সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রথম ধাপে ১২৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বুধবার,(১০ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রার্থীদের নাম ঘোষণার আগে এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, যেসব ব্যক্তি তাদের নিজ নিজ দলে আর্থিক প্রভাবের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন কিন্তু তাদের প্রতি জনগণের আস্থা রয়েছে, এনসিপি তাদের জন্যও উন্মুক্ত। এবার এনসিপির মনোনয়নে একটি বড় চমক হচ্ছে বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদেরকে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন দেয়া।
অভিযোগ থাকলে মনোনয়ন বাতিল হবে
গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেয়ার আহ্বান
মনোনয়ন পেলেন বিএনপি নেতা মঞ্জুর
সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন বলেন, দেশের সব শ্রেণীর মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, যাতে নারী-পুরুষ উভয়েই অন্তর্ভুক্ত হন। কোনো প্রার্থী নিয়ে জনগণ অভিযোগ জানালে এনসিপি তা পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনে মনোনয়ন বাতিল করবে।
এনসিপির মনোনয়ন তালিকায় দলের আলোচিত নেতাদের মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ আসনে, সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪ আসনে, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম পঞ্চগড়-১ আসনে এবং মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা ঢাকা-৯ আসনে এবং সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ঘোষণার আগে এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এনসিপি আসন্ন নির্বাচনে ‘ব্যালট বিপ্লব’ ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি ভোটারদের আসন্ন গণভোটে ‘হ্যাঁ’ অপশনে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান এবং প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতীক ‘শাপলা কলি’-এর পাশাপাশি ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা দেন।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব তাসনিম জারা জানান, দেড় হাজার হাজারের বেশি ব্যক্তি এনসিপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ফ্যাসিজমসহ অন্যায়ের সঙ্গে জড়িতের প্রমাণ পেলে প্রাথমিকভাবে ঘোষিত প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা হবে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা এটা জনগণের কাছে উন্মুক্ত করেছি। এটাও একটা ভেরিফিকেশনের জন্য, যদি কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে, দুর্নীতি-সন্ত্রাস বা ফ্যাসিজমের সঙ্গে জড়িত হলে সেই প্রার্থী বাতিল হবে। আমাদের এই প্রক্রিয়া কিন্তু চলমান আছে। চলমান থাকবে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ পদত্যাগ করে এনসিপিতে আসছে কিনা? ঢাকা-১০ আসনে এখনও কাউকে মনোনয়ন না দেয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা কোনো আসন বিশেষ কারও জন্য ফাঁকা রাখিনি। আমরা যে কয়টা আসন এখন পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হতে পেরেছি। আমাদের যে মনোনয়ন বোর্ড রয়েছেন, তারা আমাদের কাছে যে রিপোর্ট দিয়েছে, সে অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, যতদিন না আমরা চূড়ান্তভাবে ৩০০ মনোনয়ন দিচ্ছি, আমাদের দলে এখনও আসার সুযোগ আছে। আমাদের দলের যেই জায়গায় নমিনেশন দেয়া হয়নি বা দেয়া হয়েছে, সেই জায়গা যদি আমরা আরও ভালো ক্যান্ডিডেট পাই বা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে তাকে বাতিল করা হবে।
বড় চমক সাবেক প্রতিমন্ত্রী মঞ্জুরের মনোনয়ন
সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি ও চৌহালী) আসনে বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদেরকে মনোনয়ন দেয়া একটি বড় চমক হিসেবে দেখছেন দলের নেতাকর্মীরা। মঞ্জুর কাদের ২০০১ সালে সাবেক সিরাজগঞ্জ-৬ (চৌহালী ও শাহজাদপুরের একাংশ) আসনে বিএনপি প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন। ওই আসনটি বিলুপ্ত হওয়ার পর ২০০৮ সালে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি ও চৌহালী) আসন থেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের প্রার্থী হন। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের কাছে মাত্র ২৫৫ ভোটে পরাজিত হন।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকের দাবিদার ছিলেন মঞ্জুর কাদের। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমকে মনোনয়ন দেয়।
মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন মঞ্জুর কাদেরের সমর্থকরা। অবশেষে জাতীয় নাগরিক পার্টি বিএনপি নেতা মঞ্জুর কাদেরকে মনোনয়ন দিয়েছে।