image

মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে গুলি, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির অবস্থা ‘খুবই খারাপ’

শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে আঘাত করা গুলিটি মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা। তার মাথায় অস্ত্রোপচার পরিচালনাকারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জাহিদ রায়হান জানিয়েছেন, হাদির অবস্থা ‘খুবই খারাপ’। তার বিষয়ে আশার কোনো কথা বলতে পারছেন না তারা।

শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অধ্যাপক জাহিদ রায়হান। তিনি বলেন, হাদির দুবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরও নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। এই রোগীর বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, “উনি সর্বোচ্চ খারাপ অবস্থায় আছেন, কিন্তু এখনো বেঁচে আছেন। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।”

অধ্যাপক জাহিদ রায়হান আরও জানান, অস্ত্রোপচারের সময় হাদির খুলি খুলে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ধরনের ক্ষেত্রে মগজের ভেতরের জমে থাকা রক্ত বের করে চাপ কমানোর জন্য খুলি খুলে রাখা হয়, যাতে মগজ স্বাভাবিকভাবে প্রসারিত হওয়ার সুযোগ পায়। এটিই এ ধরনের রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা। অস্ত্রোপচারের পর উন্নত আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হওয়ায় স্বজনদের মতামতের ভিত্তিতে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়।

গুলিটি মাথার ভেতরে রয়েছে নাকি বেরিয়ে গেছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ রায়হান বলেন, খুব সম্ভবত গুলিটি বেরিয়ে গেছে। তিনি জানান, গুলি ডান দিক দিয়ে ঢুকে বাম দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে বলে তারা ধারণা করছেন। তার ভাষায়, “আমরা মনে করছি, বুলেটটা হাড় ভেঙে বেরিয়ে গেছে।” তবে বুলেটের কিছু ছোট ছোট অংশ মাথার ভেতরে থেকে গিয়েছিল, যেগুলো অস্ত্রোপচারের সময় বের করে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যদি গুলি মগজের ভেতরে থেকে যায়, তাহলে সেটি একেবারে মগজের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে। সে জায়গায় গিয়ে গুলি বের করার কোনো প্রয়োজন নেই এবং সাধারণত তা করা হয় না।

হাদির শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে অধ্যাপক জাহিদ রায়হান বলেন, তার সার্বিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। অস্ত্রোপচারের সময় তার সঙ্গে থাকা ভাই, যিনি গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময়ও পাশে ছিলেন, ভেবেছিলেন হাদি মারা গেছেন। কিন্তু তিনি এখনো বেঁচে আছেন, যদিও অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তিনি আরও জানান, অপারেশনের জন্য যখন তাকে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হচ্ছিল, তখন তার শরীর সাড়া দিয়েছে বলে অ্যানেস্থেসিয়ার চিকিৎসক জানিয়েছেন।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকার বিজয়নগরে বক্স কালভার্ট রোডে হামলার শিকার হন ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান বিন হাদি। মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে হাসপাতালের পরিচালক জানান, হাদিকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, জুমার নামাজের পর বেলা ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা হামলাকারীরা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

হাদির একজন সহযোদ্ধা জানান, জুমার নামাজের পর মসজিদে লিফলেট বিতরণের একটি কর্মসূচি ছিল। লিফলেট বিতরণ শেষে সবাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাওয়ার এবং আলোচনা করার কথা ছিল। এর মধ্যেই হাদির ওপর হামলার খবর আসে।

হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের সামনে বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড় জমে যায়। নিরাপত্তা জোরদার করতে সেখানে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

জুমার নামাজের আগে বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে হাদি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, “যেহেতু ঢাকা-৮ এ আমার পোস্টার-ফেস্টুন কিছুই নাই, তাই আমার এখন ছেঁড়া-ছিঁড়িরও চাপ নাই। দুদকের সামনে থেইকা জুম্মা মোবারক।”

ঢাকা-৮ আসনটি মতিঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন, রমনা ও শাহবাগ থানা এলাকা নিয়ে গঠিত। এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন হাদি। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বিকাল ৪টার দিকে হাদিকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। জামায়াতে ইসলামী থেকে এ আসনে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের নায়েবে আমির হেলাল উদ্দিন। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শরীফ ওসমান বিন হাদির হাত ধরে গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। সংগঠনটির ঘোষিত লক্ষ্য হলো—সব ধরনের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ হাদি ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর মন্তব্য করেছিলেন, “এই রায় পুরো পৃথিবীর জন্য নজির স্থাপন করেছে।” গত জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, বিএনপি যদি ‘পুরনো ধারায়’ রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসে, তাহলে তারা দুই বছরও ক্ষমতায় টিকতে পারবে না। একই অনুষ্ঠানে তিনি সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেন। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা ও দৃশ্যমান পরিবর্তনের ঘাটতির সমালোচনা করে একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবও দেন।

‘রাজনীতি’ : আরও খবর

» বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা

সম্প্রতি