চার পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের চার পদ্ধতি নিয়ে সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোট প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো আবারও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা, এর মাধ্যমে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে। তাদের দাবি, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দলগুলো। তাই অনেকে এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ১০৬ ধারা অনুসরণের কথা বলেছেন।
বুধবার,(১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের মধ্যাহ্ন বিরতি এবং বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। নেতাদের বক্তব্যে মতবিরোধের বিষয়টি উঠে আসে।
বুধবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ২৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা বলছেন- অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট ও বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।’
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের তরফে অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট ও বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ- এই চার পদ্ধতির মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ এসেছে। অন্যদিকে গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, গণপরিষদ গঠন করে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থা, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাস্তবায়নসহ সংবিধান সংস্কার সভার সুপারিশ এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে।
আলোচনার রেখে রাজপথে যাওয়া স্ববিরোধিতা: বিএনপি
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফার প্রথম দিনের বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, কোনো দাবি আলোচনার টেবিলে রেখে রাজপথে যাওয়া স্ববিরোধিতা ছাড়া কিছুই নয়। আমরা মনে করি, পিআর নিয়ে আন্দোলন করা কারও কারও রাজনৈতিক অধিকার হতে পারে। তারা তাদের কথা বলবে, আমরা আমাদের কথা বলবো। তবে এ মুহূর্তে আলোচনার টেবিলেই সংকট সমাধান করা যেতে পারে। কোনো কারণে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে পতিত ফ্যাসিবাদ লাভবান হবে।
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের বিষয়ে সবাই মতামত দিলে আমরাও বিবেচনায় নিতে পারি। তবে যারা নির্বাচিত হবেন, তাদের সনদে স্বাক্ষর করেই জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
সালাহ উদ্দিন বলেন, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের আগে বিচার বিভাগের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। সাংবিধানিক আদেশ আজ বা কাল চ্যালেঞ্জও হতে পারে, কিন্তু এটা খারাপ দৃষ্টান্ত হবে বলে মনে করছি না।
জুলাই সনদের আইনিভিত্তি মানুষের দাবি: জামায়াত
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলাই সনদের আইনিভিত্তি এখন ১৮ কোটি মানুষের দাবি। এই সনদটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে, এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, যদি সরকার জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি করে, তাহলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই আবারও রাস্তায় নেমে আসবে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির উদাহরণ টেনে বলেন, তৎকালীন সময়ে দলগুলোর ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো সেটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেনি। পরে আন্দোলনের মাধ্যমেই তা সংবিধানে যুক্ত হয়।
তিনি বলেন, যদি গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের বিষয়ে জনগণের মতামত চাওয়া হয়, তবে জনগণ দেশের স্বার্থে, নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এ সনদের পক্ষেই রায় দেবে। তিনি বলেন, জনগণ যদি জুলাই সনদের পক্ষে না থাকে, তবে আমরা সেই রায়ও মেনে নেবো।
ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে না পৌঁছলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই। সংবিধান পরিবর্তন, সংস্কার, সংশোধন, নতুন করে লেখা বা সংবিধান বাতিলের চূড়ান্ত ক্ষমতা হলো জনগণের।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, কমিশনের আজকের প্রস্তাবে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদকে রেফারেন্স আকারে উল্লেখ করায় কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও নেতা জুলাই ঘোষণাপত্রের বৈধতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে যারা আজ প্রশ্ন তুলেছেন কাল তারা সংসদে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবেন এবং এ সনদকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না তার নিশ্চয়তা কী?
এ সময় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক বলেন, সংবিধানে এটা নেই, ওটা নেই বলে সংবিধান সংস্কার করা যাবে না। কারণ এ ধারণাটি অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা পরিপন্থী।
১০৬ ধারা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত
চাই না: এনসিপি
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে আমরা ১০৬ ধারা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত চাই না। আমরা গণপরিষদ নির্বাচন চাই। তা এ সরকারের মাধ্যমেই করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনার পর আমাদের মতামত জানাবো।’
সাংবিধানিক বিষয়গুলো সংসদে কার্যকর হতে পারে: এলডিপি
লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এলডিপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেদোয়ান আহমেদ বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে কমিশন বিশেষজ্ঞদের মতামত বিষয়ে কথা বলেছেন। নতুন করে জুলাই ঘোষণার ২২ নম্বর অনুচ্ছেদ সামনে আনা হয়েছে। অথচ এর কোনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই।’
তিনি বলেন, ‘যেসব প্রস্তাব সাংবিধানিক না, তা সরকার আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে। সাংবিধানিক বিষয়গুলো পরবর্তী সংসদে কার্যকর হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে ১০৬ অনুযায়ী আদালতের নির্দেশনার ভিত্তিতে। এটি আমাদের সংবিধানকে পাশ কাটানোর চেষ্টা। এটার পক্ষে আমরা নেই। পরবর্তী নির্বাচন হবে, আমরা সেটাই চাই। নতুন কোনো আদেশের বিষয় চাই না।’
যদি জনগণ এটি না মানে তাহলে কী হবে: গণঅধিকার পরিষদ
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘গণভোট ও সাংবিধানিক আদেশের প্রস্তাব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এটি সরকারের কথা নয়। এ নিয়ে হয়তো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আরও আলোচনা হবে।’ তিন প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যদি জনগণ এটি না মানে তাহলে কী হবে। আওয়ামী লীগের যারা ভোট দেবে তাদের ঠেকানোও কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে আবারও বিভাজনের দিকে উসকে দিয়েছে। সরকার নিজেরা সিদ্ধান্ত না নিয়ে আবারও দলগুলোর দিকে বল ঠেলে দিয়েছে। দায় নিতে চাচ্ছে না।’
রাশেদ খান বলেন, ‘সর্বসম্মতিক্রমে যা বাস্তবায়ন হয়, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। সরকার আবার দলগুলোর মধ্যে বিভাজন উসকে দিচ্ছে। সরকার দায় নিতে চায় না।’
এ বিষয়ে ঐকমত্য হওয়া দরকার: গণসংহতি আন্দোলন
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘এমন কোনো পথ নেয়া উচিত নয়, যাতে বুঝা যায় তা কোনো কর্তৃত্বের মাধ্যমে হচ্ছে। এ বিষয়ে ঐকমত্য হওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী বিশেষজ্ঞদের মতামতে সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের কথা বলা হচ্ছে। বলা হয়েছে জুলাই ঘোষণার ২২-এর ধারা অনুযায়ী এটি করা হবে। অথচ ২৫-এর ধারা অনুযায়ী এটি স্ববিরোধিতা। আবার গণভোটের কথা বলা হচ্ছে। আমরা মনে করি, বিদ্যমান সরকার যেভাবে ১০৬ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী ক্ষমতায় আছেন, সে রকম একটি সিদ্ধান্ত নেয়া যায় কিনা। এরপর একটি অধ্যাদেশ হতে পারে।’
চার পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের চার পদ্ধতি নিয়ে সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোট প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো আবারও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা, এর মাধ্যমে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে। তাদের দাবি, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দলগুলো। তাই অনেকে এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ১০৬ ধারা অনুসরণের কথা বলেছেন।
বুধবার,(১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের মধ্যাহ্ন বিরতি এবং বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। নেতাদের বক্তব্যে মতবিরোধের বিষয়টি উঠে আসে।
বুধবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ২৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা বলছেন- অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট ও বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।’
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের তরফে অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট ও বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ- এই চার পদ্ধতির মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ এসেছে। অন্যদিকে গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, গণপরিষদ গঠন করে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থা, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাস্তবায়নসহ সংবিধান সংস্কার সভার সুপারিশ এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে।
আলোচনার রেখে রাজপথে যাওয়া স্ববিরোধিতা: বিএনপি
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফার প্রথম দিনের বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, কোনো দাবি আলোচনার টেবিলে রেখে রাজপথে যাওয়া স্ববিরোধিতা ছাড়া কিছুই নয়। আমরা মনে করি, পিআর নিয়ে আন্দোলন করা কারও কারও রাজনৈতিক অধিকার হতে পারে। তারা তাদের কথা বলবে, আমরা আমাদের কথা বলবো। তবে এ মুহূর্তে আলোচনার টেবিলেই সংকট সমাধান করা যেতে পারে। কোনো কারণে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে পতিত ফ্যাসিবাদ লাভবান হবে।
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের বিষয়ে সবাই মতামত দিলে আমরাও বিবেচনায় নিতে পারি। তবে যারা নির্বাচিত হবেন, তাদের সনদে স্বাক্ষর করেই জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
সালাহ উদ্দিন বলেন, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের আগে বিচার বিভাগের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। সাংবিধানিক আদেশ আজ বা কাল চ্যালেঞ্জও হতে পারে, কিন্তু এটা খারাপ দৃষ্টান্ত হবে বলে মনে করছি না।
জুলাই সনদের আইনিভিত্তি মানুষের দাবি: জামায়াত
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলাই সনদের আইনিভিত্তি এখন ১৮ কোটি মানুষের দাবি। এই সনদটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে, এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, যদি সরকার জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি করে, তাহলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই আবারও রাস্তায় নেমে আসবে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির উদাহরণ টেনে বলেন, তৎকালীন সময়ে দলগুলোর ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো সেটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেনি। পরে আন্দোলনের মাধ্যমেই তা সংবিধানে যুক্ত হয়।
তিনি বলেন, যদি গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের বিষয়ে জনগণের মতামত চাওয়া হয়, তবে জনগণ দেশের স্বার্থে, নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এ সনদের পক্ষেই রায় দেবে। তিনি বলেন, জনগণ যদি জুলাই সনদের পক্ষে না থাকে, তবে আমরা সেই রায়ও মেনে নেবো।
ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে না পৌঁছলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই। সংবিধান পরিবর্তন, সংস্কার, সংশোধন, নতুন করে লেখা বা সংবিধান বাতিলের চূড়ান্ত ক্ষমতা হলো জনগণের।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, কমিশনের আজকের প্রস্তাবে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদকে রেফারেন্স আকারে উল্লেখ করায় কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও নেতা জুলাই ঘোষণাপত্রের বৈধতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে যারা আজ প্রশ্ন তুলেছেন কাল তারা সংসদে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবেন এবং এ সনদকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না তার নিশ্চয়তা কী?
এ সময় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক বলেন, সংবিধানে এটা নেই, ওটা নেই বলে সংবিধান সংস্কার করা যাবে না। কারণ এ ধারণাটি অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা পরিপন্থী।
১০৬ ধারা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত
চাই না: এনসিপি
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে আমরা ১০৬ ধারা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত চাই না। আমরা গণপরিষদ নির্বাচন চাই। তা এ সরকারের মাধ্যমেই করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনার পর আমাদের মতামত জানাবো।’
সাংবিধানিক বিষয়গুলো সংসদে কার্যকর হতে পারে: এলডিপি
লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এলডিপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেদোয়ান আহমেদ বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে কমিশন বিশেষজ্ঞদের মতামত বিষয়ে কথা বলেছেন। নতুন করে জুলাই ঘোষণার ২২ নম্বর অনুচ্ছেদ সামনে আনা হয়েছে। অথচ এর কোনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই।’
তিনি বলেন, ‘যেসব প্রস্তাব সাংবিধানিক না, তা সরকার আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে। সাংবিধানিক বিষয়গুলো পরবর্তী সংসদে কার্যকর হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে ১০৬ অনুযায়ী আদালতের নির্দেশনার ভিত্তিতে। এটি আমাদের সংবিধানকে পাশ কাটানোর চেষ্টা। এটার পক্ষে আমরা নেই। পরবর্তী নির্বাচন হবে, আমরা সেটাই চাই। নতুন কোনো আদেশের বিষয় চাই না।’
যদি জনগণ এটি না মানে তাহলে কী হবে: গণঅধিকার পরিষদ
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘গণভোট ও সাংবিধানিক আদেশের প্রস্তাব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এটি সরকারের কথা নয়। এ নিয়ে হয়তো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আরও আলোচনা হবে।’ তিন প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যদি জনগণ এটি না মানে তাহলে কী হবে। আওয়ামী লীগের যারা ভোট দেবে তাদের ঠেকানোও কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে আবারও বিভাজনের দিকে উসকে দিয়েছে। সরকার নিজেরা সিদ্ধান্ত না নিয়ে আবারও দলগুলোর দিকে বল ঠেলে দিয়েছে। দায় নিতে চাচ্ছে না।’
রাশেদ খান বলেন, ‘সর্বসম্মতিক্রমে যা বাস্তবায়ন হয়, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। সরকার আবার দলগুলোর মধ্যে বিভাজন উসকে দিচ্ছে। সরকার দায় নিতে চায় না।’
এ বিষয়ে ঐকমত্য হওয়া দরকার: গণসংহতি আন্দোলন
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘এমন কোনো পথ নেয়া উচিত নয়, যাতে বুঝা যায় তা কোনো কর্তৃত্বের মাধ্যমে হচ্ছে। এ বিষয়ে ঐকমত্য হওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী বিশেষজ্ঞদের মতামতে সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের কথা বলা হচ্ছে। বলা হয়েছে জুলাই ঘোষণার ২২-এর ধারা অনুযায়ী এটি করা হবে। অথচ ২৫-এর ধারা অনুযায়ী এটি স্ববিরোধিতা। আবার গণভোটের কথা বলা হচ্ছে। আমরা মনে করি, বিদ্যমান সরকার যেভাবে ১০৬ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী ক্ষমতায় আছেন, সে রকম একটি সিদ্ধান্ত নেয়া যায় কিনা। এরপর একটি অধ্যাদেশ হতে পারে।’