সংবিধান সংশোধন করে ১৯টি মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার রাখার পথ দেখিয়েছে বিএনপিসহ কয়েকটি দল। অন্যদিকে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব দলের প্রতিনিধিরা নিজেদের ভিন্নমত উপস্থাপন করেন।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। দুই ধাপে গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে সরকারপ্রধানের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে।
এগুলোর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের ১৬২টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে দুই দফা সংলাপ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রায় সাড়ে ছয় মাসের আলোচনায় যেসব বিষয়ে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে, সেগুলো রেখে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা হচ্ছে। সাতটি অঙ্গীকার সংবলিত এই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করবে।
কমিশন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। শনিবারের মধ্যে স্বাক্ষরকারী দুইজন প্রতিনিধির নাম দিতে বলা হয়েছে।
চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্টসহ) কিছু প্রস্তাব বাদে মোট ৮৪টি সংস্কারে ঐকমত্য হয়েছে।
বাস্তবায়নের চার প্রস্তাব
ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নে চারটি পথ প্রস্তাব করেছে।
অধ্যাদেশ
নির্বাহী আদেশ
গণভোট
বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ
এর মধ্যে প্রথম দুটি বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও শেষের দুটি প্রস্তাবে ভিন্নমত দেখা দিয়েছে।
বিএনপির অবস্থান
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশে সংবিধান স্পর্শ না করা সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে।
তিনি বলেন, “আশু বাস্তবায়নযোগ্য যেকোনো সুপারিশ, যেগুলো জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত, সেগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, নির্বাহী বা অফিস আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে। যেগুলো এখনই সম্ভব নয়, তা এই সরকার শুরু করতে পারে, আর পরবর্তী সরকার তা সমাপ্ত করবে।”
বিএনপি মনে করে, সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত ১৯টি মৌলিক বিষয় পরবর্তী জাতীয় সংসদ গঠনের পর দুই বছরের মধ্যে সংশোধনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাসদের অবস্থান
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে জনগণের নির্বাচিত সংসদই সিদ্ধান্ত নেবে। সংবিধান বর্ণিত বিধি অনুযায়ীই সংশোধন হতে হবে।”
বাসদ-মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, বর্তমান সংবিধানের মধ্যেই পথ খোঁজা উচিত, অন্য পথে গেলে এতদিনের অগ্রগতি নষ্ট হবে।
জামায়াতের অবস্থান
জামায়াতে ইসলামী বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ অথবা গণভোটের মাধ্যমে ১৯টি মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে।
প্রতিনিধি আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। ইতোমধ্যেই সংবিধানের অনেক অনুচ্ছেদ অকার্যকর হয়ে গেছে। তাই নতুন সাংবিধানিক আদেশ জরুরি।”
দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ কার্যকর না হলে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির অবস্থান
জুলাই অভ্যুত্থানের নেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধান প্রণয়নকে কার্যকর সমাধান হিসেবে দেখছে।
দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “এটা কোনো জটিল সিদ্ধান্ত নয়, বরং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। দলগুলো সিদ্ধান্ত নিলে দ্রুত গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।”
তবে তিনি কমিশনের প্রক্রিয়ায় ‘ঢিলেঢালা’ মনোভাবের সমালোচনা করেন।
কমিশন ও অংশগ্রহণকারীরা
বৈঠকে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
অংশগ্রহণকারী দলের মধ্যে ছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ২৯টি রাজনৈতিক দল।
পরবর্তী বৈঠক
জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া দলগুলোকে দেওয়া হলেও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে এখনো দূরত্ব রয়ে গেছে। এই দূরত্ব কমিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে আবারও রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবিধান সংশোধন করে ১৯টি মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার রাখার পথ দেখিয়েছে বিএনপিসহ কয়েকটি দল। অন্যদিকে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব দলের প্রতিনিধিরা নিজেদের ভিন্নমত উপস্থাপন করেন।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। দুই ধাপে গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে সরকারপ্রধানের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে।
এগুলোর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের ১৬২টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে দুই দফা সংলাপ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রায় সাড়ে ছয় মাসের আলোচনায় যেসব বিষয়ে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে, সেগুলো রেখে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা হচ্ছে। সাতটি অঙ্গীকার সংবলিত এই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করবে।
কমিশন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। শনিবারের মধ্যে স্বাক্ষরকারী দুইজন প্রতিনিধির নাম দিতে বলা হয়েছে।
চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্টসহ) কিছু প্রস্তাব বাদে মোট ৮৪টি সংস্কারে ঐকমত্য হয়েছে।
বাস্তবায়নের চার প্রস্তাব
ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নে চারটি পথ প্রস্তাব করেছে।
অধ্যাদেশ
নির্বাহী আদেশ
গণভোট
বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ
এর মধ্যে প্রথম দুটি বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও শেষের দুটি প্রস্তাবে ভিন্নমত দেখা দিয়েছে।
বিএনপির অবস্থান
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশে সংবিধান স্পর্শ না করা সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে।
তিনি বলেন, “আশু বাস্তবায়নযোগ্য যেকোনো সুপারিশ, যেগুলো জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত, সেগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, নির্বাহী বা অফিস আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে। যেগুলো এখনই সম্ভব নয়, তা এই সরকার শুরু করতে পারে, আর পরবর্তী সরকার তা সমাপ্ত করবে।”
বিএনপি মনে করে, সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত ১৯টি মৌলিক বিষয় পরবর্তী জাতীয় সংসদ গঠনের পর দুই বছরের মধ্যে সংশোধনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাসদের অবস্থান
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে জনগণের নির্বাচিত সংসদই সিদ্ধান্ত নেবে। সংবিধান বর্ণিত বিধি অনুযায়ীই সংশোধন হতে হবে।”
বাসদ-মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, বর্তমান সংবিধানের মধ্যেই পথ খোঁজা উচিত, অন্য পথে গেলে এতদিনের অগ্রগতি নষ্ট হবে।
জামায়াতের অবস্থান
জামায়াতে ইসলামী বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ অথবা গণভোটের মাধ্যমে ১৯টি মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে।
প্রতিনিধি আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। ইতোমধ্যেই সংবিধানের অনেক অনুচ্ছেদ অকার্যকর হয়ে গেছে। তাই নতুন সাংবিধানিক আদেশ জরুরি।”
দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ কার্যকর না হলে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির অবস্থান
জুলাই অভ্যুত্থানের নেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধান প্রণয়নকে কার্যকর সমাধান হিসেবে দেখছে।
দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “এটা কোনো জটিল সিদ্ধান্ত নয়, বরং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। দলগুলো সিদ্ধান্ত নিলে দ্রুত গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।”
তবে তিনি কমিশনের প্রক্রিয়ায় ‘ঢিলেঢালা’ মনোভাবের সমালোচনা করেন।
কমিশন ও অংশগ্রহণকারীরা
বৈঠকে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
অংশগ্রহণকারী দলের মধ্যে ছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ২৯টি রাজনৈতিক দল।
পরবর্তী বৈঠক
জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া দলগুলোকে দেওয়া হলেও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে এখনো দূরত্ব রয়ে গেছে। এই দূরত্ব কমিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে আবারও রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।