সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন তার সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি ‘সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত’ ছিল—এমনটা তিনি বিশ্বাস করেন না। তবে তার মতে, অর্থনীতিবিদ হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রভাবশালী পশ্চিমা সমর্থকদের একটি বলয় গড়ে তুলেছিলেন, যা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে।
দিল্লিতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি আন্তর্জাতিক সাক্ষাৎকারে জুলাই অভ্যুত্থান, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ভূমিকা, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, উগ্রপন্থি দলগুলোর উত্থান এবং আঞ্চলিক শক্তিদের অবস্থান নিয়ে কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক তাকে প্রথমেই প্রশ্ন করেন—সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য বা হুমকির কারণে কি তিনি ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, নাকি এটি কোনো অভ্যুত্থানের অংশ ছিল বা নিরাপত্তা বলয়ের নীরব সম্মতি?
এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, একসময় শান্তিপূর্ণ থাকা আন্দোলন অগাস্টের শুরুতে উগ্রপন্থি অংশের নেতৃত্বে সহিংস নৈরাজ্যে পরিণত হয়। ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলন থেকে পরিস্থিতি অনেক দূরে সরে গিয়ে হুমকির রূপ নেয়।
তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্রের চিত্রটি অনেক পরে গিয়ে স্পষ্ট হয়। যখন ইউনূস সহিংস আন্দোলনকারীদের দায়মুক্তি দিলেন এবং আমাদের সময়ের তদন্ত কার্যক্রম বাতিল করেন, তখনই বোঝা যায় সরকার উৎখাতের জন্য একটি ছক করা হয়েছিল। সেই সময় দেশে থাকা আমার জন্য বাঁচা-মরার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।”
শেখ হাসিনা জানান, তিনি দেশ ছাড়তে চাননি, কিন্তু তাকে বলা হয়েছিল—থেকে গেলে তার নিজের জীবনই নয়, তার কাছের মানুষদের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তার সরকারকে হটানোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে। তিনি বলেছিলেন, “সেন্ট মার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিলে আমি ঠিকই ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”
১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সময়ে তিনি একাধিকবার এমন অভিযোগ তুলেছিলেন। বর্তমানে তিনি জুলাই আন্দোলন দমন-সংক্রান্ত অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখোমুখি।
তিনি, তার মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলের নেতারা ‘খুন ও গুমের’ অভিযোগে একাধিক মামলার আসামি।
সাক্ষাৎকারে তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়—জুলাই অভ্যুত্থানে ওয়াশিংটনের ভূমিকা কী ছিল? যুক্তরাষ্ট্র কি রাজনৈতিক সংস্কার চাইছিল, না কি সামরিক ও বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিল?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “মার্কিন সরকারের সঙ্গে আমাদের বরাবরই ভালো সম্পর্ক ছিল। আমাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে মার্কিন সরকার বা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি সক্রিয়ভাবে এতে জড়িত ছিল। তবে ইউনূস প্রভাবশালী পশ্চিমা সমর্থকদের একটি বলয় তৈরি করেছিলেন, যারা তার অর্থনৈতিক তত্ত্বকে বিভ্রান্তিকরভাবে গণতান্ত্রিক যোগ্যতা হিসেবে ধরে নিয়েছিল।”
তার মতে, এখন সেই ভুল ধারণা ভাঙতে শুরু করেছে, এবং সমর্থকেরা ইউনূসের প্রকৃত চেহারা বুঝতে পারছেন।
তিনি বলেন, “তিনি অনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান, উপদেষ্টা পরিষদে উগ্রপন্থিদের স্থান দিয়েছেন, সংবিধান বদলে দিয়েছেন এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের সময় নীরব থেকেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক, প্রকাশ্যে ইউনূসকে অপছন্দ করার কথা বলেছেন।”
সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী ‘অসম্ভব পরিস্থিতির’ মধ্যে পড়েছিল—একদিকে সহিংসতা ঠেকিয়ে সাংবিধানিক সরকার রক্ষার চাপ, অন্যদিকে প্রাণহানি এড়ানো।
তিনি বলেন, “ঢাকার রাজপথে আমার পরিবার, কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তখন মুখ্য ছিল। বাইরের চাপ সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছিল কি না, তা আমি বলতে পারি না।”
ভারতের ভূমিকা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাকে আশ্রয় দেওয়ায় তিনি ভারতীয় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, “ভারত বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং তারা চায় স্থিতিশীল ও নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসুক। দিল্লির সঙ্গে ইউনূসের দূরত্বের পেছনে আমার কোনো ভূমিকা নেই। এই দূরত্ব তৈরি হয়েছে তার উগ্রপন্থিদের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতা এবং ভারতবিরোধী বক্তব্যের কারণে।”
ইউনূস কি পশ্চিমাপন্থি ‘বেসামরিক মুখ’, নাকি আওয়ামীবিরোধী জোটের প্রতীক—এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, “অধ্যাপক ইউনূস ক্যালিফোর্নিয়ার সেলুনগুলোতে জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু তিনি গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের কোনো প্রতীক নন, তার বিশাল জনসমর্থনও নেই। তিনি অনির্বাচিত ব্যক্তি, অথচ এখন এমন একটি দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দিচ্ছেন, যে দলটি নয়বার ক্ষমতায় এসেছে এবং কোটি মানুষের সমর্থন পেয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমারা যদি মনে করে ইউনূস ‘বন্ধুসুলভ’, তাহলে তারা প্রতারিত হচ্ছে। বাস্তবে তার প্রশাসনের উগ্রপন্থিরা তাকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক, প্রতিশোধমূলক ও সামাজিকভাবে পশ্চাদমুখী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।”
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন তার সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি ‘সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত’ ছিল—এমনটা তিনি বিশ্বাস করেন না। তবে তার মতে, অর্থনীতিবিদ হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রভাবশালী পশ্চিমা সমর্থকদের একটি বলয় গড়ে তুলেছিলেন, যা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে।
দিল্লিতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি আন্তর্জাতিক সাক্ষাৎকারে জুলাই অভ্যুত্থান, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ভূমিকা, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, উগ্রপন্থি দলগুলোর উত্থান এবং আঞ্চলিক শক্তিদের অবস্থান নিয়ে কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক তাকে প্রথমেই প্রশ্ন করেন—সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য বা হুমকির কারণে কি তিনি ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, নাকি এটি কোনো অভ্যুত্থানের অংশ ছিল বা নিরাপত্তা বলয়ের নীরব সম্মতি?
এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, একসময় শান্তিপূর্ণ থাকা আন্দোলন অগাস্টের শুরুতে উগ্রপন্থি অংশের নেতৃত্বে সহিংস নৈরাজ্যে পরিণত হয়। ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলন থেকে পরিস্থিতি অনেক দূরে সরে গিয়ে হুমকির রূপ নেয়।
তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্রের চিত্রটি অনেক পরে গিয়ে স্পষ্ট হয়। যখন ইউনূস সহিংস আন্দোলনকারীদের দায়মুক্তি দিলেন এবং আমাদের সময়ের তদন্ত কার্যক্রম বাতিল করেন, তখনই বোঝা যায় সরকার উৎখাতের জন্য একটি ছক করা হয়েছিল। সেই সময় দেশে থাকা আমার জন্য বাঁচা-মরার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।”
শেখ হাসিনা জানান, তিনি দেশ ছাড়তে চাননি, কিন্তু তাকে বলা হয়েছিল—থেকে গেলে তার নিজের জীবনই নয়, তার কাছের মানুষদের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তার সরকারকে হটানোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে। তিনি বলেছিলেন, “সেন্ট মার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিলে আমি ঠিকই ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”
১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সময়ে তিনি একাধিকবার এমন অভিযোগ তুলেছিলেন। বর্তমানে তিনি জুলাই আন্দোলন দমন-সংক্রান্ত অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখোমুখি।
তিনি, তার মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলের নেতারা ‘খুন ও গুমের’ অভিযোগে একাধিক মামলার আসামি।
সাক্ষাৎকারে তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়—জুলাই অভ্যুত্থানে ওয়াশিংটনের ভূমিকা কী ছিল? যুক্তরাষ্ট্র কি রাজনৈতিক সংস্কার চাইছিল, না কি সামরিক ও বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিল?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “মার্কিন সরকারের সঙ্গে আমাদের বরাবরই ভালো সম্পর্ক ছিল। আমাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে মার্কিন সরকার বা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি সক্রিয়ভাবে এতে জড়িত ছিল। তবে ইউনূস প্রভাবশালী পশ্চিমা সমর্থকদের একটি বলয় তৈরি করেছিলেন, যারা তার অর্থনৈতিক তত্ত্বকে বিভ্রান্তিকরভাবে গণতান্ত্রিক যোগ্যতা হিসেবে ধরে নিয়েছিল।”
তার মতে, এখন সেই ভুল ধারণা ভাঙতে শুরু করেছে, এবং সমর্থকেরা ইউনূসের প্রকৃত চেহারা বুঝতে পারছেন।
তিনি বলেন, “তিনি অনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান, উপদেষ্টা পরিষদে উগ্রপন্থিদের স্থান দিয়েছেন, সংবিধান বদলে দিয়েছেন এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের সময় নীরব থেকেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক, প্রকাশ্যে ইউনূসকে অপছন্দ করার কথা বলেছেন।”
সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী ‘অসম্ভব পরিস্থিতির’ মধ্যে পড়েছিল—একদিকে সহিংসতা ঠেকিয়ে সাংবিধানিক সরকার রক্ষার চাপ, অন্যদিকে প্রাণহানি এড়ানো।
তিনি বলেন, “ঢাকার রাজপথে আমার পরিবার, কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তখন মুখ্য ছিল। বাইরের চাপ সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছিল কি না, তা আমি বলতে পারি না।”
ভারতের ভূমিকা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাকে আশ্রয় দেওয়ায় তিনি ভারতীয় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, “ভারত বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং তারা চায় স্থিতিশীল ও নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসুক। দিল্লির সঙ্গে ইউনূসের দূরত্বের পেছনে আমার কোনো ভূমিকা নেই। এই দূরত্ব তৈরি হয়েছে তার উগ্রপন্থিদের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতা এবং ভারতবিরোধী বক্তব্যের কারণে।”
ইউনূস কি পশ্চিমাপন্থি ‘বেসামরিক মুখ’, নাকি আওয়ামীবিরোধী জোটের প্রতীক—এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, “অধ্যাপক ইউনূস ক্যালিফোর্নিয়ার সেলুনগুলোতে জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু তিনি গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের কোনো প্রতীক নন, তার বিশাল জনসমর্থনও নেই। তিনি অনির্বাচিত ব্যক্তি, অথচ এখন এমন একটি দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দিচ্ছেন, যে দলটি নয়বার ক্ষমতায় এসেছে এবং কোটি মানুষের সমর্থন পেয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমারা যদি মনে করে ইউনূস ‘বন্ধুসুলভ’, তাহলে তারা প্রতারিত হচ্ছে। বাস্তবে তার প্রশাসনের উগ্রপন্থিরা তাকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক, প্রতিশোধমূলক ও সামাজিকভাবে পশ্চাদমুখী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।”