নির্বাচনী তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো

বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি, ৩০০ আসনে একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে ‘জুলাই জাতীয় সনদ সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’-এর ওপর গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। এই তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এই তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল ঘোষণার পরপরই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একে স্বাগত জানিয়েছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।

বিএনপি: প্রধান নির্বাচন কমিশনারের তফসিল ঘোষণায় জনগণ আশ্বস্ত হয়েছে এবং এর মাধ্যমে ভোটের অধিকার বাস্তবায়ন হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘এটা ভোট রাজনীতির ইতিহাসে বড় ঘটনা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চায় এবং জনগণের যে ভোটের অধিকার সেটাকে বাস্তবায়ন করতে চায় ও সেটাকে নিশ্চিত করতে চায়।’ নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্যভাবে ভোট আয়োজন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে।

জামায়াত: তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে জামায়াতের মুখপাত্র এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে।’ তিনি জানান, গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত করতে জামায়াতসহ ৮ দলীয় জোট মাঠে থাকবে এবং শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। তবে তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে দলটি আনন্দ মিছিলও করেছে। মিছিল পরবর্তী পথসভায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণের নায়েবে আমীর হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের মাধ্যমে প্রশাসনকে নিরপেক্ষতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।’ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে তিনি দেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলে মন্তব্য করেন। এই অধ্যায়কে কোনোভাবেই বিতর্কিত না করার আহ্বান জানান তিনি।

ইসলামী আন্দোলন: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব ও দলীয় মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় স্বাগত জানিয়ে এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, জনগণের প্রত্যাশামাফিক ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের যে তফসিল ঘোষিত হয়েছে তাকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে স্বাগত জানায়। নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু, অবাধ, ক্রেডিবল ও উৎসবমুখর নির্বাচন জাতিকে উপহার দেবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

গাজী আতাউর রহমান আরও বলেন, আমরা শেষাবধি আশা করেছিলাম যে, সরকার ও নির্বাচন কমিশন আন্দোলনরত আটদলের দাবি মেনে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করবে এবং জাতীয় ভোটের আগে গণভোট আয়োজন করবে। আমাদের সেই দাবি উপেক্ষিত হলো। তথাপিও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমরা একে স্বাগত জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস: ইসি ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনের আমীর মাওলানা মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা আশা করি তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অর্থবহ নির্বাচনের পথ সুগম হবে।

বিবৃতিতে তারা বলেন, নির্বাচন যেন প্রকৃত অর্থে জনগণের ভোটাধিকার ও মতামত প্রতিফলিত করতে পারে তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সে লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।

খেলাফত মজলিস: প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক ঘোষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে খেলাফত মজলিসও। তফসিল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ঘোষিত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত সময় যা সচেতন রাজনৈতিক মহলের আগে থেকেই দাবি ছিল। তফসিলে ঘোষিত বিভিন্ন সময়সীমা যথার্থ হলেও একই দিন গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা একটি দুরূহ কাজ। এই ক্ষেত্রে বাজেট, দক্ষ জনবল ও ভোটারদের সচেতনতার সমন্বয় থাকতে হবে।

নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনও প্রস্তুত নয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে দাবি তাদের। পেশীশক্তির রাজনীতি ও কালো টাকার প্রভাবে রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে এমন অভিযোগ এনে তারা আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী লুট হওয়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত যৌথ বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। পরাজিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদি অপশক্তি এখনও ষড়যন্ত্র ও নাশকতায় লিপ্ত।’

প্রধান উপদেষ্টা: তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেন, ‘এই তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অতিক্রম করলো।’

‘রাজনীতি’ : আরও খবর

» নির্বাচনকে ‘সবচেয়ে কঠিন লড়াই’ বললেন ফখরুল

সম্প্রতি