ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, পাশপাশি তার দল জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং বাস্তবায়নও দেখতে চায়। তবে বিএনপি ‘সংস্কার ভেস্তে দিচ্ছে’ এবং জামায়াতে ইসলামী ‘নির্বাচন পেছানোর দুরভিসন্ধি করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন চায় এনসিপি
বিভিন্ন দল তৃণমূলে ‘আওয়ামী লীগকে জায়গা দিচ্ছে’
বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মনে করি না তবে মুক্তিযুদ্ধে তার কৃতিত্ব স্বীকার করি
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ‘শীতলতা থাকবে’
সনদ বাস্তবায়ন আদেশ প্রধান উপদেষ্টাকেই জারি করতে হবে
রোববার,(০২ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘বিএনপি ঐকমত্য কমিশনে শুরু থেকেই সংস্কারের বিরোধিতা করেছে, নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। ফলে তারা কতটা সংস্কারের পক্ষে, এ নিয়ে জনগণের প্রশ্ন আছে। অন্যদিকে জামায়াতের কাজে মনে হচ্ছে, তারা নির্বাচনকে পেছানোর কোনো দুরভিসন্ধিতে আছে। একদল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, অন্যদল নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে।’
এনসিপি এ দুটির কোনোটিই চায় না দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, ফেব্রুয়ারিতে যথাসময়ে নির্বাচন হবে। জুলাই সনদও আইনি ভিত্তি পাবে এবং বাস্তবায়ন হবে। সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা যেন ঐকমতে আসেন।’
রাষ্ট্র সংস্কার, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশে রাজনৈতিক যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সমানভাবে ‘দায়ী’ বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম।
প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ চেয়ে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ অবশ্যই ড. ইউনূসকে জারি করতে হবে। জুলাই সনদ যদি তথাকথিত রাষ্ট্রপতি থেকে জারি হয়, তাহলে জুলাই সনদের কোনো আইনি বা রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি হবে না। বরং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার কফিনে শেষ পেরেক মারা হবে। এই আদেশ জারির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর কোনো রাজনৈতিক, আইনি কিংবা সাংবিধানিক বৈধতা নেই। এটা অবশ্যই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে জারি করতে হবে।’
*জুলাই সনদ*
জুলাই সনদে সই না করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদে আমরা সই করিনি। অনেকে সই করে এখন বলছেন যে, জাতির সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। তারা যখন কোনো বিবেচনা ছাড়াই সই করে ফেললেন, তখন এই বোধদয় হয়নি? গণঅভ্যুত্থানের প্রধানতম রাজনৈতিক দল যখন সেই অনুষ্ঠানে গেল না, তখন তাদের মনে হলো না, যে জাতীয় অনৈক্য হচ্ছে? এনসিপিকে বাদ রেখে জুলাই সনদ যেদিন সই হয়েছিল সেদিন থেকেই জাতীয় অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে।’
সরকার কীভাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে সেই নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে সই করার কোনো অর্থ হয় না মন্তব্য করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন এখন (সনদ) বাস্তবায়নের যে দুটি প্রস্তাব দিয়েছে, এর প্রথমটার সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি। এখন সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আমরা আছি।’
*গণভোট কবে*
জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে নাহিদ বলেন, ‘গণভোট আগে হবে, নাকি পরে হবে এটাকে এখন প্রধান ইস্যু করা হচ্ছে। মূলত জামায়াতে ইসলাম এটা করছে। এটাও একটা ভুল রাজনীতি বলে আমরা মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘আগে আমরা যখন উচ্চকক্ষে পিআর দাবি করেছিলাম, তখনও উভয়কক্ষে পিআর ইস্যু এনে বিষয়টি ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছিল।’
এনসিপি প্রধান বলেন, ‘সনদে কী কী সংস্কার প্রস্তাব থাকবে এবং সেটার আইনি ভিত্তি কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে, ড. ইউনূস সেই আদেশ জারি করবেন কিনা, এগুলো তর্কের বিষয় হওয়া উচিত। এই জায়গাগুলোতে একমত হলে গণভোট, আমরা জাতীয় নির্বাচনের দিন কিংবা তার আগে যে কোনো সময়ই হতে পারে। কিন্তু গণভোট আগে হবে, নাকি ইলেকশনের দিন হবে এটা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত দ্বন্দ্বে চলে গিয়েছে। এটাকে আমরা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় মনে করছি।’
নির্বাচন ও জোট গঠন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন এবং সংস্কারকে আমরা পৃথকভাবে দেখছি। সংস্কারের পক্ষে কেউ না থাকলে তাদের সঙ্গে আমাদের জোটে যাওয়া সম্ভব নয়।’
*আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশ*
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিভিন্ন দলে ভিড়ে নির্বাচন ভ-ুলের ষড়যন্ত্র করবে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন দল তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে জায়গা দিচ্ছে। সেজন্য আমরা দলগুলোকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাই।’
*বঙ্গবন্ধুর ছবি*
জুলাই সনদে বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রসঙ্গে এনসিপিপ্রধান বলেন, ‘ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামিয়েছেন। শেখ মুজিবকে ফ্যাসিবাদের আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমরা তাকে জাতির পিতা বা ফাউন্ডার মনে করি না। তবে মুক্তিযুদ্ধে তার কৃতিত্ব স্বীকার করি, ইতিহাসে সেই জায়গা তার থাকবে। সংবিধানকে একটা ব্যক্তির সম্পত্তিতে পরিণত করা হয়েছিল, তার একটা উদাহরণ হচ্ছে, শেখ মুজিবের ছবিকে বাধ্য করে দেয়া। সংবিধানকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এই ধরনের সব বিধান সংবিধান থেকে অপসারণের দাবি জানাবো।’
*নির্বাচনের প্রস্তুতি*
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এনসিপি ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও এক প্রশ্নের জবাবে জানান দলটির আহ্বায়ক। তবে এনসিপি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আগামী একমাসের মধ্যে নির্বাচন, প্রার্থী কিংবা জোট নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিকল্পনার এনসিপির রয়েছে বলে জানান তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এনসিপি। দুই মুখ্য সংগঠক সারাদেশে সফর করছেন। নভেম্বরের (চলতি) মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন হবে।’
*ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক*
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান দলটির সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন পর্যন্ত তিনি ভারতের আশ্রয়েই আছেন। ওই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। বাণিজ্য সম্পর্কেও চিড় ধরেছে।
ওই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে। গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে, জুলুম করে ক্ষমতায় টিকে ছিল। এর পেছনে ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন ছিল। ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়, তাহলে ভারতকে আওয়ামী লীগের চোখে বাংলাদেশেকে দেখার নীতি থেকে সরে আসতে হবে। সম্পর্ক তৈরি করতে হবে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে।’
*অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি *
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের যে চেষ্টা ভারত সব সময় করে আসছে সেই জায়গা থেকে ভারতকে ফিরে আসতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। যৌথ নদীর পানির হিস্যা ও সীমান্ত হত্যাসহ যে সংকটগুলো রয়েছে সেগুলো সুরাহা করতে হবে। সবার আগে যেটা দরকার তা হচ্ছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দেয়া এবং গণহত্যাকারীদের কাউকে সেই দেশে আশ্রয় না দেয়া।’
ভারত শেখ হাসিনাকে সেই দেশে আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে গণহত্যাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যতদিন জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রশ্নে ভারত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট না করছে, সম্পর্ক স্থাপনের জন্য হাত বাড়িয়ে না দিচ্ছে, ততদিন ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের শীতলতা থাকবে।’
বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির চাপে ডানে বাঁয়ে ছোটাছুটি করে অন্তর্বর্তী সরকার: এবি পার্টির চেয়াম্যান মঞ্জু
অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নীতিগত কোনো অবস্থান না থাকায় রাষ্ট্র সংকটে পড়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন আবার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তার মতে, এই সরকার কখনো বিএনপির চাপে, কখনো জামায়াতে ইসলামীর চাপে আবার কখনো এনসিপির চাপে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘স্বল্প আস্থার সমাজে সংস্কার ও নির্বাচনী ঐক্যের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এবি পার্টি, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তার কোনো প্রিন্সিপাল পজিশন নেই। বিএনপির চাপে উনি কতক্ষণ ডানে ছোটেন, জামায়াতের চাপে তিনি কিছুক্ষণ বাঁয়ে ছোটেন। এনসিপির চাপে উনি মাঝে মাঝে ওপরের দিকে ওঠার চেষ্টা করেন।’
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘রাষ্ট্র এখন সংকটে। সবকিছু গুছিয়ে আনার পরে এখন সংকট ঘনীভূত হয়েছে তিনটা জায়গায়। গণভোট আগে না, একসঙ্গে; নোট অব ডিসেন্টার কী হবে আর আগামী দিনের নির্বাচনটা কিসের নির্বাচন।’
এ সংকটের জন্যও অন্তর্বর্তী সরকারের চাপে পড়ে চলার নীতিকে দায়ী করেন এবি পার্টির প্রধান।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেত্বতাধীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘কয়েকটা দলের মন জুগিয়ে চলার রাজনীতির চিন্তা নীতিটা বাদ দেন। যদি এটা বাদ না দেন, তাহলে আপনারা যে একটা সুযোগ পেয়েছেন, সেই সুযোগ হাতছাড়া করার দায়ে আপনারা চিরস্থায়ীভাবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে দায়ী থাকবেন।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের আশা ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় যাওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে। জনগণের কথা ভাবছে না।’
এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার ভুইয়া বলেন, ‘বিপ্লব এখন বিলাসে পরিণত হয়েছে। ছেড়া স্যান্ডেল থেকে ফাইভ স্টার হোটেল কোনো বিপ্লবীর চরিত্র হতে পারে না।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুমের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন, এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল ওহাব মিনার, আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মো. হিজবুল্লাহ বক্তব্য রাখেন। সভায় দল তিনটি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পথচলার অঙ্গীকার করে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ০২ নভেম্বর ২০২৫
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, পাশপাশি তার দল জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং বাস্তবায়নও দেখতে চায়। তবে বিএনপি ‘সংস্কার ভেস্তে দিচ্ছে’ এবং জামায়াতে ইসলামী ‘নির্বাচন পেছানোর দুরভিসন্ধি করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন চায় এনসিপি
বিভিন্ন দল তৃণমূলে ‘আওয়ামী লীগকে জায়গা দিচ্ছে’
বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মনে করি না তবে মুক্তিযুদ্ধে তার কৃতিত্ব স্বীকার করি
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ‘শীতলতা থাকবে’
সনদ বাস্তবায়ন আদেশ প্রধান উপদেষ্টাকেই জারি করতে হবে
রোববার,(০২ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘বিএনপি ঐকমত্য কমিশনে শুরু থেকেই সংস্কারের বিরোধিতা করেছে, নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। ফলে তারা কতটা সংস্কারের পক্ষে, এ নিয়ে জনগণের প্রশ্ন আছে। অন্যদিকে জামায়াতের কাজে মনে হচ্ছে, তারা নির্বাচনকে পেছানোর কোনো দুরভিসন্ধিতে আছে। একদল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, অন্যদল নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে।’
এনসিপি এ দুটির কোনোটিই চায় না দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, ফেব্রুয়ারিতে যথাসময়ে নির্বাচন হবে। জুলাই সনদও আইনি ভিত্তি পাবে এবং বাস্তবায়ন হবে। সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা যেন ঐকমতে আসেন।’
রাষ্ট্র সংস্কার, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশে রাজনৈতিক যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সমানভাবে ‘দায়ী’ বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম।
প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ চেয়ে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ অবশ্যই ড. ইউনূসকে জারি করতে হবে। জুলাই সনদ যদি তথাকথিত রাষ্ট্রপতি থেকে জারি হয়, তাহলে জুলাই সনদের কোনো আইনি বা রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি হবে না। বরং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার কফিনে শেষ পেরেক মারা হবে। এই আদেশ জারির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর কোনো রাজনৈতিক, আইনি কিংবা সাংবিধানিক বৈধতা নেই। এটা অবশ্যই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে জারি করতে হবে।’
*জুলাই সনদ*
জুলাই সনদে সই না করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদে আমরা সই করিনি। অনেকে সই করে এখন বলছেন যে, জাতির সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। তারা যখন কোনো বিবেচনা ছাড়াই সই করে ফেললেন, তখন এই বোধদয় হয়নি? গণঅভ্যুত্থানের প্রধানতম রাজনৈতিক দল যখন সেই অনুষ্ঠানে গেল না, তখন তাদের মনে হলো না, যে জাতীয় অনৈক্য হচ্ছে? এনসিপিকে বাদ রেখে জুলাই সনদ যেদিন সই হয়েছিল সেদিন থেকেই জাতীয় অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে।’
সরকার কীভাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে সেই নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে সই করার কোনো অর্থ হয় না মন্তব্য করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন এখন (সনদ) বাস্তবায়নের যে দুটি প্রস্তাব দিয়েছে, এর প্রথমটার সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি। এখন সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আমরা আছি।’
*গণভোট কবে*
জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে নাহিদ বলেন, ‘গণভোট আগে হবে, নাকি পরে হবে এটাকে এখন প্রধান ইস্যু করা হচ্ছে। মূলত জামায়াতে ইসলাম এটা করছে। এটাও একটা ভুল রাজনীতি বলে আমরা মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘আগে আমরা যখন উচ্চকক্ষে পিআর দাবি করেছিলাম, তখনও উভয়কক্ষে পিআর ইস্যু এনে বিষয়টি ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছিল।’
এনসিপি প্রধান বলেন, ‘সনদে কী কী সংস্কার প্রস্তাব থাকবে এবং সেটার আইনি ভিত্তি কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে, ড. ইউনূস সেই আদেশ জারি করবেন কিনা, এগুলো তর্কের বিষয় হওয়া উচিত। এই জায়গাগুলোতে একমত হলে গণভোট, আমরা জাতীয় নির্বাচনের দিন কিংবা তার আগে যে কোনো সময়ই হতে পারে। কিন্তু গণভোট আগে হবে, নাকি ইলেকশনের দিন হবে এটা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত দ্বন্দ্বে চলে গিয়েছে। এটাকে আমরা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় মনে করছি।’
নির্বাচন ও জোট গঠন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন এবং সংস্কারকে আমরা পৃথকভাবে দেখছি। সংস্কারের পক্ষে কেউ না থাকলে তাদের সঙ্গে আমাদের জোটে যাওয়া সম্ভব নয়।’
*আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশ*
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিভিন্ন দলে ভিড়ে নির্বাচন ভ-ুলের ষড়যন্ত্র করবে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন দল তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে জায়গা দিচ্ছে। সেজন্য আমরা দলগুলোকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাই।’
*বঙ্গবন্ধুর ছবি*
জুলাই সনদে বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রসঙ্গে এনসিপিপ্রধান বলেন, ‘ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামিয়েছেন। শেখ মুজিবকে ফ্যাসিবাদের আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমরা তাকে জাতির পিতা বা ফাউন্ডার মনে করি না। তবে মুক্তিযুদ্ধে তার কৃতিত্ব স্বীকার করি, ইতিহাসে সেই জায়গা তার থাকবে। সংবিধানকে একটা ব্যক্তির সম্পত্তিতে পরিণত করা হয়েছিল, তার একটা উদাহরণ হচ্ছে, শেখ মুজিবের ছবিকে বাধ্য করে দেয়া। সংবিধানকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এই ধরনের সব বিধান সংবিধান থেকে অপসারণের দাবি জানাবো।’
*নির্বাচনের প্রস্তুতি*
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এনসিপি ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও এক প্রশ্নের জবাবে জানান দলটির আহ্বায়ক। তবে এনসিপি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আগামী একমাসের মধ্যে নির্বাচন, প্রার্থী কিংবা জোট নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিকল্পনার এনসিপির রয়েছে বলে জানান তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এনসিপি। দুই মুখ্য সংগঠক সারাদেশে সফর করছেন। নভেম্বরের (চলতি) মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন হবে।’
*ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক*
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান দলটির সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন পর্যন্ত তিনি ভারতের আশ্রয়েই আছেন। ওই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। বাণিজ্য সম্পর্কেও চিড় ধরেছে।
ওই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে। গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে, জুলুম করে ক্ষমতায় টিকে ছিল। এর পেছনে ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন ছিল। ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়, তাহলে ভারতকে আওয়ামী লীগের চোখে বাংলাদেশেকে দেখার নীতি থেকে সরে আসতে হবে। সম্পর্ক তৈরি করতে হবে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে।’
*অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি *
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের যে চেষ্টা ভারত সব সময় করে আসছে সেই জায়গা থেকে ভারতকে ফিরে আসতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। যৌথ নদীর পানির হিস্যা ও সীমান্ত হত্যাসহ যে সংকটগুলো রয়েছে সেগুলো সুরাহা করতে হবে। সবার আগে যেটা দরকার তা হচ্ছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দেয়া এবং গণহত্যাকারীদের কাউকে সেই দেশে আশ্রয় না দেয়া।’
ভারত শেখ হাসিনাকে সেই দেশে আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে গণহত্যাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যতদিন জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রশ্নে ভারত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট না করছে, সম্পর্ক স্থাপনের জন্য হাত বাড়িয়ে না দিচ্ছে, ততদিন ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের শীতলতা থাকবে।’
বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির চাপে ডানে বাঁয়ে ছোটাছুটি করে অন্তর্বর্তী সরকার: এবি পার্টির চেয়াম্যান মঞ্জু
অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নীতিগত কোনো অবস্থান না থাকায় রাষ্ট্র সংকটে পড়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন আবার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তার মতে, এই সরকার কখনো বিএনপির চাপে, কখনো জামায়াতে ইসলামীর চাপে আবার কখনো এনসিপির চাপে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘স্বল্প আস্থার সমাজে সংস্কার ও নির্বাচনী ঐক্যের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এবি পার্টি, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তার কোনো প্রিন্সিপাল পজিশন নেই। বিএনপির চাপে উনি কতক্ষণ ডানে ছোটেন, জামায়াতের চাপে তিনি কিছুক্ষণ বাঁয়ে ছোটেন। এনসিপির চাপে উনি মাঝে মাঝে ওপরের দিকে ওঠার চেষ্টা করেন।’
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘রাষ্ট্র এখন সংকটে। সবকিছু গুছিয়ে আনার পরে এখন সংকট ঘনীভূত হয়েছে তিনটা জায়গায়। গণভোট আগে না, একসঙ্গে; নোট অব ডিসেন্টার কী হবে আর আগামী দিনের নির্বাচনটা কিসের নির্বাচন।’
এ সংকটের জন্যও অন্তর্বর্তী সরকারের চাপে পড়ে চলার নীতিকে দায়ী করেন এবি পার্টির প্রধান।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেত্বতাধীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘কয়েকটা দলের মন জুগিয়ে চলার রাজনীতির চিন্তা নীতিটা বাদ দেন। যদি এটা বাদ না দেন, তাহলে আপনারা যে একটা সুযোগ পেয়েছেন, সেই সুযোগ হাতছাড়া করার দায়ে আপনারা চিরস্থায়ীভাবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে দায়ী থাকবেন।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের আশা ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় যাওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে। জনগণের কথা ভাবছে না।’
এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার ভুইয়া বলেন, ‘বিপ্লব এখন বিলাসে পরিণত হয়েছে। ছেড়া স্যান্ডেল থেকে ফাইভ স্টার হোটেল কোনো বিপ্লবীর চরিত্র হতে পারে না।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুমের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন, এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল ওহাব মিনার, আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মো. হিজবুল্লাহ বক্তব্য রাখেন। সভায় দল তিনটি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পথচলার অঙ্গীকার করে।