alt

পিআর পদ্ধতিতে গণভোটের দাবি জামায়াতে ইসলামী

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে গণভোট আয়োজনের দাবি তুলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির নেতারা বলেন, জনগণ পিআরের পক্ষে থাকলে সবাইকে তা মানতে হবে। আর বিপক্ষে গেলে জামায়াতে ইসলামীও তা মেনে নেবে।

জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে ডাকা যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ হয়।

সেখানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “দেশের রাজনীতি একটি স্বচ্ছ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিতে দেশবাসীর যে আকাঙ্ক্ষা, জামায়াতে ইসলামী সেই প্রচেষ্টায় প্রাধান্য দিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি মহল রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, অথবা দুঃখজনকভাবে সরকার কোন শক্তির কাছে, প্রভাবের কাছে মাথা নত করেছে। যার ফলে লেভেল প্লেইং ফিল্ড রক্ষা করতে পারছেন না।”

তিনি বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে, তার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হতে হবে। এখন একটি দল বাধা সৃষ্টি করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বলছে, এই সাংবিধানিক সংস্কার, এতসব সংস্কার, নির্বাচনের আগে আইনি ভিত্তি দিয়ে সংস্কার করার কী প্রয়োজন! পরের সরকার আসবে, সেই নির্বাচিত সরকার সংবিধান সংস্কার করবে। এটা হচ্ছে গণ আকাঙ্ক্ষার সাথে বিরোধিতা। এই ইলেকশনের আগেই আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এই সংস্কারের বিষয়গুলোকে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করে এটাকে কনস্টিটিউশন অর্ডার বা সাংবিধানিক আদেশ দিয়ে এবং গণভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই আইনে ভিত্তি দিতে হবে।”

বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এটা না হলে দেশ একটি মহাদুর্যোগের দিকে পড়ে যেতে পারে। আজ যারা বলছেন, নির্বাচিত পরের সরকার এসে সেটা সংস্কার করবে, তার অর্থ হলো, ওই দলেরই স্থায়ী কমিটির বড় নেতারা বক্তৃতায় বলছেন, এখন আপনারা যত আইন সংস্কার করেন, যত কিছু বানান না কেন, আমরা ক্ষমতায় গিয়ে তা মুছে দেব। এখনই তাই যদি বলতে পারে, তো আগামীতে কারা ক্ষমতায় যাবে, আমরা জানি না, কিন্তু তাদের ইচ্ছার মধ্যে দুরভিসন্ধি আছে। তাই এখন যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন একটি নির্দলীয় সরকার, এটাই হচ্ছে জুলাই সনদের একটা জাতীয় ভিত্তি, সাংবিধানিক ভিত্তি, আইনি ভিত্তি দেওয়ার উপযুক্ত সময়। সেজন্য কোনো তালবাহানা না করে আমরা ঐকমত্য কমিশনকে এবং সরকারকে, যেহেতু সরকার প্রধান হচ্ছে ঐকমত্য কমিশনের প্রধান, আপনি সকলকে ডাকুন, কোন সংকট তৈরি না করে আপনি কনস্টিটিউশন অর্ডারের মধ্য দিয়ে একটা রেফারেন্ডমের মধ্য দিয়ে আইনি ভিত্তি দিন।”

তিনি আরও বলেন, “কেউ কেউ বলছেন, না এটা করা যাবে না। এই সংস্কার যদি এখন না হয়, যদি ইলেকশনের আগে না হয়, বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোতে যদি আবার নির্বাচন হয়, তাহলে এই কাঠামোতে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। এই বিদ্যমান কাঠামো নির্বাচন হলে আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে। বাংলার মানুষ আর ফ্যাসিবাদ জন্ম হতে দেবে না। সেই জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আপনারা করতে পারছেন না।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “জুলাই সনদের আইনে ভিত্তি দিন, কনস্টিটিউশন অর্ডার জারি করুন, গণভোট দিন। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার সফলতার মুখ দেখছি না, মনে হয় কোনো চাপের মধ্যে পড়ে সরকার একটি শুভঙ্করের ফাঁকির দিকে যাচ্ছে। তাই আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি আমরা আজকে যেমন রাজধানীতে করছি, আগামীকাল সব বিভাগীয় সদরে হবে। ২৬ তারিখে জেলা উপজেলায় হবে।”

পারওয়ার বলেন, “এখন যদি দুই মাস, তিন মাস সংস্কার করার পর একটি দল বলে, এটা পরে হবে। তাহলে এতদিন আমাদের কেন পরিশ্রম করালেন? সেজন্যই আমরা বলছি, আমাদের আন্দোলন এটা রাজনীতির অংশ; পার্ট অব পলিটিক্স। আমাদের আন্দোলন তুলে ধরার জন্য আমরা আলোচনার টেবিলে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য আশাবাদী, আমরা নিরাশ নই।”

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না দিলে আরেকটি ফ্যাসিবাদি সরকার হবে মন্তব্য করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “পিআর মানতে হবে। জরিপ বলছে, ৭০ শতাংশ লোক পিআরের পক্ষে। কমিশনে ৩১টি দলের ২৫টি দল পিআরের পক্ষে। আপনারা বলছেন পিআর খায় না মাথায় দেয়, আপনারা বলছেন যে, দেশের লোকেরা ইভিএম বোঝে না, তারা পিআরও বোঝেনা। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোকেরা বলতে পারে না, আমরা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি গণভোট দিন, জনগণ পিআরের পক্ষে আছে কি বিপক্ষে আছে দেখবেন। জনগণ যদি পিআর মানে, তো আপনাদেরকেও মানতে হবে। আর জনগণ যদি বিপক্ষে যায়, আমরা জামায়াতে ইসলামী তা মেনে নেব। কিন্তু কেন আপনারা গণভোটকে ভয় পাচ্ছেন? ভয় পাচ্ছেন কেন? পিআরের মধ্য দিয়ে যদি সকল অংশীদারত্বের ভিত্তিতে পেশীশক্তি কালোটাকামুক্ত কোয়ালিটি পার্লামেন্ট হয়ে একটি সুন্দর সরকার গঠন হয়, তাহলে মেজরিটি নিয়ে আরেকটি সরকার ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে পারবে না।”

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “জাতি আশা করেছিল, অর্থবহ সংস্কার হবে। জামাত ইসলামী দাবি করেছিল, সরকার তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে। সংস্কার করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু আজ নির্বাচনের জন্য যে মৌলিক সংস্কারের যে কথা রাষ্ট্র বলেছিল, তা বাস্তবায়নের কোনো প্রতিশ্রুতি বা কার্যকর পদক্ষেপ নেয় নাই।”

তিনি বলেন, “সংস্কারের কোনো মূল্য নাই, যদি আইনি ভিত্তি দেওয়া না হয়। এজন্য নির্বাচনের আগে এই জাতীয় সনদ সংস্কারের আইনি ভিত্তি দিয়ে করতে হবে। তা যদি না হয়, আপনারা যদি কার্যকর ব্যবস্থা না করেন, রাজপথে জনগণ নেমেছে, দাবি আদায় না করে রাজপথ থেকে ঘরে ফিরবে না।”

সরকার বিএনপির পকেটে যাওয়ার চেষ্টা করছে দাবি করে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “এই সরকার কোনো দলীয় সরকার নয়, এই সরকারকে কোনো দল বসায়নি। সুতরাং এই সরকার আমরা লক্ষ্য করছি, এই সরকার একটি দলের পকেটে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা স্পষ্ট হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, যে বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদমুক্ত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে, সেই বাংলাদেশে সরকারের ভিতরে-বাইরে যারা এই ষড়যন্ত্র করবে, বাংলাদেশের জনগণ একইভাবে প্রতিরোধ করবে। সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল, জনগণের প্রত্যাশা ছিল সংস্কার করতে হবে। বিশেষ একটি দল, যারা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, জনগণ তাদেরকে চিহ্নিত করবে। আর আইনি ভিত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভেতরে থেকে যারা ড. ইউনুসকে কুপরামর্শ দিচ্ছেন, জনগণ অতীতের মত আগামী দিনে চিহ্নিত করবে।”

‘আওয়ামী স্টাইলের’ নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। একটি শ্রেণি ‘আওয়ামী স্টাইলের’ নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছে। সরকার যদি এক্ষেত্রে দুর্বলতার পরিচয় দেয়, আমরা সরকারকেও বলব, তাদেরকেও বলব, বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী স্টাইলের কোনো নির্বাচন জনগণ আর হতে দেবে না। ভোট ডাকাতির নির্বাচন, ষড়যন্ত্রের নির্বাচন, বাংলাদেশের মানুষ আর করতে দেবে না। আমরা সরকারকে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয় নাই। নির্বাচনের জন্য যেমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া দরকার, তা এখনো হয় নাই। আমরা কোনো ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে দেব না।”

মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল ও সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সমাবেশে দলটির কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতারা বক্তব্য দেন।

সমাবেশ শেষে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়। মিছিলটি বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট থেকে শুরু হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশ চলাকালে দলের নেতাকর্মীদের ‘এই মুহূর্তে দরকার, পিআর আর সংস্কার’, ‘পিআর পদ্ধতির নির্বাচন, দিতে হবে দিয়ে দাও’, ‘জামায়াত-শিবির জনতা, গড়ে তোলো একতা’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।

ইসলামী কয়েকটি দলের যুগপৎ কর্মসূচি ‘গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়’: মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দিল্লির ভাবনা: কেউ বলছে ‘অপেক্ষা করো এবং দেখো’, অনেকের দ্বিমত

রাজধানীতে নিষিদ্ধ আ’লীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেপ্তার ১৮

ছবি

পিআর, সংস্কার দাবিতে ইসলামী দলগুলোর বিক্ষোভ

ছবি

বিএনপি মহাসচিবের মন্তব্য: যুগপৎ আন্দোলন ‘গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়’

ছবি

নরসিংদী বিএনপিতে সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত ১, আহত ৫

ছবি

প্রবাসী ভোটারদের জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ আসছে, ১৫তম সংসদ নির্বাচনে ডাকযোগে ভোটের ব্যবস্থা

ছবি

১৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসম্মেলনের ডাক তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াতের

ছবি

রাজনৈতিক সরকার না আসা পর্যন্ত অস্থিতিশীলতা কাটবে না: আমীর খসরু

ছবি

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে ক্ষুব্ধ ফয়জুল করীম

ছবি

প্রত্যাশা অনুযায়ী গণমাধ্যম সংস্কার হয়নি, বললেন নাহিদ

ছবি

ঢাকায় আজ জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ মিছিল

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোট প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত রাজনৈতিক দলগুলো

ছবি

রাজশাহীতে এনসিপি নেত্রীর আকস্মিক পদত্যাগ

ছবি

জামায়াতসহ কয়েক দলের যুগপৎ আন্দোলনের জবাব রাজপথেই দেবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন

ছবি

খালেদা জিয়ার ভাগ্নে শাহরিনকে আহ্বায়ক করে এইবির নতুন কমিটি

ছবি

নাশকতার দুই মামলা থেকে ফখরুল ও আব্বাসসহ ১০৬ জনকে অব্যাহতি

ছবি

এখন কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে: মির্জা ফখরুল

ছবি

অভিন্ন দাবিতে তিন ইসলামী দলের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি

যুগপতে পাঁচ দাবিতে জামায়াতের তিন দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫ সনাতন যোগ দিলেন জামায়াতে

ছবি

তারেকের নিরাপত্তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বাবরের আলোচনা

ছবি

যুগপতে কারা থাকছে ঠিক হয়নি, তবে খেলাফতের কর্মসূচি ঘোষণা

জামায়াতের আযাদ: মুক্তিযুদ্ধ না মানলে ‘বাংলাদেশ অস্বীকার করা হবে’

ছবি

জুলাই সনদের গেরো: এবার আদালতের মত নিতে বলল বিএনপি

ছবি

‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরে রাজি বিএনপি, তবে আইনি ভিত্তি নিয়ে মতভেদ

ছবি

ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে ‘মাস্টার প্ল্যান’ প্রশ্ন তুললেন রিজভী

ছবি

মৌলবাদীরা ‘বেহেশতের টিকেট’ বিক্রি করছে: বিএনপির গয়েশ্বর

ছবি

সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবিতে খেলাফত মজলিসের তিন দিনের কর্মসূচি

ছবি

সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এবার তুহিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

ছবি

রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে বাস্তুতন্ত্রও নিরাপদ থাকবে: তারেক রহমান

ছবি

সরকার ও উপদেষ্টারা মাহফুজদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে: নাহিদ ইসলাম

ছবি

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে পশু-পাখি ও বাস্তুতন্ত্রের অধিকার নিশ্চিত হবে: তারেক রহমান

ছবি

বসুন্ধরায় গোপন বৈঠক: ময়মনসিংহ জেলা আ.লীগ নেতার দোষ স্বীকার

ছবি

ঢাকার আগারগাঁওয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল

tab

পিআর পদ্ধতিতে গণভোটের দাবি জামায়াতে ইসলামী

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে গণভোট আয়োজনের দাবি তুলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির নেতারা বলেন, জনগণ পিআরের পক্ষে থাকলে সবাইকে তা মানতে হবে। আর বিপক্ষে গেলে জামায়াতে ইসলামীও তা মেনে নেবে।

জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে ডাকা যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ হয়।

সেখানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “দেশের রাজনীতি একটি স্বচ্ছ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিতে দেশবাসীর যে আকাঙ্ক্ষা, জামায়াতে ইসলামী সেই প্রচেষ্টায় প্রাধান্য দিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি মহল রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, অথবা দুঃখজনকভাবে সরকার কোন শক্তির কাছে, প্রভাবের কাছে মাথা নত করেছে। যার ফলে লেভেল প্লেইং ফিল্ড রক্ষা করতে পারছেন না।”

তিনি বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে, তার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হতে হবে। এখন একটি দল বাধা সৃষ্টি করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বলছে, এই সাংবিধানিক সংস্কার, এতসব সংস্কার, নির্বাচনের আগে আইনি ভিত্তি দিয়ে সংস্কার করার কী প্রয়োজন! পরের সরকার আসবে, সেই নির্বাচিত সরকার সংবিধান সংস্কার করবে। এটা হচ্ছে গণ আকাঙ্ক্ষার সাথে বিরোধিতা। এই ইলেকশনের আগেই আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এই সংস্কারের বিষয়গুলোকে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করে এটাকে কনস্টিটিউশন অর্ডার বা সাংবিধানিক আদেশ দিয়ে এবং গণভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই আইনে ভিত্তি দিতে হবে।”

বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এটা না হলে দেশ একটি মহাদুর্যোগের দিকে পড়ে যেতে পারে। আজ যারা বলছেন, নির্বাচিত পরের সরকার এসে সেটা সংস্কার করবে, তার অর্থ হলো, ওই দলেরই স্থায়ী কমিটির বড় নেতারা বক্তৃতায় বলছেন, এখন আপনারা যত আইন সংস্কার করেন, যত কিছু বানান না কেন, আমরা ক্ষমতায় গিয়ে তা মুছে দেব। এখনই তাই যদি বলতে পারে, তো আগামীতে কারা ক্ষমতায় যাবে, আমরা জানি না, কিন্তু তাদের ইচ্ছার মধ্যে দুরভিসন্ধি আছে। তাই এখন যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন একটি নির্দলীয় সরকার, এটাই হচ্ছে জুলাই সনদের একটা জাতীয় ভিত্তি, সাংবিধানিক ভিত্তি, আইনি ভিত্তি দেওয়ার উপযুক্ত সময়। সেজন্য কোনো তালবাহানা না করে আমরা ঐকমত্য কমিশনকে এবং সরকারকে, যেহেতু সরকার প্রধান হচ্ছে ঐকমত্য কমিশনের প্রধান, আপনি সকলকে ডাকুন, কোন সংকট তৈরি না করে আপনি কনস্টিটিউশন অর্ডারের মধ্য দিয়ে একটা রেফারেন্ডমের মধ্য দিয়ে আইনি ভিত্তি দিন।”

তিনি আরও বলেন, “কেউ কেউ বলছেন, না এটা করা যাবে না। এই সংস্কার যদি এখন না হয়, যদি ইলেকশনের আগে না হয়, বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোতে যদি আবার নির্বাচন হয়, তাহলে এই কাঠামোতে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। এই বিদ্যমান কাঠামো নির্বাচন হলে আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে। বাংলার মানুষ আর ফ্যাসিবাদ জন্ম হতে দেবে না। সেই জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আপনারা করতে পারছেন না।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “জুলাই সনদের আইনে ভিত্তি দিন, কনস্টিটিউশন অর্ডার জারি করুন, গণভোট দিন। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার সফলতার মুখ দেখছি না, মনে হয় কোনো চাপের মধ্যে পড়ে সরকার একটি শুভঙ্করের ফাঁকির দিকে যাচ্ছে। তাই আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি আমরা আজকে যেমন রাজধানীতে করছি, আগামীকাল সব বিভাগীয় সদরে হবে। ২৬ তারিখে জেলা উপজেলায় হবে।”

পারওয়ার বলেন, “এখন যদি দুই মাস, তিন মাস সংস্কার করার পর একটি দল বলে, এটা পরে হবে। তাহলে এতদিন আমাদের কেন পরিশ্রম করালেন? সেজন্যই আমরা বলছি, আমাদের আন্দোলন এটা রাজনীতির অংশ; পার্ট অব পলিটিক্স। আমাদের আন্দোলন তুলে ধরার জন্য আমরা আলোচনার টেবিলে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য আশাবাদী, আমরা নিরাশ নই।”

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না দিলে আরেকটি ফ্যাসিবাদি সরকার হবে মন্তব্য করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “পিআর মানতে হবে। জরিপ বলছে, ৭০ শতাংশ লোক পিআরের পক্ষে। কমিশনে ৩১টি দলের ২৫টি দল পিআরের পক্ষে। আপনারা বলছেন পিআর খায় না মাথায় দেয়, আপনারা বলছেন যে, দেশের লোকেরা ইভিএম বোঝে না, তারা পিআরও বোঝেনা। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোকেরা বলতে পারে না, আমরা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি গণভোট দিন, জনগণ পিআরের পক্ষে আছে কি বিপক্ষে আছে দেখবেন। জনগণ যদি পিআর মানে, তো আপনাদেরকেও মানতে হবে। আর জনগণ যদি বিপক্ষে যায়, আমরা জামায়াতে ইসলামী তা মেনে নেব। কিন্তু কেন আপনারা গণভোটকে ভয় পাচ্ছেন? ভয় পাচ্ছেন কেন? পিআরের মধ্য দিয়ে যদি সকল অংশীদারত্বের ভিত্তিতে পেশীশক্তি কালোটাকামুক্ত কোয়ালিটি পার্লামেন্ট হয়ে একটি সুন্দর সরকার গঠন হয়, তাহলে মেজরিটি নিয়ে আরেকটি সরকার ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে পারবে না।”

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “জাতি আশা করেছিল, অর্থবহ সংস্কার হবে। জামাত ইসলামী দাবি করেছিল, সরকার তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে। সংস্কার করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু আজ নির্বাচনের জন্য যে মৌলিক সংস্কারের যে কথা রাষ্ট্র বলেছিল, তা বাস্তবায়নের কোনো প্রতিশ্রুতি বা কার্যকর পদক্ষেপ নেয় নাই।”

তিনি বলেন, “সংস্কারের কোনো মূল্য নাই, যদি আইনি ভিত্তি দেওয়া না হয়। এজন্য নির্বাচনের আগে এই জাতীয় সনদ সংস্কারের আইনি ভিত্তি দিয়ে করতে হবে। তা যদি না হয়, আপনারা যদি কার্যকর ব্যবস্থা না করেন, রাজপথে জনগণ নেমেছে, দাবি আদায় না করে রাজপথ থেকে ঘরে ফিরবে না।”

সরকার বিএনপির পকেটে যাওয়ার চেষ্টা করছে দাবি করে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “এই সরকার কোনো দলীয় সরকার নয়, এই সরকারকে কোনো দল বসায়নি। সুতরাং এই সরকার আমরা লক্ষ্য করছি, এই সরকার একটি দলের পকেটে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা স্পষ্ট হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, যে বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদমুক্ত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে, সেই বাংলাদেশে সরকারের ভিতরে-বাইরে যারা এই ষড়যন্ত্র করবে, বাংলাদেশের জনগণ একইভাবে প্রতিরোধ করবে। সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল, জনগণের প্রত্যাশা ছিল সংস্কার করতে হবে। বিশেষ একটি দল, যারা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, জনগণ তাদেরকে চিহ্নিত করবে। আর আইনি ভিত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভেতরে থেকে যারা ড. ইউনুসকে কুপরামর্শ দিচ্ছেন, জনগণ অতীতের মত আগামী দিনে চিহ্নিত করবে।”

‘আওয়ামী স্টাইলের’ নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। একটি শ্রেণি ‘আওয়ামী স্টাইলের’ নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছে। সরকার যদি এক্ষেত্রে দুর্বলতার পরিচয় দেয়, আমরা সরকারকেও বলব, তাদেরকেও বলব, বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী স্টাইলের কোনো নির্বাচন জনগণ আর হতে দেবে না। ভোট ডাকাতির নির্বাচন, ষড়যন্ত্রের নির্বাচন, বাংলাদেশের মানুষ আর করতে দেবে না। আমরা সরকারকে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয় নাই। নির্বাচনের জন্য যেমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া দরকার, তা এখনো হয় নাই। আমরা কোনো ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে দেব না।”

মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল ও সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সমাবেশে দলটির কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতারা বক্তব্য দেন।

সমাবেশ শেষে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়। মিছিলটি বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট থেকে শুরু হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশ চলাকালে দলের নেতাকর্মীদের ‘এই মুহূর্তে দরকার, পিআর আর সংস্কার’, ‘পিআর পদ্ধতির নির্বাচন, দিতে হবে দিয়ে দাও’, ‘জামায়াত-শিবির জনতা, গড়ে তোলো একতা’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।

back to top