সিলেট-৪ আসনের মতো এবার অশান্ত হয়ে উঠেছেন সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনের বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এই নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির কেন্দ্র থেকে ঘোষিত প্রার্থীকে মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
কেন্দ্রের মনোনীত প্রার্থীকে চাচ্ছে না বিয়ানীবাজার বিএনপি
২০১৮ সালে সংকটকালে সময়ে ফয়সল চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল এবং তিনি সারাদেশে বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই আসনটিতে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি
তারা প্রকাশ্যে বলছেন, দীর্ঘদিন থেকে যিনি নির্বাচনী মাঠের অলি-গলি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সেই ফয়সল চৌধুরীকে বাদ দিয়ে ‘সাধারণ মানুষের কাছে অচেনা’ একজনকে প্রার্থী দেয়া হয়েছে।
এবার ‘অজ্ঞাত কারণে’ ফয়সল চৌধুরীকে বাদ দেয়ায় নেতাকর্মীরা মিছিল-সমাবেশ করে এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই আসনটিতে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি করছেন।
গত ৭ নভেম্বর ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় দলীয় নেতাকর্মীরা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালের প্রতিকূল নির্বাচনী পরিবেশেও ফয়সল আহমদ চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে ১ লাখ ৮ হাজার ভোট পেয়েছিলেন — যা তখন বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে সারাদেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট ছিল।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিয়ানীবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান রুমেল এবং পরিচালনা করেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার হোসেন।
ছরওয়ার হোসেন বলেন, “২০১৮ সালের ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও ফয়সল আহমদ চৌধুরী এক মুহূর্তের জন্য পিছু হটেননি। তিনি দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে মাঠে লড়ে ১ লাখ ৮ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার এমন একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে যিনি সাংগঠনিকভাবে অভিজ্ঞ হলেও ভোটের রাজনীতি বোঝেন না। আমরা বিশ্বাস করি—ফয়সল আহমদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দিলে এই আসনে বিএনপি সহজেই জয়ী হবে।”
বিএনপির এই সভায় প্রকাশ্যে এ ধরণের মন্তব্যের পর কর্মী-সমর্থকরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন।
বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে যে স্বপ্ন দেখছিলাম, হঠাৎ করেই সেটি শেষ হয়ে গেল। মাঠের রাজনীতির অভিজ্ঞতা ছাড়া শুধু সাংগঠনিক যোগ্যতা দিয়ে এই আসনে জয় পাওয়া অসম্ভব।”
বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ফয়েজ আহমদ বলেন, “দীর্ঘ আওয়ামী দুঃশাসনের সময় ফয়সল আহমদ চৌধুরী ছিলেন আমাদের ভরসার জায়গা। আমরা যখন কারাগারে ছিলাম, তখনও তিনি পাশে ছিলেন, পরিবারের খোঁজ নিয়েছেন, এমনকি আর্থিক সহায়তাও করেছেন। এমন একজন নেতার বিকল্প এই মুহূর্তে গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারে নেই।”
বিয়ানীবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান রুমেল বলেন, “আমরা নেতাকর্মীদের আবেগ ও ভালোবাসাকে গুরুত্ব দিই। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত যেটিই হোক, আমরা দলের প্রতীক ধানের শীষের জন্য কাজ করব। তবে আমাদের নেতাকর্মীদের আশা — চূড়ান্ত মনোনয়নে ফয়সল আহমদ চৌধুরীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
৩ নভেম্বর প্রার্থী ঘোষণার আগ পর্যন্ত এলাকায় নির্বাচনী আমেজ ছিল। কিন্তু ঘোষণার পর থেকেই নেমে এসেছে ‘সুনশান নীরবতা’। স্থানীয়ভাবে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি ওঠায় বিএনপির মাঠপর্যায়ে এখন এক ধরনের অশান্ত অবস্থা বিরাজ করছে। আর এতে করে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী। যদিও এই আসন থেকে জামায়াত ইসলামী কখনও বিজয়ী হতে পারেনি।
এই আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীকে প্রাথমিক ভাবে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তার মনোনয়নের ঘোষণার পরই অশান্ত হয়ে ওঠে স্থানীয় বিএনপি। তবে এমরান আহমদ ফেইসবুকে এক খোলা চিঠিতে পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, “অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। আগে আমার বিরুদ্ধে কিন্তু কোনো ধরনের অপপ্রচার হয়নি। অথচ আমি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়েছে। তাই আমি বিশ্বাস করি, আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না।”
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
সিলেট-৪ আসনের মতো এবার অশান্ত হয়ে উঠেছেন সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনের বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এই নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির কেন্দ্র থেকে ঘোষিত প্রার্থীকে মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
কেন্দ্রের মনোনীত প্রার্থীকে চাচ্ছে না বিয়ানীবাজার বিএনপি
২০১৮ সালে সংকটকালে সময়ে ফয়সল চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল এবং তিনি সারাদেশে বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই আসনটিতে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি
তারা প্রকাশ্যে বলছেন, দীর্ঘদিন থেকে যিনি নির্বাচনী মাঠের অলি-গলি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সেই ফয়সল চৌধুরীকে বাদ দিয়ে ‘সাধারণ মানুষের কাছে অচেনা’ একজনকে প্রার্থী দেয়া হয়েছে।
এবার ‘অজ্ঞাত কারণে’ ফয়সল চৌধুরীকে বাদ দেয়ায় নেতাকর্মীরা মিছিল-সমাবেশ করে এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই আসনটিতে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি করছেন।
গত ৭ নভেম্বর ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় দলীয় নেতাকর্মীরা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালের প্রতিকূল নির্বাচনী পরিবেশেও ফয়সল আহমদ চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে ১ লাখ ৮ হাজার ভোট পেয়েছিলেন — যা তখন বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে সারাদেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট ছিল।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিয়ানীবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান রুমেল এবং পরিচালনা করেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার হোসেন।
ছরওয়ার হোসেন বলেন, “২০১৮ সালের ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও ফয়সল আহমদ চৌধুরী এক মুহূর্তের জন্য পিছু হটেননি। তিনি দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে মাঠে লড়ে ১ লাখ ৮ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার এমন একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে যিনি সাংগঠনিকভাবে অভিজ্ঞ হলেও ভোটের রাজনীতি বোঝেন না। আমরা বিশ্বাস করি—ফয়সল আহমদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দিলে এই আসনে বিএনপি সহজেই জয়ী হবে।”
বিএনপির এই সভায় প্রকাশ্যে এ ধরণের মন্তব্যের পর কর্মী-সমর্থকরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন।
বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে যে স্বপ্ন দেখছিলাম, হঠাৎ করেই সেটি শেষ হয়ে গেল। মাঠের রাজনীতির অভিজ্ঞতা ছাড়া শুধু সাংগঠনিক যোগ্যতা দিয়ে এই আসনে জয় পাওয়া অসম্ভব।”
বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ফয়েজ আহমদ বলেন, “দীর্ঘ আওয়ামী দুঃশাসনের সময় ফয়সল আহমদ চৌধুরী ছিলেন আমাদের ভরসার জায়গা। আমরা যখন কারাগারে ছিলাম, তখনও তিনি পাশে ছিলেন, পরিবারের খোঁজ নিয়েছেন, এমনকি আর্থিক সহায়তাও করেছেন। এমন একজন নেতার বিকল্প এই মুহূর্তে গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারে নেই।”
বিয়ানীবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান রুমেল বলেন, “আমরা নেতাকর্মীদের আবেগ ও ভালোবাসাকে গুরুত্ব দিই। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত যেটিই হোক, আমরা দলের প্রতীক ধানের শীষের জন্য কাজ করব। তবে আমাদের নেতাকর্মীদের আশা — চূড়ান্ত মনোনয়নে ফয়সল আহমদ চৌধুরীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
৩ নভেম্বর প্রার্থী ঘোষণার আগ পর্যন্ত এলাকায় নির্বাচনী আমেজ ছিল। কিন্তু ঘোষণার পর থেকেই নেমে এসেছে ‘সুনশান নীরবতা’। স্থানীয়ভাবে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি ওঠায় বিএনপির মাঠপর্যায়ে এখন এক ধরনের অশান্ত অবস্থা বিরাজ করছে। আর এতে করে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী। যদিও এই আসন থেকে জামায়াত ইসলামী কখনও বিজয়ী হতে পারেনি।
এই আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীকে প্রাথমিক ভাবে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তার মনোনয়নের ঘোষণার পরই অশান্ত হয়ে ওঠে স্থানীয় বিএনপি। তবে এমরান আহমদ ফেইসবুকে এক খোলা চিঠিতে পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, “অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। আগে আমার বিরুদ্ধে কিন্তু কোনো ধরনের অপপ্রচার হয়নি। অথচ আমি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়েছে। তাই আমি বিশ্বাস করি, আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না।”