মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে একটি মহল দেশে ‘নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রোববার, (১৬ নভেম্বর ২০২৫) জাতীয় প্রেসক্লাবে মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। ফখরুল বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার রায় হবে। এই নিয়ে সারাদেশে একটা অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক বিরাজ করছে। একটা মহল এটা নিয়ে বাংলাদেশে আবার নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য পাঁয়তারা করছে। আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সুযোগ আমরা পেয়েছি সেই সুযোগ যেন আমরা নষ্ট না করি। গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে যেন আমরা আরও সহজ করে তুলি।’ তিনি মামলার রায়ে ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার দাবি জানান।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি একটা বিভ্রান্ত অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে। রাজনীতিতে এমন এমন জিনিস ঢুকছে, যেটা বাংলাদেশের মানুষ চিন্তাই করতে পারে না। দুর্ভাগ্যক্রমে বর্তমান সময়টা অত্যন্ত জটিল সংকটে উপনীত হয়েছে। অনেক আশা, আকাক্সক্ষা, ভরসা নিয়ে আমরা ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে, মিথ্যা মামলা হয়েছে, নিহত হয়েছে, শহীদ হয়েছে। অবশেষে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা এই দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষের আকাক্সক্ষা, চাওয়াটা কিন্তু আমরা সঠিকভাবে ধরতে পারছি না। অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের সবার সমর্থনে এসেছে। তারা চেষ্টা করেছে রাজনৈতিক কাঠামোকে একটি জায়গায় নিয়ে আসার। সেটার জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কিনা সেটা কিন্তু এখনও বলার সময় আসেনি। আমরা বারবার বলেছি নির্বাচনই হচ্ছে একমাত্র পথ, যা দিয়ে আমরা গণতন্ত্রে যেতে পারবো এবং জনগণের আকাক্সক্ষাকে প্রতিফলিত করতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘অনেক বিভ্রান্তি, হতাশা এবং অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের এখন একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে কিছু গোষ্ঠী, কিছু মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে চায় এবং তারা বিভিন্ন রকম দাবি তুলে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়। এদেশের মানুষের এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে একটি নির্বাচিত সরকার যার পেছনে জনগণ থাকবে।’
সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি সব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানাবো, আর কালবিলম্ব না করে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিন।’ তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে, নির্বাচিত সরকার না থাকলে এটা আরও খারাপ হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই খারাপ হচ্ছে, নির্বাচিত সরকার না থাকলে এটা খুবই খারাপ হবে।’ মওলানা ভাসানীর জীবনাদর্শ বিএনপির নেতাকর্মীদের অনুসরণ করার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতাকে হত্যার হুকুমদাতা হিসেবে এবং ওই সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়সহ পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়ার জন্য আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেছে প্রসিকিউশন।
পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ‘১৪০০ আন্দোলনকারীকে হত্যা’; হত্যায় উসকানি; প্ররোচনা ও নির্দেশদাতা; ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’। এসব অভিযোগ প্রমাণে প্রসিকিউশন ৮১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে এবং এসকে সাদীর সঞ্চালনায় আলোচনা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, জাসাসের হেলাল খান, কৃষক দলের তকদীর হোসেন মো. জসিমসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রোববার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে একটি মহল দেশে ‘নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রোববার, (১৬ নভেম্বর ২০২৫) জাতীয় প্রেসক্লাবে মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। ফখরুল বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার রায় হবে। এই নিয়ে সারাদেশে একটা অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক বিরাজ করছে। একটা মহল এটা নিয়ে বাংলাদেশে আবার নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য পাঁয়তারা করছে। আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সুযোগ আমরা পেয়েছি সেই সুযোগ যেন আমরা নষ্ট না করি। গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে যেন আমরা আরও সহজ করে তুলি।’ তিনি মামলার রায়ে ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার দাবি জানান।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি একটা বিভ্রান্ত অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে। রাজনীতিতে এমন এমন জিনিস ঢুকছে, যেটা বাংলাদেশের মানুষ চিন্তাই করতে পারে না। দুর্ভাগ্যক্রমে বর্তমান সময়টা অত্যন্ত জটিল সংকটে উপনীত হয়েছে। অনেক আশা, আকাক্সক্ষা, ভরসা নিয়ে আমরা ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে, মিথ্যা মামলা হয়েছে, নিহত হয়েছে, শহীদ হয়েছে। অবশেষে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা এই দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষের আকাক্সক্ষা, চাওয়াটা কিন্তু আমরা সঠিকভাবে ধরতে পারছি না। অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের সবার সমর্থনে এসেছে। তারা চেষ্টা করেছে রাজনৈতিক কাঠামোকে একটি জায়গায় নিয়ে আসার। সেটার জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কিনা সেটা কিন্তু এখনও বলার সময় আসেনি। আমরা বারবার বলেছি নির্বাচনই হচ্ছে একমাত্র পথ, যা দিয়ে আমরা গণতন্ত্রে যেতে পারবো এবং জনগণের আকাক্সক্ষাকে প্রতিফলিত করতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘অনেক বিভ্রান্তি, হতাশা এবং অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের এখন একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে কিছু গোষ্ঠী, কিছু মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে চায় এবং তারা বিভিন্ন রকম দাবি তুলে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়। এদেশের মানুষের এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে একটি নির্বাচিত সরকার যার পেছনে জনগণ থাকবে।’
সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি সব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানাবো, আর কালবিলম্ব না করে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিন।’ তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে, নির্বাচিত সরকার না থাকলে এটা আরও খারাপ হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই খারাপ হচ্ছে, নির্বাচিত সরকার না থাকলে এটা খুবই খারাপ হবে।’ মওলানা ভাসানীর জীবনাদর্শ বিএনপির নেতাকর্মীদের অনুসরণ করার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতাকে হত্যার হুকুমদাতা হিসেবে এবং ওই সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়সহ পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়ার জন্য আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেছে প্রসিকিউশন।
পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ‘১৪০০ আন্দোলনকারীকে হত্যা’; হত্যায় উসকানি; প্ররোচনা ও নির্দেশদাতা; ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’। এসব অভিযোগ প্রমাণে প্রসিকিউশন ৮১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে এবং এসকে সাদীর সঞ্চালনায় আলোচনা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, জাসাসের হেলাল খান, কৃষক দলের তকদীর হোসেন মো. জসিমসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।