দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলীয় প্রধানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ‘অবিস্মরণীয়’ করে রাখতে এবং নির্বাচনী রাজনীতির মাঠে শক্তিশালী ঢেউ তুলতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিএনপি। এ দিনটিতে রাজধানী ঢাকায় স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমাগম ঘটানোর বিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দলটি।
আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারিখটি কৌশল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে
দলের কেন্দ্রিয় নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে
তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সারাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ঢাকায় আসবেন। ওইদিন ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত জনস্রোতের সৃষ্টি হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু করে গুলশান-বনানী পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় এই বিশাল জনসমাগম ঘটবে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সমন্বয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই এ সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।
রোববার,(১৪ ডিসেম্বর ২০২৫) বিএনপির ভেরিফায়েড ফেইসবুক পোস্টে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৭ বছর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনটিকে ‘অবিস্মরণীয়’ করে রাখতে চায় বিএনপি। এজন্য তারেক রহমানের ফেরার দিন রাজধানী ঢাকায় স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সার্বিক কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে বলে পোস্টে জানানো হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তারেক রহমানের আগমনের প্রভাব সর্বস্তরে পড়বে। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে, বিভ্রান্তি দূর হবে। তারেক রহমানের প্রতি আস্থা আরও সুদৃঢ় হবে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তফা জামান সংবাদকে জানান, তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিন তাকে স্বাগত জানাতে বৃহত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। শিগগির দলের কেন্দ্রিয় নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক এবং ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী আমিনুল হক জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে কর্মসূচি নিয়ে দলে আলোচনা চলছে। শিগগির তা চূড়ান্ত হবে।
ঢাকা উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা-১৮ আসনের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সংবাদকে বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেদিন দেশের মাটিতে পা রাখবেন সেদিন ঢাকায় জনস্রোতের সৃষ্টি হবে। সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা তারকে রহমানকে স্বাগত জানাবে। ইতোমধ্যে দলের মধ্যে এ বিষয়ে অনানুষ্ঠনিক আলোচনা হয়েছে। দলের কেন্দ্রিয় নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তবে ঐদিন ঠিক কী পরিস্থিতি হতে পারে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব ও ঢাকা-৪ আসনে দলের প্রার্থী তানভীর আহমেদ রবিন বলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি একটি বড় আবেগের বিষয়। আমরা মনে করি, সেদিন সারাদেশ থেকেই মানুষ ঢাকায় আসবে। একটি ঐতিহাসিক দিন সৃষ্টি হবে।’
তারেক রহমানের আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফেরার বিষয়টি কৌশল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে বলে দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্র বলছে, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোর বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার তারিখ ২৫ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বড়দিন উপলক্ষে সরকারি ছুটি এবং এরপর শুক্র ও শনি সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় টানা তিন দিনের ছুটির সুবিধা পাওয়া যাবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের আগমনকে ঘিরে নিরাপত্ত ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। এই লক্ষ্যে চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) পুনর্গঠন করে এর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে সিএসএফের দায়িত্ব নিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ কে এম শামসুল ইসলাম। ঢাকায় ফেরার পর তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের নিরাপত্তায় এই বিশেষ বাহিনী কাজ করবে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বাস দেয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ মোতায়েন করা হয়েছে।
গত শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তারেক রহমানের দেশে ফেরার সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার পর থেকেই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। মির্জা ফখরুল সম্প্রতি মন্তব্য করে বলেছেন, ‘তারেক রহমান যেদিন বাংলাদেশে পা দেবেন, সেদিন যেন সারা বাংলাদেশ কেঁপে ওঠে।’ তিনি আরও বলেন, বিএনপি সেদিন দেশের রাজনৈতিক চেহারা বদলে দিতে চায়।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দীপ্ত করবে এবং নির্বাচনী মাঠে এর বড় প্রভাব পড়বে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ মনে করেন, তারেক রহমানের আগমনের প্রভাব সর্বস্তরে পড়বে এবং মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতা তানভীর আহমেদ রবিন একে একটি ‘ঐতিহাসিক ও আবেগের দিন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
২০০৭ সালে একএগারোর পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান এবং ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবার যুক্তরাজ্যে যান। এরপর থেকে তিনি লন্ডনেই অবস্থান করছিলেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই তার দেশে ফেরার বিষয়টি আলোচনায় ছিল। এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান অসুস্থ শাশুড়ি খালেদা জিয়াকে দেখতে দেশে ফিরেছেন।