দেশের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ‘অরাজকতা’ বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সামনে কঠিন সময় আসছে বলেও শঙ্কা তার। তাই যে কোনো মূল্যে দেশের দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলার লাগাম টেনে ধরার কথা দৃঢ়ভাবে বলেছেন তিনি। এই দুটি বিষয় সফল না হলে নারী, কৃষি, স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
দেশে ধর্মের নামে একটি গোষ্ঠী বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল
আর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ একটি মহল বাংলাদেশে একটা বড় বিভাজনের পথ তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দেশে ধর্মের নামে একটি গোষ্ঠী বিভাজন সৃষ্টি করছে।’ ফখরুলের মতে বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু এবং ধর্ম মেনে চলে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বাস করবে, যা ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মূলভিত্তি।
রোববার, (০৭ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান দাবি করেন, দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সব উন্নয়ন পরিস্থিতি পিছিয়ে যাবে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশে একমাত্র বিএনপিই দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে পারবে। দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলার লাগাম টেনে ধরতে হবে এটাই বিএনপি’র অঙ্গীকার।’
বিএনপি বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা বা আমেরিকার মতো বানাতে চায় না, বরং ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে চায় বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি মনে করেন, দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দিতে হলে পরিকল্পনা থাকতে হবে। তারেক রহমান উল্লেখ করে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে দেশ যখন সংকটের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, তখন বিএনপি ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেই দেশকে স্বাধীন করার জন্য লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে সেই দেশকে গড়তেও কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করতে হবে।’
‘ধর্মের নামে বিভাজন মানি না’ এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব স্পষ্ট করে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু এবং ধর্ম মেনে চলে। তাই বলে ধর্ম নিয়ে রাষ্ট্রকে বিভাজন করা বা সমাজকে বিভাজন করা, আমরা এটাতে বিশ্বাস করি না।’ দলটির মহাসচিব তারেক রহমানের দেয়া ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগানটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। মির্জা ফখরুল দাবি করেন, বিএনপি সবসময় দেশের জন্য পথ, জানালা ও রাস্তা খুলে দিয়েছে। তিনি বিএনপির সফলতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অফ গভর্নমেন্ট থেকে পার্লামেন্টারি ফর্ম অফ গভর্নমেন্ট নিয়ে এসেছিলেন। মেয়েদের শিক্ষার জন্য ক্লাস টেন পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার ব্যবস্থা তিনিই প্রথম শুরু করেছিলেন।’ অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান রাজস্ব আয়ের জন্য ভ্যাট প্রথা প্রথম শুরু করেছিলেন বলেও জানান তিনি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তা অবশ্যই বিএনপির মাধ্যমে এসেছে।’
মির্জা ফখরুল তরুণ প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বর্তমানে বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম চক্রান্ত ও অপপ্রচার চলছে। সাইবার ওয়ারে যদি আমি যোদ্ধা হতে না পারি তাহলে কিন্তু আমি পরাজিত হয়ে যাব।’ তরুণ প্রজন্মকে সাইবার যুদ্ধে যোদ্ধা হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ছাত্রদলকে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য ভ্যানগার্ড বা অগ্রবর্তী সৈনিক হিসেবে থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কমিটি, পদচারণ বা কাজ বাড়াতে হবে, কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদলের যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সামনের নির্বাচনে এই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা ছাত্রদলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে যে, বিএনপিই একমাত্র রাজনৈতিক দল যা জাতিকে একটি সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত করতে পারে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং সঞ্চালনায় ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।