নির্বাচনে দুই শক্তির মুখোমুখি লড়াই হবে: মির্জা ফখরুল

রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের রাজনীতিতে ‘দুই শক্তির’ মধ্যে স্পষ্ট লড়াই হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, একদিকে থাকবে বাংলাদেশের পক্ষে, উদার গণতন্ত্র ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার শক্তি; অন্যদিকে থাকবে সেই সব শক্তি, যারা বারবার ধর্মের কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে আসছে।

রোববার দুপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। তার ভাষায়, “এবারের নির্বাচনটা হবে দুটো শক্তির মধ্যে নির্বাচন। একটা শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি… উদার গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি। আরেকটি শক্তি হচ্ছে সেই পেছনে পড়া শক্তি, যারা সবসময় ধর্মের কথা বলে আমাদের বিভ্রান্ত করতে চায়।”

গত বছরের ৫ অগাস্ট সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। চলতি বছরের মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকার দলটির সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত হয়। ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারছে না।

এদিকে নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রেক্ষাপটে বিজয় দিবস উদযাপন করছে জাতি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা একাত্তর সালকে ভুলতে পারি না। যারা দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, যুদ্ধ করেছি, লড়াই করেছি, তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে এই স্বাধীন ভূখণ্ড আমরা পেয়েছি। আজ প্রশ্ন হলো—আমরা সেই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সঙ্গে থাকব, নাকি যারা সেই স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল তাদের সঙ্গে থাকব?”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দেশের মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে এবং নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীককে বেছে নেবে। তার মতে, এই কারণেই এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের হলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের উদ্যোগে বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘জাতির ক্রান্তি লগ্নে গণতন্ত্র রক্ষায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

জনগণ কোন পথে যাবে—সে প্রশ্নই মুখ্য

ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে যে রাজনৈতিক মেরুকরণ তৈরি হয়েছে, সেখানে দেশের মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—তারা কি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে বেছে নেবে, নাকি সেই পশ্চাৎপদ শক্তিকে বেছে নেবে যারা অতীতে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে এবং দেশের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে।

ধর্মের নামে বিভ্রান্তির অভিযোগ

বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী সেই শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এবং ধর্মের নাম ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, একাত্তর সালেও একই কৌশল নেওয়া হয়েছিল।

তার বক্তব্যে উঠে আসে ১৯৪৭ সালের প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ওই শক্তি তখন পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল এবং একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। আজ তারা চেহারা বদলে নতুন বাংলাদেশের কথা বলছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাদের বিশ্বাস করে না।

স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরেন ফখরুল

বারো ভূঁইয়া ও তিতুমীরের লড়াইয়ের উদাহরণ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, মুঘল আমল থেকেই বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে আসছে। তার ভাষায়, “এই জাতি কখনো মাথা নত করে না, কখনো পরাজিত হয় না।”

শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রসঙ্গ

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী সেদিন দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, সাহিত্যিক শহীদুল্লা কায়সার, চিকিৎসক আলীম চৌধুরী, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সেলিনা পারভীনসহ অসংখ্য নারী-পুরুষকে ধরে নিয়ে বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, এই ইতিহাস জানার পর সেই শক্তিকে ক্ষমা করার কোনো কারণ নেই।

নতুন ফ্যাসিবাদের আশঙ্কা

মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ বিদায় নেওয়ার অর্থ এই নয় যে আবার নতুন কোনো ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া হবে। যে শক্তি দেশকে পেছনে নিয়ে যেতে চায়, তাদের কোনোভাবেই সুযোগ দেওয়া যাবে না।

দেশকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগ

তিনি অভিযোগ করেন, পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি পরাজয় মেনে নিতে না পেরে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। হাদি ও এরশাদুল্লাহর ওপর হত্যাচেষ্টার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব ঘটনার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে তার বিশ্বাস, বাংলাদেশের মানুষ এই চক্রান্ত সফল হতে দেবে না।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল জয়নুল আবেদিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা মিজানুর রহমান, নজরুল ইসলাম, এম এ হালিম, এম এ হাকিম খান এবং জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের সদস্য সচিব কেএম কামরুজ্জামান নান্নু।

‘রাজনীতি’ : আরও খবর

সম্প্রতি