বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বুদ্ধিজীবী দিবসটি আমাদের কাছে খুব ভারাক্রান্ত। কারণ একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। সেই হত্যা ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির’ পরিকল্পনাতেই যে হয়েছিল তা দেশের মানুষ জানে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা পাওয়ার ঠিক দুই দিন আগে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, একটা নীল নকশার মাধ্যমে, একটা জাতিকে সম্পূর্ণ মেধাশূন্য করে দেয়ার চক্রান্ত ছিল সেটা।
মির্জা ফখরুল আক্ষেপ করে বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের যারা পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ করে, তাদের প্রতিনিধি হয়ে বাড়িতে বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলোতে অথবা তাদের বাড়ি থেকে যারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তারা ছিল বাঙালি সন্তান। আজকে আমরা খুব ভালো করে জানি তারা কারা ছিলেন!’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস প্রমাণ করে তখনকার সেই রাজনৈতিক শক্তি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল তারাই সেদিন আমাদের সেই সূর্য সন্তানদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়টি হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই।’ আওয়ামী লীগের ১৫ বছর ‘একই ঘটনা ভিন্ন আঙ্গিকে’ ঘটেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
রোববার,(১৪ ডিসেম্বর ২০২৫) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে এবং দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। বিজয়ের আগে দেশকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্ত সফল হয়নি মন্তব্য করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় বিএনপি। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল আশা প্রকাশ করে বলেন, সব চক্রান্ত উপেক্ষা করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে, তাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। ১৯৭১ সালে যে শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে আজ তারা ভোল পাল্টে এমন ভাব দেখাচ্ছে, যেন তারাই নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারবে, যা দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না।’ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিজয়ের ঠিক আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশীয় দোসরদের সহায়তায় বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা করেছিল। তবে তাদের সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি।
তনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন, তা অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে। সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় বিএনপি সবসময় এগিয়ে যাবে এবং সব চক্রান্ত উপেক্ষা করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবেই।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল আসন্ন নির্বাচনকে ‘দুই শক্তির’ মধ্যে লড়াই হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, একদিকে রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও উদার গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি। অন্যদিকে রয়েছে সেই পশ্চাৎপদ শক্তি, যারা অতীতে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে এবং এখন ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ১৯৪৭ সালে এই শক্তি পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। তিনি বলেন, ‘যে আমার স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে, তাকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকতে পারে বলে আমি অন্তত মনে করি না।’ তিনি অভিযোগ করেন, একাত্তরের মতোই এই শক্তি আজ ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
দেশের মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে এমন আশা ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন রেখে জাতীয় সংসদ ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে। দেশের মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে এবং নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীককেই বেছে নেবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান- শিক্ষক, চিকিৎসক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের হত্যা করেছিল দেশকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে। গোবিন্দ চন্দ্র দেব, শহীদুল্লা কায়সার, আলীম চৌধুরী ও সেলিনা পারভীনের মতো গুণীজনদের হত্যার কথা তিনি উল্লেখ করে বলেন, যারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করেছে, তাদের ক্ষমা করার কোনো কারণ নেই।
সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করা হয়েছে, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেয়া হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, পরাজিত শক্তি পরাজয় মেনে নিতে না পেরে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে এবং হাদি ও এরশাদুল্লাহর ওপর হত্যার অপচেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।