায় ফেরে।
তবে এবার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল আওয়ামী লীগ।
সোমবার, ১২ মে ২০২৫
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘গুম, খুন, পুড়িয়ে হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সব কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার।
সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০৯ সালের ১৮(১) ধারার আওতায় এই নিষেধাজ্ঞার প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এর ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী দলটি আপাতত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি বা প্রচার চালাতে পারবে না। দলটির বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমনে ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। প্রজ্ঞাপন জারির পর নির্বাচন কমিশন এখন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়—
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো বিরোধী দল ও ভিন্নমতের মানুষের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে গুম, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ দেশি-বিদেশি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এইসব অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও দেশের আদালতে বহু মামলা বিচারাধীন।
মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে ও সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখাতে দলটি বিভিন্ন তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে বলে জানানো হয়।
এছাড়া অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার উপর হামলা, রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার ও বিদেশে পলাতক নেতাদের মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যমে অপরাধমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
সরকার মনে করছে, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো জনমনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত এবং রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
যেভাবে নিষিদ্ধ হল আওয়ামী লীগ
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। দলটির নেতা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।
তিন দিন পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকেই শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের হতে থাকে।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই শেখ হাসিনাসহ সহযোগীদের বিচার শুরু হয়।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দল হিসেবে নিষেধাজ্ঞার দাবিতে আন্দোলন জোরদার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সরকারপ্রধানের বাসভবন যমুনার সামনে আন্দোলন শুরু হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামি, এবি পার্টি, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সংহতি জানায়।
শুক্রবার মিন্টো রোডে সমাবেশ করে সন্ধ্যায় শাহবাগ অবরোধ করে তিন দফা দাবি পেশ করা হয়। এক ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় সরকারকে।
রাতেই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়।
পরদিন রোববার গেজেট জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করা হয়।
সংশোধনীতে রাজনৈতিক দল, সহযোগী সংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠী যদি মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকে, তাহলে ট্রাইব্যুনাল তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, নিবন্ধন বাতিল এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা পায়।
২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে ট্রাইব্যুনাল আইনে সংগঠনের বিচার সংযুক্ত হলেও সাজা সংক্রান্ত ধারা ছিল না। এবার সেই ঘাটতি পূরণ করে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করার পথ তৈরি হয়।
একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করলেও আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদের শেষ সময়ে এসে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে।
১ আগস্ট জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সত্তা ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা হয়।
আওয়ামী লীগ পতনের পর ২৮ আগস্ট সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
তবে নয় মাসের মাথায় সেই আইনেই নিষিদ্ধ করা হলো আওয়ামী লীগকে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন গঠিত দলটি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং প্রায় সিকি শতাব্দী শাসনক্ষমতায় ছিল।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর এবং ২০০৭ সালে শেখ হাসিনার গ্রেপ্তারের সময় দলটি সংকটে পড়লেও পরবর্তীতে ক্ষমতায় ফেরে।
তবে এবার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল আওয়ামী লীগ।