ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে নতুন একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করেছে; যেটির নাম দেয়া হয়েছে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’। নতুন জোটের মুখপাত্র হিসেবে থাকছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। রোববার,(০৭ ডিসেম্বর ২০২৫) বিকেলে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ জোট গঠনের ঘোষণা আসে।
এটা কেবল নির্বাচনী জোট নয়; এই জোটটা মূলত রাজনৈতিক জোট: জোটের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম
নাম ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’; যাতে আরও অনেকে যুক্ত হবেন বলে আশা করছেন জোটের নেতারা
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন জোট গঠনের লক্ষ্যে গত নভেম্বর মাসের শুরুতেই রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বানে তাদের কার্যালয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দল বৈঠক করে। নতুন জোটের আলোচনায় মোট নয়টি দলের অংশ নেয়ার কথা গণমাধ্যমে উঠে আসে, যাদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধীদের গড়া দল এনসিপি এবং জামায়াতে ইসলামী থেকে বের হয়ে গঠিত এবি পার্টির সঙ্গে নুরুল হক নূরের গণঅধিকার পরিষদ, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য এবং গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক নেতাও ছিলেন।
গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়, রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে সরব এমন আরও কিছু দল, সংগঠন, মের্চা, প্ল্যাটফর্ম ও প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তি পরবর্তিতে এ জোটে যুক্ত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শরীক দলগুলোর নেতারা নিজেদের মধ্যে বিস্তারিত আলাপ শেষে জোটের বিস্তারিত কর্মসূচি অচিরেই তুলে ধরবেন। এই মূহুর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু তারা বলতে চান না। তাই সংবাদ সম্মেলনে তিনটির বেশি প্রশ্ন নেয়া হবে না। জোটের প্রধান কে হবেন, এই প্রশ্নের উত্তর রোববারের সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়নি।
নতুন এ রাজনৈতিক জোটের ঘোষণা দিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এই ঐক্য প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। আমরা যারা সংস্কারের পক্ষে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম এবং মর্যাদাবান রাষ্ট্রের পক্ষে এতদিন লড়াই করেছি তারা এই জোটে ঐক্যবদ্ধ থাকবো। এটা কেবল নির্বাচনী জোট নয়; এই জোটটা মূলত রাজনৈতিক জোট।’
জোট ঘোষণার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরে যে পরিবর্তনের আকাঙ্খা বাংলাদেশে তৈরি হয়েছিল, মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছিল- গত দেড় বছরে ঐকমত্য কমিশনে আমরা তার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে পারি নাই।’
অনেক রাজনৈতিক দল সংস্কারের বিরোধীতা করছে দাবি করে নতুন জোটের মুখপাত্র নাহিদ বলেন, ‘এ নিয়ে আমাদের অনেক হতাশা রয়েছে। আমরা যারা মন থেকে সংস্কার চাচ্ছি সেই রাজনৈতিক শক্তিগুলো আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘এই আন্দোলনে এবং এই সংস্কারের পক্ষে যারা জীবন দিয়েছে তাদের পক্ষে রাজনীতিবিদরা কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পারবে তা নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের ওপর। সংস্কারের সেই আকাঙ্খা বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রাথমিকভাবে তিন সংগঠন যাত্রা করছি। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশে প্রধানত এখন যারা রাজনীতি করেন তারা প্রত্যেকে এই সংস্কারের আকাঙ্খাকে ধারণ করেন। একাত্তরের আকাঙ্খা চব্বিশ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয় নাই, ছাব্বিশের নির্বাচনে সেটা বাস্তবায়ন হবে বলে আমরা আশা করি।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু বলেন, ‘তরুণদের কাছে আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল তা নানা কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পুরনো রাজনীতির প্রতি এদেশের মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে, মানুষের মধ্যে খুবই বিরক্তি দেখা দিয়েছে। যার ফলে সবাই চান একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আসুক। জুলাই অভ্যুত্থানের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে একটা নতুন রাজনৈতিক দিশা দেয়ার জন্য আমরা প্রাথমিকভাবে তিনটা দল হাতে হাত মিলিয়ে আপনাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। আমাদের অনেক ভুল ত্রুটি আছে। আজকে আমি সবার পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই। আমাদেরকে যারা বিভ্রান্ত করেছে, ভুল পথে পরিচালিত করেছে, সবকিছুর পর্যালোচনার পর আমরা একটা নতুন অভিযাত্রায় আসতে চাই।’
এই জোটের সব সদস্য একই প্রতীকে নির্বাচন করতে চায় বলে তাদের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন নাহিদ ইসলাম। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
প্রশ্নত্তোরে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মঞ্জু বলেন, নিজেদের মধ্যে বিস্তারিত আলাপ শেষে জোটের বিস্তারিত কর্মসূচি অচিরেই তুলে ধরা হবে।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব মিনার, ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল দিদারুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসরীন সুলতানা মিলি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সহ-সভাপতি সাইদুল খন্দকার সবুজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সোহেল শিকদারসহ জোটের শরীক দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।