alt

সরকার পতনে বিদেশি শক্তির সম্পৃক্ততা অস্বীকার শেখ হাসিনার; ইউনূসের ‘পশ্চাৎপোষক বলয়’কে দায়ী

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন তার সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি ‘সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত’ ছিল—এমনটা তিনি বিশ্বাস করেন না। তবে তার মতে, অর্থনীতিবিদ হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রভাবশালী পশ্চিমা সমর্থকদের একটি বলয় গড়ে তুলেছিলেন, যা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে।

দিল্লিতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি আন্তর্জাতিক সাক্ষাৎকারে জুলাই অভ্যুত্থান, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ভূমিকা, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, উগ্রপন্থি দলগুলোর উত্থান এবং আঞ্চলিক শক্তিদের অবস্থান নিয়ে কথা বলেন।

সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক তাকে প্রথমেই প্রশ্ন করেন—সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য বা হুমকির কারণে কি তিনি ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, নাকি এটি কোনো অভ্যুত্থানের অংশ ছিল বা নিরাপত্তা বলয়ের নীরব সম্মতি?

এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, একসময় শান্তিপূর্ণ থাকা আন্দোলন অগাস্টের শুরুতে উগ্রপন্থি অংশের নেতৃত্বে সহিংস নৈরাজ্যে পরিণত হয়। ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলন থেকে পরিস্থিতি অনেক দূরে সরে গিয়ে হুমকির রূপ নেয়।

তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্রের চিত্রটি অনেক পরে গিয়ে স্পষ্ট হয়। যখন ইউনূস সহিংস আন্দোলনকারীদের দায়মুক্তি দিলেন এবং আমাদের সময়ের তদন্ত কার্যক্রম বাতিল করেন, তখনই বোঝা যায় সরকার উৎখাতের জন্য একটি ছক করা হয়েছিল। সেই সময় দেশে থাকা আমার জন্য বাঁচা-মরার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।”

শেখ হাসিনা জানান, তিনি দেশ ছাড়তে চাননি, কিন্তু তাকে বলা হয়েছিল—থেকে গেলে তার নিজের জীবনই নয়, তার কাছের মানুষদের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়বে।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তার সরকারকে হটানোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে। তিনি বলেছিলেন, “সেন্ট মার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিলে আমি ঠিকই ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”

১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সময়ে তিনি একাধিকবার এমন অভিযোগ তুলেছিলেন। বর্তমানে তিনি জুলাই আন্দোলন দমন-সংক্রান্ত অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখোমুখি।

তিনি, তার মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলের নেতারা ‘খুন ও গুমের’ অভিযোগে একাধিক মামলার আসামি।

সাক্ষাৎকারে তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়—জুলাই অভ্যুত্থানে ওয়াশিংটনের ভূমিকা কী ছিল? যুক্তরাষ্ট্র কি রাজনৈতিক সংস্কার চাইছিল, না কি সামরিক ও বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিল?

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “মার্কিন সরকারের সঙ্গে আমাদের বরাবরই ভালো সম্পর্ক ছিল। আমাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে মার্কিন সরকার বা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি সক্রিয়ভাবে এতে জড়িত ছিল। তবে ইউনূস প্রভাবশালী পশ্চিমা সমর্থকদের একটি বলয় তৈরি করেছিলেন, যারা তার অর্থনৈতিক তত্ত্বকে বিভ্রান্তিকরভাবে গণতান্ত্রিক যোগ্যতা হিসেবে ধরে নিয়েছিল।”

তার মতে, এখন সেই ভুল ধারণা ভাঙতে শুরু করেছে, এবং সমর্থকেরা ইউনূসের প্রকৃত চেহারা বুঝতে পারছেন।

তিনি বলেন, “তিনি অনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান, উপদেষ্টা পরিষদে উগ্রপন্থিদের স্থান দিয়েছেন, সংবিধান বদলে দিয়েছেন এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের সময় নীরব থেকেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক, প্রকাশ্যে ইউনূসকে অপছন্দ করার কথা বলেছেন।”

সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী ‘অসম্ভব পরিস্থিতির’ মধ্যে পড়েছিল—একদিকে সহিংসতা ঠেকিয়ে সাংবিধানিক সরকার রক্ষার চাপ, অন্যদিকে প্রাণহানি এড়ানো।

তিনি বলেন, “ঢাকার রাজপথে আমার পরিবার, কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তখন মুখ্য ছিল। বাইরের চাপ সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছিল কি না, তা আমি বলতে পারি না।”

ভারতের ভূমিকা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাকে আশ্রয় দেওয়ায় তিনি ভারতীয় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ।

তিনি বলেন, “ভারত বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং তারা চায় স্থিতিশীল ও নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসুক। দিল্লির সঙ্গে ইউনূসের দূরত্বের পেছনে আমার কোনো ভূমিকা নেই। এই দূরত্ব তৈরি হয়েছে তার উগ্রপন্থিদের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতা এবং ভারতবিরোধী বক্তব্যের কারণে।”

ইউনূস কি পশ্চিমাপন্থি ‘বেসামরিক মুখ’, নাকি আওয়ামীবিরোধী জোটের প্রতীক—এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, “অধ্যাপক ইউনূস ক্যালিফোর্নিয়ার সেলুনগুলোতে জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু তিনি গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের কোনো প্রতীক নন, তার বিশাল জনসমর্থনও নেই। তিনি অনির্বাচিত ব্যক্তি, অথচ এখন এমন একটি দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দিচ্ছেন, যে দলটি নয়বার ক্ষমতায় এসেছে এবং কোটি মানুষের সমর্থন পেয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমারা যদি মনে করে ইউনূস ‘বন্ধুসুলভ’, তাহলে তারা প্রতারিত হচ্ছে। বাস্তবে তার প্রশাসনের উগ্রপন্থিরা তাকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক, প্রতিশোধমূলক ও সামাজিকভাবে পশ্চাদমুখী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।”

ছবি

বিএনপিতে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে একটি মহল: মির্জা ফখরুল

ছবি

বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন চেয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধে মানুষের দুর্ভোগ

মনোনয়ন নিয়ে নাখোশ সিলেট বিএনপি, এবার অশান্ত গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার

মনোনয়ন নিয়ে নাখোশ সিলেট বিএনপি, এবার অশান্ত গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার

ছবি

গণফোরামের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, ঢাকা-৬ আসনে সভাপতি নিজে লড়বেন

ছবি

নওগাঁ পোরশা বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল শাহ চৌধুরীকে জেলা কমিটি থেকে সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

নাটোর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মশাল মিছিল

ছবি

পোরশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেলকে বহিষ্কার

সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মশাল মিছিল ও মানববন্ধন

ছবি

ক্ষমতায় এলে ভারতের ‘দাদাগিরি’ বন্ধে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণা মির্জা ফখরুলের

ছবি

সাংবিধানিকভাবে ‘মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহালের অঙ্গীকার সালাহউদ্দিন আহমদের

ছবি

ফারাক্কা–তিস্তা ইস্যুতে বিশেষ গুরুত্ব দেবে বিএনপি: মির্জা ফখরুল

ছবি

গাজীপুরে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল

ছবি

আলাদাভাবে গণভোটের তারিখসহ তিন দাবি ৮ দলের

ছবি

গণভোটে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে না, সেজন্য সংসদ লাগবে: সালাহউদ্দিন

ছবি

রাজনৈতিক দলগুলোর মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ছবি

নাশকতার অভিযোগে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ৪৩ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

ছবি

নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে: আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেলে মত দেবে ইসি

ছবি

জামায়াতের প্রতিক্রিয়া: একই দিনে গণভোট ও নির্বাচনে ‘জনআকাঙ্খা পূরণ হয়নি’

ছবি

নদীর মাঝখানে ইসি, নড়লেই নৌকা ডুববে: সংলাপে ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা, নারী কোটা কমানোর দাবি

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জুলাই সনদ ‘লঙ্ঘিত’ হয়েছে: সালাহউদ্দিন

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর নিজের সই করা সনদ ভঙ্গ করেছেন:সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি

একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’: ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আগুন ও অবরোধ

ছবি

সিলেট-৪: ‘স্বঘোষিত’ প্রার্থী আরিফুলকে নিয়ে বিএনপিতে ‘বহিরাগত’ বিতর্ক, বিক্ষোভ

ছবি

গণভোট নয়, জনগণের সমস্যা সমাধানে নজর দিন: তারেক রহমান

ছবি

আওয়ামী লীগের কেউ যেন স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে না পারে: সিইসিকে গণঅধিকার পরিষদ

ছবি

বিএনপি নেতা আমীর খসরু: বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা যে কেউ করতে পারে

ছবি

চোরা রাস্তা দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশে আসার স্বপ্ন দেখছে: রিজভী

সুনামগঞ্জ-১ আসন: ‘প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী’ বলায় মাইক্রোফোন কেড়ে নিলেন বিএনপির প্রার্থী আনিসুল

ছবি

জুলাই সনদের বাইরে যে কোনো সিদ্ধান্তের দায় সরকারের ওপরই বর্তাবে: বিএনপি

এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল নিক্ষেপ, দুইজন কারাগারে

ছবি

গণভোটের আগে কোনো নির্বাচন নয়, জামায়াত ও সঙ্গী-সাথীদের হুঁশিয়ারি

ছবি

অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে: হাসনাত

ছবি

ভোটকে এতো ভয় কেন... কারন অস্তিত্বই থাকবে না : মির্জা ফখরুল

ছবি

জামায়াত আমিরের হুঁশিয়ারি: জুলাই সনদ ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না

tab

সরকার পতনে বিদেশি শক্তির সম্পৃক্ততা অস্বীকার শেখ হাসিনার; ইউনূসের ‘পশ্চাৎপোষক বলয়’কে দায়ী

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন তার সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি ‘সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত’ ছিল—এমনটা তিনি বিশ্বাস করেন না। তবে তার মতে, অর্থনীতিবিদ হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রভাবশালী পশ্চিমা সমর্থকদের একটি বলয় গড়ে তুলেছিলেন, যা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে।

দিল্লিতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি আন্তর্জাতিক সাক্ষাৎকারে জুলাই অভ্যুত্থান, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ভূমিকা, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, উগ্রপন্থি দলগুলোর উত্থান এবং আঞ্চলিক শক্তিদের অবস্থান নিয়ে কথা বলেন।

সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক তাকে প্রথমেই প্রশ্ন করেন—সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য বা হুমকির কারণে কি তিনি ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, নাকি এটি কোনো অভ্যুত্থানের অংশ ছিল বা নিরাপত্তা বলয়ের নীরব সম্মতি?

এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, একসময় শান্তিপূর্ণ থাকা আন্দোলন অগাস্টের শুরুতে উগ্রপন্থি অংশের নেতৃত্বে সহিংস নৈরাজ্যে পরিণত হয়। ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলন থেকে পরিস্থিতি অনেক দূরে সরে গিয়ে হুমকির রূপ নেয়।

তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্রের চিত্রটি অনেক পরে গিয়ে স্পষ্ট হয়। যখন ইউনূস সহিংস আন্দোলনকারীদের দায়মুক্তি দিলেন এবং আমাদের সময়ের তদন্ত কার্যক্রম বাতিল করেন, তখনই বোঝা যায় সরকার উৎখাতের জন্য একটি ছক করা হয়েছিল। সেই সময় দেশে থাকা আমার জন্য বাঁচা-মরার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।”

শেখ হাসিনা জানান, তিনি দেশ ছাড়তে চাননি, কিন্তু তাকে বলা হয়েছিল—থেকে গেলে তার নিজের জীবনই নয়, তার কাছের মানুষদের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়বে।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তার সরকারকে হটানোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে। তিনি বলেছিলেন, “সেন্ট মার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিলে আমি ঠিকই ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”

১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সময়ে তিনি একাধিকবার এমন অভিযোগ তুলেছিলেন। বর্তমানে তিনি জুলাই আন্দোলন দমন-সংক্রান্ত অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখোমুখি।

তিনি, তার মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলের নেতারা ‘খুন ও গুমের’ অভিযোগে একাধিক মামলার আসামি।

সাক্ষাৎকারে তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়—জুলাই অভ্যুত্থানে ওয়াশিংটনের ভূমিকা কী ছিল? যুক্তরাষ্ট্র কি রাজনৈতিক সংস্কার চাইছিল, না কি সামরিক ও বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিল?

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “মার্কিন সরকারের সঙ্গে আমাদের বরাবরই ভালো সম্পর্ক ছিল। আমাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে মার্কিন সরকার বা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি সক্রিয়ভাবে এতে জড়িত ছিল। তবে ইউনূস প্রভাবশালী পশ্চিমা সমর্থকদের একটি বলয় তৈরি করেছিলেন, যারা তার অর্থনৈতিক তত্ত্বকে বিভ্রান্তিকরভাবে গণতান্ত্রিক যোগ্যতা হিসেবে ধরে নিয়েছিল।”

তার মতে, এখন সেই ভুল ধারণা ভাঙতে শুরু করেছে, এবং সমর্থকেরা ইউনূসের প্রকৃত চেহারা বুঝতে পারছেন।

তিনি বলেন, “তিনি অনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান, উপদেষ্টা পরিষদে উগ্রপন্থিদের স্থান দিয়েছেন, সংবিধান বদলে দিয়েছেন এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের সময় নীরব থেকেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক, প্রকাশ্যে ইউনূসকে অপছন্দ করার কথা বলেছেন।”

সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী ‘অসম্ভব পরিস্থিতির’ মধ্যে পড়েছিল—একদিকে সহিংসতা ঠেকিয়ে সাংবিধানিক সরকার রক্ষার চাপ, অন্যদিকে প্রাণহানি এড়ানো।

তিনি বলেন, “ঢাকার রাজপথে আমার পরিবার, কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তখন মুখ্য ছিল। বাইরের চাপ সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছিল কি না, তা আমি বলতে পারি না।”

ভারতের ভূমিকা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাকে আশ্রয় দেওয়ায় তিনি ভারতীয় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ।

তিনি বলেন, “ভারত বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং তারা চায় স্থিতিশীল ও নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসুক। দিল্লির সঙ্গে ইউনূসের দূরত্বের পেছনে আমার কোনো ভূমিকা নেই। এই দূরত্ব তৈরি হয়েছে তার উগ্রপন্থিদের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতা এবং ভারতবিরোধী বক্তব্যের কারণে।”

ইউনূস কি পশ্চিমাপন্থি ‘বেসামরিক মুখ’, নাকি আওয়ামীবিরোধী জোটের প্রতীক—এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, “অধ্যাপক ইউনূস ক্যালিফোর্নিয়ার সেলুনগুলোতে জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু তিনি গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের কোনো প্রতীক নন, তার বিশাল জনসমর্থনও নেই। তিনি অনির্বাচিত ব্যক্তি, অথচ এখন এমন একটি দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দিচ্ছেন, যে দলটি নয়বার ক্ষমতায় এসেছে এবং কোটি মানুষের সমর্থন পেয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমারা যদি মনে করে ইউনূস ‘বন্ধুসুলভ’, তাহলে তারা প্রতারিত হচ্ছে। বাস্তবে তার প্রশাসনের উগ্রপন্থিরা তাকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক, প্রতিশোধমূলক ও সামাজিকভাবে পশ্চাদমুখী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।”

back to top