দেশের মানুষের পছন্দের জরিপে জামায়াতে ইসলামী এগিয়ে থাকলেও ভোটের জরিপে এগিয়ে আছে বিএনপি। তবে দু’দলের ব্যবধান খুব বেশি নয়। জরিপে অংশ নেয়া ৫৩ শতাংশ মানুষ জামায়াতকে পছন্দের কথা বলেছেন। বিএনপিকে পছন্দের কথা বলেছেন ৫১ শতাংশ মানুষ। ভোটের প্রশ্নে বিএনপিকে ভোট দেয়ার কথা বলেছেন ৩০ শতাংশ মানুষ। জামায়াতকে ভোট দেবেন বলেছেন ২৬ শতাংশ মানুষ।
পছন্দের জরিপে বৈষম্যবিরোধীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) পছন্দ করার কথা জানিয়েছেন ৩৮ শতাংশ মানুষ। তবে দলটিকে ভোট দেবেনে বলেছেন ৬ শতাংশ মানুষ।
জরিপে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতকরণ, দলটিকে পছন্দ করা ও ভোট দেয়ার ফলাফলও জানানো হয়েছে। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি, নির্বাচনের সময়কাল ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারসহ নানা প্রশ্নের ফলাফল উঠে এসেছে।
মার্কিন ফেডারেল সরকারের অর্থায়নে ‘রিপাবলিকান পার্টি-ঘনিষ্ঠ’ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) এক জরিপের ভিত্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
আইআরআই’র সেন্টার ফর ইনসাইটস ইন সার্ভে রিসার্চ প্রোগ্রামের আওতায় ‘ন্যাশনাল সার্ভে অব বাংলাদেশ’ জরিপটি পরিচালনা করেছে একটি স্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ২০২৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সাক্ষাৎকার নেয়া হয় সিএপিআই পদ্ধতিতে সরাসরি উপস্থিত হয়ে।
এই জরিপে ৪ হাজার ৯৮৫ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়, যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি। বাংলাদেশের আটটি বিভাগের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রাঙামাটি জেলা থেকে কোনো নমুনা বাছাই করা হয়নি।
জরিপকারীদের দাবি, এই জরিপের আস্থার পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। তবে আরও নিশ্চয়তার ভিত্তিতে ১ দশমিক ৪ শতাংশ এদিক-সেদিক হতে পারে। আইআরআইয়ের ওয়েবসাইটে গতকাল সোমবার জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
পছন্দে এগিয়ে জামায়াত
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে পছন্দে এগিয়ে আছে জামায়াতে ইসলামী। এ দলটির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্নে ৫৩ শতাংশ মানুষ পছন্দের কথা বলেছেন। বিএনপিকে নিয়ে প্রশ্নে দলটিকে পছন্দের কথা বলেছেন ৫১ শতাংশ মানুষ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কার্যক্রম পছন্দ করেছেন ৩৮ শতাংশ মানুষ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতি নিজেদের পছন্দের কথা জানিয়েছেন ৩৩ শতাংশ।
অন্যদিকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পছন্দ করেছেন ২৫ শতাংশ মানুষ। দলটির নিবন্ধন স্থগিত করা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ৪১ শতাংশ মানুষ কঠোর সমর্থন দিয়েছেন। ২৮ শতাংশ মোটামুটি সমর্থন দিয়েছেন। ১৬ শতাংশ বলেছেন ঠিক হয়নি। আর ১১ শতাংশ বলেছেন একেবারেই ঠিক হয়নি। ৫ শতাংশ মানুষ এই প্রশ্নের জবাব দেননি।
ভোটে এগিয়ে বিএনপি
যদি আগামী সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে কোন রাজনৈতিক দলকে ভোট দেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ৩০ শতাংশ মানুষ বিএনপির কথা বলেছেন। জামায়াতকে ভোট দিতে চান ২৬ শতাংশ। এরপরই রয়েছে এনসিপি (৬ শতাংশ), জাতীয় পার্টি (৫ শতাংশ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (৪ শতাংশ)। অন্যান্য দলকে ভোট দেবেন ৮ শতাংশ মানুষ।
জরিপে অংশ নেয়া ৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন, কাকে ভোট দেবেন সেই বিষয়ে তারা এখনও নিশ্চিত নন। আর ১১ শতাংশ উল্লিখিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন।
রাজনীতিতে ধর্ম
গত এক বছরে রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব বেড়েছে নাকি কমেছে? এই প্রশ্নের জবাবে জরিপে অংশ নেয়া ৫০ শতাংশ মানুষ বলেছেন ধর্মের প্রভাব বেড়েছে। এর মধ্যে ১৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন, অত্যন্ত বেড়েছে, ৩৪ শতাংশ বলেছেন মোটামুটি বেড়েছে।
আগের মতোই আছে বলেছেন ২৬ শতাংশ মানুষ। ১৪ শতাংশ মানুষ বলেছেন কিছুটা কমেছে। ৫ শতাংশ বলেছেন অত্যন্ত কমেছে। আর ৬ শতাংশ মানুষ এই প্রশ্নের কোন জবাব দেননি।
নির্বাচন কবে
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। প্রশ্ন রাখা হয়েছিল- আসছে নির্বাচনে ভোট দেবেন কিনা? ৬৬ শতাংশ বলেছেন, তারা ভোট দেবেন। ২৩ শতাংশ বলেছেন, কিছুটা সম্ভাবনা আছে। অন্যদিকে ৭ শতাংশ বলেছেন, তাদের ভোট দেয়ার সম্ভাবনা কম। ২ শতাংশ ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মতামত দেননি আরও ২ শতাংশ মানুষ। যারা ভোট দিতে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ৭১ শতাংশ। অন্যদিকে নারী ৬১ শতাংশ।
*গণতান্ত্রিক অবস্থা*
জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিকে ‘ভালো’ নাকি ‘মন্দ’ মনে করছেন? ২৯ শতাংশ বলেছেন, ‘খুবই ভালো’। ‘মোটামুটি ভালো’ বলেছেন ৪৩ শতাংশ। সবমিলিয়ে ৭২ শতাংশ মানুষ দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। অন্যদিকে ৭ শতাংশ মানুষের কাছে দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ‘খুবই খারাপ’।
জরিপে অংশ নেয়া ৫৩ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, এ সময়ে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। ৪২ শতাংশ মনে করছেন, ভুল পথে এগোচ্ছে।
*অন্তর্বর্তী সরকার*
অন্তর্বর্তী সরকার কেমন করছে এই প্রশ্নের জবাবে ২৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন, ‘খুবই ভালো’। আর ‘মোটামুটি ভালো’ বলেছেন, ৪৪ শতাংশ মানুষ। সব মিলিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন ৭০ শতাংশ মানুষ। পুরুষদের মধ্যে ৭২ শতাংশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে সন্তুষ্ট। নারীদের মধ্যে এ হার ৬৯ শতাংশ।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের ১৫ শতাংশ বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ‘মোটামুটি খারাপ’ করছে। ১১ শতাংশের মতে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড ‘খুবই খারাপ’।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূস ‘খুবই ভালো’ করছেন বলে মনে করেন ২৬ শতাংশ। আর ৪৩ শতাংশ মনে করছেন, তিনি ‘মোটামুটি ভালো’ করছেন। সবমিলিয়ে ৬৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থা রেখেছেন।
নারীদের তুলনায় বেশি সংখ্যক পুরুষ মনে করেন অধ্যাপক ইউনূস ভালো করছেন। পুরুষদের মধ্যে এ হার ৭০ শতাংশ। নারীদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ।
অন্যদিকে জরিপে অংশ নেয়া ১৭ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মোটামুটি খারাপ’ করছেন। ৯ শতাংশের কাছে প্রধান উপদেষ্টার কর্মকাণ্ড ‘বেশ খারাপ’।
*বিগত জরিপ*
এর আগে ২০১৮ সালে আইআরআই জরিপ চালিয়ে দেখতে পেয়েছিল, ৬৪ শতাংশ মানুষ তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর সন্তুষ্ট এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থাবান ছিলেন ৬৬ শতাংশ মানুষ।
আইআরআইয়ের ২০২৩ সালের জরিপে দেখা গিয়েছিল, দেশের অর্ধেক মানুষ দেশের তৎকালীন গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিকে ‘ভালো’ বলেছিলেন।
২০২৪ সালে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক বছর পার করার পর নতুন জরিপ করলো আইআরআই।
*বাংলাদেশ কি সঠিক পথে*
অগ্রযাত্রার পথে এখনকার অর্থনৈতিক অবস্থাকে ভালো বলেছেন ২০ শতাংশ মানুষ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন ১৭ শতাংশ; আর ৮ শতাংশ মনে করছেন, খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার হয়েছে ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রম গতি পেয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে বলে মনে করেন ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
অন্যদিকে জরিপে অংশ নেয়া ২২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করছেন, দ্রব্যমূল্য এখনও বেশি। ১৮ শতাংশের মতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। গণতন্ত্রের অভাব বোধ করেন ৮ শতাংশ। আর ৬ শতাংশের মতে, কর্মসংস্থানের সুযোগ এখনও কম এবং দুর্নীতি বাড়ছে। তাদের মতে, এগুলো দেশের অগ্রযাত্রার পথকে বিচ্যুত করতে পারে।
২০২৩ সালের জরিপে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের ভোটারদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ মনে করেন দেশ ভুল পথে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে প্রধান কারণ বলে মনে করেছিলেন তাদের মধ্যে থাকা ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে ৪৪ শতাংশ মানুষ মনে করেছিলেন দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। এর প্রধান কারণ, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন।
*একক প্রধান সমস্যা কোনটি*
বাংলাদেশের জন্য এককভাবে কোন সমস্যাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? জবাবে ২১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, দুর্নীতি। অন্যদিকে ১৮ শতাংশের মতে, সেটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, অপরাধ আর সন্ত্রাসবাদকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মনে করেন ১২ শতাংশ। ৮ শতাংশের মতে, বেকারত্ব। নির্বাচনী ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক দলে সংস্কারকে প্রধান সমস্যা বলেছেন ৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। ৬ শতাংশের মতে, প্রধান সমস্যা মাদক।
*বেশিরভাগই দেশ নিয়ে আশাবাদী*
জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কি দেশ নিয়ে আশাবাদী। জবাবে ‘খুবই আশাবাদী’ বলেছেন ৪২ শতাংশ মানুষ। ‘মোটামুটি আশাবাদী’ বলেছেন ৩৮ শতাংশ। অন্যদিকে ১১ শতাংশ বলেছেন, তাদের আশা ‘খুবই ক্ষীণ’। ‘একটুও আশাবাদী নন’ আরও ৬ শতাংশ মানুষ।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
দেশের মানুষের পছন্দের জরিপে জামায়াতে ইসলামী এগিয়ে থাকলেও ভোটের জরিপে এগিয়ে আছে বিএনপি। তবে দু’দলের ব্যবধান খুব বেশি নয়। জরিপে অংশ নেয়া ৫৩ শতাংশ মানুষ জামায়াতকে পছন্দের কথা বলেছেন। বিএনপিকে পছন্দের কথা বলেছেন ৫১ শতাংশ মানুষ। ভোটের প্রশ্নে বিএনপিকে ভোট দেয়ার কথা বলেছেন ৩০ শতাংশ মানুষ। জামায়াতকে ভোট দেবেন বলেছেন ২৬ শতাংশ মানুষ।
পছন্দের জরিপে বৈষম্যবিরোধীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) পছন্দ করার কথা জানিয়েছেন ৩৮ শতাংশ মানুষ। তবে দলটিকে ভোট দেবেনে বলেছেন ৬ শতাংশ মানুষ।
জরিপে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতকরণ, দলটিকে পছন্দ করা ও ভোট দেয়ার ফলাফলও জানানো হয়েছে। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি, নির্বাচনের সময়কাল ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারসহ নানা প্রশ্নের ফলাফল উঠে এসেছে।
মার্কিন ফেডারেল সরকারের অর্থায়নে ‘রিপাবলিকান পার্টি-ঘনিষ্ঠ’ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) এক জরিপের ভিত্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
আইআরআই’র সেন্টার ফর ইনসাইটস ইন সার্ভে রিসার্চ প্রোগ্রামের আওতায় ‘ন্যাশনাল সার্ভে অব বাংলাদেশ’ জরিপটি পরিচালনা করেছে একটি স্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ২০২৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সাক্ষাৎকার নেয়া হয় সিএপিআই পদ্ধতিতে সরাসরি উপস্থিত হয়ে।
এই জরিপে ৪ হাজার ৯৮৫ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়, যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি। বাংলাদেশের আটটি বিভাগের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রাঙামাটি জেলা থেকে কোনো নমুনা বাছাই করা হয়নি।
জরিপকারীদের দাবি, এই জরিপের আস্থার পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। তবে আরও নিশ্চয়তার ভিত্তিতে ১ দশমিক ৪ শতাংশ এদিক-সেদিক হতে পারে। আইআরআইয়ের ওয়েবসাইটে গতকাল সোমবার জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
পছন্দে এগিয়ে জামায়াত
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে পছন্দে এগিয়ে আছে জামায়াতে ইসলামী। এ দলটির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্নে ৫৩ শতাংশ মানুষ পছন্দের কথা বলেছেন। বিএনপিকে নিয়ে প্রশ্নে দলটিকে পছন্দের কথা বলেছেন ৫১ শতাংশ মানুষ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কার্যক্রম পছন্দ করেছেন ৩৮ শতাংশ মানুষ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতি নিজেদের পছন্দের কথা জানিয়েছেন ৩৩ শতাংশ।
অন্যদিকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পছন্দ করেছেন ২৫ শতাংশ মানুষ। দলটির নিবন্ধন স্থগিত করা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ৪১ শতাংশ মানুষ কঠোর সমর্থন দিয়েছেন। ২৮ শতাংশ মোটামুটি সমর্থন দিয়েছেন। ১৬ শতাংশ বলেছেন ঠিক হয়নি। আর ১১ শতাংশ বলেছেন একেবারেই ঠিক হয়নি। ৫ শতাংশ মানুষ এই প্রশ্নের জবাব দেননি।
ভোটে এগিয়ে বিএনপি
যদি আগামী সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে কোন রাজনৈতিক দলকে ভোট দেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ৩০ শতাংশ মানুষ বিএনপির কথা বলেছেন। জামায়াতকে ভোট দিতে চান ২৬ শতাংশ। এরপরই রয়েছে এনসিপি (৬ শতাংশ), জাতীয় পার্টি (৫ শতাংশ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (৪ শতাংশ)। অন্যান্য দলকে ভোট দেবেন ৮ শতাংশ মানুষ।
জরিপে অংশ নেয়া ৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন, কাকে ভোট দেবেন সেই বিষয়ে তারা এখনও নিশ্চিত নন। আর ১১ শতাংশ উল্লিখিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন।
রাজনীতিতে ধর্ম
গত এক বছরে রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব বেড়েছে নাকি কমেছে? এই প্রশ্নের জবাবে জরিপে অংশ নেয়া ৫০ শতাংশ মানুষ বলেছেন ধর্মের প্রভাব বেড়েছে। এর মধ্যে ১৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন, অত্যন্ত বেড়েছে, ৩৪ শতাংশ বলেছেন মোটামুটি বেড়েছে।
আগের মতোই আছে বলেছেন ২৬ শতাংশ মানুষ। ১৪ শতাংশ মানুষ বলেছেন কিছুটা কমেছে। ৫ শতাংশ বলেছেন অত্যন্ত কমেছে। আর ৬ শতাংশ মানুষ এই প্রশ্নের কোন জবাব দেননি।
নির্বাচন কবে
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। প্রশ্ন রাখা হয়েছিল- আসছে নির্বাচনে ভোট দেবেন কিনা? ৬৬ শতাংশ বলেছেন, তারা ভোট দেবেন। ২৩ শতাংশ বলেছেন, কিছুটা সম্ভাবনা আছে। অন্যদিকে ৭ শতাংশ বলেছেন, তাদের ভোট দেয়ার সম্ভাবনা কম। ২ শতাংশ ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মতামত দেননি আরও ২ শতাংশ মানুষ। যারা ভোট দিতে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ৭১ শতাংশ। অন্যদিকে নারী ৬১ শতাংশ।
*গণতান্ত্রিক অবস্থা*
জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিকে ‘ভালো’ নাকি ‘মন্দ’ মনে করছেন? ২৯ শতাংশ বলেছেন, ‘খুবই ভালো’। ‘মোটামুটি ভালো’ বলেছেন ৪৩ শতাংশ। সবমিলিয়ে ৭২ শতাংশ মানুষ দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। অন্যদিকে ৭ শতাংশ মানুষের কাছে দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ‘খুবই খারাপ’।
জরিপে অংশ নেয়া ৫৩ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, এ সময়ে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। ৪২ শতাংশ মনে করছেন, ভুল পথে এগোচ্ছে।
*অন্তর্বর্তী সরকার*
অন্তর্বর্তী সরকার কেমন করছে এই প্রশ্নের জবাবে ২৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন, ‘খুবই ভালো’। আর ‘মোটামুটি ভালো’ বলেছেন, ৪৪ শতাংশ মানুষ। সব মিলিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন ৭০ শতাংশ মানুষ। পুরুষদের মধ্যে ৭২ শতাংশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে সন্তুষ্ট। নারীদের মধ্যে এ হার ৬৯ শতাংশ।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের ১৫ শতাংশ বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ‘মোটামুটি খারাপ’ করছে। ১১ শতাংশের মতে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড ‘খুবই খারাপ’।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূস ‘খুবই ভালো’ করছেন বলে মনে করেন ২৬ শতাংশ। আর ৪৩ শতাংশ মনে করছেন, তিনি ‘মোটামুটি ভালো’ করছেন। সবমিলিয়ে ৬৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থা রেখেছেন।
নারীদের তুলনায় বেশি সংখ্যক পুরুষ মনে করেন অধ্যাপক ইউনূস ভালো করছেন। পুরুষদের মধ্যে এ হার ৭০ শতাংশ। নারীদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ।
অন্যদিকে জরিপে অংশ নেয়া ১৭ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মোটামুটি খারাপ’ করছেন। ৯ শতাংশের কাছে প্রধান উপদেষ্টার কর্মকাণ্ড ‘বেশ খারাপ’।
*বিগত জরিপ*
এর আগে ২০১৮ সালে আইআরআই জরিপ চালিয়ে দেখতে পেয়েছিল, ৬৪ শতাংশ মানুষ তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর সন্তুষ্ট এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থাবান ছিলেন ৬৬ শতাংশ মানুষ।
আইআরআইয়ের ২০২৩ সালের জরিপে দেখা গিয়েছিল, দেশের অর্ধেক মানুষ দেশের তৎকালীন গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিকে ‘ভালো’ বলেছিলেন।
২০২৪ সালে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক বছর পার করার পর নতুন জরিপ করলো আইআরআই।
*বাংলাদেশ কি সঠিক পথে*
অগ্রযাত্রার পথে এখনকার অর্থনৈতিক অবস্থাকে ভালো বলেছেন ২০ শতাংশ মানুষ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন ১৭ শতাংশ; আর ৮ শতাংশ মনে করছেন, খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার হয়েছে ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রম গতি পেয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে বলে মনে করেন ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
অন্যদিকে জরিপে অংশ নেয়া ২২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করছেন, দ্রব্যমূল্য এখনও বেশি। ১৮ শতাংশের মতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। গণতন্ত্রের অভাব বোধ করেন ৮ শতাংশ। আর ৬ শতাংশের মতে, কর্মসংস্থানের সুযোগ এখনও কম এবং দুর্নীতি বাড়ছে। তাদের মতে, এগুলো দেশের অগ্রযাত্রার পথকে বিচ্যুত করতে পারে।
২০২৩ সালের জরিপে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের ভোটারদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ মনে করেন দেশ ভুল পথে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে প্রধান কারণ বলে মনে করেছিলেন তাদের মধ্যে থাকা ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে ৪৪ শতাংশ মানুষ মনে করেছিলেন দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। এর প্রধান কারণ, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন।
*একক প্রধান সমস্যা কোনটি*
বাংলাদেশের জন্য এককভাবে কোন সমস্যাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? জবাবে ২১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, দুর্নীতি। অন্যদিকে ১৮ শতাংশের মতে, সেটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, অপরাধ আর সন্ত্রাসবাদকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মনে করেন ১২ শতাংশ। ৮ শতাংশের মতে, বেকারত্ব। নির্বাচনী ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক দলে সংস্কারকে প্রধান সমস্যা বলেছেন ৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। ৬ শতাংশের মতে, প্রধান সমস্যা মাদক।
*বেশিরভাগই দেশ নিয়ে আশাবাদী*
জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কি দেশ নিয়ে আশাবাদী। জবাবে ‘খুবই আশাবাদী’ বলেছেন ৪২ শতাংশ মানুষ। ‘মোটামুটি আশাবাদী’ বলেছেন ৩৮ শতাংশ। অন্যদিকে ১১ শতাংশ বলেছেন, তাদের আশা ‘খুবই ক্ষীণ’। ‘একটুও আশাবাদী নন’ আরও ৬ শতাংশ মানুষ।