alt

রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতেই ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন: সিইসি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নির্বাচন কমিশন আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে জানিয়ে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন।

একজন সম্পাদকের লেখা থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, “সব খেলোয়াড় যদি ফাউল করার জন্য মাঠে নামে, ম্যাচ পণ্ড হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সবাই ফাউল করার জন্য মাঠে নামলে তো মুশকিল। কেউ যেন ফাউল না করে, সে বিষয়ে আমরা তৎপর। নির্বাচনে কেউ ফাউল করতে নামবে না, ভালো নিয়তে নামবেন আশা করি।”

সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান বিতর্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেন সিইসি।

তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যমান সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী ভোট করার অপেক্ষায় রয়েছে কমিশন। ভোটের দিনের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে।

১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ সালের ভোটের আগেও ‘গোলমাল’ হয়েছিল মন্তব্য করে সিইসি বলেছেন, নির্বাচনের সময় এলে সব ঠিক হয়ে যাবে বলেই তিনি আশা করছেন।

এদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কানাডার অভিজ্ঞতা, ‘শাপলা’ নিয়ে কাড়াকাড়ি, জাতীয় পার্টিকে সংলাপের আমন্ত্রণ, পিআর পদ্ধতি, পোস্টাল ভোট, নতুন দল নিবন্ধন, নির্বাচনি পরিবেশ ও ইসির ভোট প্রস্তুতিসহ সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন নাসির উদ্দিন।

তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্যেই চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। এজন্য যা যা করা দরকার জোরেশোরে নিচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টাও নিউ ইয়র্কে যার সাথে দেখা হচ্ছে বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। আমরা এ ঐতিহাসিক নির্বাচনের জন্য কাজ করছি।”

এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা চেয়ে সিইসি বলেন, “আমরা কারো কথায় চলছি না। আইন কানুন সংবিধান অনুযায়ী, সরল সোজা পথে চলতে চাই। বাঁকা পথে বা কারো ফেভারের জন্য কাজ করছি না। রাজনৈতিক দল আমাদের মূল স্টেকহোল্ডার। উনাদের সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর নির্বাচন সম্ভব নয়।”

আগামী নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির জন্য ইসির পক্ষ থেকে ‘সর্বশক্তি প্রয়োগ করার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রত্যাশার কথাও তিনি বলেন।

“আমাকে কেউ বলেনি যে ইলেকশনে ফাউল করার জন্য নামবেন। আশা করি, সবাই সহযোগিতা করবেন। সরকার দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ঐকমত্য কমিশন তো সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিভিন্ন দলের চার পাঁচজন নিউ ইয়র্কেও গেছেন, সেখানেও আলোচনা হবে আশা করি। রাজনীতিবিদদের উপর আমার আস্থা রয়েছে।”

অতীতের কথা মনে করিয়ে দিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, “১৯৯১ সালে অনেক গোলমাল হয়েছে। পরে সব ঠান্ডা হয়ে গেছে। ৯৬ এর ইলেকশনের আগেও গোলমাল হয়ে সব ঠান্ডা। ২০০৮ সালেও এরকম গোলমাল হয়েছে। সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। নানান মত থাকবে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে সবাই এক জায়গায় আসবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী থাকবে। ইসিও সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করবে।

“কোনো রাজনীতিবিদ ফাউল খেলার জন্য নির্বাচনের মাঠে নামবে বলেননি। উনারা চাচ্ছেন সুন্দরভাবে খেলবেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাচ্ছেন। আমরা লেভেলে প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করব। এক লাখ আর্মি সদস্য নামবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আমি খুব কনফিডেন্ট; কোনো ভয় পাওয়ার কারণ নেই।”

‘পিআর নয়, ভোট আরপিও অনুযায়ী’

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির ভোটের দাবিতে কয়েকটি দল সোচ্চার হলেও ইসি নির্বাচনি আইন ও সংবিধানের বাইরে যাবে না বলে সিইসির ভাষ্য।

তিনি বলেন, “ভোট আমাদের আরপিও অনুযায়ী হবে। পিআর তো আরপিওতে নাই। আরপিও বদলে অন্য একটা দিলে হয় তখন। আইন না বদলালে তো হয় না। আমাকের আরপিও মেনে চলতে হয়।”

সিইসি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইলে আইন বদলাতে হবে।

“পিআর নিয়ে কথা বললে আবার আমার বিরুদ্ধে কথা হবে, যদিও এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।”

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি ফেব্রুয়ারির জন্য অপেক্ষা করছি। নির্বাচন আয়োজনের জন্য অপেক্ষা করছি। সংবিধান-আরপিওতে যা আছে সে অনুযায়ী হবে। ভোটের দিনের দুই মাস আগে তফসিল হবে। রোজার আগে নির্বাচন হবে।”

নতুন দল নিবন্ধনে বিলম্ব কেন?

সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন শেষ করার কথা ছিল। ২২টি দলের মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি সরেজমিন তদন্ত শেষে নিবন্ধনযোগ্যদের বিষয়ে আপত্তি আছে কিনা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু কিছু দলের বিষয়ে আরও যাচাইয়ের কাজে সময় লাগছে বলে জানান সিইসি।

তিনি বলেন, “কাজ দ্রুত চলছে। টার্গেট ছিল এ মাসে করে ফেলতে পারব। বিভিন্ন দল নানা অভিযোগ নিয়ে আসছে। আমাদের কিছু অতিরিক্ত ইনফরমেশন কালেক্ট করতে হচ্ছে। নিশ্চিত হতে হচ্ছে, তারা সঠিকভাবে তথ্য দিয়েছে (কি না)। এজন্য সময় লাগছে।”

কোন কোন দল নিবন্ধন পাচ্ছে তা নিয়ে এখন কথা বলতে নারাজ সিইসি নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, নিবন্ধনের জন্য ইসি ‘নিজস্ব পদ্ধতিতে’ কাজ করছে, গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে না।

শাপলা বিতর্ক

নিবন্ধনপ্রত্যাশী জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আগে নিবন্ধিত দল নাগরিক ঐক্য শাপলা প্রতীক চাইলেও তা নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখন এনসিপির দাবি নাকচ হওয়ায় কেন এতে আলোচনা হচ্ছে, তা বোধগম্য হচ্ছে না সিইসির।

তিনি বলেন, “এনসিপি শাপলা চেয়েছে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অথচ শপলা চেয়েছিল নাগরিক ঐক্য, তারা প্রথম চেয়েছিল। তখন আলোচনায় আনেনি। এখন কেন এত আলোচনা? নাগরিক ঐক্যকে শাপলা দেইনি আমরা। সচিব এ বিষয়ে বলেছেন, আর বলতে চাই না।”

নির্বাচনি প্রতীকের চূড়ান্ত তালিকা বুধবার জারি হয়েছে। ইসি সচিব এনসিপিকে বিকল্প প্রতীক চেয়ে আবেদন করার পরামর্শ দিলেও এনসিপি ফের শাপলা চেয়ে আবেদন করেছে।

এ বিষয়ে সিইসি বলেন, “চিঠি নিয়ে কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নেব। গতকাল এল, একা সিদ্ধান্ত নেব না। আমাদের কমিশনের সভায় আলোচনার পর পরবর্তী কাযক্রম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেব। কমিশন সভার আলোচনার পর কথা হবে।”

এনসিপির চিঠির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “যে কোনো দল চিঠি দিতে পারে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া দল এনসিপি। চিঠি দেওয়ায় অসুবিধা নেই। দল তো দেবেই। রাজনীতিবিদরা দেশের স্বার্থে সব কিছু একমোডেট করেন। চিঠি বিবেচনা করব, কী করা যায় দেখা যাক।”

শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দিলে তা কীভাবে আদায় করতে হয়–জানা আছে বলে হুমকি দিয়েছেন এনসিপির নেতারা।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিইসি বলেন, “রাজনীতিবিদরা অনেক কথা বলতে পারেন। আমরা তো জবাব দিতে পারব না, শ্রোতা। আমাদের কাজ আইন মোতাবেক করব। এটা হুমকি মনে করি না। উনারা তো দেশদ্রোহী না, উনারা দেশপ্রেমিক। দেশের জন্য, আমাদের জন্য হুমকি মনে করি না।”

জাপা নিয়ে ‘কনফিউজড’ সিইসি

বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যের কারণে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে কয়েকটি দল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাতেও জাতীয় পার্টিকে রাখা হয়নি।

এ অবস্থায় ইসির সংলাপে জাপাকে ডাকা হবে কিনা জানতে চাইলে সিইসি বলেন, “সময় আসুক, দেখব। এখনও তো সংলাপ শুরু করিনি। ঐকমত্য কমিশন এখনও সংলাপ করছে। আমরা একটু পরে করব। সিভিল সোসাইটিসহ অন্যদের সাথে আলোচনা করে শেষের দিকে দলের সঙ্গে বসব। এখন (জাপা নিয়ে) রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে, দেখি কি অবস্থা হয়।”

জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ইসিতে নিবন্ধিত। ইতোমধ্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের একাংশ নিজেদের ‘মূল জাপা’ দাবি করে ইসিতে চিঠি দিয়েছে। এই ভাঙনের মধ্যে কোনটি আসল জাপা, তা নিয়ে নিশ্চিত নন সিইসি।

তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি ৫টি পেয়েছি, আপনারা কয়টি পেয়েছেন? লাঙ্গলের দাবিদার তো একাধিক। জাপা বললে আমি কনফিউজড, হাফ ডজন আছে। এজন্য কনফিউজড। সময় এলে দেখবেন, ভাবতে দেন।”

‘প্রবাসীদের আস্থা বাড়াতে হবে’

সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধে কানাডা সফরে গিয়ে এনআইডি সেবা চালু এবং পোস্টাল ভোটিং নিয়ে মত বিনিময় সভা করেছিলেন সিইসি। সেই অভিজ্ঞতা তিনি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন।

নাসির উদ্দিন বলেন, “প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকের সাথে কথা হল, তারা বলছে ‘ইসির উপর কনফিডেন্স রেস্টোর করেন’। আমাদের উপর অনাস্থার ভাব রয়েছে। আমাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি। (ভোট) সুষ্ঠু, সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক করতে ইসির উদ্যোগ, আইন সংস্কার বিষয়ে জানিয়েছি। প্রবাসী বাংলাদেশিরা খুবই সন্তুষ্ট।”

প্রবাসীদের ভোটে আনতে পোস্টাল ব্যালটের উদ্যোগ নিয়ে আশাবাদের কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, “প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটিং… ছোট শিশু হাঁটা শুরু করেছে, এটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আপনারা শরিক হোন, অংশগ্রহণ করুন; এতে আমাদের চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে।”

নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মামলা’ আখতারের

পিআরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হবে: সালাহউদ্দিন

জামায়াতে ইসলামী এখন ‘পতিত ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে’ কাজ করছে: রিজভী

ছবি

সরকার প্রধান নিজেই বৈষম্য সৃষ্টি করে নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন : ফরিদপুরে চরমোনাই পীর

ছবি

আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপে অর্থায়নের অভিযোগে মোজাম্মেলসহ দুই জনের রিমান্ড

ছবি

আনারস প্রতীকে নিবন্ধন পেল বাংলাদেশ লেবার পার্টি

ছবি

কুষ্টিয়ায় সাতজনকে হত্যা: ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল

ছবি

রিজভীর অভিযোগ: জামায়াত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চাইছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে টেলিফোন সংলাপের প্রসঙ্গ

ছবি

নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করলেন এনসিপি নেতা

ছবি

নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করলেন এনসিপি নেতা

ছবি

দেশে ফিরবেন তারেক রহমান, শেষ লগ্নের নেতৃত্ব দেবেন: বিএনপি

ছবি

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করলেন আখতার হোসেন

ছবি

রাজধানীর নিকেতন থেকে সাবেক এমপি কবিরুল হক গ্রেপ্তার

ছবি

ডিম ছোড়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু: এগুলোতে কিছু আসে যায় না

ছবি

জরিপ: মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরে কতটা বদলালো জনমত

ছবি

রুহুল কবির রিজভী: দুর্নীতি দমন কমিশন ‘অর্থব প্রতিষ্ঠান’, কার্যক্রমে ব্যর্থতা স্পষ্ট

ছবি

অক্টোবর-নভেম্বরেই শেখ হাসিনা ও পরিবারের ‘প্লট দুর্নীতি’ মামলার রায় আশা করছে দুদক

ছবি

রাজধানীতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একাধিক এলাকায় ঝটিকা মিছিল, তেজগাঁও থেকে আটক ৫০-এর বেশি

ছবি

সিপিবির নতুন নেতৃত্বে সাজ্জাদ চন্দন ও কাফি রতন

ছবি

উত্তর সিটির সাবেক কাউন্সিলর নার্গিস গ্রেপ্তার

ছবি

আখতারদের ভিভিআইপি সুবিধা না পাওয়া প্রসঙ্গে সরকারের ব্যাখ্যা

ছবি

ইসির কাছে ৩৩% নারী প্রার্থীর বাধ্যবাধকতা দাবি

ছবি

ভোটাভুটিতে সিপিবি’র ৪৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি

ছবি

আখতারকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি চায় এনসিপি

ছবি

কলকাতার পত্রিকায় বিএনপি’র ফখরুলের সাক্ষাৎকার, জামায়াত-এনসিপি’র প্রতিবাদ

ছবি

কলকাতার সাক্ষাৎকার এআই দিয়ে বানানো: ফখরুল

ছবি

মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানালো জামায়াত

বিএনপি ‘ভারতমুখী’ হলে এনসিপি নতুন সিদ্ধান্ত নেবে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে হেনস্তা ও ডিম হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের ‘চিরাচরিত চরিত্র’ মন্তব্য ফখরুলের

ছবি

নির্বাচন পরিচালনায় আওয়ামী ‘দোসররা’ নয়: জয়নুল আবদিন ফারুক

ছবি

নিউ ইয়র্কে এনসিপি নেতার ওপর ডিম হামলা, ঢাকায় প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি

ছবি

নিউ ইয়র্কে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলা: কনসাল জেনারেলের পদত্যাগ দাবি নাহিদে

ছবি

শাপলা প্রতীক না পেলে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি এনসিপি নেতার

ছবি

নিউ ইয়র্ক কনস্যুলেটের সব কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার দাবি এনসিপির

বৈষম্য দূর করতে এসে সরকার ‘বৈষম্য বাড়িয়েছে’: রাশেদ খান

ছবি

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী: এনসিপি স্বতন্ত্র ব্লক গঠন করছে, গণঅধিকার পরিষদ সঙ্গে একীভূত হচ্ছে

tab

রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতেই ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন: সিইসি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নির্বাচন কমিশন আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে জানিয়ে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন।

একজন সম্পাদকের লেখা থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, “সব খেলোয়াড় যদি ফাউল করার জন্য মাঠে নামে, ম্যাচ পণ্ড হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সবাই ফাউল করার জন্য মাঠে নামলে তো মুশকিল। কেউ যেন ফাউল না করে, সে বিষয়ে আমরা তৎপর। নির্বাচনে কেউ ফাউল করতে নামবে না, ভালো নিয়তে নামবেন আশা করি।”

সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান বিতর্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেন সিইসি।

তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যমান সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী ভোট করার অপেক্ষায় রয়েছে কমিশন। ভোটের দিনের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে।

১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ সালের ভোটের আগেও ‘গোলমাল’ হয়েছিল মন্তব্য করে সিইসি বলেছেন, নির্বাচনের সময় এলে সব ঠিক হয়ে যাবে বলেই তিনি আশা করছেন।

এদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কানাডার অভিজ্ঞতা, ‘শাপলা’ নিয়ে কাড়াকাড়ি, জাতীয় পার্টিকে সংলাপের আমন্ত্রণ, পিআর পদ্ধতি, পোস্টাল ভোট, নতুন দল নিবন্ধন, নির্বাচনি পরিবেশ ও ইসির ভোট প্রস্তুতিসহ সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন নাসির উদ্দিন।

তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্যেই চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। এজন্য যা যা করা দরকার জোরেশোরে নিচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টাও নিউ ইয়র্কে যার সাথে দেখা হচ্ছে বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। আমরা এ ঐতিহাসিক নির্বাচনের জন্য কাজ করছি।”

এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা চেয়ে সিইসি বলেন, “আমরা কারো কথায় চলছি না। আইন কানুন সংবিধান অনুযায়ী, সরল সোজা পথে চলতে চাই। বাঁকা পথে বা কারো ফেভারের জন্য কাজ করছি না। রাজনৈতিক দল আমাদের মূল স্টেকহোল্ডার। উনাদের সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর নির্বাচন সম্ভব নয়।”

আগামী নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির জন্য ইসির পক্ষ থেকে ‘সর্বশক্তি প্রয়োগ করার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রত্যাশার কথাও তিনি বলেন।

“আমাকে কেউ বলেনি যে ইলেকশনে ফাউল করার জন্য নামবেন। আশা করি, সবাই সহযোগিতা করবেন। সরকার দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ঐকমত্য কমিশন তো সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিভিন্ন দলের চার পাঁচজন নিউ ইয়র্কেও গেছেন, সেখানেও আলোচনা হবে আশা করি। রাজনীতিবিদদের উপর আমার আস্থা রয়েছে।”

অতীতের কথা মনে করিয়ে দিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, “১৯৯১ সালে অনেক গোলমাল হয়েছে। পরে সব ঠান্ডা হয়ে গেছে। ৯৬ এর ইলেকশনের আগেও গোলমাল হয়ে সব ঠান্ডা। ২০০৮ সালেও এরকম গোলমাল হয়েছে। সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। নানান মত থাকবে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে সবাই এক জায়গায় আসবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী থাকবে। ইসিও সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করবে।

“কোনো রাজনীতিবিদ ফাউল খেলার জন্য নির্বাচনের মাঠে নামবে বলেননি। উনারা চাচ্ছেন সুন্দরভাবে খেলবেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাচ্ছেন। আমরা লেভেলে প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করব। এক লাখ আর্মি সদস্য নামবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আমি খুব কনফিডেন্ট; কোনো ভয় পাওয়ার কারণ নেই।”

‘পিআর নয়, ভোট আরপিও অনুযায়ী’

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির ভোটের দাবিতে কয়েকটি দল সোচ্চার হলেও ইসি নির্বাচনি আইন ও সংবিধানের বাইরে যাবে না বলে সিইসির ভাষ্য।

তিনি বলেন, “ভোট আমাদের আরপিও অনুযায়ী হবে। পিআর তো আরপিওতে নাই। আরপিও বদলে অন্য একটা দিলে হয় তখন। আইন না বদলালে তো হয় না। আমাকের আরপিও মেনে চলতে হয়।”

সিইসি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইলে আইন বদলাতে হবে।

“পিআর নিয়ে কথা বললে আবার আমার বিরুদ্ধে কথা হবে, যদিও এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।”

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি ফেব্রুয়ারির জন্য অপেক্ষা করছি। নির্বাচন আয়োজনের জন্য অপেক্ষা করছি। সংবিধান-আরপিওতে যা আছে সে অনুযায়ী হবে। ভোটের দিনের দুই মাস আগে তফসিল হবে। রোজার আগে নির্বাচন হবে।”

নতুন দল নিবন্ধনে বিলম্ব কেন?

সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন শেষ করার কথা ছিল। ২২টি দলের মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি সরেজমিন তদন্ত শেষে নিবন্ধনযোগ্যদের বিষয়ে আপত্তি আছে কিনা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু কিছু দলের বিষয়ে আরও যাচাইয়ের কাজে সময় লাগছে বলে জানান সিইসি।

তিনি বলেন, “কাজ দ্রুত চলছে। টার্গেট ছিল এ মাসে করে ফেলতে পারব। বিভিন্ন দল নানা অভিযোগ নিয়ে আসছে। আমাদের কিছু অতিরিক্ত ইনফরমেশন কালেক্ট করতে হচ্ছে। নিশ্চিত হতে হচ্ছে, তারা সঠিকভাবে তথ্য দিয়েছে (কি না)। এজন্য সময় লাগছে।”

কোন কোন দল নিবন্ধন পাচ্ছে তা নিয়ে এখন কথা বলতে নারাজ সিইসি নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, নিবন্ধনের জন্য ইসি ‘নিজস্ব পদ্ধতিতে’ কাজ করছে, গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে না।

শাপলা বিতর্ক

নিবন্ধনপ্রত্যাশী জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আগে নিবন্ধিত দল নাগরিক ঐক্য শাপলা প্রতীক চাইলেও তা নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখন এনসিপির দাবি নাকচ হওয়ায় কেন এতে আলোচনা হচ্ছে, তা বোধগম্য হচ্ছে না সিইসির।

তিনি বলেন, “এনসিপি শাপলা চেয়েছে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অথচ শপলা চেয়েছিল নাগরিক ঐক্য, তারা প্রথম চেয়েছিল। তখন আলোচনায় আনেনি। এখন কেন এত আলোচনা? নাগরিক ঐক্যকে শাপলা দেইনি আমরা। সচিব এ বিষয়ে বলেছেন, আর বলতে চাই না।”

নির্বাচনি প্রতীকের চূড়ান্ত তালিকা বুধবার জারি হয়েছে। ইসি সচিব এনসিপিকে বিকল্প প্রতীক চেয়ে আবেদন করার পরামর্শ দিলেও এনসিপি ফের শাপলা চেয়ে আবেদন করেছে।

এ বিষয়ে সিইসি বলেন, “চিঠি নিয়ে কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নেব। গতকাল এল, একা সিদ্ধান্ত নেব না। আমাদের কমিশনের সভায় আলোচনার পর পরবর্তী কাযক্রম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেব। কমিশন সভার আলোচনার পর কথা হবে।”

এনসিপির চিঠির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “যে কোনো দল চিঠি দিতে পারে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া দল এনসিপি। চিঠি দেওয়ায় অসুবিধা নেই। দল তো দেবেই। রাজনীতিবিদরা দেশের স্বার্থে সব কিছু একমোডেট করেন। চিঠি বিবেচনা করব, কী করা যায় দেখা যাক।”

শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দিলে তা কীভাবে আদায় করতে হয়–জানা আছে বলে হুমকি দিয়েছেন এনসিপির নেতারা।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিইসি বলেন, “রাজনীতিবিদরা অনেক কথা বলতে পারেন। আমরা তো জবাব দিতে পারব না, শ্রোতা। আমাদের কাজ আইন মোতাবেক করব। এটা হুমকি মনে করি না। উনারা তো দেশদ্রোহী না, উনারা দেশপ্রেমিক। দেশের জন্য, আমাদের জন্য হুমকি মনে করি না।”

জাপা নিয়ে ‘কনফিউজড’ সিইসি

বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যের কারণে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে কয়েকটি দল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাতেও জাতীয় পার্টিকে রাখা হয়নি।

এ অবস্থায় ইসির সংলাপে জাপাকে ডাকা হবে কিনা জানতে চাইলে সিইসি বলেন, “সময় আসুক, দেখব। এখনও তো সংলাপ শুরু করিনি। ঐকমত্য কমিশন এখনও সংলাপ করছে। আমরা একটু পরে করব। সিভিল সোসাইটিসহ অন্যদের সাথে আলোচনা করে শেষের দিকে দলের সঙ্গে বসব। এখন (জাপা নিয়ে) রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে, দেখি কি অবস্থা হয়।”

জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ইসিতে নিবন্ধিত। ইতোমধ্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের একাংশ নিজেদের ‘মূল জাপা’ দাবি করে ইসিতে চিঠি দিয়েছে। এই ভাঙনের মধ্যে কোনটি আসল জাপা, তা নিয়ে নিশ্চিত নন সিইসি।

তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি ৫টি পেয়েছি, আপনারা কয়টি পেয়েছেন? লাঙ্গলের দাবিদার তো একাধিক। জাপা বললে আমি কনফিউজড, হাফ ডজন আছে। এজন্য কনফিউজড। সময় এলে দেখবেন, ভাবতে দেন।”

‘প্রবাসীদের আস্থা বাড়াতে হবে’

সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধে কানাডা সফরে গিয়ে এনআইডি সেবা চালু এবং পোস্টাল ভোটিং নিয়ে মত বিনিময় সভা করেছিলেন সিইসি। সেই অভিজ্ঞতা তিনি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন।

নাসির উদ্দিন বলেন, “প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকের সাথে কথা হল, তারা বলছে ‘ইসির উপর কনফিডেন্স রেস্টোর করেন’। আমাদের উপর অনাস্থার ভাব রয়েছে। আমাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি। (ভোট) সুষ্ঠু, সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক করতে ইসির উদ্যোগ, আইন সংস্কার বিষয়ে জানিয়েছি। প্রবাসী বাংলাদেশিরা খুবই সন্তুষ্ট।”

প্রবাসীদের ভোটে আনতে পোস্টাল ব্যালটের উদ্যোগ নিয়ে আশাবাদের কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, “প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটিং… ছোট শিশু হাঁটা শুরু করেছে, এটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আপনারা শরিক হোন, অংশগ্রহণ করুন; এতে আমাদের চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে।”

back to top