নির্বাচনে ব্যক্তিগত পছন্দ বা প্রার্থীর সঙ্গে সম্পর্কের চেয়ে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক ও দলীয় সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই সঙ্গে কারও নাম উল্লেখ না করে জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, ‘আমি ভালো আর সব খারাপ’ এমন ধারণা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
‘আমি ভালো, সবাই খারাপ’ এই ধারণা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক
ধানের শীষের জন্য কাজ করতে হবে; প্রার্থী মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে দল
নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির মধ্যে যে আন্তঃকোন্দল দেখা দিয়েছে সেদিকে ইঙ্গিত করে দলের নেতাকর্মীদেরও সতর্ক করেছেন তারেক রহমান। সামনে ‘কঠিন যুদ্ধ’ উল্লেখ করে বিভেদ মিটিয়ে ফেলার আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ঐক্যবদ্ধ না হলে সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
সোমবার,(০৮ ডিসেম্বর ২০২৫) ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে আয়োজিত এই কর্মশালায় ছাত্রদলের সারাদেশের ৭৫টি ইউনিটের এক হাজারেরও বেশি নেতা অংশ নেন।
ধানের শীষই মুখ্য, প্রার্থী নয়
তারেক রহমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বিভিন্ন আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো কর্মী হয়তো অন্য একজনকে পছন্দ করতেন যিনি হয়তো মনোনয়ন পাননি অথবা যিনি পেয়েছেন তার সঙ্গে হয়তো তার সম্পর্ক কিছুটা কম। এমন পরিস্থিতিতে তিনি কর্মীদের প্রতি দলীয় প্রতীকের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ভাইরে তুমি তো প্রার্থীর জন্য কাজ করছো না, তুমি তো তোমার ধানের শীষের জন্য কাজ করছো। এখানে প্রার্থী মুখ্য নয়, এখানে মুখ্য হচ্ছে তোমার দল বিএনপি, এখানে মুখ্য হচ্ছে ধানের শীষ, এখানে মুখ্য হচ্ছে দেশ।’ মানুষ ধানের শীষের পক্ষে রায় দিলে দেশ গড়ার প্রত্যেকটা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
‘আমি ভালো আর সব খারাপ’ গণতন্ত্রের জন্য হুমকি
জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে তারেক বলেন, ‘আমি ভালো আর সব খারাপ’ আওয়ামী লীগ আমলের এই প্রচার এখনও চলছে। গত ১৬ বছর ধরে এমন একটি বিষয় আমরা দেখেছি। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ তারিখের পরেও মনে হচ্ছে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এই ধারণার পরিবর্তন হওয়া জরুরি। বিশেষ একজন ভালো আর বাকি সবাই খারাপ, এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এই ধারণার পরিবর্তন হতে হবে।’ বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং মানুষের মতামত দেয়ার ও বক্তব্য রাখার অধিকার আছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান।
দেশ গড়ার পরিকল্পনা ও
পরবর্তী কর্মপন্থা
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। এছাড়া খাল খনন, বায়ুদূষণ রোধ, পরিবেশের উন্নয়ন, বর্জ্য অপসারণ ও ক্রীড়ার উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলোও তিনি ব্যাখ্যা করেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এই পরিকল্পনাগুলো শুধুমাত্র পরিকল্পনার মধ্যে রাখা হবে না, জনগণকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে জনগণের কাছে বিএনপির এই পরিকল্পনাগুলো নিয়ে যাওয়া এবং তাদের সমর্থন জোগাড় করার জন্য তাগিদ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের ইমিডিয়েট ভবিষ্যৎ তোমাদের ওপরে। তোমরা যদি এগিয়ে আসো, তোমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হও তাহলে এদেশের সামনে একটি ভবিষ্যৎ আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমাদের আর বসে থাকার সময় নেই।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সভাপতিত্ব করেন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির বিশেষ সহকারী সাইমুম পারভেজ, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।