হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন বলে খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। বার্তা সংস্থা আইএএনএসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। যার বরাতে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে হাসিনা ভারতের দিল্লিতে আছেন।
ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস (আইএএনএস) লিখেছে, তারা ই-মেইলে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিয়েছে।
সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার বর্তমান সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থা এবং তিনি যেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন সেই হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়েছেন শুনে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমি প্রার্থনা করি, তিনি যাতে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।’বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার পরিচিতি ‘দুই নেত্রী’ হিসেবে। বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে তারা দুজন মোট ৩০ বছরের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এক সময় তাদের বৈরী সম্পর্ক বিদেশি সংবাদমাধ্যমে ‘দুই বেগমের লড়াই’ হিসেবে চিত্রায়িত হতো।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০১৮ সালে খালেদা জিয়াকে দুর্নীতি মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। দুই বছর পর মহামারীর মধ্যে শর্তসাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে তাকে সাময়িক মুক্তি দেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বেশ কয়েকবার খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তার দল ও স্বজনরা চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে চাইলেও সে অনুমতি শেখ হাসিনার সরকার তখন দেয়নি। বরং খালেদার হাসপাতালে যাওয়া নিয়ে প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে ‘কটাক্ষও করেছেন’ শেখ হাসিনা।
২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকারকে দায়ী করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। অন্যদিকে বিএনপি নেতারাও খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়; তিনি দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার পুরোপুরি মুক্তি মেলে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুর্নীতি মামলার দায় থেকেও তাকে (খালেদা) খালাস দেয় আদালত।
আন্দোলন দমাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এছাড়া প্লট দুর্নীতির অভিযোগে আরও দুটি মামলায় তার সাজার রায় এসেছে।
অন্যদিকে ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদযন্ত্রের জটিলতা, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির সমস্যাসহ নানা দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হলে তার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি। তার অবস্থা সংকটজনক বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল তার চিকিৎসা তত্ত্বাবধান করছে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হলেও নতুন করে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এখনও তা সম্ভব হয়নি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের চেয়ারপারসনকে বিদেশে নেয়ার বিষয়টি এখন নির্ভর করছে তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, উড়োজাহাজে ভ্রমণের মতো শারীরিক সক্ষমতা এবং মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর।